আমার জীবন
মূল: মার্ক শাগাল
ভাষান্তর: অদিতি ফাল্গুনী
অনুবাদকের বর্ণনায় বইটির পরিচিতি কিছুটা তুলে ধরা যাক। বইয়ের ফ্লাপ থেকে আলোচনাটি উল্লেখ করছি।
"বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মহান এই চিত্রকর রাশিয়ার ছোট্ট মফস্বল শহর উইটবক্সে (উচ্চারণভেদে ভিটবক্স) জন্মেছিলেন ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে। ঘিঞ্জি ও নিরানন্দ ইহুদি ঘেটোতে। ১৯০৬ সাল হতে ১৯১০ সাল অবধি সেন্টপিটার্সবুর্গে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্কন বিদ্যার হাতেখড়ি ও ক্রমবিকাশমানতা। এই চার বছরের শেষ দুই বছর আবার তিনি কাটিয়েছেন পিটার্সবুর্গে বিখ্যাত বাক্সটের স্কুলে। তবু প্রথামাফিক অংকনের নিশ্চিত প্রতিষ্ঠা ছেড়ে ঝুঁকলেন তাঁর নিজস্ব নিরীক্ষার পথে। ১৯১১ সালে প্যারিসে এসে অর্ফিক কিউবিজমকে প্রকরণ ও গুয়াশকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলেন। ১৯১১ থেকে ১৯১৪ সাল অবধি একশরও বেশি গ্যুয়াশে আঁকেন তিনি। শৈশবস্মৃতি, ইহুদি ধর্মীয়কৃত্য কি গ্রাম দেশের সার্কাস সব কিছু মিলেমিশে এক ভিন্নধর্মী কবিতা। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় রাশিয়া ফিরে বিয়ে করেন কৈশোরের প্রেমিকা বেলাকে। বলশেভিক বিপ্লবের পরও বেশি কিছুকাল পর্যন্ত রাশিয়ায় থাকেন।
১৯১৯ সালের বিপ্লবোত্তর মস্কো শহরে শাগালের জীবনের এক গভীর অনিশ্চিত সময়ে তিনি তার আত্মজীবনী রচনা শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে বার্লিনে ফিরে অজস্র ছবি আঁকেন ও আত্মজীবনীর সাথে জুড়ে দেন। ফলাফল দাঁড়ায় পাঠককে বিমোহিত করে দেয়া এক সাহিত্যিক দৃশ্যকাব্য যা শাগালের প্রস্তুতিকালীন বছরগুলোরও একটি দলিল। দলিল তার জীবনে রেখাপাত করা সেইসব শৈল্পিক প্রভাবের, যা তার জীবনের মহত্তম মাস্টারপিসসমূহ অঙ্কনে সাহায্য করেছে। স্বভাবসিদ্ধ কৌতুক এবং ওজস্বীতায় তিনি রাশিয়ার এক মফস্বল শহর উইটবক্সে পার করা তাঁর শৈশবের কথা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন তাঁর প্রথম তারুণ্যের এডভেঞ্চারসমূহ, হবু স্ত্রী বেলার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ এবং অত:পর রাশিয়া থেকে প্যারিসে এসে বোহেমিয়ান শিল্পীগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। এখানেই তিনি খুঁজে পান পূর্ণতা ও স্বীকৃতি। ১৯১৪ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হলো, শাগাল তার পরিবারসুদ্ধ রাশিয়ায় ফিরলেন, এবং অক্টোবর বিপ্লবের পরে উইটবক্স শহরের 'চারুকলা' বা 'ফাইন আর্টের' কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু শাগালের নব্য ফরাসি রীতি শিল্পকলা কর্তৃপক্ষের কাছে দুর্বোধ্য ও অস্বস্তিকর হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। ফ্রান্সে ফেরার সিদ্ধান্ত দিয়ে শাগালের এই আত্মজীবনী শেষ হয়। সেখানেই বাকি জীবন কাটান পরিবারসুদ্ধ।
"না জারের রাশিয়া, না সোভিয়েত রাশিয়া কেউ আমাকে চায় না"- এমন অভিমানবাক্যে শেষ হয়েছে তার আত্মজীবনী। সত্যিকারের শিল্পী বা লেখকদের এমনতরোই কপাল। কেউ তাদের চায় না।"
মার্ক শাগলের এই আত্মজীবনীটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য, ঢাকা। প্রকাশকাল: ২০০১, প্রচ্ছদ এঁকেছেন সৈয়দ ইকবাল। ISBN 984 770 074 8
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম