জার্মানীর জর্নাল
সৈয়দ আবুল মকসুদ
শুধুমাত্র জার্মানী ভ্রমণের ডায়রি বললে লেখাটির প্রতি কোনক্রমেই শ্রদ্ধা দেখানো হবে না। বরং জার্মানীর শিল্প সাহিত্য দর্শন তথা সংস্কৃতির নানা উপাদান লেখকের আকর্ষণীয় বর্ণনাভঙ্গিতে একেবারে জীবন্ত হয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। আর সৈয়দ আবুল মকসুদ এর রচনাশৈলী পাঠককে যেভাবে আকৃষ্ট করে রাখে তার নিদর্শন বিদগ্ধ পাঠকের অজানা নয়।
গ্রন্থটির ভূমিকা থেকে কিছু উদ্ধৃত করি:-
প্রিয়জনহীন পরবাসে ডায়েরীর মতো এই লেখাগুলো লিখেছিলাম, উদ্দেশ্য ছিলো দেশে প্রত্যাবর্তন ক'রে পত্রপত্রিকায় কিছু প্রকাশ করবো। কিছু কিছু বেরিয়েছিলোও। তারপর প্রিয়জনদের নির্বন্ধের কাছে নতি স্বীকার ক'রে 'জার্মানীর জর্নাল' নামে একটি ছোট বই বের করা হয়। ১৯৭৯-র অক্টোবর থেকে '৮১-র অক্টোবর পর্যন্ত পরিবেশনায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়া সত্ত্বেও 'জার্মানীর জর্নাল'-এর প্রথম সংস্করণ নি:শেষ হয়ে যায়।....অবশ্য আমি জার্মানী গিয়েছিলাম ব'লেই নয়, জার্মানদের সম্পর্কে আমার আগ্রহ দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যমান। তাঁদের চৈতন্যের স্বরূপ জানার চেষ্টা করছি গত একযুগ যাবৎ। যদিও জার্মানী একটি শিল্প-দানব কিন্তু আমার উৎসাহ সে-দেশের শিল্প-সাহিত্য-দর্শনের প্রতিই।লেখকের ভুমিকা গ্রন্থটির কিছু প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট করেছে। জার্মান সংস্কৃতি এই গ্রন্থের প্রধান আলোচ্য বিষয়। লেখকের সংস্কৃতিমনস্কতা আমাদের গ্রন্থপাঠকে সমৃদ্ধ করে। জার্মানী নামক দেশটি শিল্প-সাহিত্য-দর্শন অর্থাৎ সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক লেখক ' সৈয়দ আবুল মকসুদ' এর ভাষ্যে বিভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচ্য 'জার্মানীর জর্নাল' গ্রন্থে ফুটে উঠেছে। ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে এই বই অবশ্যই আদরণীয় বলে বিবেচ্য হবে।
সূচীপত্রের কয়েকটি শিরোনাম:-
- তপোবন নগরী
- গ্যেয়েটের নগরী
- ইগলু
- নাইট ক্লাবের নগরী
- জারের মাঠ
- প্রাচ্য-প্রতীচ্য
- জার্মান লেখক, প্রকাশক ও পাঠক
- সাংবাদিকতায় মাইক্রো-ইলেকট্রোনিক
- ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র
- ক্লাইস্টের কবর
- হিটলারের হত্যাযজ্ঞ
- নব্য নাৎশিবাদ
- ট্রয় নগরীতে ভ্রমণ
- গ্যুন্টার গ্রাস
- লাল মদের এলাকা
- বিটোফেন ভবনে
- নেরুদার নিন্দুক
- ইনগেবোর্গ দ্রেভিৎজ- এর সঙ্গে
- জার্মান দার্শনিক
- প্যারিসের চিঠি
- পুনশ্চ
- সমকালীন ইংরেজ কথাশিল্পী
- ইউরোজা
- মোমসেন, কাফকা ও গ্রাস-বিশ্লেষণ
- গ্যুন্টার গ্রাস : হতাশা ও নি:সঙ্গতার প্রতিমূর্তি
১৯৭৯ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে লেখক প্রবাসে ছিলেন। পরে ১৯৮১ সালে পুনর্বার তিনি জার্মানী যান। ১৯৭৯ সালের ১২ জানুয়ারি তারিখে শুরু হওয়া প্রথম যাত্রার প্রথম বিরতি ছিল নয়া দিল্লী। সেখানকার অনুভূতি নিয়ে লিখেছেন 'তপোবন নগরী' শিরোনামের লেখাটি। ১৯৮১ সালের ভ্রমণকথা লিখেছেন 'পুনশ্চ' শিরোনামের অংশটিতে। সূচীপত্রে শুধুমাত্র 'গ্যুন্টার গ্রাস : হতাশা ও নিঃসঙ্গতার প্রতিমূর্তি' লেখা থাকলেও ১২৪ পৃষ্ঠার রচনায় শিরোনাম লেখা আছে 'ঢাকায় গ্যুন্টার গ্রাস : হতাশা ও নিঃসঙ্গতার প্রতিমূর্তি'। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক গুন্টার গ্রাস এক সপ্তাহের জন্য ঢাকা ভ্রমণ করতে আসেন। এই সময়ে তাঁর সাহচর্য লেখককে প্রভূত আনন্দ দিয়েছিল। প্রখ্যাত লেখক গুন্টার গ্রাসের সান্নিধ্য তাকে যে আনন্দ ও তৃপ্তির অনুভূতি দিয়েছিল তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এই অংশে। লেখকের ভাষায়-
অত্যন্ত বড় শিল্পী তিনি, তাঁর জীবনাচরণ নিঃসন্দেহে আগ্রহ ও কৌতুহল সৃষ্টি করতে পারে তাঁর পাঠকদের।....তিনি গেছেন পুরনো ঢাকার অলিতে-গলিতে, বাংলা বাজার বই-দোকানে, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে এবং অন্যান্য জায়গায়। বাংলা একাডেমিতে তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন সমকালীন জার্মান সাহিত্যের ধারা সম্পর্কে এবং কবিতা আবৃত্তি করেছেন জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। আলোচনা করেছেন অনেকের সঙ্গে, অটোগ্রাফ দিয়েছেন ভক্তদের। ঘরোয়া এবং ব্যক্তিগতভাবে একজন অন্তরঙ্গ গ্যুন্টার গ্রাসকে আমরা পেলাম ঢাকায়। কিন্তু এই গ্রাসেকেই তাঁর স্বদেশে এক সেকেণ্ডের জন্য টেলিফোনে পেতে এক মাস নানা ব্যক্তির কাছে ধর্ণা দিতে হয়, সাক্ষাৎ পাওয়া তো দূরের কথা।
সুখপাঠ্য ও অনবদ্য ভাষাশৈলীতে লেখা এই গ্রন্থটির প্রকাশকাল: ১৯৮৭
প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী
প্রকাশক: মুক্তধারা, ঢাকা।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম