খনার বিজ্ঞান
সম্পাদনা: অরূপ রাহী
ভারতীয় উপমহাদেশে যুগে যুগে নারী পণ্ডিতরা সম্মানিত হয়ে আসছেন। অপালা, বাক, গার্গী প্রমুখের ধারাবাহিকতায় আর একটি অমর নাম খনা। লোকজ জীবনের বিভিন্ন দিক, তথা কৃষি, রন্ধন, খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস, প্রাত্যাহিক, গৃহ-নির্মাণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খনার উপলব্ধি অসাধারণ। পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান অথবা বুদ্ধিবৃত্তিক পাণ্ডিত্য যেভাবেই আমরা ব্যাখ্যা করি না কেন খনা'র সমান মর্মদৃষ্টি একালেও অনেক পণ্ডিতের মধ্যে বিরল।
লেখকের মতে "অনেকের মতে, খনা কেবল 'লোকবচন' বা 'লোকশাস্ত্র'। খনার কাজকে বিজ্ঞানের চর্চা বলতে অনেকে নারাজ। আমরা খনার কাজকে বিজ্ঞান বলতে চাই। খনা কেন বিজ্ঞান? বিজ্ঞান বিষয়ে লম্বা তর্কে এখানে ঢোকার সুযোগ নেই। আমরা এখানে শুধু এটুকু বলতে চাই, খনা বিজ্ঞান এই জন্য যে তার চর্চার একটা বিকাশশীল পদ্ধতি আছে। খনা বিজ্ঞান এই জন্য যে তা সামান্য ও বিশেষ জ্ঞান উৎপাদন করে। খনা বিজ্ঞান এই জন্য যে তা সামান্য ও বিশেষ সত্য উৎপাদন করে।"
খনার প্রবচন এর বিষয় বৈচিত্র্য ব্যাপক। এই গ্রন্থে উল্লেখিত কয়েকটি বিষয় উদাহরণসহ প্রকাশ করছি।
কৃষিকাজ
ক্ষেত আর পুত।
যত্ন বিনে যমদূত।।
গরু ছাগলের মুখে বিষ।
চারা না খায় দিশ রাখিস।।
বন্যা, মড়ক, বৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি
আকাশে কোদালীর বাউ।
ওগো শ্বশুর মাঠে যাও।।
মাঠে গিয়া বাঁধো আলি।
বৃষ্টি হবে আজি কালি।।
যদি ঝরে কাত্তি।
সোনা রাত্তি রাত্তি।।
আষাঢ়ের পানি।
তলে দিয়া গেলে সার।
উপরে দিয়া গেলে ক্ষার।।
হল (লাঙ্গল চালনা)
গাঁ গড়ানে ঘন পা।
যেমন মা তেমন ছা।।
থেকে বলদ না বয় হাল,
তার দু:খ সর্ব্বকাল।
গবাদি
যে চাষা খায় পেট ভরে।
গরুর পানে চায় না ফিরে।
গরু না পায় ঘাস পানি।
ফলন নাই তার হয়রানি।।
গরুর পিঠে তুললে হাত।
গিরস্থে কভু পায় না ভাত।।
গাই দিয়া বায় হাল
দু:খ তার চিরকাল।
ধান্যাদি
দিন থাকতে বাঁধে আল।
তবে খায় তিন শাল।।
বারো পুত তেরো নাতি।
তবে করো বোরো খেতি।।
রবি শস্যাদি
মেঘ করে রাত্রে হয় জল।
তবে মাঠে যাওয়াই বিফল।।
যদি থাকে টাকা করবার গোঁ।
চৈত্র মাসে ভুট্টা দিয়ে রো।।
হলে ফুল কাট শনা।
পাট পাকিলে লাভ দ্বিগুণা।।
এছাড়াও ধান ও পান, আল, লাউ, কুমড়া, শশা, লঙ্কা, পটল, বেগুন, মুলা, আখ, ওল, কচু, হলুদ ও আদা, তামাক, আম, কাঁঠাল, তাল, খেজুর, কলা, নারিকেল, সুপারি, গাছের সার প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খনা তার মূল্যবান উপদেশ বা বচন প্রদান করেছেন।
গ্রন্থটির প্রকাশ কাল: ২০০৬
প্রকাশক: শ্রাবণ প্রকাশনী, ঢাকা।
সম্পাদনা: অরূপ রাহী
ভারতীয় উপমহাদেশে যুগে যুগে নারী পণ্ডিতরা সম্মানিত হয়ে আসছেন। অপালা, বাক, গার্গী প্রমুখের ধারাবাহিকতায় আর একটি অমর নাম খনা। লোকজ জীবনের বিভিন্ন দিক, তথা কৃষি, রন্ধন, খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস, প্রাত্যাহিক, গৃহ-নির্মাণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খনার উপলব্ধি অসাধারণ। পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান অথবা বুদ্ধিবৃত্তিক পাণ্ডিত্য যেভাবেই আমরা ব্যাখ্যা করি না কেন খনা'র সমান মর্মদৃষ্টি একালেও অনেক পণ্ডিতের মধ্যে বিরল।
লেখকের মতে "অনেকের মতে, খনা কেবল 'লোকবচন' বা 'লোকশাস্ত্র'। খনার কাজকে বিজ্ঞানের চর্চা বলতে অনেকে নারাজ। আমরা খনার কাজকে বিজ্ঞান বলতে চাই। খনা কেন বিজ্ঞান? বিজ্ঞান বিষয়ে লম্বা তর্কে এখানে ঢোকার সুযোগ নেই। আমরা এখানে শুধু এটুকু বলতে চাই, খনা বিজ্ঞান এই জন্য যে তার চর্চার একটা বিকাশশীল পদ্ধতি আছে। খনা বিজ্ঞান এই জন্য যে তা সামান্য ও বিশেষ জ্ঞান উৎপাদন করে। খনা বিজ্ঞান এই জন্য যে তা সামান্য ও বিশেষ সত্য উৎপাদন করে।"
খনার প্রবচন এর বিষয় বৈচিত্র্য ব্যাপক। এই গ্রন্থে উল্লেখিত কয়েকটি বিষয় উদাহরণসহ প্রকাশ করছি।
কৃষিকাজ
ক্ষেত আর পুত।
যত্ন বিনে যমদূত।।
গরু ছাগলের মুখে বিষ।
চারা না খায় দিশ রাখিস।।
বন্যা, মড়ক, বৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি
আকাশে কোদালীর বাউ।
ওগো শ্বশুর মাঠে যাও।।
মাঠে গিয়া বাঁধো আলি।
বৃষ্টি হবে আজি কালি।।
যদি ঝরে কাত্তি।
সোনা রাত্তি রাত্তি।।
আষাঢ়ের পানি।
তলে দিয়া গেলে সার।
উপরে দিয়া গেলে ক্ষার।।
হল (লাঙ্গল চালনা)
গাঁ গড়ানে ঘন পা।
যেমন মা তেমন ছা।।
থেকে বলদ না বয় হাল,
তার দু:খ সর্ব্বকাল।
গবাদি
যে চাষা খায় পেট ভরে।
গরুর পানে চায় না ফিরে।
গরু না পায় ঘাস পানি।
ফলন নাই তার হয়রানি।।
গরুর পিঠে তুললে হাত।
গিরস্থে কভু পায় না ভাত।।
গাই দিয়া বায় হাল
দু:খ তার চিরকাল।
ধান্যাদি
দিন থাকতে বাঁধে আল।
তবে খায় তিন শাল।।
বারো পুত তেরো নাতি।
তবে করো বোরো খেতি।।
রবি শস্যাদি
মেঘ করে রাত্রে হয় জল।
তবে মাঠে যাওয়াই বিফল।।
যদি থাকে টাকা করবার গোঁ।
চৈত্র মাসে ভুট্টা দিয়ে রো।।
হলে ফুল কাট শনা।
পাট পাকিলে লাভ দ্বিগুণা।।
এছাড়াও ধান ও পান, আল, লাউ, কুমড়া, শশা, লঙ্কা, পটল, বেগুন, মুলা, আখ, ওল, কচু, হলুদ ও আদা, তামাক, আম, কাঁঠাল, তাল, খেজুর, কলা, নারিকেল, সুপারি, গাছের সার প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খনা তার মূল্যবান উপদেশ বা বচন প্রদান করেছেন।
গ্রন্থটির প্রকাশ কাল: ২০০৬
প্রকাশক: শ্রাবণ প্রকাশনী, ঢাকা।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম