নবারুণ
জুলাই ২০১৭ # আষাঢ়-শ্রাবণ ১৪২৪সচিত্র কিশোর মাসিক পত্রিকা
প্রকাশক: চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তর
পৃ: ৬৪, মূল্য: ২০
সম্পাদক: নাসরীন জাহান লিপি
শিল্প নির্দেশক: সঞ্জীব কুমার সরকার
বাংলাদেশ সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে নবারুণ পত্রিকা। বাংলা ভাষায় শিশু-কিশোরদের জন্য এত রঙিন কারুকাজ করা, ছবিবহুল নিয়মিত পত্রিকার সংখ্যা খুব কম। দারুণ দারুণ আকর্ষণীয় বিষয়ে নানারকম অলঙ্করণ দিয়ে সাজানো পত্রিকাটি কিশোর পাঠকের মনে দোলা দেবে সেকথা অনায়াসে বলা যায়।
এই সংখ্যার প্রধান বিষয় 'রোবট'। বাংলাদেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন রোবট তৈরি করছে। সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের ক্ষুদে শিক্ষার্থী বন্ধুরা এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাচ্ছে যে অবাক হয়ে যেতে হয়। তাই বোধহয় সম্পাদক বেশ আগ্রহ নিয়ে বলেছেন-
“… নবারুণ এবার এসেছে রোবট সম্বন্ধে নানান কথা জানাতে। দারুণ অবাক হবে। খুদে লেখক আবদুল্লাহ-আল-মারুফ আস্ত একটা সায়েন্স ফিকশনই লিখে ফেলেছে রোবট নিয়ে। 'টিউনিয়ান ষড়যন্ত্র' নামের গল্পটি পড়ে দেখো। খুব মজা পাবে। আরো আছে খ্যাতিমান লেখকদের সায়েন্স ফিকশন নিয়ে লেখা রোবট বিষয়ক নিবন্ধ। কেউ যদি রোবোটিক্স বিষয়ে পড়ালেখা করে রোবট বানাতে চাও, সে তথ্যও পাবে।...
কেবল কি এইটুকু? উহু! সবার প্রিয়, বিখ্যাত কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব এঁকে দিয়েছেন রোবট নিয়ে কমিকস। কেবল তোমাদের জন্যই।"
সবার আগে সূচীপত্রটি দেখে নিলে বোধহয় ভাল হয়। বিষয় অনুযায়ী সূচীপত্রটি সুন্দর করে সাজানো।
রোবোটিক নিবন্ধপৃষ্ঠা নম্বরের ক্রমিক অনুযায়ী সুচীপত্রটি সাজানো হয়নি। ফলে বিষয় ভিত্তিক থাকার প্রয়োজনে পিছনের লেখা সামনে আবার বইয়ের আগের দিকে ছাপানো লেখার নাম সূচীপত্রের নিচে চলে এসেছে। যেমন 'ছোটদের রোবোটিক কল্পকাহিনি' লেখাটি ছাপা হয়েছে ০৩ পৃষ্ঠায়, কিন্তু সূচীতে নামটি এসেছে ২০টি শিরোনামেরও পরে। এটা ধর্তব্য নয়। বিষয় বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্যই হয়তো এভাবে সাজানো হয়েছে। আমাকে সূচীপত্রের একেবারে শেষ থাকা একটি বিষয় মুগ্ধ করেছে। শিশুরা মনের আনন্দে ছবি আঁকে। সেই ছবি যখন প্রশংসিত হয়, তখন তাদের আনন্দ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। নবারুণ কর্তৃপক্ষ কোমলমতি শিশুদের আঁকা ছবি প্রকাশ করে তাদেরকে আনন্দে আপ্লুত করতে কার্পণ্য করেন নি।
কারেল চ্যাপেকের রোবট/ নাদিরা মজুমদার
রবিবট ও নওরিন/ আহমেদ রিয়াজ
সায়েন্স ফিকশনের যন্ত্রমানব / শামস সাইদ
ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন, রোবট ও একজন আইজ্যাক আসিমভ / আবুল বাসার
হরেক রকম রোবট / সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
সিনেমার 'রোবু'রা / নাবীল অনুসূর্য
রোবোটিক্সের অনন্য জগৎ / নাদিম মজিদ
‘রোবোটিক্স' পড়তে চাও? / শান্ত শাহরিয়ার
রোবটের টুকিটাকি / শাহানা আফরোজ
নিবন্ধ
গল্পের মতো বর্ষা / ফারুক হাসান
চিকুনগুনিয়া / ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
রোবোটিক কল্পকাহিনী
অরণি ও রোবট / ধ্রুব এষ
একদিন এক রোবট কারখানায় / মঈদুল আহসান সাবের
বন্ধু রোবট / দীপু মাহমুদ
রোবাত / মোহাম্মদ শাহ আলম
তিতির বন্ধু / নাসরীন মুস্তাফা
প্রথম সূত্র/ হাসান খুরশীদ রুমী
রোবোটিক কবিতা
লোকমান আহম্মদ আপন / রোকসানা গুলশান
রুস্তম আলী / সাঈদ তপু
কবিতা
হাসনাত আমজাদ / অতনু তিয়াস / মো. শহিদুল ইসলাম
নাসিরুদ্দীন তুসী / মাসুমা রুমা / নূর হোসেন
আবেদীন জনী
সমীরণ বড়ুয়া / কামাল হোসাইন
মনজুরুর রহমান
রোবোটিক কমিকস
ডাইরোবট / আহসান হাবীব
ছোটদের রোবোটিক কল্পকাহিনি
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি: টিউনিয়ান ষড়যন্ত্র- আব্দুল্লাহ -আল-মারুফ
ছোটোদের রোবোটিক কবিতা
রোবট/ উম্মে সুমাইয়া
ছোটোদের ছড়া
তানজিন দেলওয়ার খান (রিজ) / মো. রিদওয়ানুল ইসলাম রিফাত
সাইদুল ইসলাম / সালেহীন শরীফ
প্রতিবেদন
চলে গেলেন হরিধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালী / সুলতানা বেগম
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহ / তানিয়া ইয়াসমিন সম্পা
নারীর ক্ষমতায়ন: কন্যাশিশুর সাফল্য / জান্নাতে রোজী
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশ / মেজবাউল হক
খেলতে খেলতে বুদ্ধি বাড়াও / মো. জামাল উদ্দিন
আনন্দ সংবাদ / প্রসেনজিত কুমার দে
তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ / সাদিয়া ইফফাত আঁখি
ছোটোদের আঁকা
নাফিশা জাহান খান/ লামিয়া আক্তার
ইসতিয়াক আহমেদ আবির / ওকি
রাইদা জামান / সাদিয়া হোসেন মিম
প্রিয়তি সালেহ উদ্দিন / তাসনোভা আলম লিশান
নবারুণ পত্রিকার মূল অংশ শুরু হয়েছে ক্ষুদে লেখক আব্দুল্লাহ-আল-মারুফের লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী 'টিউনিয়ান ষড়যন্ত্র' দিয়ে। এই গল্পটির জন্য একটি আকর্ষণীয় ছবি এঁকে দিয়েছেন বিখ্যাত শিল্পী ধ্রুব এষ।
টিউনিয়া নামের একটি গ্রহের অধিবাসী টিউনিয়ানদের নিয়ে কাহিনী। ক্ষুদে লেখককে খেলার মাঠে টিউনিয়ানরা কাঁচের গোলকে করে কীভাবে বন্দী করে, আর কীভাবেই বা সে উদ্ধার পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসে তাই এই মজার গল্পটির উপজীব্য। ছোট্ট একটু কাহিনীটিকে এত আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর করে লেখা হয়েছে যে লেখকের প্রশংসা করতেই হয়।
আহসান হাবীব এর লেখা রোবোটিক কমিকস ডাইরোবট (আংশিক | ) |
রোবটকে নিয়ে লেখা অন্য গল্পগুলোও কম মজার নয়। কোন গল্পে 'ইসকুট' নামে রোবটের সাথে ছোট্ট মেয়ে অরণীর গল্পের কথা আছে; কোনটাতে বিদ্রোহী, দুমুখো, ক্লান্ত রোবট, বন্ধু রোবট, গৃহকাজে নিপুণ রোবট নানাধরণের রোবটের হাস্যকর কথাবার্তার কাহিনী আছে।
রোবোটিক কবিতাগুলোও কম আকর্ষণীয় নয়। যেমন রোকসানা গুলশান তার 'রোবট' কবিতায় লিখেছেন-
মেশিন মানুষ আমি যে একআরেকটি মজার রোবোটিক কবিতা লিখেছেন সাঈদ তপু। তার কবিতার নামও 'রোবট'। তিনি লিখেছেন-
নামটি রোবট,
দেখে শুনে পা ফেলি তাই
খাই না তো হোঁচট।
চলতে পারে, খেলতে পারেনবারুণ পত্রিকার এই সংখ্যায় যে 'রোবোটিক নিবন্ধ'গুলি আছে তার সবগুলোই বেশ তথ্যবহুল। নাদিরা মজুমদারের 'কারেল চাপেকের রোবট' নিবন্ধে রয়েছে রোবট শব্দ ব্যবহারের প্রথম দিকের কাহিনী। চেক প্রজাতন্ত্রের ত্রুতনভ শহরে ১৮৯০ সালে জন্ম নেন 'কারেল চ্যাপেক'। তিনি ১৯২০ সালে একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভিত্তিক নাটক লিখেন। এই নাটকের নাম ছিল 'রসুমভি উনিভাজালনী রবোতি'। এর ইংরেজি হল "রোসামস ইউনিভার্সাল রোবটু" অর্থাৎ বাংলায় 'রসুমের সর্বজনীন রোবটরা'। এই নাটকটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে ১৯২৩ সালের মধ্যেই ত্রিশটি ভাষায় অনুদিত হয়। লেখক নাদিরা মজুমদার তার রচনায় কারেল চ্যাপেকের কথা বলতে গিয়ে লেখক 'সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান', ‘বায়োনিক ওম্যান' প্রভৃতি যন্ত্রসংযুক্ত শক্তিশালী মানুষের কাহিনীর প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন।
সকল কাজই করতে পারে
মানবরূপী যন্ত্র।
সৃষ্টিশীল এই বিশ্বে রোবট
বর্তমানে বিজ্ঞানের এক
বিস্ময়কর মন্ত্র।
“রবিবট ও নওরীন" নিবন্ধে আহমেদ রিয়াজ গল্পের আঙ্গিকে রোবটের ইতিহাস বর্ণনা করেন। নওরিনের মামা একটা ইতিহাসবিদ রোবট বানিয়েছেন। নাম দিয়েছেন 'রবিবট'। মামা যখন নওরিনের মায়ের সাথে গল্পে ব্যস্ত তখন নওরিন বসে বসে রবিবট নামক রোবটের সাথে গল্প করছিল। তার কাছ থেকেই জানা গেল নাট্যকার কারেল চ্যাপেক তাদের নাম দিয়েছেন, কিন্তু রোবটের জন্ম দুই হাজার বছরেরও বেশিদিন আগে। রবিবটের ভাষ্যে লেখক জানান-
“খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ থেকে ৪০০ বছর আগের কথা। গ্রিস দেশের এক নামি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিল। নাম তার আরচিতাস। এই আরচিতাসকে বলা হয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের জনক। কাঠ দিয়ে একটা পাখি বানালেন আরচিতাস। আর কাঠের পাখিটার নড়াচড়ার জন্য এতে জুড়ে দিলেন বাষ্পশক্তি। ব্যস। এটা বাষ্পশক্তিতে ২০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারত। ওটাই কিন্তু প্রথম রোবট নয়। এর আগেও রোবট আবিষ্কৃত হয়েছে। ওটা ছিল প্রথম রেকর্ড করা রোবটের কথা। গ্রিকরা তখন চলমান মূর্তিও আবিষ্কার করেছিল। ওই মূর্তিগুলো মন্দিরের দরজা খুলতে পারত। মন্দিরে আসা অতিথিদের পানিও দিতে পারত।"১৯৩০ সালের পর জাপানে প্রথম সত্যিকারের রোবট বানানো হয়। মাত্র পনেরো সেন্টিমিটার লম্বা এই রোবটগুলো শুধু হাঁটতে পারতো। ইতিহাসবিদ রবিবট রোবটিক সূত্র, রোবোটিক না মানুষ পরীক্ষা (টুরিং পরীক্ষা), ১৯৯৭ সালের দাবারু 'ডিপ ব্লু ' আর ১৯৯৯ সালে জাপানের বানানো 'আইবো' নামক রোবট কুকুরের পাশাপাশি আরও নানারকম রোবটের গল্প করে।
“সায়েন্স ফিকসনের যন্ত্রমানব' নিবন্ধে লেখক শামস সাইদ রোবটের ইতিহাসের অনেক অজানা অধ্যায় উন্মোচন করেছেন। তিনি জানান প্রায় পঁচিশশত বৎসর আগে রোবটের কথা অ্যারিস্টটল চিন্তা করেছিলেন। এরও ৪০০-৩৫০ বছর আগে বাষ্প চালিত রোবট তৈরি করেছিলেন গ্রিক গণিতবিদ 'আরকিটাস'। মধ্যযুগে লিউনার্দো দা ভিঞ্চি রোবট তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। মানুষ বিভিন্ন সময়ে নানারকম যান্ত্রিক খেলনা বানিয়েছে, কিন্তু সেগুলোকে রোবট বলা হত না। কারেল চ্যাপেক প্রথম রোবট শব্দটির ব্যবহার প্রচলন করেন।
বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখক আইজাক আসিমভ ১৯৪১ সালে 'লায়ার' নামে একটি রোবটভিত্তিক বিজ্ঞান কাহিনী লেখেন। এখানেই তিনি রোবটদের জন্য তার বিখ্যাত সূত্র তিনটি প্রস্তাব করেন। প্রযুক্তিগত উন্নত যন্ত্র আবিষ্কারের সাথে রোবটের মতো যন্ত্র তৈরি শুরু হয়ে যায়। যা একা একা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে, তাই রোবট। ১৯৪০ সালে ইলেকট্রনিক্স জগতে নানারকম উন্নতির সাথে জটিল রোবট তৈরির আগ্রহ বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেড়ে যায়। ১৯৫৪ সালে তৈরি হয় রোবট বাহু, ১৯৫৭ সালে রাশিয়া স্পুতনিক নামক যন্ত্রকে আকাশে পাঠায়। ১৯৬৪ সালে প্রথম কথা বলতে সক্ষম কম্পিউটার তৈরি করে আইবিএম। ১৯৬৯ সালে রোবট প্রযুক্তি ব্যবহার করে নীল আর্মস্ট্রং ও তার সহযোগীরা চাঁদে ঘুরে আসেন।
১৯৮৮ সালে তৈরি হয় ভার বহনকারী রোবট। ১৯৯৪ সালে কার্নেগি বিশ্ববিদ্যালয় ৮ পায়ের এক রোবট তৈরি করে। বর্তমানে বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নত রোবট তৈরির কাজ চলছে।
“ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, রোবট ও একজন আসিমভ" নিবন্ধে আবুল বাসার শুরু করেন ইতালীয় বিজ্ঞানী লুইজি গ্যালভানির করা বিখ্যাত সেই গবেষণার ঘটনা দিয়ে। বিদ্যুৎ স্পর্শে মৃত ব্যাঙের পা কেঁপে ওঠার ঘটনায় তখন চারিদিকে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাকে উদাহরণ ভেবে কেউ কেউ মনে করেছিলেন যে বিদ্যুৎস্পর্শে মৃত মানুষের শরীরের প্রাণ সঞ্চার হতে পারে। এরকম ভাবনার ফসল ১৯১৮ সালে প্রকাশিত 'মেরি শেলী'র লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী "ফ্রাঙ্কেনস্টাইন"। এই গল্পে মৃত মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সেলাই করে জোড়া দিয়ে বানানো মানুষের শরীরে বৈদ্যুতিক স্পর্শ দিয়ে জীবন সঞ্চার করা হয়। গল্পটিতে মানুষের তৈরি করা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের কারণে সৃষ্ট ভয়ংকর পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ১৯২০ সালে কারেল চ্যাপেক তার লেখা নাটকে রোবটকে শুধুমাত্র কর্মী হিসেবেই প্রকাশ করেছেন। তাদের কোন স্বতন্ত্র সত্ত্বা স্বীকার করেননি।
আধুনিক বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর অমর স্রষ্টা আইজাক আসিমভ নতুন ধরণের রোবটের গল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি রোবটের নিজস্ব চিন্তা সামর্থ্যের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাই রোবটদের জন্য তিনি সূত্র উদ্ভাবন করে মানুষকে নিরাপদ রাখতে চেয়েছেন। রোবট বিষয়ক গল্প লেখকদের নানা কাহিনীতে অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানে তৈরি হয়েছে হরেক রকমের রোবট। আধুনিক যুগের রোবটরা এখন ঘর ঝাড় দেয়া থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণায় মানুষকে সাহায্য করছে। আর এর স্বপ্ন দ্রষ্টা হলেন আইজাক আসিমভ।
সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টির লেখা 'হরেক রকম রোবট' নিবন্ধে হরেক রকম রোবটের কথা আছে। বেশ আকর্ষণীয় বাক্যভঙ্গিতে তিনি বিভিন্ন কাজের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা বেশ কয়েকটি রোবটের পরিচয় দিয়েছেন। রোবট কুলি, রোবট উকিল, রোবট মা, পর্যটক গাইড রোবট, রোবট শিক্ষক, সার্জন রোবট, ওয়েটার রোবট, ছবি আঁকিয়ে রোবট কত রকমের যে রোবট আছে তা এই রচনা না পড়লে জানাই হতো না।
নাবী অনুসূর্য একটি দারুণ বিষয় নিয়ে তার "সিনেমার 'রোবু'রা" নিবন্ধটি লিখেছেন। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে সিনেমার রোবটদের নিয়ে এই কাহিনী। ওয়াল-ই(২০০৮), বিগ হিরো (২০১৪), রিয়েল স্টিল (২০১১), রোবটস (২০০৫), দ্যা আয়রন জায়ান্ট (১৯৯৯) সিনেমাগুলোতে রোবট কী ভূমিকা পালন করে, কীভাবে তারা সিনেমার পর্দায় উপস্থিত হয়েছে, তা প্রাঞ্জল ভাষায় সহজবোধ্যভাবে বর্ণনা করেছেন। ছোট ছোট বাক্যে লেখা সারসংক্ষেপগুলো পড়লেই সম্পূর্ণ সিনেমাটি এক ঝলকে দেখা হয়ে যায়।
রোবট নিয়ে আগ্রহ অনেকেরই আছে। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা নিত্যনতুন রোবট উদ্ভাবনের কথা ভাবতে পারে। রোবট উদ্ভাবন বা উন্নয়ন করার জন্য রোবোটিক্স পড়তে হবে। যারা ভবিষ্যতে রোবোটিক্স নিয়ে পড়তে চায় তারা কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবে, কি কি বিষয় জানতে হবে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, অটোমোটিভ, বায়োইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্স ইত্যাদি বিষয় কীভাবে সম্পর্কিত, কোথায় এ বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয় ইত্যাদি বিষয়ে উৎসাহী পাঠকের কৌতুহল মিটেছে নাদিম মজিদের লেখা 'রোবোটিক্সের অনন্য জগৎ' এবং শান্ত শাহরিয়ারের লেখা 'রোবোটিক্স পড়তে চাও' রচনা দুটিতে।
নবারুণ পত্রিকার এই সংখ্যাটিতে আরও আছে বিভিন্ন নিয়মিত বিভাগ। কবিতা বিভাগে বেশ কয়েকটি ভালো কবিতা (ছড়া?) চোখে পড়ল।
যেমন 'খুকুর ছন্দ' কবিতায় নুর হোসেন লিখেছেন
“আয়রে আয় টিয়ে
খুকুর ব্যাগ নিয়ে
স্কুলেতে যাবে খুকু
নতুন বই নিয়ে।"
অতনু তিয়াস তার 'ভূড়ি বিড়ম্বনা' ছড়ায় লিখেছেন-
“ভূঁড়ি ভূঁড়ি ভূঁড়ি‘গল্পের মতো বর্ষা' নামক প্রকৃতির মায়ায় ভরা নিবন্ধটি লিখেছেন ফারুক হাসান। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা ঋতু এক মোহনীয় রূপ নিয়ে আছে। এই রূপটি অপেক্ষাকৃত বেশী স্পষ্ট হয় গ্রামে-গঞ্জে প্রকৃতির কোলে। সহজ শব্দ আর সহজ বাক্যে লেখা রচনাটি যে কোন বাঙালিকে বর্ষাঋতুর মায়ায় আরও একটু জড়িয়ে দেবে তাতে সন্দেহ নেই।
ভূঁড়ি নিয়ে কেউ করো না
ভুলে বাহাদুরি"
গ্রামের প্রকৃতিতে শিশু কিশোরদের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খেলার ছবি |
হরিধানের উদ্ভাবক 'হরিপদ কাপালী' বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ আবিষ্কার করে তিনি সরকারিভাবে সম্মানীত হয়েছেন। কৃষক-বিজ্ঞানী হরিপদ কাপালী ২০১৭ সালের ৫ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর নবারুণ সম্পাদক বেশ গুরুত্ব ও সম্মানের সাথেই প্রকাশ করেছেন।
শেষের দিকের কয়েকটি পৃষ্ঠায় শিশু-কিশোর সম্পর্কিত বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যেমন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে ভুটানের থিম্ফুতে 'অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার' বিষয়ক তিনদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি-
“প্রতিবন্ধী ও অটিজম আক্রান্তদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা ও তাদের মর্যাদার সাথে জীবন যাপনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য কার্যকর নীতি এবং কর্মসূচী গ্রহণে বিশ্বের সকল দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান"‘ইভটিজিং প্রতিরোধে প্রতিটি বিদ্যালয়ে অভিযোগ বাক্স', ‘সাইকেল চালিয়ে স্কুল যাত্রা'- এরকম প্রতিবেদনগুলো বেশ তথ্যবহুল ও উদ্দীপনামূলক।
দাবা, সুডোকো, গো, টিক-টেক-টো, স্টারক্রাফট, সিভিলাইজেশন প্রভৃতি বুদ্ধি বাড়ানোর খেলা নিয়ে দারুণ একটি প্রতিবেদন লিখেছেন মো. জামাল উদ্দিন।
আর সবশেষে চারটি পাতা জুড়ে আছে ছোট শিশুদের আঁকা ছবির গ্যালারি। দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণীর শিশুরা এত সুন্দর ছবি এঁকেছে যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। দেশের বর্ণিল চিত্র অংকনে তাদের আগ্রহ, দক্ষতা ও সৌন্দর্যবোধ সত্যি অবাক করে দেয়।
সবশেষে বলতে হবে 'নবারুণ' পত্রিকা তার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য ও রচনার মান অটুট রাখতে পেরেছে। এতগুলো বছর পেরিয়েও ধারাবাহিকভাবে মান ধরে রাখা 'নবারুণ' কর্তৃপক্ষের গৌরব বৃদ্ধি করেছে সন্দেহ নেই। মোটা অফসেট কাগজে গাঢ় কালিতে ছাপা ও রঙিন ছবিতে সাজানো বইটি সারাক্ষণ হাতে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। মোটা চকচকে কাগজে ছাপানো প্রচ্ছদটা এত আকর্ষণীয় যে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। সাড়ে নয় ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও সাত ইঞ্চি প্রস্থের পত্রিকাটি ধরে রাখতেও ভাল লাগে। এই পত্রিকাটি বাংলাদেশের সবজায়গায় নিয়মিতভাবে পাওয়া গেলে খুব ভাল হত। যারা বই পড়তে চায়না তারাও কৌতুহলবসে 'নবারুণ' পত্রিকাটি হাতে নিয়ে দেখতে বাধ্য হবে। আর এর সমস্ত কৃতিত্ব দিতে চাই সম্পাদক ও শিল্প নির্দেশককে।
1 মন্তব্যসমূহ
নবারুনে লেখা পাঠানোর ইমেইল নম্বর প্লিজ ।
উত্তরমুছুনমার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম