ছোটদের স্মরণীয় বাণী-সংকলন ও সম্পাদনা: মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ

ছোটদের স্মরণীয় বাণী-সংকলন ও সম্পাদনা: মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ

ছোটদের স্মরণীয় বাণী
সংকলন ও সম্পাদনা: মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ

আশীর্বাদ প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: ১৯৯৪, পৃ- ১২৮, মূল্য: সাদা-৬০, নিউজ-৪০


যুগে যুগে কালে কালে মনীষীগণ সমাজের নানারকম উন্নয়ন করে গেছেন। বনচারী মানুষ মহাকাশচারী আধুনিক সভ্যতা সৃষ্টিকারী মানুষে রূপান্তরে মনীষীগণের অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁরা তাঁদের চিন্তা, কাজ, উপদেশ দিয়ে মানুষকে নিরন্তর প্রেরণা দিয়ে গেছেন। জগতের, জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের উপদেশবাণী কৃতজ্ঞ মানুষ বারবার স্মরণ করবে।

শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-বিজ্ঞান-দর্শন-প্রযুক্তি-রাজনীতি তথা মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান জগতের সমস্ত শাখার শতাধিক লেখকের শত শত মূল্যবান বক্তব্য-উপদেশ-বাণী দিয়ে মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ সংকলিত "ছোটদের স্মরণীয় বাণী" বইটি সাজানো। বর্ণানুক্রমিক তৈরিকৃত সূচী থেকে আগ্রহের বিষয়ে মনীষীগণ কী বলে গেছেন, তা সহজে বের করা যায়।

যেমন: অ বর্ণ দিয়ে অকৃতজ্ঞতা, অকৃতকার্যতা, অজ্ঞ, অধীন, অতীত, অর্থ, অধিকার, অধ্যাবসায়, অনুকরণ, অনুবাদ, অন্তর্দৃষ্টি; আ বর্ণ দিয়ে আইন, আকাশ, আচরণ, আত্মজীবনী, আত্মপ্রশংসা, আদর্শ, আবেগ, আলোচনা, আসল; উ বর্ণ দিয়ে উচ্চাশা, উত্তম ব্যক্তি, উপবাস, উপকার; ক বর্ণ দিয়ে কথা, কবিতা, কলম, কৃতজ্ঞতা, কৃষ্টি; চ বর্ণ দিয়ে চরিত্র, চিন্তা, চিঠি; জ বর্ণ দিয়ে জগৎ, জন্মভূমি, জীবন, জ্ঞান, প বর্ণ দিয়ে পরোপকার, পরনিন্দা, পরিবর্তন, পরিশ্রম, পুঁজিবাদ, পুরস্কার, প্রশ্ন; ব বর্ণ দিয়ে বই, বন্ধু, বিনয়, বিপদ, বিপ্লব, বিবেক, বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী; ভ বর্ণ দিয়ে ভদ্র, ভয়, ভাগ্যবান, ভুল; ম বর্ণ দিয়ে মত, মধ্যবিত্ত, মানবতা, মাটি, মানবপ্রেম, মিথ্যা, মূর্খ; শ বর্ণ দিয়ে শিক্ষাজীবন, শয়তান, শৈশব, শুভবুদ্ধি; স বর্ণ দিয়ে সত্য, সর্বহারা, সভ্য, সদাচার, সম্মান, সংস্কৃতি, সাম্প্রদায়িকতা প্রভৃতি বিষয়ে প্রাজ্ঞ বরেণ্যদের মন্তব্য, বক্তব্য, উপদেশ, বাণী ইত্যাদি রয়েছে।

কয়েকটি উদাহরণ দিলে বোঝা সহজ হবে।
  • অকৃতজ্ঞ মানুষ পরিপূর্ণরূপে মানুষ নয়- টমাস হার্ডি
  • একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী
  • আমরা কথার অধীন, প্রধার অধীন, অসংখ্য প্রবৃত্তির অধীন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • পারস্পরিক ন্যায়বিচারই আইনের নিশ্চয়তা- ডেমোক্রিটাস
  • যুক্তির চোখে যে জগতের দিকে তাকায়, জগতও তার কাছে নিজেকে তুলে ধরে যুক্তির ভিত্তিতে- হেগেল
  • বন্দুকের নল নয়, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
  • ধনগৌরব ধনীর সকল মর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করে- সাইরাস
  • যার অল্প আছে, সে দরিদ্র নয়, যে বেশি আশা করে সেই দরিদ্র- ভ্যান ল্যান্সকট
  • বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ-কষ্ট কম- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  • কতকগুলি বইকে শুধু চাখতে হবে, কতকগুলিকে গিলতে হবে এবং কিছু সংখ্যক বইকে চিবুতে ও হজম করতে হবে- ফ্রান্সিস বেকন
  • যা মনের বস্তু তা উপভোগ করার ক্ষমতা বর্বর জাতির মধ্যে নেই- প্রমথ চৌধুরী
  • যে কোন সভ্যতার উৎকৃষ্ট ব্যারোমিটার হল তার কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক- কৃষণ চন্দর
  • সুনাম হল বীরত্বপূর্ণ কাজের সৌরভস্বরূপ- সক্রেটিস
এরকম অসংখ্য উৎসাহব্যঞ্জক বাণী ও উপদেশ বইয়ের প্রধান বিষয়। প্রধানত শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে লেখা বইটি তাদের উপযোগী বাণী দিয়েই সাজানো। জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাজ্ঞজনের উপদেশ আমাদের সঠিক পথের দিশা দিতে পারে। এই বইটিও তেমনি কোমলমতি তরুণ বয়সীদের জীবনের সামনে উপস্থিত হওয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করি।

বইয়ের প্রকাশের উদ্দেশ্য মহৎ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বইয়ের সৌষ্ঠব বৃদ্ধিতে আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। কাগজের মান নিয়ে বলার কিছু নেই। সাধারণ সাদা কাগজেই ছাপা হয়েছে। কিন্তু বাক্য ও বানান ভুলের প্রাবল্য সত্যিই দৃষ্টিকটু। একাধিক স্থানে ব্যক্তিত্বগণের নামের বানানে যে ভুল ছাপা হয়েছে তা সচেতন পাঠকমাত্রেরই চোখে পড়বে। এ ধরণের অসতর্কতা বইটির ব্যবহার উপযোগীতা নিয়ে সন্দেহ জাগায়। বইয়ের বিষয় নির্বাচন যথাযথ হয়েছে কিন্তু উপস্থাপনা মানসম্মত হয়নি বলে মনে করি।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ