দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
সে এক অন্য যুগের কথা। যে যুগে মায়েরা ছিল সমাজ পরিচালনার দায়িত্বে। মায়ের ইচ্ছা অনিচ্ছা অনুসারে সমাজ পরিচালিত হত। সন্তানেরা মায়ের পরিচয়ে বড় হতো। এখন আর সেই যুগ নেই। এখন পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা মায়েদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। এখন পুরুষের ইচ্ছামতো সমাজ চলছে। কখন মায়েরা বড় ছিল, কখন বা কিভাবে মায়েদের স্থান পিতারা দখল করল, তার সাবলীল বর্ণনা রয়েছে 'সে যুগে মায়েরা বড়ো' বইটিতে। এই বইতে লেখক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ছোটদের উপযোগী করে সহজ ভাষায় কাহিনীর মতো করে সমাজ পরিবর্তনের ইতিহাস বলে গেছেন। বইয়ের ভিতরে প্রথমে রয়েছে সিন্ধু সভ্যতা থেকে পাওয়া এক মাতৃমুর্তি'র ছবি। এরপর একাধিক ছবির ছক দিয়ে তিনি মাতৃপ্রধান সমাজের পরিচয় এবং পিতৃপ্রধান সমাজের পরিচয় পাঠকের সামনে সহজ করে তুলে ধরেছেন। মাত্র ৪৪ পৃষ্ঠার এই বইয়ে কোন সূচীপত্র নেই। ধারাবাহিক ভাবে কথকের ভঙ্গিতে গল্প বলার মতো করে সমাজের ইতিহাস গড়িয়ে চলে। কোথাও হোঁচট খাবার জো নেই।
মোটা বর্ণে লেখা শিরোনামগুলি হলো:-
- এক আজব ঘড়ির হিসেব
- আলাদিনের প্রদীপের চেয়ে আশ্চর্য?
- খাদ্য-আহরণ থেকে খাদ্য-উৎপাদন
- কৃষিকাজ আর পশুপালন
- কৃষি আবিষ্কারের ফলে
- আবিষ্কারের অবকাশ আর আবিষ্কারের প্রয়োজন
- কার আবিষ্কার? পুরুষদের, না, মেয়েদের?
- ঘট-তৈরি, ঘর-তৈরি, কাপড়-বোনা
- পুরুষ-প্রধান সমাজ আর নারী-প্রধান সমাজ
- কামাখ্যার মেয়েরা জাদু জানে?
- ছেলের বদলে ভাগনে
- ছেলের বদলে জামাই
- প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র আর মাতৃপ্রধান সমাজের নানান চিহ্ন
- চীন, তিব্বত আর সুদূর প্রাচ্য
- মোহেনজোদারোর কথা
- ভারতীয় সভ্যতার কথা
আলোচ্য বইটি কিশোর বয়সী পাঠকদের উপযোগী করে রচিত। তবে যেহেতু বিষয়টা নৃতত্ত্বের সেহেতু সকলেরই পড়া উচিত। মানব সমাজ সামাজিক বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বর্তমান কাঠামো পেয়েছে। সমাজের বর্তমান রূপ দেখে হয়তো আমরা অনেকেই প্রাথমিক সমাজের রূপ কল্পনা করতে পারিনা। সেক্ষেত্রে সমাজ সচেতন প্রত্যেক মানুষের একবার হলেও বইটি পাঠ করা উচিত; তাহলে মহাকালের আয়নায় নিজের রূপ অনুধাবন করা অনেক সহজ হবে।
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এর লেখা 'সে যুগে মায়েরা বড়ো' বইয়ের ব্যাপক প্রচার ও বহুল পাঠ প্রত্যাশা করি।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম