বই রিভিউ করার ৬(ছয়)টি সহজ ধাপ

 বই রিভিউ করার ৬(ছয়)টি সহজ ধাপ
কীভাবে বই রিভিউ করা যায়, সে বিষয়ে আমরা গ্রন্থগত ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রচনা প্রকাশ করেছি। বই আলোচনা করার নানা রকম নিয়ম কানুনের সাথে পরিচিত হয়েছি। সেসব আলোচনায় বিস্তারিতভাবে বই রিভিউয়ের পদ্ধতির সাথে পাঠককে সচেতন করে তোলার প্রচেষ্টা ছিল। আজ আমরা ছয়টি সহজ ধাপ অনুসরণ করে বই রিভিউ করার পদ্ধতি জানবো।

প্রথম ধাপঃ
একটি পছন্দসই বই নির্বাচন করুন
যে বইয়ের রিভিউ করতে চান, তার সাথে আপনাকে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে হবে। অতএব নিজের কাজের সুবিধা ও মনের সন্তুষ্টির জন্য একটি আকর্ষণীয় বই পছন্দ করুন। কোন বই আপনার কাছে আকর্ষণীয় লাগবে তা যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের সাহায্য নিন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। যেহেতু তারা আপনার বন্ধু, সেহেতু আপনাদের পরস্পরের মনের গঠন অনেকটা একই রকমের। অতএব, তাদের পছন্দের সাথে আপনার পছন্দ মিলে যেতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপঃ
যিনি আপনার আগে পড়েছেন তাকে জিজ্ঞাসা করে বইটির সারাংশ জেনে নিতে পারেন

কিন্তু মনে রাখবেন নিজে পড়ার কোন বিকল্প নেই। তার চোখে হয়তো অনেক কিছু এড়িয়ে যেতে পারে, তার ভাললাগার সাথে আপনার ভাললাগার মিল নাও থাকতে পারে। তাই বইটি পড়ার জন্য একটুখানি সময় বরাদ্দ রাখুন। এতে আপনার পড়ার দক্ষতা ও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়াও বইয়ের মধ্যে থাকা ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি আপনার চোখে পড়বে; যা হয়তো অন্যের চোখে নাও পড়তে পারে। অন্যদের কাছে সারাংশ শুনলে বইটি সম্পর্কে একটু ধারণা তৈরি হবে, কিন্তু ছোটখাট আকর্ষণীয় অংশগুলো চিহ্নিত করার জন্য সম্পূর্ণ বই পড়ার সত্যিই কোন বিকল্প নেই।

তৃতীয় ধাপঃ
পড়ার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য অংশ খাতায় লিখে নিন
বই পড়ার সময় সবসময় হাতে একটি পেনসিল রাখুন। রাফ খাতায় প্রয়োজনীয় অংশ লিখে রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, বাক্য, বাক্যাংশ, অনুচ্ছেদ কোন কিছু বাদ দেবেন না। একই সাথে পৃষ্ঠা নম্বর লিখে রাখুন। তাহলে পরে চট করে খুঁজে নিতে সুবিধা হবে। বইয়ের কাহিনীর মধ্যে কোন বিশেষ ঘটনা রয়েছে কি, কোন বর্ণনা বা কাহিনীর কোন অংশ কি ভিন্নরকম মনে হচ্ছে, তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গে নোটখাতায় লিখে নিন।

যখন পূর্ণাঙ্গ বিবরণী লিখবেন তখন নোটখাতায় লেখা অংশগুলি আপনাকে খুব সাহায্য করবে। বারবার সমস্ত বইয়ের পাতা উল্টে উল্লেখযোগ্য অংশ খুঁজতে হবে না।

চতুর্থ ধাপঃ
বই বিবরণীর খন্ডাংশ অনুচ্ছেদ আকারে লিখুন
লেখার ধারাবাহিকতা যেন নষ্ট হয়ে না যায় সেজন্য বই বিবরণীকে একটু একটু করে লিখুন। মনে মনে সমস্ত আলোচনাটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিন। তারপর প্রথম অংশ, দ্বিতীয় অংশ, তৃতীয় অংশ, চতুর্থ অংশ- এভাবে লিখুন। এতে আপনার লেখা তাল হারিয়ে ফেলবে না।
বইয়ের প্রথম দিকের ঘটনাগুলো আগে লিখুন। কাহিনীর সূচনা, চরিত্রের আগমন বা বিশেষ কোন ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করুন। বইয়ের মাঝের অংশ কিভাবে সাজানো হয়েছে? নতুন কোন চরিত্রের আগমন ঘটেছে কি? প্রধান চরিত্রের আচরণে কোন পরিবর্তন হয়েছে কি? আলোচনার শেষ অংশ বইয়ের উপসংহার বর্ণনা করুন। কীভাবে কাহিনী এগিয়েছে, কীভাবে ঘটনাগুলো পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে তার বিবরণ দিন। লেখক কাহিনীর কোন অংশে ঘটনার তীব্রতা কীভাবে সৃষ্টি করেছেন, কীভাবে পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তার দিকে মনোযোগ দিন।

এভাবে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বই পড়লে এবং লিখতে থাকলে দেখবেন অল্প পরিশ্রমে সমস্ত বইয়ের আলোচনা করা হয়ে গিয়েছে। আপনি নিজের মতো করে বইয়ের বিবরণী লিখতে পারেন। কিন্তু এভাবে খন্ডে খন্ডে ভাগ করে লিখলে আপনারই সুবিধা হবে।

এবার সবশেষে নিজের মন্তব্য লিখুন। বইটি সম্পর্কে আপনার মতামত, ভাললাগা বা খারাপ লাগার বিষয়গুলো স্পষ্ট করে ঠিকঠাক উদাহরণসহ তুলে ধরুন। পৃষ্ঠার নম্বর উল্লেখ করতে ভুলবেন না যেন।

পঞ্চম ধাপঃ
কয়েকদিনে বইটি পড়ুন
আপনি একদিনে এক বসাতেই সমস্ত বই পড়ে শেষ করে লিখতে বসতে পারেন। কিন্তু যদি প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট করে পড়েন ও সেই অংশটুকুর বিবরণী লিখে রাখেন তাহলে অনেকটা চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।
যদি একদিনে লিখে শেষ করতে চান তাহলে একসাথে কয়েক ঘন্টা ধরে আপনাকে বইটি পড়া ও তার বিবরণী লেখার কাজ করতে হবে। এটা অনেকের কাছে বেশ পরিশ্রমসাধ্য মনে হতে পারে। বিভিন্ন রকমের সামাজিক ও পারিবারিক কাজেও বিঘ্ন ঘটতে পারে। তার চেয়ে যদি কয়েকদিনে প্রতিদিন আধঘন্টা করে সময় ব্যয় করেন, তাহলে অনেকটা ভারমুক্ত হয়ে বই বিবরণী লেখার কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন।

ষষ্ঠ ধাপঃ
ত্রুটি সংশোধনের জন্য অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন
বই বিবরণী লেখা শেষ হলে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নেয়া যেতে পারে। অনেক সময় নিজের লেখার ভুল নিজের চোখে ধরা পরে না। শব্দ চয়ন, বাক্যভঙ্গি বা বাক্য সজ্জ্বা, লেখার ভঙ্গিসহ বিভিন্ন জায়গায় নিজের অজান্তেই ভুল থেকে যেতে পারে। সেজন্য অন্য আরেকজনকে দেখালে সেসব ভুল নির্ণয় করা সহজ হয়ে যায়।

এভাবে ধাপে ধাপে বই রিভিউয়ের কাজ এগিয়ে নেয়া শেষে একটি সম্পূর্ণ মানসম্পন্ন রচনা বেশ সহজে হেসেখেলে তৈরি করে ফেলতে পারবেন। প্রাথমিক অবস্থায় বই রিভিউয়ের যে কাজটিকে একটু জটিল মনে হয়েছিল, তাকে আর পরবর্তীতে ততোটা কঠিন মনে হবে না। বরং ধীরে ধীরে একটি লেখা দাঁড় করাতে পারলে অনেকটা বিনা পরিশ্রমেই বিস্তারিত আলোচনা সমৃদ্ধ একটি লেখা প্রস্তুত হয়ে যাবে। আশা করি এই লেখা পাঠ করার পর যে বই রিভিউয়ের কাজটি হাতে নেবেন, তা আর ততোটা পরিশ্রমসাধ্য মনে হবে না।

উৎসাহী হলে "কিভাবে বই (বুক) রিভিউ লিখতে হয়" রচনাটি পাঠ করতে পারেন। এই লেখাটি আপনাকে বেশ কয়েকটি তথ্যসমৃদ্ধ বুক রিভিউ মেথডের সন্ধান দেবে।

মতামত:_

4 মন্তব্যসমূহ

  1. লেখাটা খুব ভাল লেগেছে। এই ওয়েবসাইটটা আজকের চোখে পড়ল। দারুণ কিছু লেখা পড়লাম।
    বইয়ের রিভিউ লেখার কৌশল নিয়ে কিছুদিন ধরেই ঘাটাঘাটি করছিলাম। অবশেষে এই লেখাটি পেলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। আশা করি পরবর্তীতে আরও ভাল ভাল লেখা পাবো। ভাল থাকুন।

    উত্তরমুছুন
  2. মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  3. বুক রিভিউ বিষয়ে আলোচনা ভালো লাগল। বই লেখার ধরণ বিভিন্ন। কখনো বিষয়ের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। কখনো ভাষার উপর কারুকার্য বেশি তবে সেসব কথা মনে রাখার মতো।কোন ধরণের বই পাঠকের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য _এই বিষয়ে আলোচনা হলে ভালো হয়।

    উত্তরমুছুন
  4. এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন

মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম