ছয়
Beyond the Fragments by Sheila Rowbotham, Lynne Segal, Hilary Wainwright (1979)
শেইলা রোবোথাম, লিনি সিগাল, হিলারি ওয়েইনরাইট |
এটা ঠিক যে ভিন্ন ধরনের সংগঠন, আলাদা উদ্দেশ্যে পৃথক বৈশিষ্ট্যের গণতন্ত্র উপস্থাপন করে। ভিন্ন রকমের সামাজিক পরিবর্তন অন্য সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখায়। আর এই চিন্তাশৈলীর প্রশ্রয়ে লিখিত হয় একাধিক প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধগুলো একত্রিত করে বই হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। পরবর্তীতে ২০১২ সালে এর পরিমার্জিত সংস্করণ বের হয়।
এই বইতে লেখকত্রয় প্রথম ‘সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী’ (Socialist Feminist) ধারণাটির সাথে পাঠকের পরিচতি ঘটান। লেখকগণ নারীর সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তৃত মতামত দিয়েছেন। পুরনো নারীবাদীদের অভিজ্ঞতার সারাৎসার তাদের দার্শনিক বোধ ও নতুন তত্ত্ব বিনির্মাণে সহায়ক হয়েছে। ব্যক্তিগত থেকে রাজনৈতিক সব বিষয়ে নারীর অবস্থান পুনর্মূল্যায়নে তাদের বক্তব্য আজ চিন্তাশীল মানুষকে অন্য আঙ্গিকে ভাবতে শিখিয়েছে।
সাত
Ain’t I a Woman: Black Women and Feminism by bell hooks (1981)
বেল হুকস |
Center’ থেকে বিভিন্ন প্রমাণ উল্লেখ করে তিনি সমাজের নিম্নবর্গীয় এবং প্রান্তিক মানুষদের কথা আলোচনা করেন। বর্ণভেদ এবং যৌন আক্রমণের ধরন কালো নারীদের তুলনায় সাদা নারীদের ক্ষেত্রে ভিন্নরূপ। আমেরিকার সমাজে দাস ব্যবস্থা যখন ছিল তখন কালো নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গী যেমন ছিল আজও তা থেকে বের হয়ে আসার সামর্থ অনেকেরই হয় নি। কালো পুরুষদের অপমান বিষয়ে সাদা পুরুষ ও নারীরা যেমন উদাসীন, তার চাইতেও কালো নারীরা বেশি উপেক্ষার শিকার। একজন সাদা নারী যখন নারীর অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করে, তখন সাদা পুরুষের নৈতিকতাবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে কালো নারীদের অবস্থা সেই নৈতিকতা দ্বারা কতটুকু প্রভাবিত হয় তা আর তাদের খেয়ালে থাকে না।
বেল হুক্স বিভিন্ন প্রমাণসাপেক্ষে জানান যে সাদাদের সমাজে কালো নারীকে এক নির্দিষ্ট প্রকারের দৃষ্টিতে দেখা হয়। সেই দৃষ্টিতে কালো নারীরা হল আকর্ষণীয় শরীরের যৌন পুতুল মাত্র। তিনি আরো বলেন, কালো পুরুষদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের অন্তরালে নারীবিদ্বেষী ধারা বহমান আছে। এরা বর্ণবিদ্বেষী বৈষম্যকে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা দিয়ে প্রতিহত করতে চায়।
তিনি বলেন “নারীবাদী আন্দোলন” মূলত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নারীদের বিষয়। তারা নিম্নবিত্ত ও কালো বা তামাটে বর্ণের নারীদের চাহিদাকে নিজেদের প্রত্যাশার সাথে গ্রন্থিবদ্ধ করতে চায় না। আর সেজন্য নারীবাদী আন্দোলনে কালো নারীদের অংশগ্রহণ খুবই কম।
এই বই সমাজের প্রচলিত চিন্তা কাঠামোয় এত বেশি নাড়া দিয়েছিল যে নারীবাদ, কালোমানুষ এবং জীবনদর্শন সম্পর্কে সমাজ সচেতন ব্যক্তিবর্গকে অন্যভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
আট
Intercourse by Andrea Dworkin (1987)
অ্যান্ড্রিয়া ডরকিন |
ডরকিন বলেন সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় নারীকে এরূপ নিকৃষ্ট, অধীন, বশীভূত হিসেবে প্রচার করা হয়ে থাকে। নিজের মতবাদের স্বপক্ষে তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ, লিও টলস্টয়, গুস্তাভ ফ্লবেয়ার, আইজাক বাশোভিচ সিঙ্গার প্রমুখের লেখা থেকে উদাহরণ দেন। তিনি দেখান যে কল্পসাহিত্যগুলোয় পুরুষ নিজের যৌনাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগে আর পরিণতিতে প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয় নারীকে। আর তাই প্রচলিত ধরণের ‘যৌনকার্য’ আসল ‘ধর্ষণ’।
তিনি চান যৌনকার্য যেন নারীকে অধীনতা গ্রহণে বাধ্য না করে। এটা পরস্পরের পরিপূরক হওয়া দরকার এবং কোনক্রমেই যেন পুরুষের একার জন্য তৃপ্তিদায়ক না হয়। ডরকিন স্পষ্টভাবে বলেন যে পর্ণোচিত্র এবং পর্ণোসাহিত্যে প্রদর্শিত যৌনক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত নারীর অধীনস্থতাকে প্রচার করা হচ্ছে। নারীকে উপস্থাপন করা হয় পীড়ন প্রত্যাশীরূপে। আর এর প্রভাব পরছে পুরুষ প্রভাবিত মূল ধারার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাস্তবের গৃহকোণে।
নয়
The Beauty Myth by Naomi Wolf (1990)
নাওমি উল্ফ |
উলফ ফ্যাশন ও সৌন্দর্য শিল্পকে বিশেষভাবে আক্রমণ করেন। পাশাপাশি এটাও জানান যে, সৌন্দর্যের কল্পনা মানব জীবনের প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন অর্থনৈতিক বা কূপমণ্ডুক মানসিকতা প্রভাবিত কোনরকম মতবাদ দ্বারা শাস্তির ভয় ছাড়াই নারীদের নিজের মুখাবয়ব ও শরীর নিয়ে যা খুশি তাই করার অধিকার রয়েছে। উলফ জানান নারীরা ‘বিউটি মিথ’ দ্বারা পাঁচটি ক্ষেত্রে লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে; কাজ, ধর্ম, যৌনতা, সহিংসতা এবং ক্ষুধা।
প্রবল বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হয়েও ‘বিউটি মিথ’ বইটি বহুল বিক্রিত বইয়ের মর্যাদা পেয়েছে। নানারকম উপাত্ত দিয়ে সাজানো পরিসংখ্যান ব্যবহার করে ফ্যাশন শিল্পের প্রতিনিধিরা নাউমি উলফের বক্তব্যের বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু বিশ্বের নারীবাদীদের কাছে তার বক্তব্য সাদরে গৃহীত হয়েছে। জারমেইন গ্রির বলেন
এটা ফিমেল ইউনেক এর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজকেউ কেউ বলেছেন
প্রত্যেক তরুণীর এই বই পড়া উচিত
দশ
Bad Feminist by Roxane Gay (2014)
রোক্সানা গে |
তিনি এই বইতে বারবার আত্মসমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন নারী হিসেবে তিনি হয়তো সফল নন। হয়তো নারীবাদী হিসেবেও ততোটা সফল হতে পারেন নি। তিনি ভণ্ড হতে চান না; তাই অকপটে নিজের মনের ভাবনাগুলো প্রকাশ করেন। তিনি নারীবাদের উদ্দেশ্যগুলোকে সমর্থন করেন। তবে নিজের মধ্যে নারীবাদের প্রভাব নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ। তিনি মানুষ হতে চান। কালো নারী হিসেবে তিনি মনে করেন ঐতিহাসিকভাবে নারীবাদ সাদা নারীদের জীবনমান উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে। তাই বরঞ্চ তিনি ‘খারাপ নারীবাদী’ হিসেবেই পরিচিত হতে চান। তার আকাঙ্ক্ষা নারী ও পুরুষ একে অপরকে খাটো না করেই সমান অধিকার ও সুযোগ পাক।
রোক্সানা গে’র এই বইটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। নারীবাদী ধ্যানধারণার অনেক দুর্বল দিক তিনি প্রকাশ্যে বিশ্লেষণ করেছেন। শুধু নারী নয়, মানুষ হিসেবে সমাজের যে অসংগতিগুলো আলোচনা করা দরকার তা নিজের লেখায় নির্দ্বিধায় তুলে ধরতে বিচলিত হন নি।
- প্রথম অংশ পড়ুন “যে ১০টি বই বৈশ্বিক নারীবাদকে শক্তিশালী করেছে - প্রথম অংশ”
- লেখক ও বইয়ের ছবিগুলো 'গার্ডিয়ান', 'গুডরিড্স' এবং 'উইকিপিডিয়া' থেকে সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম