ওয়েল, কন্ট্রাডিকশন!
প্রথম থেকেই একপ্রকার বোধ-যুক্ত কন্ট্রাডিকশন স্থাপন কইরা আগাইছেন, লেখক। ১১ খানা কবিতার এই ছোট্ট পুস্তিকায় ‘বিসমিল্লাহ্’ কওয়ার আগেই এক কন্ট্রাডিকশন হাজির-নাজিরের নজরানা দেখি আমরা। উৎসর্গে লেখক বলেন, ‘শার্ল বোদলেয়ার এবং একজন শ্যামাপাখি’। মানে বৈপরীত্যের শুরু এখান হইতেই; একলগে ‘এসথেটিক্স’ এবং ‘প্রগাঢ় বিষণ্ণতারে’ শব্দমালায় একলগে গাঁইথা লেখক জানান দিলেন, এই বহি’র কবিতাগুলার বৈপরীত্যের যাত্রা শুরু করলাম। ফি আমানিল্লাহ!
যে পড়তেছেন বসি এই রিবিয়ুখানা; কইতেই পারেন, ‘কন্ট্রাডিকশন’ এর বোধগম্য তর্জমা কি হইবে? তাহাঁদের সুবিধার্থে বলা যায়, ইহার বোধগম্যতার বঙ্গান্তর আমার দিক হইতেঃ ‘স্ব-বিরোধ’। আপনার দিক হইতে মূল কবিতার বহি পাঠ করা ব্যাতিরেক যাহাই দাঁড়া করাইবেন, নিপাট ধান্ধাবাজি হইবে।
#টিপ্পনী ৩
লেখক, ‘কনফেশন অব নভেম্বর’ নামের কবিতায় বলতেছেন, ‘যে মানুষ ভালোবাসা জানে/ তার জন্য আমার দুঃখ হয় খুব’ আবার একই লগে বলতেছেন ‘বুলিয়ান এক্সপ্রেশন’ কবিতায়, ‘একজন মানুষের মাঝে দ্বৈতভাবে/বাস করেন শয়তান ও ভগবান’। সুবিবেচক পাঠক খেয়াল কইরা দেখেন, যদি এক রূহে দুই পদের বসবাস হয়, তাহা হইলে না তার ভালোবাসা জানা লইয়া দুঃখ করা যায়, না সে ভগবান হইল সেইটা নিয়া বড়ত্ব করা যায়! বস্তুত, পয়লা কবিতা ‘মানুষ’-এ লেখক এর কিছুটা দায় উন্মোচন করবার পারছেন। লেখক বলেন, ‘মানুষ বৃক্ষ নয়, বৃক্ষের তো শেকড় থাকে’। ফলে, এই যে ‘কসমোলজি’র সত্যনিষ্ঠ বয়ান, সেখান হইতেই বুঝতে পারি এই বৈপরীত্য রইয়া যাইবে মৃতকাল অবধি। লেখক কিংবা কসমোলজি, কেহই এই দশা এড়াইতে পারবেন না। দশা যে এড়ানো যাইবে না, এই বিষয়ে লেখক বিলকুল ওয়াকিবহাল। লেখক তবুও বলেন,
...বিশ্বাস করুন প্রভু আপনাকেতো, ‘ধ্রুপদী প্রেমিকা’ হারাইয়া গেছে, ইহা লইয়া এত খণ্ডের শোকগ্রস্থ-কোলাহল কেনো? লেখক তো এই দশা সম্পর্কে পূর্ব হইতেই অবগত আছেন। লেখক নিজেই জানেন এবং বলেন প্রভুর অস্তিত্ব নিষ্ক্রিয়; সাথে-সাথে এই ঠাডাও ফ্যালেন প্রভুর উপরে, প্রভুর খামখেয়ালির কার্যেই প্রেমিকা হারাইয়া গেছেন! এইভাবে লেখক ‘কন্ট্রাডিকশন’ হইতে ‘নিয়তি’র সিঁড়ির দিকে ধাপে-ধাপে আগাইতে শুরু করলেন।
ঘেন্নার পেছনে তেমন কোনো মহৎ তাত্ত্বিক কারণ নেই
আমি আপনাকে ঘেন্না করি কারণ, আপনি
এবং আপনাদের নিষ্ক্রিয় অস্তিত্বে
আমার ধ্রুপদী প্রেমিকা হারিয়ে গেছে। (ম্যানহোল)
#টিপ্পনী ২
যাহা কিছুই নিয়তির দিকে ধাবিত করে তাহাই কালশেষে দেখা যায়, ‘আত্ম-জৈবনিক’ হইয়া উঠিতেছে। ‘আমার বাবা’, ‘প্রেমিকার বাবা’, ‘ভেজিটেরিয়ান’, ‘ড্রিমার’, এ সকল কবিতা শেষ পর্যন্ত নিয়তির ঘেরাটোপে বান্ধা পইড়া আত্ম-জৈবনিক হইয়া উঠে। ১১ খানা কবিতার মধ্যে বোধ করি সবচে’ স্বাদু কবিতাখানার নাম হইলঃ প্রেমিকার বাবা। লেখকের অবস্থান, প্রেমিকার বাবার ক্লাস-কনশাসনেস লগে কলোনিয়াল হ্যাংওভার কাটাইতে না পারার নাকউঁচা ভাব সকল নকশা-ই ধরা খায় এই কবিতার ফ্লেকে। সবচে’ সমস্যা হইয়া দাঁড়ায় প্রেমিকার বাবার ‘সেলফ-সেন্টারড’ মনোভাব; অর্থাৎ আত্মপ্রেমীতা। কিন্তু লেখক প্রেমিকার বাবারে জমিনে নামাইয়া আনবার লাগি বলেন, ‘অথচ উক্ত চরিত্রদ্বয়ের প্রত্যেকেই তারই মতন খায়, ঘুমায় এবং হাগে।’
উল্লেখ করি, ‘প্রেমিকার বাবা’রে লেখক আলগা সম্মান দেখান নাই। তাই, ‘তারই মতো’-রচনার সময় লেখকের আনকনশাস কনসাশনেসে ‘তার’-এর উপর চন্দ্রবিন্দুর (ঁ) মতাদর্শ গায়েব কইরা দেন!
এবং,
চলুন এক কাজ করি, মানচিত্র থেকে বাইরেআহারে আমার অস্তিত্ব লইয়া টানাটানি! হায়, গজুরাম হরেরাম পূজারী।
গিয়ে দেখি-পৃথিবীটা কার? (ড্রিমার)
#টীকা ১
তবুও লেখকের লগে সুর মিলাইয়া তিলাওয়াত করি,
...কিন্তু এখানে উল্লেখ্য যে, রাবণ একই
সাথে রামায়ণের ভিলেন এবং মেঘনাদবধের হিরো ছিলেন। (প্রেমিকার বাবা)
-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-
নভেম্বর মাসের কনফেশন
অসীম নন্দন
প্রচ্ছদশিল্পী : নবী হোসেন
প্রকাশক : চৈতন্য
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৬
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৯
আইএসবিএন : 9789849204213
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম