আল-আমীন রাসেল
লিখেছেন সমকালীন সময়ের এক সম্ভাবনাময় কথাকার, নাম পান্থজন জাহাঙ্গীর। পেশাগত দিকটাকে টার্গেট করে তিনি যে চমক কিশোর পাঠকদের দেখিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসার শতভাগ দাবি রাখে। পেশায় তিনি শিক্ষক, তাঁর কাজ মানুষ গড়া; সেই গুরু-দায়িত্বের সূচনা লগ্নের শিষ্যের জন্য তিনি জন্ম দিয়েছেন এই সাহিত্য সন্তানটির। বললে মোটেও অমূলক হবে না যে, 'সক্রেটিসের ভাবশিষ্য' গ্রন্থটি কথাকারের প্রথম সাহিত্য সন্তানও বটে!
গল্পগ্রন্থটি কৈশোরকাল অতিবাহিত করা ছেলেপুলেদের মনে দারুণ ছাপ ফেলবে। পড়তে পড়তে অনেকে হয়তো বলে উঠবে:
সে কি! এটা তো আমারই গল্প!আসলেই গল্পগুলি এমনই কৈশোর-জীবন ঘনিষ্ট। ছোট ছোট উনিশটি আখ্যানধর্মী গল্পে উঠেছে এসেছে কৈশোর জীবনের দুর্দান্ত প্রতিচ্ছবি কিংবা গাঢ় জলছাপ।
বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কমরুদ্দিন আহমদ। বইটির পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে তিনি এক জায়গায় বলেছেন:
তবে এসবের মাঝে ব্যতিক্রমী লেখা হিসেবে আমি সোনার দাঁত নামক গল্পটির দিকে বিশেষভাবে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইব, কারণ এই গল্পটা পড়ার পর এমন একটা "তা কী করে হয়!" অনুভূতির রেশ থেকে যায়, যেটা অতুলনীয়, এ যেন ভূত-ভয় আর খুনখারাপির বাইরে এক অন্যরকম পৃথিবীর গল্প।আমিও ঠিক তেমনটা বলতে চাই, ঈষৎ ঠাট্টাময় মানুষটা সারাজীবনের আয় রোজগার দিয়ে বুড়ো বয়সে দুটি সোনার দাঁত লাগিয়ে নিল; কিন্তু হায়! নেশাখোর মাস্তানের হাত থেকে তার সোনার দাঁত জোড়া রক্ষা পেল না; বিয়ে করাও তাই এ জন্মে হলো না, সোনা মিয়ার। কৈশোর থেকে বুড়ো বয়স অবধি সে এ গল্পে পরিহাসের পাত্র হিশেবে প্রধান চরিত্রের ভূমিকা পালন করেছে। যেটা সব বয়সী পাঠককে খুব করে টানবে বলে বিশ্বাস হচ্ছে আমার।
গ্রন্থটির 'উড়ালপঙ্খী' গল্পটা দুরন্তপনা পড়াশুনায় অমনোযোগী ছাত্রটি এক নিমিষে মনোযোগী পাঠকের মতোন বুদ হয়ে পড়বে। কৈশোরের সমস্ত আবেগ দিয়ে যে একজন কিশোর কোনো পাখিকে কতখানি ভালোবাসতে জানে, হঠাৎ সেই বিশ্বাসের ঘরে অবিশ্বাসের মশাল জ্বালিয়ে যে পাখিটা কিশোরকে ফাঁকিও দিতে পারে, পালিয়ে যেতে পারে- এটা বিশ্বাস করতেই হবে; গল্পটা পড়ার পর। কিশোর মনে বেশ দাগ কাটবে গল্পটি।
আর নামগল্প 'সক্রেটিসের ভাবশিষ্য' যে মেধাবী কিশোর-কিশোরীদের সমমনা ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করবে- এটা বলাই যায়। কৌতুহলপ্রিয়, প্রশ্নবাজ এক কিশোর কিভাবে শিক্ষকদের নাস্তানাবুদ করতে জানে, গল্পকার সেই ছবি এঁকেছেন শব্দের ক্যানভাসে। গল্পটি পাঠক পড়বেন আর হাসবেন, আবার পড়বেন আবার হাসবেন; এমনি মজার গল্প এটা।
এই বইয়ের সবচে' সার্থক ও পাওয়ারফুল গল্পের নাম 'সুমন স্যারের এন্টিবায়োটিক' ; বিপথগামী, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটা মোক্ষম গল্প এটি। শিক্ষাগুরুর কড়া শাসন, কল্যাণকামী অপমান যে মেধাবী শিক্ষার্থী ধরতে জানে, সে জীবনটাকে গড়তেও জানে; শত বাধাকে পেরিয়ে সে ডেকে আনে সফলতার সোনালি সূর্য। গল্পটার শরীরের নেপথ্যে সে কথায় লুকিয়ে আছে।
এমনি করে বাজা গাই, বাঘ মামা, ভালোবাসা দিবসে টিকটিকিটা-সহ প্রত্যেকটা গল্পই সকল বয়সী পাঠককে একটি বার্তা পৌঁছে দিবে, যেটা সার্থক গল্পগুলিতে থাকবার কথা। সে অর্থে তরুণ শিক্ষক ও গল্পকার পান্থজন জাহাঙ্গীর একজন সার্থক গল্পকার; সার্থক তাঁর প্রথম সাহিত্যসন্তান 'সক্রেটিসের ভাবশিষ্য।'
মোস্তাফিজ কারিগরের আঁকা প্রচ্ছদে 'এক' কম আশি পৃষ্ঠার এই বইটি একটি গল্প সংকলন, ২০১৮ সালে প্রকাশ করেছে অগ্রদূত প্রকাশনী। বইটির গায়ে মূল্য হিশেবে লেখা রয়েছে মাত্র দু'শ টাকা।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম