চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে | ফয়সাল আদনান

চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে | ফয়সাল আদনান

আলোচকঃ মুজিব মেহদী

প্রায় কিছুই না-বলতে চেয়ে বাঁকিয়ে চুরিয়ে, আড়াল তৈরি করে, চেনা বিষয়ের মুখে অচেনা মুখোশ পরিয়ে বলাবলির নমুনা পাওয়া যায় ফয়সাল আদনানের 'চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে' নামক কবিতার বইয়ে। ফলে পথে পথে অায়াসসাধ্য উপায়ে নির্মিত অর্থফাটলের মুখোমুখি হতে হয় এর পাঠককে। 'অয়ি মৃত্যু, খুব গান শোনাও আজ। যেহেতু ভাঁড়ার খুলেছে তোমার আর ভেতরে অসংখ্য হাড়ের সমুদ্র, খুব গান শোনাও আজ।'

পড়ে পরে কিছু একটা আঁচ করতে চাইলে পড়তে হয় এর স্পেসও; শব্দ থেকে শব্দের এবং বাক্য থেকে বাক্যের। কাজেই কবিতার স্পষ্টার্থ আবিষ্কারে আগ্রহী পাঠকদের এখানে কিছুটা হতাশ হওয়া লাগতে পারে।

এই বাস্তবতার পাশে বইয়ের টানাগদ্যে রচিত কবিতাগুলো কোনো কোনো পাঠকের কাছে বেশি হৃদয়গ্রাহী হতে পারে বলে মনে হয়, যেখানে অর্থফাটল কম থাকার একটা ছল অন্তত আছে; যেমন, 'জলজ বিষ্যুৎবার', 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট', 'একটি বক্তব্যধর্মী কবিতা', ইত্যাদি।

চেষ্টা আছে বাক্যনির্মাণে ক্রিয়ার ব্যবহার কমিয়ে দেবারও। বইয়ে এরকম যা কিছু উদাহরণ আছে, সেগুলো সুফলদায়কই হয়েছে বলা যায়। 'দেশলাই কাঠি আসলে রকেট/ তার গন্তব্য প্যারাবোলিক/ ছাইয়ের সমুদ্র'।

অবলীলায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায় ফয়সাল আদনানে; এবং তা কেবল কবিতার নামে নয়, শরীরেও। 'এমন লাউড, এমন লিউড সাইলেন্স, যেন একটা গাড়ি হর্ন বাজাতে বাজাতে আমাকে পিষে চলে গেছে।' পাশাপাশি অনেক কবিতায়ই বাংলা ও ইংরেজি শব্দ মিলিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য শব্দবন্ধ; যেমন 'কিন্নর ডেথমেটাল', 'বুদ্বুদের রেডিয়াস', 'বৃষ্টির মিনিয়েচার', 'অনন্ত ডিপ্রেশন', 'গম্ভীর মিউট', ইত্যাদি।

চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে
ফয়সাল আদনান

প্রকাশক : উলুখড়
প্রচ্ছদ : রাজীব দত্ত

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ