১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। এজন্য তিনি পুরনো ধ্যান ধারনাকে পরিবর্তন করে নতুন চেতনা গ্রহণ করেন। আধুনিক মননশীলতায় বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চান। তাঁর এই ভাবনাগুলো বিভিন্ন বক্তৃতায় মানুষকে জানিয়ে দেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য নতুন ভাবনা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি সকলকে বোঝানোর জন্য যে কথাগুলি বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছেন সেগুলোর সংকলন ও বিশ্লেষণ করেছেন 'নূর উন নবী বাবু' তাঁর "বঙ্গবন্ধুর কর্মযজ্ঞ ও দ্বিতীয় বিপ্লব" বইতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শাসনভার হাতে নিয়ে সকল ধর্ম বর্ণ জাতিকে সাথে নিয়ে একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ঘুষ, দূর্নীতি সহ বিভিন্ন অপরাধের মূলোৎপাটন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন আইনের শাসন। আর সে লক্ষ্যে শুরু করেছিলেন বিভিন্ন কর্মতৎপরতা। তাঁর সেসব পদক্ষেপের বর্ণনা পাওয়া যায় বিভিন্ন বক্তৃতায়।
লেখক 'নূর উন নবী বাবু' তেরোটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন বক্তৃতার উল্লেখ ও সেগুলোর বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করেছেন। প্রথম অধ্যায়েই লেখক ঘোষণা করেন:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। তিনি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাই এনে দেননি, তাঁর আদর্শবাদী চিন্তা ও দর্শনই বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। বাঙালি যত বেশি শেখ মুজিবের চিন্তা ও দর্শন ধারণ করবে ততই সুখী-সমৃদ্ধিশালী হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে হলে শেখ মুজিবের আদর্শ প্রতিষ্ঠা ছাড়া গত্যন্তর নেই।বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সমাজ সাম্যবাদী হোক। গ্রামে গ্রামে সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ হোক। দেশের উন্নয়নে সকল জনগণের সক্রিয় আন্তরিক অংশগ্রহণ থাকুক। তিনি চেয়েছিলেন 'শোষিতের গণতন্ত্র' প্রতিষ্ঠা করতে। দেশে 'সমবায়ী গ্রাম কর্মসূচী' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে দেশ বিনির্মাণে অংশ নেবার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি জানতেন বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। গ্রামের উন্নয়ন ঘটলে তা রূপান্তরিত হবে দেশের উন্নয়নে। বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি সেকথাগুলোই সকলকে জানাতে চেয়েছেন।
মোট তেরটি অধ্যায়ে বইটি বিভক্ত। গ্রন্থশেষে ২টি পরিশিষ্ট দেয়া আছে। বইয়ের অধ্যায়গুলো নিম্নরূপ:
- বঙ্গবন্ধুর কর্মযজ্ঞ ও দ্বিতীয় বিপ্লব
- স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আমল
- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথন
- বঙ্গবন্ধু সরকারের আমল (১৯৭২-১৯৭৫)
- রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
- হুগো শ্যাভেজ সম্পর্কে
- ৭ই মার্চের ভাষণ
- রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ এর ভাষণ
- বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ কমিটিতে বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণ
- ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দ্বিতীয় বিপ্লবের ঘোষণা করেন।
- বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার (সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবীর আহাদ, মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক)
- জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন উপলক্ষে আমাদের শপথ
- ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ বিকেলে বঙ্গবন্ধুর সাথে আবদুর রব সেরনিয়াবাদ এবং সন্ধ্যায় শেখ ফজলুল হক মনির সাথে আলাপচারিতা
নূর উন নবী বাবু তাঁর "বঙ্গবন্ধুর কর্মযজ্ঞ ও দ্বিতীয় বিপ্লব" বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের এই বিশেষ অধ্যায়টির কথা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বিষয়টিকে পাঠকের সামনে উন্মোচন করেছেন। জানিয়েছেন বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন স্বপ্নের কথা। তিনি প্রত্যাশা করেন - বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি আন্তরিকতা ও ভালোবাসা সকলকে উজ্জীবিত করুক। বাংলাদেশের আপামর জনগণ বঙ্গবন্ধুর মতো করে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আলোকশিখায় উদ্দীপিত হোক।
বইয়ের ছাপার মান ভাল। পেপারব্যাক কভারের হওয়ায় দাম সাধ্যের মধ্যে রাখা সম্ভব হয়েছে। এজন্য প্রকাশককে ধন্যবাদ। বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে লাল রঙ এর বিপরীতে কালো রং এর সঠিক সমন্বয় প্রচ্ছদটিকে আকর্ষণীয় করেছে। এজন্য প্রচ্ছদশিল্পী রাশেদুন্নবী সবুজ অবশ্যই প্রশংসা পেতে পারেন। আমি বইটির ব্যাপক প্রচার ও পঠন প্রত্যাশা করি।
বঙ্গবন্ধুর কর্মযজ্ঞ ও দ্বিতীয় বিপ্লব
নূর উন নবী বাবু
প্রচ্ছদ: রাশেদুন্নবী সবুজ
প্রকাশকাল: অমর একুশে বইমেলা, ২০১৯
প্রকাশনী: বাঙ্ময় প্রকাশনা
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১০৮
মূল্য: ২০০ টাকা
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম