নাসরীন জাহানের রচনাশৈলী'র সাথে বিদগ্ধ পাঠকমাত্রই পরিচিত আছেন। তিনি নারীর অন্তর্গত অনুভূতিগুলোকে যেভাবে দক্ষ শল্যবিদের মতো উন্মোচিত করেন তার কৌশল অনেকের অজানা। আমরা পাঠককুল বিমুগ্ধ না হয়ে পারিনা।
তাঁর ঈশ্বরের বামহাত পাঠকসমাজে বহুল পঠিত একটি উপন্যাস। এর দ্বিতীয় ফ্ল্যাপে যা লেখা আছে তা নিম্নরূপ:
জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন একাকী এক কক্ষে বছর বছর বাস করে দেবলীনা। ঘরে তার প্রিয় মৃত সহোদর সৌম্যর ফ্রেম করা ছবি, একদা যে বোনের জন্য আসমানে উঠে ঘুড্ডি ছিঁড়ে আনতে গিয়ে অনন্তলোকে হারিয়ে গিয়েছিল। 'ফ্রেমে বাঁধা সৌম্যর ছবি'- দেবলীনার চেতনায় সৌম্য জীবিত। একাকী কক্ষে তার সাথেই দেবলীনার দিনরাতের কথোপকথন। দু'ভাইবোনের শৈশব ছিল তেপান্তরের মতোই উন্মুক্ত। একদা জঘন্য দানবীয় অন্ধকারে সব ঢেকে যেতে থাকলে পালাতে পালাতে দেবলীনা এসে দাঁড়িয়েছিল বহুবর্ণ ক্যামেরার সামনে। যখন অভিনেত্রী, যখন চারপাশে উজ্জ্বল আলো আর মুখরতা, এক দুঃসহ স্ক্যান্ডালের শিকার হয়ে ফের ডুবতে থাকে অতল গহ্বরে।
হাত বাড়ান এই দেশেরই বিশিষ্ট প্রবীণ লেখক নাসিমুল হক।
প্রাসাদময় বাড়ির আরেক কক্ষে তারও একাকী বাস। একদা নুসরাত বানু নামে এক প্রগতিশীল আর স্বামীচরণ ভক্তা নারী সাথে মধুর ছিল তাঁর দাম্পত্য বাস। একসময় মৃত্যু হয় নুসরাত বানুর। নিজ স্টাডিরুমে ফ্রেমে ছবি বাঁধাই নুসরাত বানুও নাসিমুল হকের চেতনায় জীবিত। দিনের পর দিন একটি উপন্যাস শুরু করতে না পারার যাবতীয় যন্ত্রণা তিনি নুসরাতের সাথে শেয়ার করেন।
দু'জনেরই ফ্রেম ভেঙে যায়। দেবলিনা সামনে এসে দাঁড়ায় যুবক সৌম্য, যে অন্ধকার জগৎ থেকে দেবলীনাকে ফের সূর্য আর জ্যোৎস্নার নিচে দাঁড় করায়। সৌম্য'র সাথে গভীর প্রেমে ভেসে যায় দেবলীনা। আর নাসিমুল হকের সামনে এসে দাঁড়ায় হাজার মাইল দূর থেকে আসা জীবিত নুসরাত বানু। সেও তাঁকে প্রস্তর থেকে ভেঙে বাতাস পৃথিবীর পথ ধরে ছুটতে শেখায়। দেব-মন একাকার হতে থাকে।
এইসব আলোছায়াময় অদ্ভুত সব সম্পর্কের পরতে পরতে ঢুকে যায় এই দেশের বর্তমান রাজনীতির হতশ্রী এইডস বিষয়ক বিপন্নতা, জঘন্য স্বার্থপর অবস্থান চিত্র। ফের আলো অথবা অন্ধকারে ঢেকে যায় সব।
ঈশ্বরের বামহাত
নাসরীন জাহান
সুপাঠ্য এই বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ, ঢাকা।
প্রকাশকাল: ২০০৭,
মূল্য:২৫০,
পৃষ্ঠা:২০০
ISBN: 984 863 430 1
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম