ইব্রাহিম খলিল সরকার
মানব সভ্যতার নিকষকালো আঁধারকে দূরীভূত করতে শুভ্র আলোর প্রদীপ হাতে ছুটে চলছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ডঃ সালভাতর। পৃথিবীর একভাগ স্হলের অপ্রতুল সম্পদকেন্দ্রিক মানবজাতির দ্বন্দ্বময় জীবনধারার সীমারেখা সীমাহীন করতে তিনভাগ সমুদ্রকেও বাসযোগ্য করার স্বপ্ন দেখেন সালভাতর। সুনিপুণ সার্জারির মধ্য দিয়ে ফুসফুসওয়ালা মানব শিশুর দেহে জোড়া লাগালেন শিশু হাঙরের ফুলকা। সৃষ্টি হলো 'দরিয়ার দানো' খ্যাত উভচর মানুষ ইকথিয়াণ্ডর।
জলে-স্হলে দুরন্ত দুর্বার গতিতে ছুটে চললো দরিয়ার দানো। মনি-মুক্তা সহ দুর্লভ সম্পদে ভরা সাগর-মহাসাগর হয়ে উঠলো মানুষের। সালভাতরের স্বপ্ন হলো সত্যি। এগিয়ে চললো ঘটনার উচ্ছল ধারা। শৈশব ও কৈশোরের সীমানা ভেঙে ইকথিয়াণ্ডর ধেয়ে চলে যৌবনের পরম পাথারে। পরোপকারী প্রেমের টানে টানটান হয় টানের সুতা। সে সুতায় আটকা পড়ে গুত্তিয়েরে। উভচর আর স্থলচরের অসম প্রেম হয়ে ওঠে গভীর থেকে গভীরতর।
জীবনধারার সীমারেখা সীমাহীন করতে তিনভাগ সমুদ্রকেও বাসযোগ্য করার স্বপ্ন দেখেন সালভাতর।
তারপর! তারপর এগিয়ে এলো গুত্তিয়েরের পালকপিতা বালতাজার, বিশ্বাসঘাতক ক্রিস্টো আর মুক্তালোভী জরিতা। মানব সভ্যতার এত্তবড় বিজয়কে ব্যক্তিস্বার্থে লুফে নিতে চাইলো ওরা। পিছিয়ে রইলোনা গীর্জার বিশপ জুয়ান-দা-গার্সিলাসোও। 'স্থলের জীবকে উভচর করার সার্জারি ঈশ্বরবিরোধী' অভিযোগে ধৃত হলো সালভাতর আর তার সফল সৃষ্টি ইকথিয়াণ্ডর।
দিন যায়। বিচারের নামে প্রাহসনিক জটে চেপে যায় সৃষ্টি এবং স্রষ্টা। প্রহসনের চরম মাত্রায় বিশপীয় রক্তচক্ষুর জিঘাংসু দৃষ্টি যখন ইকথিয়াণ্ডরের উপর নিবদ্ধ, ঠিক সেই মুহূর্তে বিজ্ঞানের সহায়ক জেলরের দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ইকথিয়াণ্ডর পাড়ি জমায় প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবালদ্বীপে। আর গুত্তিয়েরে! জুরিতার বলয় ছিন্ন করে ইকথিয়াণ্ডরের অসম প্রেমের টান বুকে আগলে নিয়ে বন্ধু অলসনের হাত ধরে আর্জেন্টিনা ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত অন্ততঃ পাশের দেশ প্যারাগুয়েতে। অন্যদিকে, কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষে সালভাতর ফিরে যান আপন ঠিকানায়। থমকে যায় উভচর মানুষের নাটকীয় উপাখ্যান।
যুগেযুগে এভাবেই স্বার্থান্ধ নির্বোধ ধর্মগুরু কর্তৃক থেঁতলে গেছে বিজ্ঞান, মন্থর হয়েছে মানবজাতির পথচলা। অবসরে বইটি পড়ুন। আশাকরি ভালো লাগবে।
উভচর মানুষ
আলেক্সান্দর বেলায়েভ
প্রথম প্রকাশ-১৯২৮
অনুবাদ- ননী ভৌমিক
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম