৩২০ প্রকারের পরিযায়ী পাখি নিয়ে একমাত্র বই 'সীমান্ত দীপু' রচিত "বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি"

৩২০ প্রকারের পরিযায়ী পাখি নিয়ে একমাত্র বই 'সীমান্ত দীপু' রচিত "বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি"


বাংলাদেশের জলবায়ূ ও পরিবেশ পাখিবান্ধব। সেকারণে এদেশে দেখা যায় সাতশত প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে তিনশত বিশ প্রজাতির পাখি পরিযায়ী। প্রচলিত ভাষায় এদেরকে অতিথি পাখি বলা হয়। বাংলাদেশে যে সব অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি দেখা যায়, তাদের নিয়ে বাংলা ভাষায় বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ বইয়ের পরিমাণ খুব বেশি নেই। ‘সীমান্ত দীপু’ লিখিত “বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি” বইটি সেই অভাব অনেকাংশে পূরণ করেছে।

নিজের বই নিয়ে লেখক তার ‘লেখকের কথা’ শীর্ষক ভূমিকায় আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন-


‘বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি’ গ্রন্থটি পাঠ করে পরিযায়ী পাখি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সামান্য আগ্রহ জন্মালেই আমার আগামী দিনে কাজ করার আগ্রহটা অনেকগুণ বেড়ে যাবে এবং আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

 

বইয়ের সূচিপত্র দেখলে বোঝা যায় 'পরিযায়ী পাখি' বিষয়টির ব্যাপ্তি মোটেও কম নয়।



সূচিপত্র
  • পরিযায়ী পাখি ও তার আবাসস্থল
    • বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি
    • বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখির পরিবার
    • বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল
  • পরিযায়ী পাখির দৈহিক বিবরণ
  • চেনা অচেনা পরিযায়ী পাখি
  • পরিযায়ী পাখির তালিকা
  • গ্রন্থপঞ্জি
  • নির্ঘন্ট


পাখির প্রতি সামান্য আগ্রহ আছে এমন প্রত্যেকে সূচিপত্রটি দেখলে খুশি হবে। ‘পরিযায়ী পাখি ও তার আবাসস্থল’ শীর্ষক শিরোনামে অধীনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। ‘বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি’ নামের অধ্যায়ে ছোট ছোট প্রশ্ন বা ছোট আকারের বর্ণনামূলক বাক্যে বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। পরিযায়ী পাখি কাদের বলে?, চলার পথের পাখি, পরিযায়ী পাখি কেন এদেশে আসে, বাংলাদেশের মূল্যবান কয়েকটি পরিযায়ী পাখি, পরিযায়ী পাখির গুরুত্ব, জলচর পাখিশুমারি কেন?,  বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি নিয়ে বিভ্রান্তি, পরিযায়ী পাখিতে রিং পড়ানো, ট্রান্সমিটার বসানো, পাখি দেখার কৌশল শেখা কেন জরুরি, কীভাবে দেখবেন পাখি দেখা ইত্যাদি নামের 'টীকা' আকারের ছোট ছোট রচনায় অনেক মূল্যবান তথ্য আছে। নবীন পাঠক এগুলো পড়লেই পাখি দেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। ‘বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখির পরিবার’ শীর্ষক অধ্যায়ে রয়েছে ২৪টি পরিবারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখির পালকের গঠন
বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখির পালকের গঠন

‘বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল’ নামের রচনায় দেশের বেশ কয়েকটি পাখিবান্ধব অঞ্চলের বর্ণনা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকা, সিলেটের হাওড়-বাওড়-বিল, বন, নদী প্রভৃতি অঞ্চলে পাখিদের পরিমাণ, দেখা যাওয়ার সুযোগ, কোন অঞ্চলে কোন ধরণের পাখি বেশি দেখা যায়- এরকম বিভিন্ন প্রকারের তথ্য রয়েছে। এই অধ্যায়ের শেষে রয়েছে “বাংলাদেশে জলচর পাখির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও জিপিএস লোকেশন”। এটা সংযোজন করে লেখক খুব ভাল কাজ করেছেন। পঞ্চাশটির অধিক জায়গার খোঁজ এই একটিমাত্র তালিকা থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়াও এই অধ্যায়ে বেশ কয়েকটি নদী ও পরিযায়ী পাখির ফ্লাইওয়ে রুট (এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া) ইত্যাদির মানচিত্র রয়েছে।

‘পরিযায়ী পাখির দৈহিক বিবরণ’
অধ্যায়টি খুবই আকর্ষণীয়। বেশ কয়েকটি ছবিতে পাখির দৈহিক বিবরণ, পাখির ঠোঁট ও মাথার বিবরণ, ডানার বিবরণ, বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখির পালক, পাখির পায়ের বিবরণ, পরিযায়ী হাঁসের উড়ে যাবার ধরন, সৈকত পাখির উড়ে যাবার ধরন ইত্যাদির বর্ণনা করা হয়েছে। ‘পরিযায়ী পাখি ও তার আবাসস্থল’ এই শিরোনামটির অধীনে মোট ৬৬টি পৃষ্ঠায় পাখি সম্পর্কে যত প্রকারের আলোচনা করা যায়, তার সবগুলিকে লেখক একটু করে হলেও ছুঁয়ে গিয়েছেন।


~~~~~~~~~~#~~~~~~~~~~
পাখি সম্পর্কে আরো কয়েকটি বইয়ের আলোচনা
~~~~~~~~~~#~~~~~~~~~~


পরিযায়ী পাখির পায়ের গঠন
পরিযায়ী পাখির পায়ের গঠন

  “চেনা অচেনা পরিযায়ী পাখি” অধ্যায়টি এই বইয়ের প্রধান অংশ। এখানে মোট ৯৮টি পরিযায়ী পাখির বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পাখি সম্পর্কে একটু ভূমিকা, প্রজাতি শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট, স্বভাব ও প্রজননকেন্দ্রিক আচরণ, আবাসস্থল, শুমারি তথ্য সহ প্রয়োজনীয় সব তথ্যই রয়েছে। বাংলাদেশে এর আবাসস্থল সহ দৈহিক মাপ যেমন দৈর্ঘ্য, ওজন, ডানা, ঠোঁট, পা, লেজ প্রভৃতির তথ্য আলাদাভাবে দুটি রঙিন বক্সে উল্লেখ করা হয়েছে। পাখিসম্পর্কিত তথ্যগুলো এভাবে  উপস্থাপন করায় বইটি আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে। একটি পাখির জন্য দুইটি পাতা বরাদ্দ করায় প্রত্যেকের রয়েছে একাধিক ছবি।

“পরিযায়ী পাখির তালিকা”
অধ্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে দেখা পাওয়া ৩২০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির নাম ও ছবি। বাংলা ও ইংরেজি নামের পাশাপাশি রয়েছে বৈজ্ঞানিক নাম। সংক্ষিপ্ত Status Code দিয়ে প্রতিটি পাখির বৈশিষ্ট্য এবং বর্তমান অবস্থা বোঝানো হয়েছে। স্বল্প হলেও পাখিকে চেনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পাওয়া যায়। বইয়ের শেষে সংযুক্ত গ্রন্থপঞ্জিনির্ঘন্ট পাঠককে পাখি বিষয়ক তথ্যমালার আরও কাছাকাছি নিয়ে যাবে।

বইয়ের ব্লার্ব-এ প্রকাশক এই বই সম্পর্কে সংক্ষেপে যেসব কথা বলেছেন তা একবার পড়ে নেয়া যেতে পারে।


  • পরিযায়ী পাখি নিয়ে এটিই বাংলাদেশে প্রথম বই।
  • বাংলাদেশে যেসব পরিযায়ী পাখি দেখা যায় তাদের ৯ শতাধিক রঙিন ছবি বইটিতে ব্যবহার করা হয়েছে।
  • পরিযায়ী পাখি পরিবারের বিবরণ ও তাদের আবাসস্থলের বর্ণনা।
  • ৯৮টি জনপ্রিয় পাখির প্রজাতি শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য, স্বভাব ও প্রজনন, শুমারি তথ্য, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক আবাসস্থলের বর্ণনা।
  • প্রতিটি প্রজাতির বাংলাদেশে বিস্তৃতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রঙিন ম্যাপ।
  • প্রজাতি শনাক্তকরণের জন্য হাতে আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
  • বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখির পূর্ণাঙ্গ তালিকা।

 

৩২০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির তালিকা
৩২০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির তালিকা
সার্বিকভাবে বলা যায় “বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি” বইটি এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সারা বৎসরে বাংলাদেশে যত প্রকারের পরিযায়ী পাখি ভ্রমণ করতে আসে তাদের সম্পর্কে একটি তথ্যবহুল হ্যান্ডবুকের কাজ করবে। বইয়ের মূল্য ১৮০০/= টাকা বেশ বেশি মনে হয়। কিন্তু হাতে নিলে এই ধারণা দূর হবে। কারণ বইটি গঠনগত দিক থেকে বেশ শক্তপোক্ত। হার্ড কভার মলাট এর উপরে রয়েছে ল্যামিনেশন কাগজের জ্যাকেট। আর ভিতরের পাতাগুলো গ্লোসি কাগজে চাররঙে ছাপানো। প্রত্যেকটি পাতা রঙিন; চাররঙা অফসেট প্রিন্ট। শেষের আট পৃষ্ঠার নির্ঘন্ট ছাড়া প্রত্যেক পৃষ্ঠায় একক বা দলবদ্ধ  পাখির বিভিন্ন ভঙ্গিমার ছবি আছে। ফটোপ্রিন্ট মানের ছবি ও রঙিন ফন্টে ছাপানো ৯.২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৭.৩ ইঞ্চি প্রস্থের বইটি আকারে বেশ বড়; আবার কাগজগুলো মোটা হওয়ায় ওজনেও একটু ভারী। এরকম বর্ণিল তথ্যসমৃদ্ধ পাখির ছবিসমৃদ্ধ বই হাতে নিতেও ভাল লাগে। পাখিপ্রেমী নতুন প্রজন্মকে এই বই পরিযায়ী পাখি দেখতে বাংলাদেশে নদী-নালা-খাল-বিল ও বনে বাদাড়ে নেমে পড়ার আহ্বান জানাবে। বাংলাদেশের সীমানায় দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখিগুলোর কোনটাই তার নিকট অপরিচিত থাকবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

>>>>>>>>>>0<<<<<<<<<<

বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি
সীমান্ত দীপু


প্রচ্ছদ ও কম্পিউটার গ্রাফিক্সঃ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জাহিদ
প্রচ্ছদলিপিঃ দীপক রায়

প্রকাশকঃ অবসর, ঢাকা।
প্রথম পকাশঃ ২০১২
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৯৬
মূল্যঃ ১৮০০/=টাকা
ISBN: 978-984-8793-59-6

* কপিরাইট প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা না থাকায় ছবিগুলোর রেজুল্যুশন কমিয়ে দেয়া হল।

মতামত:_

2 মন্তব্যসমূহ

মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম