বাংলা ভাষার ইতিহাসে দীনেশচন্দ্র সেন এক স্মরণীয় নাম। যারা নিবিড়ভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস পড়েন নি, তাদের কাছে অবশ্য তিনি অপরিচিত থেকে যেতে পারেন। কারণ অন্যান্য ইতিহাসবিদগণের চাইতে তিনি কিছুটা কম পরিচিত। এর কারণ তিনি নিজ অবস্থানে স্বতন্ত্র। অন্যান্যদের চাইতে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ে তিনি ছিলেন ভিন্নমতাবলম্বী।
- রাজসভায় বাঙ্গালা ভাষার অনাদর
- মনসাদেবীর গান
- চণ্ডী-মঙ্গল
- সূর্য্যের গান
- শীতলা-মঙ্গল
- শিবঠাকুরের গান
- ধর্ম্ম-মঙ্গল-কাব্য
- গোরক্ষ-বিজয়
- ময়নামতীর গান
- শূন্য-পুরাণ
- ডাক ও খনার বচর
- বিদ্যাসুন্দর
- বাঙ্গালা সাহিত্যের আদিযুগ ও পরযুগ
- অনুবাদের যুগ
- আদিযুগের সমাজ
- জয়দেব, বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস
- চৈতন্যদেব
- বৈষ্ণব-সমাজ
- বৈষ্ণব-পদাবলী
- বাঙ্গালা-গদ্য
১৯২২ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়া এই বই বহুদিন বাজারে ছিল না। বইটির আর কোন সংস্করণ হয়েছিল কী না তাও জানা যায় না। ফলে পুরাতন পাঠাগারসমূহেও এই বই সহজলভ্য ছিল না। বইটি সম্পর্কে ব্লার্বে লেখা আছে -
সরল বাঙ্গালা সাহিত্য প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২২ সালে। এই বইতে দীনেশচন্দ্র সেন বালক-বালিকা ও সাধারণ পাঠকদের কাছে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগে রচিত বাংলা সাহিত্যের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছেন গল্পের ভঙ্গিতে। মনসা দেবীর সঙ্গে শিবভক্ত চাঁদ সওদাগরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মৃত লখিন্দরের জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য বেহুলার অধ্যবসায়, কালকেতু-ফুল্লরার জীবনসংগ্রাম, শিবের কাছ থেকে গোপনে মীননাথের মহাজ্ঞান লাভ ও স্বর্গচ্যুতি, গোবিন্দচন্দ্রের সন্ন্যাস গ্রহণ-এই সব কাহিনি তিনি বলেছেন সাদামাটা-আটপৌরে ভাষায়। ফলে গল্পের মতো উপভোগ্য হয়ে উঠেছে ইতিহাস পাঠ।
দীনেশচন্দ্র সেন মনে করতেন চর্যাপদের ভাষা বাংলা নয়। সে জন্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বর্ণনায় তিনি তাঁর কোন বইতে চর্যাপদের কথা উল্লেখ করেন নি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখার প্রথম প্রচেষ্টা তারই। তাঁর ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ নামের বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৯৬ সালে। এটা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য লেখা। প্রচুর তথ্য উপাত্ত, বিপুল পরিমাণ পুঁথির বিবরণ- আলোচনা- বিশ্লেষণ এই বইতে রয়েছে। ইংরেজি ভাষায় রচিত History of Bengal Language and Literature বইটিও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস চর্চাার এক অতীব প্রয়োজনীয় বই। এরকম তথ্যসমৃদ্ধ বই থাকার পরও এই বই রচনা ও প্রকাশের কারণ হিসেবে তিনি ভূমিকায় বলেন -
আমার রচিত বঙ্গভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে ইংরাজী ও বাঙ্গালাভাষায় রচিত বইগুলি খুব বড়। তাহাতে ঐতিহাসিক তত্ত্ব নিরূপণের চেষ্টায় রচনা-পদ্ধতিটি অনেকস্থলে বালকবালিকা ও সাধারণের উপযোগী হয় নাই; এইকথা অনেকের মুখে শুনিয়াছি। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি আমাকে অপেক্ষাকৃত স্বল্পায়তন বালকদের উপযোগী একখানি বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস প্রণয়ন করিতে অনুরোধ করিয়াছেন। গল্পচ্ছলে সরল ভাষায় দেশী সাহিত্যের ইতিহাসটা তাহাদিগকে জানান দরকার, এই উদ্দেশ্যে বইখানি লিখিত হইয়াছে।
বইখানি পাঠ করলে বোঝা যায়, লেখকের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কারণ তিনি এই বইতে প্রচলিত ইতিহাস বইয়ের মত করে পুরাতন ঘটনা বর্ণনা করেন নি। তার সচেতন গল্পভঙ্গি ও সরস ভাষাশৈলী দুয়ে মিলে বইটি উপভোগ্য হয়েছে। অল্পবয়সী বা নবীন পাঠক স্বল্পায়াসে বাংলা ভাষার ইতিহাসের মূল ঘটনাগুলো জানতে পারবে। বুঝতে পারবে ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকগুলো। ছোটদের জন্য দীনেশচন্দ্রের প্রচেষ্টা পরবর্তীতে অন্য ইতিহাসবিদগণকে কেন উৎসাহিত করে নি, তা বলা কঠিন। তবে বাংলা ভাষার আর এক বরেণ্য লেখক হুমায়ুন আজাদ ছোটদের কথা ভেবেছেন। রচনা করেছেন "লাল নীল দীপাবলি বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী" নামের এক মনোজ্ঞ বই। বাঙালির নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে যতো বেশি জানবে; দেশ ও সংস্কৃতির জন্য ততই মঙ্গল। দীনেশচন্দ্র সেন এর ‘সরল বাঙ্গালা সাহিত্য’ বইটি প্রকাশ করে 'বাতিঘর' প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে।
=০=০=০=০=০=
সরল বাঙ্গালা সাহিত্য
দীনেশচন্দ্র সেন
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
প্রথম প্রকাশ: ১৯২২
বাতিঘর সংস্করণ: ২০১৬
প্রকাশক: বাতিঘর, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
পৃষ্ঠা: ১৫২
মূল্য: ২৫০ টাকা
ISBN: 978-984-8825-44-0
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম