নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং সাহিত্যবিষয়ক বিভিন্ন ভাবনা নিয়ে হিমাদ্রী চৌধুরী কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।
====================
❑ সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷
উত্তরঃ জ্বি ধন্যবাদ। বই প্রকাশ নিয়ে অনুভূতির কথা বলতে গেলে আমি একটু বিব্রত হয়ে পড়ি কারণ সময়ের ভিন্নতায় অনুভব গুলো বদলে যায়। কখনো মনে হয় আমি ঠিক পথেই হাঁটছি আবার কখনো মনে হয় কতটুকু দিতে পারলাম, আমি যা বলতে চেয়েছি তার পুরোটাই বলতে পেরেছি তো — এইসব। সত্যি বলতে আমি মনে করি, যেহেতু শব্দগুলো আমি লিখেছি End of the day এর সমস্ত দায়ও আমার।
❑ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?
উত্তরঃ অনেক দিন ধরে লিখছি।ছোটবেলায় কয়েকটি জাতীয় দৈনিকেও লেখা ছাপা হতো। কিন্তু যখন নিজের চোখেরই দেখতে পাই বুর্জোয়া মিডিয়ার সংস্কৃতি তখন সেখানে থেকে সরে আসি। তারপর যুক্ত হয়ে পড়ি লিটলম্যাগের সঙ্গে। মূলত এই লিটলম্যাগ চর্চার মধ্য দিয়েই আমার কবিতা জীবনে বাঁক এসেছে। অনেক মানুষের মধ্যে আমায় নিয়ে প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে। কিছু কিছু প্রকাশক ভালোবেসে পান্ডুলিপিও চাচ্ছিল। এভাবেই হঠাৎ করে বইটা বের হয়ে গেলো।
❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
উত্তরঃ না। সেরকম কোন জটিলতায় পড়তে হয়নি। আমি আগেই বলেছি কিছু কিছু প্রকাশনী নিজ থেকেই বই ছাপাতে চায়। হয়তো আমাকে ভালোবাসে বলেই... হা.. হা... হা...
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?
উত্তরঃ আমি নিজের লেখা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। আমি মনে করি প্রত্যেকের মধ্যেই এই বিশ্বাসটা থাকা প্রয়োজন। এবং বর্তমান সময়ের অনেকের লেখা নিয়েই আমি দারুণ উচ্ছসিত। আমার বিশ্বাস বাংলা কবিতায় দুর্দান্ত একটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। কবিতা আবার ঘুরে দাঁড়াবে, দাঁড়াবেই...
❑ কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।
উত্তরঃ আসলে কেন যেন কবিতাতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ভাব প্রকাশের অন্যান্য মাধ্যম গুলোর মধ্যে কবিতাই আমার কাছে অগ্রগণ্য। আমি কবিতায় নিজেকে খুঁজে পাই। কবিতা আমাকে বেঁচে থাকার আনন্দ দেয়।
❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
মূলত এই লিটলম্যাগ চর্চার মধ্য দিয়েই আমার কবিতা জীবনে বাঁক এসেছে।
উত্তরঃ হ্যাঁ অবশ্যই লেখার জন্যে একটা দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন, ব্যাপক পাঠের প্রয়োজন। বর্তমানে অনেকের মধ্যেই প্রস্তুতিহীন একটা তাড়া লক্ষ্য করছি এবং এটা এক ধরনের অশনিসংকেত। গল্প, কবিতা, অনুবাদ, প্রবন্ধ যাই হোক না কেন প্রস্তুতিটা ফরজে আইন। লেখালেখির জন্যে আমাদের যাপন এবং মনন — দুই ক্ষেত্রেই প্রস্তুতিটা জরুরী। আমিও নিজেকে ক্রমাগত ভাঙছি, নতুন করে গড়ার চেষ্টা করছি। আর নিজেকে ভাঙার এই প্রবণতা টা না থাকলে ভাল কিছু আশাও করা যায় না।❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
উত্তরঃ পান্ডুলিপি গুছাতে আমার দীর্ঘ একটি সময় লেগেছে। বারবার পরিবর্তন করেছি।নতুন করে লেখা যুক্ত করেছি। মূলত আমি আমার নির্মাণে আমার কথা গুলো বলতে চেয়েছি। আর এই দীর্ঘ সময় ধরে আমার পাশে কিছু মানুষ ছিলেন যাদের মধ্যে কবি অনিবার্ণ সূর্যকান্ত দার কাছে আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ। দাদা আমাকে খুব ভালোবাসেন। স্নেহে, শাসনে আমাকে আগলে রাখেন।
❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
উত্তরঃ অবশ্যই শিল্প। দায়টা শিল্পের কাছেই হওয়া উচিত। কবি কোন ভৃত্য নয় যে পাঠকের কাছে দায়বদ্ধ হবেন। কবি পথপ্রদর্শক, কবিই দ্রষ্টা। সুতরাং যদি কোন দায় থাকে তবে সেটা শিল্পের প্রতিই থাকে।
❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
উত্তরঃ আমি তৃপ্ত নই। একদম তৃপ্ত নই। কামনা করি আমার ভিতর কখনো মুগ্ধতা নামক এই পাপ কিংবা অভিশাপটি জন্ম না নিক।
❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তরঃ এই বিষয়ের সঙ্গে আমি একদমই দ্বিমত।বই হবে বারোমাসি। শুধু মাত্র বইমেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশ সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। আর এজন্যে প্রকাশনী গুলোর সদিচ্ছাই পুরো প্রেক্ষাপট বদলে দিতে পারে।
===============
অন্ধ আইনের চক্ষু দান
হিমাদ্রী চৌধুরী
প্রচ্ছদঃ ইবনে শামস
প্রকাশনীঃ আনন্দম
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৩৫ টাকা।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম