বই প্রকাশের অনুভূতি এবং সমসাময়িক সাহিত্য প্রসঙ্গে বিবিধ ভাবনা নিয়ে নৈরিৎ ইমু কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।
====================
❑ সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷
:: বই প্রকাশের অনুভূতি বলতে কিছু লেখা একত্রে পাওয়া যাবে এই স্বস্থিটা দারুণ। নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসি যে, প্রতিটি পাণ্ডুলিপি একটা নির্দিষ্ট সময়ের উৎকৃষ্ট প্রচেষ্টা মাত্র।
❑ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?
:: প্রকাশ করবো, মানে বই করতেই হবে এসব ভেবে টেবে তো আর লেখা হয় না। আমি মূলত লেখার জন্যই লিখি, এবং সেখানেই শেষ। পরবর্তীতে বই করার সিদ্ধান্তে এলে মহাকালের দিকে নিজেকে নিক্ষেপ করার মতো প্রক্রিয়াতে কঠোর হই, বাছাই করি। বই প্রকাশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তখনই নিই যখন আমি ওই পাণ্ডুলিপি নিয়ে নিজেকে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী পাই।
❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
:: না। মূলত প্রকাশকের কারণেই আমাকে ভাবতে হইছে একটা বই করতে যাচ্ছি তাইলে এবার!
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?
:: আগের প্রশ্নেই বলেছি আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা পরিষ্কার না হলে আমি পাণ্ডুলিপি করতাম না। আমার ব্যক্তিগত জীবনে বহু ফ্লাকচ্যুয়েট আছে, কবিতায় তার প্রতিফলন আছে কিনা জানি না তবে যে চর্চা আমি করি, যা বলি তা আত্মবিশ্বাসের জায়গাটাকে প্রেজেন্ট করে।
❑ কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।
:: শুধুমাত্র ভাব প্রকাশের জন্যই যে শিল্পের মাধ্যম হিসেবে কবিতা করাকে বেছে নিয়েছি এইটা ঠিক না। নিখাঁদ ভাব প্রকাশ বিষয়টা এক জিনিস। কিন্তু কবিতা তো সাধনা, চর্চার বিষয়। বোধ জাগ্রত হওয়া আর সেইমতে নিজেকে চালিত করা যেখানে এক নয়, সেখানে সামগ্রিকতার সমন্বয় ঘটানোর প্রচেষ্টাতে কবিতা আমাকে টানে। এসব বিশ্লেষণ করতে গেলে বড় পরিসরে সাক্ষাৎকার দরকার হয়। অন্যদিকে গদ্য বা অন্য মাধ্যমে যে সেটা সম্ভবপর না তাও নয়। কবিতা আমার রক্ত তরান্বিত করে, মগজ কামড়ে থাকে। সেই টানকে উপেক্ষা করা সম্ভবপর নয়।
❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
সাহিত্য যদি একটা পাহাড় হয়, তবে আমি সেই পাহাড় সম্মুখে রেখে তার পাদদেশে দাঁড়াই। মাথা উঁচু করি আর ভাবি—
❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
:: আমার পাণ্ডুলিপি তো আমার ফিলোসোফিকেই রিপ্রেজেন্ট করে, আসলে সেই টোনটা যা আমার বলছি ওটা তো আমারই ফিলোসোফি। নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক পাণ্ডুলিপিতে আমি বেশ আগ্রহী আর কি। তো প্রকৃতি, যাপন-বাস্তব টানাপোড়েন, মানুষ এসবে মনোযোগী হয়েছি বলা যায়।
❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
:: দায়বদ্ধতার বিষয়টিতে কঠিন বিচার বিশ্লেষণ আমার নাই। আমি শিল্পচর্চা করি, মনের আনন্দে। কবিতা বানানোর জিনিস না। চর্চার এই পর্যায়ে সবারই নিজস্ব কিছু ট্যাকনিক আছে। আর সহজেই এসে পড়ে কম্যুনিকেশনের ব্যাপার। তাই শিল্পের সাথে পাঠকের কম্যুনিকেশন ঘটেই। ফলে আমি আপামর পাঠক কি চায় তার থেকে নিজের শিল্পচৈতন্যের দিকে বেশি মনোযোগী।
❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
:: নিজেকে আবিস্কারের মধ্যদিয়ে আমার লেখা প্রক্রিয়া। একধরণের অস্তিত্বের পরীক্ষা। যেহেতু আমি সেই সংকটাপন্ন মুহূর্তের ভেতর দিয়ে লিখি এবং পাঠক হিসেবে তারই মধ্যে আটকে যাই। আমার ধারণা বহুমুখী বা অনির্দিষ্ট অন্তর্মুখীতা এই কবিতাগুলোকে গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকার বিষয় থেকে মুক্তি দিতে পারে। পাঠক হিসেবে এটাই পাই৷
❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
:: আমাদের মূল পাঠকরা এখন প্রায়ই ভার্চুয়াল, তারা নিয়মিত হয়ত তাদের পছন্দের লেখককে পড়ছেন। কিন্তু মেলার আবেদনটা অন্যভাবেই থেকে যাচ্ছে। অন্য সময়ে বই হলেও সমস্যা না। বইমেলার বিষয়টা সেই তুলনায় পাঠক লেখক উভয়ের জন্য অনেক বিস্তৃত।
===============
না মর্মরে না মর্সিয়ায়
নৈরিৎ ইমু
প্রকাশক — চন্দ্রবিন্দু
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান স্টল নং ৬০৭
প্রচ্ছদ — কাজী যুবাইর মাহমুদ
বইয়ের দাম — ১২০ টাকা
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম