কবিতাগুলো, বই হিসেবে প্রকাশের প্রেক্ষাপট ও নিজের সাহিত্যচিন্তার অন্তরালে যা আছে তা অকপটে প্রকাশ করেছেন গ্রন্থগত.কম এর সামনে।
===============
❑ সম্প্রতি আপনার কবিতার বই পোড়ামাটির বিষাদবাড়ি প্রকাশিত হলো৷ কেমন লাগছে? কী ভাবছেন?
হান্নান কল্লোল: সৃষ্টির স্বভাবজাত আনন্দমুখরতা যেমন জারি আছে, অপারগতার তীব্র কষ্টবোধও রিনঝিনিয়ে উঠছে। আমার রিডার কম থাকায় অবশ্য আত্মপীড়ন থেকে অনেকটাই বেঁচে গেছি।
❑ এই বই প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
হান্নান কল্লোল: আগের বইগুলোর সমপার্শ্বিকে আরো একটার যোজন ঘটাতেই প্রকাশ করে ফেলেছি— এই আর কি!
❑ বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রকাশকের দিক থেকে কোনরকম জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
হান্নান কল্লোল: তেমন হয়নি, তবুও বলি: মুনাফা লালসা কমিয়ে প্রকাশকগণ বেশি করে লেখকসংবেদী হতেন যদি!
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কেমন?
হান্নান কল্লোল: পড়ে কেউ— হয়নি কিছুই— এমন লিখি না কখনোই।
❑ কবিতা কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমের আশ্রয় নিতে পারতেন।
হান্নান কল্লোল: আমি মনে করি যে সংস্কৃতিজগতে স্বতঃসক্রিয় শিল্পের জীবনবাস্তব শীর্ষধারাটিই সাহিত্য। সাহিত্যশিল্পের অগ্রগামি শাখাটি কবিতা। আর কবিতা তো ব্যক্তিমননের নিভৃত মর্মমূল থেকেই উৎসারিত। হয়তো তাই কবিতাও লিখি গল্প-প্রবন্ধের পাশাপাশি।
❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
হান্নান কল্লোল: লেখার প্রয়োজনে অধ্যয়নে ও অনুধাবনে প্রস্তুতিপর্বেই আছি, বাকি জীবন থাকতেও চাইছি। ভাবাতুর প্রকাশতাড়নায় লেখালেখির সূত্রপাত তিন যুগ আগে হলেও দুই-তিনবারে বিরতি নিয়েছি বছর বিশেক এবং এর পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনাও আঁচ করছি।
❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
হান্নান কল্লোল: বইয়ের নামের সাথে সাজুয্য রেখে লেখা নির্বাচনের পর ভাববিষয়ের সামঞ্জস্যপূর্ণ বিন্যাসে স্বস্তিকর পাঠক্রমে সাজাতে চেষ্টা করেছি।
❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
হান্নান কল্লোল: সৃষ্টির মূল দায় তো মানুষের কাছেই। রিডার যেহেতু আমার জগতকল্পের উদ্দিষ্টজন, তিনিই প্রথমে বিবেচ্য হন। তবে আমার রচিত সাহিত্য পঠনপাঠনে যাতে শিল্পনন্দনের প্রতিভাস মিলে সেদিকেও যথাপ্রয়াস অব্যাহত থাকে।
❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
সৃষ্টিশীল কি মননশীল যা-কিছুই লিখি বারবার পড়ি, পরিমার্জন করি
হান্নান কল্লোল: সৃষ্টিশীল কি মননশীল যা-কিছুই লিখি বারবার পড়ি, পরিমার্জন করি, প্রকাশ পেলে প্রাণে প্রাণে সম্প্রচারিত হবে কি না ভাবি, মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে লেখাটিকে অনুমোদন দিয়ে থাকি। এরপর নৈর্ব্যক্তিকতায় আমার বইদের আংশিকভাবে মাঝেমধ্যে পড়ি। তখন আনন্দ জাগে ভাবনাতরঙ্গে। মনে হতে থাকে প্রতিটি বইয়ে যেনো নিজের নিয়মে জগত গড়ে তুলছি। প্রকাশিত পোড়ামাটির বিষাদবাড়ি পড়ার পর অনুভবের তেমন ব্যতিক্রম ঘটেনি।❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
হান্নান কল্লোল: মেলাকেন্দ্রিক প্রকাশনার প্রতি ইতিবাচক সার্কেলপ্রীতি থাকায় ব্যাপারটাকে আমি আনন্দের দুরবিনচোখে দেখি এবং উৎসবমুখরতা খুঁজে পেতে থাকি।
===============
সতেরো থেকে একুশ, তাপিত তরুণ বয়সে (১৯৮৫-৮৯) রচিত কবিতা-অকবিতার সংকলন বারুদবসন্ত, ২০১৭ সালে প্রকাশের পর বাইশ থেকে সাতাশ (১৯৯০-৯৫)— জীবনের উন্মাতাল সময়কালের নির্বাচিত কবিতা-প্রতিকবিতা নিয়ে পোড়ামাটির বিষাদবাড়ি। এ ছাড়াও লেখকের তিনটি গল্পগ্রন্থ রয়েছে এবং প্রস্তুত আছে গল্প-উপন্যাস-কবিতা-অনুবাদসহ চার-পাঁচটি পাণ্ডুলিপি।
4 মন্তব্যসমূহ
হান্নান কল্লোলের কবিতা নতুন ব্যাকরণাশ্রিত দর্শনের উপস্থিতি পাঠককে ভাবায়। তাঁর কবিতা আমার ভালো লাগে।
উত্তরমুছুনচমৎকার বললেন কবি
মুছুনগভীর বোধের আছর আছে কবির উপর। তাকে আবার ক্রমাগত ঘষতে থাকেন। শব্দ প্রযোজনায় অদ্ভুত খুঁতখুঁত। নির্মাণ সুন্দর। ভাল্লাগে তাঁর কবিতা।
উত্তরমুছুনবাহ
মুছুনমার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম