বইমলাতে নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং নিজের সাহিত্যভাবনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পলিয়ার ওয়াহিদ কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।
====================
❑ সম্প্রতি আপনার কবিতার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷
## প্রতিবারই বই প্রকাশিত হলে মনে হয় এই বুঝি আমার প্রথম বই। তবে এবার তার চেয়ে ভালো বোধ করছি কারণ এবাবের (দোআঁশ মাটির কোকিল) কবিতার বইটি বিশেষ কারণে আমার কাছে স্পেশাল।
❑ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?
## পাণ্ডুলিপি রেডি করে রাখছিলাম অনেক দিন। এবার ভাবলাম বই করব না। তবু হঠাৎ প্রকাশক আবু এম ইউসুফ ভাই বললেন পলিয়ার তোমার বই করতে চাই। দিতে বাধ্য হলাম। করে ভালোই করেছি মনে হচ্ছে।
❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
## প্রশ্নটির উত্তর বোধহয় উপরের উত্তরে কভার করে। একটিই শুধু সমস্যা প্রকাশকের কাছ থেকে কোনো সৌজন্য সংখ্যা পাইনি। নিজে বিশ কপি কিনে নিয়েছি। তাও ত্রিশ পারসেন্ট ছাড়ে!
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?
সব পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতে ইচ্ছে হয়।
আমি নিজের একটা ভাষা নির্মাণ করতে চাই। স্বতন্ত্র একটা দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজেকে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার লেখা নিয়ে মাঝে মাঝে খুবই উন্নত বোধ করি আবার মাঝে মাঝে মনে হয় ধুর কিচ্ছু হয়নি! সব পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতে ইচ্ছে হয়। তবুও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আছে বলে তো দশ বছরে তিনটা বই প্রকাশ করতে সাহস পেলাম। আমি নিজেকে অতিক্রম করতে চাই সর্বদা। সাহিত্যে আমি প্রতিযোগিতা বিশ্বাস করি না। যার টা সেই লিখবে। আপনার এক লাইন কবিতা আমি সারাজীবনেও লিখতে পারব না আবার আমার একটি লাইনও অন্য কেউ লিখতে পারবে না।❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
## অবশ্যই, লেখকের প্রস্তুতি সারাজীবন। এটা পরীক্ষার হল নয় যে একটা বিষয় মুখস্ত করে লিখে আসবেন। শিল্পী বা লেখকের তো জানার শেষ নেই। বরং আপনি যত বেশি জানবেন ততই বুঝতে পারবেন আপনি কত বেশি জানেন না! শিল্পী যে, সে নিজে নিজে গড়ে ওঠে। তার প্রস্তুতি তার জীবনে অটোমেটিক গেঁঁথে থাকে। আর প্রকৃতির কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষা নেন ও অভিজ্ঞতার পাঠের মাধ্যমে নিজেকে ঝালাই করে নেন। লেখকের প্রস্তুতির শেষ নেই। আমি নিজেকে ভাঙি নিজেকে গড়ি।
❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
## যে কবিতা আমাকে রিপেজেন্ট করে। বিশেষভাবে ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’-এর কবিতাগুলো কৃষিজ। এখানে মাটি সংলগ্ন ভাষা, কৃষকের বীজ ও ধান গানের সংগীত গাইতে চেয়েছি আমি। চেয়েছি কীভাবে হারিয়ে ফেলছে মাটি তার উর্বরতা, দেশি বীজের ভান্ডার। আমি নিজেকে কোকিল হিশেবে মূলত দোআঁশ মাটির গানই গাইতে চেয়েছি। যা আমার শিকড় সংলগ্ন। যেখানে আমার নাড়ি পোতা সেই ভিটেমাটির সুরে আর স্মৃতির আড়তে আমি ঢুকে পড়েছি বেঘোরে। ফলে পাঠক যেন তার নিজের ভাষণ খুজে পান সে দিকে গুরুত্ব দিয়েছি।
❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
## সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন বটে। এ ক্ষেত্রে আমি মন ও মগজ দুদিকেই খেয়াল রাখি। কারণ, শিল্প ও পাঠক আসলে দুই জিনিস। কারণ যখন লেখা হয় তখন নিজের আনন্দে লেখা হয় কিন্তু লেখার পর পাঠকের কাছে চলে যায়। দুই জায়গায়ই আমার ফিফটি ফিফটি দায় আছে। তবে শেষ পর্যন্ত শিল্পের জন্যই শিল্প টিকে যায়। আর এটাও সত্য যে, শিল্পর জন্য শিল্পটাই শেষ পর্যন্ত পাঠক গ্রহণ করে। দেরিতে হলেও।
❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
## আমি নিজের প্রকাশিত বই প্রথম থেকেই বালিশের কাছে রাখি। প্রতিদিন পড়ি। এবং নিজেকে পাঠক ভেবে আনন্দিত হই। এমন কি মাঝে মাঝে মনে হয় এমন ভালো কবিতা আমি কীভাবে লিখলাম! আন্দোলিত হই। আমার এমন অনেক কবিতা আছে ধুর বইতে রাখা ঠিক হয়নি। এ রকম মনে হয়। তবে এটা সব শিল্পীর ক্ষেত্রেই ঘটে। কারণ এটা না হলে লেখক লিখতে পারেন না।
❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
## বইমেলা একটা ফ্যাক্ট এখন। আমি বই করেছি ডিসেম্বরে। এবং বইমেলায় আগেই ১০ কপি বই হাজার দশের টাকায় বিক্রি করেছি। এখন সপ্তাহে একদিন মেলায় যাই। আর যার খুশি সে কেনে। আমি না থাকলে যে বই কিনবে সেই প্রকৃত পাঠক। লেখককে দেখে আমি বই কিনি না। আমি নিজেও লেখকের উপস্থিতে বই কিনি না। ফলে মেলা যেহেতু উৎসব এটাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশিত হবেই । তবে অনেক প্রকাশক আস্তে আস্তে এই ট্রেক থেকে বের হয়ে আসছেন। এটা ভালো। তবে যে যা-ই বলুক না কেন, লেখকদের রয়েলিটির ব্যাপারে প্রকাশকদের আরো সজাগ হওয়ার প্রয়োজন আছে। কারণ তার ব্যবসা করেন কিন্তু লেখকদের দিকে খেয়াল রাখেন না!
===============
দোআঁশ মাটির কোকিল
পলিয়ার ওয়াহিদ
প্রচ্ছদ : আল নোমান
প্রকাশনী: অনুপ্রাণন
পৃষ্ঠা ৬৪
মূল্য: ১৮০টাকা
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম