এই বৎসরে নতুন বই প্রকাশকালীন অনুভূতি এবং সমসাময়িক সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে শেখর দেব কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।
====================
❑ সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷
শেখর দেবঃ গ্রন্থমেলা ২০২০-এ আমার একটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, গ্রন্থের নাম 'পরান কথার ঘ্রাণ'। এটা আমার ৫ম বই ও ৪র্থ কবিতাগ্রন্থ। একটা বইয়ের পেছনে লেখক প্রকাশকের সম্মিলিত প্রয়াস থাকে। বইয়ের পাণ্ডুলিপি ঘোচানোর কাজটা যুগপৎ পরিশ্রম ও আনন্দের৷ বই প্রকাশের পর সেই পরিশ্রম নিমেষে ভুলে গিয়ে আনন্দে ভেসে যাই। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
❑ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?
শেখর দেবঃ আগের কবিতাগ্রন্থ 'আরাধ্য আকাশবৃত্তি' প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ খ্রিঃ। বিগত দুই বছরে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে। বিগত দুই বছর চেষ্টা করেছি ছন্দের নিয়মের ভেতর থেকে কবিতা রচনা করার। যাপন ও পাঠের অভিজ্ঞতাগুলোকে কবিতায় ধরেছি বহুমুখী মাত্রা হতে। ভেতর থেকে তাগিদ কাজ করেছে প্রকাশের। তাছাড়া প্রকাশক এগিয়ে এসেছেন বইটি করার জন্য। কবিতাগুলো হতে বাছাইকৃত ৫০ টা কবিতা দিয়ে বইটি করেছি।
❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
শেখর দেবঃ একদম না। দাঁড়িকমা প্রকাশনির আব্দুল হামিদ নাহিদ ভাই আমার পূর্বের দুটি বই( প্রবন্ধঃ কবিতার করিডোর, কবিতাঃ আরাধ্য আকাশবৃত্তি) করে দিয়েছেন। এবারেও তিনি এগিয়ে এলেন। তাই কোন ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়নি।
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?
শেখর দেবঃ ১০০%। আত্মবিশ্বাস না থাকলে ৫ টা বই প্রকাশ করার সাহস হতো না। একজন কবি নিজের কবিতায় সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে নিজের কথাগুলো বলতে চান বলেই কবিতা লেখেন। আমার ক্ষেত্রেও তাই। না হয় বাংলা সাহিত্যে কবি ও কবিতার বিশাল ভাণ্ডার থাকা সত্ত্বেও কবিতা লিখছি কেন?
❑ কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।
শেখর দেবঃ লিখতে এসে অজান্তেই কবিতার প্রেমে পড়ে গেছি। ভাব প্রকাশের জন্য কবিতাই সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া কেন জানি এ মাধ্যমে লিখেই প্রচুর আত্মতৃপ্তি পাই। তাই কবিতা লিখি।
❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
আমি মনে করি যে কবিতা আমাকে টানবে না সে কবিতা পাঠকেরও ভালো লাগবে না
শেখর দেবঃ লেখার জন্য প্রস্তুতি খুব জরুরি। তবে আমি লিখবো তাই প্রস্তুতি নিতে হবে, পাঠ নিতে হবে, এভাবে হয় না বিষয়টি। লিখতে লিখতে পড়তে পড়তে একজন লেখক নিজেকে প্রস্তুত করেন। তাছাড়া প্রস্তুতির এখানে শেষ বলার সুযোগও নেই। আমার প্রস্তুতির কথা বলতে গেলে, মূলত কবিতা লিখতে গিয়ে যখন বুঝতে পারলাম হচ্ছে না, তখন কবিতা নিয়ে ব্যপক পাঠ শুরু করি। এই শুরুর সময়টা ছিল ২০০৪। ঠিক দশ বছর পর অর্থাৎ ২০১৪ সালে আমার প্রথম কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ' প্রত্নচর্চার পাঠশালা'। প্রকাশ করেছিলেন পাঠসূত্র। উক্ত এক দশক মূলত প্রস্তুতি পর্বই ছিল।❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
শেখর দেবঃ আগেই বলেছি এবার প্রকাশিত গ্রন্থটি মূলত নিখুঁত ছন্দের দিকে জোর দিয়েছি। অনেকগুলো কবিতাই ছিল, তার মধ্যে যে কবিতাগুলো আমাকে টানে আর ছন্দের পতন নেই সেই কবিতাগুলোই বাছাই করেছি। আমি মনে করি যে কবিতা আমাকে টানবে না সে কবিতা পাঠকেরও ভালো লাগবে না। তাই কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটু নির্মোহ হতে হয়েছে।
❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
শেখর দেবঃ শিল্প ও নিজের কাছেই আমার দায়বদ্ধতা। পাঠক যদি সেটা গ্রহণ করে তা আমার বাড়তি পাওনা। তাছাড়া পাঠক তো ব্যক্তি আমি'র প্রতিফলন।
❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
শেখর দেবঃ কবির কবিতার প্রথম পাঠক তো কবি নিজেই, তবে বই প্রকাশিত হবার পর নতুন করে কবিতাগুলো পড়তে ইচ্ছে করে। ভালোই লাগে।
❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
শেখর দেবঃ আমাদের সংস্কৃতি এখন দিবস কেন্দ্রিক। কয়দিন আগে গেল ভালোবাসা দিবস, চারদিক যেন ভালোবাসা উপচে পড়ছে। বই মেলায় বই প্রকাশ করার বিষয়টিও কাছাকাছি। তবে এই ধারা থেকে বের হয়ে আসা উচিত৷ সারা বছর বই প্রকাশিত হবে। সারা বছর বই উৎসব হবে। বাংলা একাডেমির উচিত ৬৪ টা জেলায় বছর জুড়ে মেলা করা। তাইলে শুধু ফেব্রুয়ারিতেই লেখক, প্রকাশকদের দৌড়াদৌড়ি কমে আসবে।
-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-
পরান কথার ঘ্রাণ
শেখর দেব
প্রকাশকঃ দাঁড়িকমা, স্টল-৬৯৮
প্রচ্ছদঃ নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
মূল্যঃ ১৫০/-
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম