'রাউলা' নিয়ে নাজমুস সাকিব রহমান এর সাক্ষাৎকার

'রাউলা' কাব্য নিয়ে নাজমুস সাকিব রহমান এর সাক্ষাৎকার
এবারের ২০২০ সালের অমর একুশে বইমেলায় নাজমুস সাকিব রহমান এর কবিতাবই "রাউলা" প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাময় এই বইটি প্রকাশ করেছে খড়িমাটি।

নাজমুস সাকিব রহমান তার নতুন বই প্রকাশকালের মুহুর্তে গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাহিত্যের বিভিন্ন দিকের উপর আলোকপাত করেছেন।

====================

❑  সম্প্রতি আপনার কবিতার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷

আমি এখন আশপাশের মানুষের অনুভূতি দেখছি। তাদের মধ্যে খুশি খুশি ভাব। কয়েকজনের আচরণ দেখে মনে হল, তারা আমার মা হয়ে গেছেন, আর আমি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে ফেলেছি। এখন আমাকে দৌড়ে গিয়ে বলতে হবে―'মা, মা, আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি।' কিন্তু একটা বইয়ের জন্য তো বাংলা সিনেমার সংলাপ বলা যায় না। মেলোড্রামা হয়ে যায়। আমি তাই ভাবছি―যদি আমার বইটা পৃথিবীর লাস্ট বই হত, তাহলে হয়তো সুন্দর একটা অনুভূতি পেতাম।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

লাইফের একটা টাইম মানুষকে একাডেমিক সিভি বানাতে হয়। আমিও বানিয়েছি। প্রথম প্রথম সিভি বানাতে গেলে খুবই বিব্রত হতাম। দেখতাম অনেকের মত দুইটা জন্মদিন নিয়ে বেঁচে আছি। নামের স্পেলিংও ঠিক নেই। এই বিব্রতবোধ থেকে বাঁচতে আমের আচার থেকে লিটেরাচার―যেকোনো কিছু নিয়ে একটা বই করার সিদ্ধান্ত নিই। রাউলা শব্দের অর্থ নয়েজ; আমি এই নয়েজকে সিভি হিসেবে দেখছি।

❑  বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

হুমায়ূন আহমেদ তার উপন্যাসে প্রচুর এপিগ্রাম লিখেছেন। একটা এপিগ্রাম এরকম― 'জীবন সহজ নয়, জটিলও নয়। জীবন জীবনের মতই। আমরাই একে সহজ করি, আমরাই একে জটিল করি।' প্রকাশনা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরও এরকম। আমি নতুন করে রিপিট করছি। প্রকাশনা আসলে সহজ নয়, জটিলও নয়। প্রকাশনা প্রকাশনার মতই। আমরাই একে সহজ করি, আমরাই একে জটিল করি।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

আমার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে। না হলে লিখতে এসে নিজের নাম ব্যবহার করতাম না। যাদের অপছন্দ করি, তাদের নামে লিখতাম। আনফরচুনেটলি তা পারছি না।

❑  কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।

তিনটা কারণে আমি কবিতা লিখি। প্রথম কারণ হচ্ছে, আমি কবিতার আসল নাম জানি। অনেকে জানে না, কবিতার আসল নাম আয়েশা আক্তার। তিনি চুলখোলা রেখে আল মাহমুদের সাথে মক্তবে পড়তে যেতেন।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, জীবনানন্দ দাশের একটা কবিতা : 'এইসব ভাল লাগে।' স্কুল লাইফে থাকতে উইকেটকিপিং করছি―এই সময় কবিতাটা এসে আমার উপর হামলা চালায়। আমি গুরুতর আহত অবস্থায় মাঠের বাইরে গিয়ে পড়ি। টাস্কি খাই। ইংরেজি সাহিত্যের একজন অধ্যাপক ধুতি পরে আমাকে মাঠ থেকে বের করে দিচ্ছেন―এটা আমি এখনো মেনে নিতে পারিনি। যার ফলে আমার বইয়ের প্রথম লেখাতেই জীবনানন্দ দাশের ক্যামিও আছে। সেখানে তাকে খাদক হিসেবে চিহ্নিত করেছি।

আর কবিতা লেখার তৃতীয় ও আসল কারণ হচ্ছে আমি অলস। 'মৌরি' নামে আমার একটা কবিতা আছে। আইডিয়াটা চাইলে ছোটগল্পেও ভরে দিতে পারতাম। তাতে দেড়-দুহাজার শব্দ লিখতে হত। কবিতায় সাড়ে বারো লাইনে শেষ করে দিয়েছি। এগুলা তো অলসতাই।

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

প্রতিটি লেখাই প্রথমবার লেখা হয়।
লেখালেখির প্রস্তুতি বলতে আমি বিকাল পর্যন্ত ঘুমাই। চেষ্টা করি সন্ধ্যায় উঠতে। না লিখতে। আমার কাছে একটা বাংলা অভিধান আছে। মাঝে মাঝে সেটা বালিশের পাশে রাখি। উল্টাই। নেড়ে চেড়ে দেখি। উত্তরটা হালকা হয়ে যাচ্ছে। আসলে কন্টেন্ট অনুযায়ী প্রস্তুতি বদলে যায়। এটা স্পেসিফিক করে বলা সম্ভব না। প্রতিটি লেখাই প্রথমবার লেখা হয়। কাজেই যতদিন ধরেই লিখি না কেন, শেষ পর্যন্ত ভার্জিন থাকি।

❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

ধরুন, রাতে লুঙ্গি পড়ে ঘুমাতে গেছি। সকালে উঠে দেখি লুঙ্গি নেই। এই যে রুমের ভেতর লুঙ্গি হারিয়ে যাচ্ছে―এই প্রসেসটাই আমার কাছে আর্ট। এখন 'তিন পুরুষের লুঙ্গি আমানত শাহ' আরেকজনের কাছে আর্ট নাও হতে পারে। আর পাঠক অদৃশ্য একটা ব্যাপার। কেউ যখন আমাকে বলে, আপনার ওই লেখাটা পড়েছি। আমি বিশ্বাস করি না। ভেবে নিই, বোকা বানাবার চেষ্টা করছে। লেখকের দায় তার লেখার কাছে। একটা বাজে লেখা লিখতে চাইলে তাকে দেখতে হবে, লেখাটা ঠিকমত বাজে হয়েছে কিনা। যেন পৃথিবীর কেউ বলার সাহস না পায়, 'ওই লেখা আমি হলে আরও বাজেভাবে লিখতে পারতাম।'

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

এই প্রশ্নের উত্তর আমার না দেয়া উচিত। কারণ আমার বইও বইমেলা কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলার ভাল-খারাপ এবং পশ্চাৎদিক আছে। আমার কাছে একজন জানতে চেয়েছিলেন এ ব্যাপারে। আমি খুবই লজ্জা পেয়েছি। তাকে বলেছি―আমার বইটা উইপোকাদের জন্য লেখা। আমি চাই, চার-পাঁচ হাজার বইয়ের মধ্যে অন্তত একটা বই তারা নিজেদের মনে করে খাক। তাদেরও চিল করার দরকার আছে।

===============
রাউলা
নাজমুস সাকিব রহমান

প্রকাশক : খড়িমাটি। ঢাকা বইমেলা (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্টল নম্বর ৪৩৪। চট্টগ্রাম বইমেলা ( এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামের সামনে) স্টল নম্বর ১৬৪-১৬৫।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ