বই প্রকাশের অনুভূতি এবং সমসাময়িক সাহিত্য প্রসঙ্গে বিবিধ ভাবনা নিয়ে ইবনে শামস কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।
====================
❑ সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷
# অনুভূতির ব্যাপারে এইভাবে কোন উত্তর আসেনা৷ বই বের হওয়া নিয়ে আরকি। ২০১৮ সালে হইছিলো সামান্যা৷ কারণ, কবিতা অনেক আগে থেকে লেখতেছিলাম বলে পাবলিশড হওয়ার ব্যাপারে ফ্যন্টাসির মতো কিছু কাজ করেনি৷ বই বের হওয়াটা দরকার মনে হইছিলো৷ আর সেটা হয়ে গেছে তেমনি৷
❑ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?
# সিদ্ধান্তে সেভাবে আসিনি কখনো৷ সোয়েব ভাইয়ের সাথে একবার শিল্পকলায় কথা হইতেছিলো৷ উনি চট্টগ্রামে আসছিলেন৷ ২০১৭ এর দিকে৷ তখন বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্যে এমন একটা উঠছিলো যেইটার উত্তরে সোয়েব ভাই কইছিলেন, দশাটা এমন৷ আপনার বই না থাকলে আপনার কথার চারআনা মূল্যায়নও এই উজবুকগুলা করবে না৷ বরং বালের বিশেষজ্ঞ কইয়া মশকরা করে যাবে৷ তখন মনে হইলো বই একটা করা যায়, তো তখন জেব্রাক্রসিং এর লগে চুক্তিতে বই করার সিদ্ধান্ত হয়৷ এবং 'স্বর্গের গালিচায় আগুন' নামে প্রথম বইটা হয়৷
❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
# প্রথম বইটা কেমন বিক্রি হইছিলো কিংবা কতোজন কিনছিলো তার কোন হিশেব আমার কাছে ছিলো না৷ বরং প্রকাশনী নিজের কাছে বই আছে দাবি করলেও তারা যে জায়গায় বই রাখছে প্রত্যেটা জায়গাতেই বই পরবর্তীতে খোঁজ করে পায়নি। অনেকেই আমার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে চাইলেও আমি তার ব্যবস্থা করতে পারি নি৷ এইটা প্রকাশকের সাথে বড় একটা গ্যাপ আমার। তারপরের বইগুলার ব্যাপারে এসে প্রকাশনা নিজের আগ্রহ থেইকাই করছে৷ তাই তেমন সমস্যা হয়নি। তবে 'পুরনো শরাব' বইটা ঘাসফুল থেকে গতবছর আসবার কথা থাকলেও তাদের কিছু অাভ্যন্তরীন সমস্যার কারণে তারা করতে পারে নি। এইটা আমি তাদের সাথে আমার কোন ঝামেলা হিশেবে কখনো দেখিনি৷
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?
# নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস না থাকলে বই করার সিদ্ধান্তে আসতাম না, নিজের প্রতি এইটুকু বিশ্বাস আছে৷ এইটার মূল কারণ আমি কবিতারে ঈঙ্গিত মনে করি। যেমন বাস চালকের হেলপারের লগে চালকের যে সংকেত আদান প্রদান হয়৷ হেলপার কখনো অনিশ্চিত বা দ্বিধা নিয়ে চালকের কাছে ঈঙ্গিত পাঠায় না। নিশ্চিত হয়েই পাঠায়৷ তো আমার নিজেরে হেলপার মনে হয়৷ যে ইঙ্গিত সংগ্রহ করতেছি৷ তাবত দুনিয়ার তাবত বিষয়াদির। একটা প্রচেষ্টা সংগ্রহের৷ আর সংগ্রহ কইরাই সেইটা চালান করতেছি, যেইটা নিয়ে আমি দ্বিধাহীন৷
❑ কবিতা কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।
# ভাব প্রকাশের জন্যে আমার আর্ট পছন্দ। আর কবিতা সংকেত প্রেরণের জন্যে।
❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
আমি চেষ্টা করি সময়ের সাথে একটা বোঝাপড়ায় যাইতে।
# প্রস্তুতি বলতে, সময়ের সাথে বোঝাপড়া মনে করি। তো আমি চেষ্টা করি সময়ের সাথে একটা বোঝাপড়ায় যাইতে। যে বোঝাপড়া আমাকে একটা বিশুদ্ধ সংকেতের সন্ধান দিবে৷ প্রায় তের বছর আগ থেকেই এই লেখালেখির যাত্রা শুরু৷ তখন দারুল মাআরিফে পড়তাম। দীর্ঘ পথ হেঁটে মাদ্রাসা থেকে বহদ্দরহাট মোড়ে এসে অন্যদিগন্ত নামের একটা ম্যাগাজিন আল মাহমুদের লেখা ছাপাইতো, সেটা কিনতে আসতাম৷ এইরকম পড়ার জার্নি থেইকাই লেখাশুরু করা৷❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
# আমার দায়বদ্ধতা নিজের কাছে। বাজারে গিয়া বাজারের প্রতি আমার কোন দায়বদ্ধতা নাই৷ বাজারে গিয়া কে কি কিনলো সেইটা ক্রেতার দায়বদ্ধতা, কে কি বিক্রি করলো সেইটার দায়বদ্ধতা যেমন ক্রেতার নাই, তেমন কে কি কিনলো তার দায়বদ্ধতাও বিক্রেতার নাই। প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা তার নিজের সাথে৷ আমার কবিতা কিংবা শিল্পের যে চর্চা সেইটা মূলত আমার অন্তর্গত আত্মার প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই৷
❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
# পাঠক হিশেবে বই দুইটার গুরুত্বই আমার কাছে আছে। আমার কাছে একটা শান্তির ঈশারা তৈরী করছে অন্তর্গত অসুখ। আর আরবী কবিতার সাথে যোগাযোগের অনেক মাধ্যমের মধ্যে পুরনো শরাবরে আমি গুরুত্বপূর্ণ একটা উপায় মনে করি
❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
# শিল্পচর্চা তো মওসুমি ফলচাষ না৷ এখন বর্ষজীবি একটা ফলজ উদ্ভিদরে যদি আপনি একটা মাসে সীমাবদ্ধ কইরা রাখেন, এইটা তো চরম দুর্দশারই এইটা তরিকা৷
=================
অন্তর্গত অসুখ
প্রকাশনা : বিদ্যানন্দ
প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ২০২০
দাম : ২২০ টাকা
-----------------------
পুরনো শরাব
(ইমরা উল কায়েসের কবিতার অনুবাদ)
প্রকাশনা সংস্থা: আনন্দম
প্রকাশকাল: জানুয়ারি, ২০২০
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম