বইমেলাতে নতুন বই প্রকাশের অনুভূতি এবং সমসাময়িক সাহিত্য প্রসঙ্গে বিবিধ ভাবনা নিয়ে হানিফ রাশেদীন কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।
====================
❑ সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷
# অনুভূতি তেমন রোমাঞ্চকর নয়, তেমন সুখকর নয়। লিখতে আমি যতটা আনন্দ পাই, রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়, একরকম উত্তেজনাও থাকে। সেই অর্থে বই প্রকাশের অনুভূতি সাধারণ, একটা ভালো লাগা তো থাকেই। সুখকর নয় এজন্য যে, বিক্রি তেমন নেই। সম্ভবত ‘নেই’, বললেই যথার্থ করে বলা হয়।
❑ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?
# আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে, নিকাশের দায় রেখে । এরপর এই দীর্ঘ সময়ে যে কবিতাগুলো লেখা হল, সেখান থেকে বেছে কিছু কবিতা এক মলাটে নিয়ে আসার অভিপ্রায় থেকে এই সিদ্ধান্ত।
❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
# বইটি আমি নিজেই প্রকাশ করেছি।
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?
# আত্মবিশ্বাস আছে। আবার অতৃপ্তিও আছে। আত্মবিশ্বাস যতটা আছে অতৃপ্তিও তার চেয়ে কম নয়। বিশ্বসাহিত্য, এমনকি আমাদের বাংলা সাহিত্যেও কালজয়ী যেসব সৃষ্টি সেই নিরিক্ষে দেখলে, এভাবেই তো দেখা উচিৎ, সেক্ষেত্রে বলতেই হয় যে, অতৃপ্তিও আছে।
❑ কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।
# কথাসাহিত্যেও আমি কাজ করছি। কিছু গল্প ও অনুগল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে। পরবর্তী বই হবে গল্পগ্রন্থ। একেকজন শিল্পী তার মনের ভাব বা দর্শন প্রকাশের জন্য একেক শিল্পমাধ্যমে সাচ্ছ্বন্দ বোধ করেন, কোনো এক শিল্পমাধ্যমকে যথার্থ মনে করেন। আবার একই শিল্পী একাধিক মাধ্যমেও লিখেন।
❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
# লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতি বলতে সবাই পড়াশুনার কথা বলে থাকে। পড়াশুনার দিক থেকে আমার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে অনেক পরে এসে। আমাদের পরিবারে পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়াশুনার চল ছিল না। গ্রামে তো পাঠ্যবইয়ের বাইরের বইয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার সুজোগও কম। এই ধারাবাহিকতা এখনও আছে। তবে পড়াশুনার শুরুর প্রথম থেকেই, একই সঙ্গে ঘটেছে আমার রাজনৈতিক পাঠ-এই পাঠ হয়েছে দুইভাবে, দর্শন-রাজনীতির বই ও রাজনীতিক সার্কেল বা পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা। আমি মনে করি এসবের সমন্বয়েই আমার মনসলোক, আমার দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-চেতনা গড়ে উঠেছে।
❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
# গত দুই বছর ধরেই আমি পাণ্ডুলিপি গুছাচ্ছিলাম। প্রথম দিকে ভাবনা ছিল, সমাজ ও রাজনৈতিক ভাবপ্রধান কবিতাগুলো নিয়ে একটি বই হোক। পরে এই ভাবনা থেকে সরে এসে মধুর প্রেম ও সৌন্দর্য চেতনার কিছু কবিতাও যোগ করেছি।
❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
আমি তো সমাজ, রাষ্ট্র, মানুষ ও প্রকৃতির অংশ; আর এসবের কেন্দ্রে মানুষ
# প্রথমত আমি আমার নিজের কাছে দায়বদ্ধ। এখন প্রশ্ন হল, এই ‘আমি’ কে? আমি তো সমাজ, রাষ্ট্র, মানুষ ও প্রকৃতির অংশ; আর এসবের কেন্দ্রে মানুষ। ফলে আমি মানুষের কাছে দায়ব্ধ। তো, সবার উপরে মানুষ এটি মনে রেখে, যেহেতু আমি কাজ করি শিল্পের একটি মাধ্যম সাহিত্যে, কাজটি হল মানুষ নিয়ে। ফলে শৈল্পিক সম্বয় ঘটানা হলো একটি প্রক্রিয়া। ❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
# মনে হয় যে কবিতাগুলো কি আরও ভালো হতে পারত? আরও সময় নিয়ে, আরও পরে বের করলে কেমন হত? তবে একটা জায়গায় তো থামতে হয়। মূলত লেখার সময়ই আমি পাঠকের দৃষ্টিকোন থেকে দেখি, অনুভব করি। কবিতাতেও তো চরিত্র থাকে কোনো না কোনো ফর্মে। কবিতার চরিত্রে নিজেকে আমি রূপান্তার করি। তারপর সেই চরিত্রের অনুভবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি একটি কবিতা।
❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
# সারা বছরই বই প্রকাশ হওয়া উচিৎ। আমাদের উচিৎ বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা। আমি মনে করি ব্যাসায়িক দিক থেকে প্রকাশনা শিল্প উন্নত হলেই এটা সম্ভব। মানুষ বই কেনে না এটা সত্য, আবার এ-ও তো সত্য যে বই কেনার বাজার এখানে নেই। আমার সামনে যেভাবে পটেটু ঝুলিয়ে রাখা হয় আর কিনতে উদ্ভুদ্ধ করা হয়। এখানে বইয়ের স্থান কোথায়?
====================
শেকলের নূপুর
হানিফ রাশেদীন
প্রকাশক : প্রতিকথা
মূল্য : ১৫০ টাকা
প্রচ্ছদ : কামরুজ্জোহা
স্টল : প্রতিকথা, লিটলম্যাগ চত্বর
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম