নতুন বই প্রকাশকালে সাক্ষাৎকার দিলেন জাফরুল নাদিম

নতুন বই প্রকাশকালে সাক্ষাৎকার দিলেন জাফরুল নাদিম
২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে জাফরুল নাদিমের গল্পের বই "সোমত্ত হাওয়া"। বইটি প্রকাশিত হয়েছে অদ্বৈত প্রকাশনী থেকে। প্রকাশকঃ জাহিদ জগত। প্রচ্ছদঃ হেলাল সম্রাট।অলংকরণঃ আব্দুল হালিম রানা।মূল্যঃ ১৬০ টাকা। পাওয়া যাবেঃ সাহস প্রকাশনী(৪০৭ নং স্টলে) ও লিটলম্যাগঃ লোক এ।

এই বইমেলায় নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং ব্যক্তিগত সাহিত্যভাবনা প্রকাশ করেছেন বই আলোচনার ওয়েবসাইট গ্রন্থগত.কম এর সাথে।
~~~~~~~~~~~~~~~~

❑  সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷

জাফরুল নাদিমঃ সম্প্রতি আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে, এর ফলে আমার মধ্যে কোন উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করছে না।এক ধরনের অপত্যস্নেহ আমি উপলব্ধি করি। ধরুন, এটা এমন এক ধরনের মাতৃত্ববোধ- যে মা তার সন্তানকে খুব চৌকশভাবে লালন পালন করেন না কিংবা নিজ অপরাগতার দরুন সন্তানকে শুশ্রূষাহীন বেড়ে উঠতে দেন। এটা অবহেলা নয়- নিজ সন্তানের প্রতি নিরঙ্কুশ আত্মবিশ্বাসের কারনে এটা হতে পারে।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

জাফরুল নাদিমঃ বই প্রকাশের জন্য আমাকে তেমন ভাবতে হয়নি। এ পর্যায়ের গল্পগুলো লেখার পরে- যখন মনে হতে লাগল আমি ভিন্নতর কোন অবস্থানগত বাস্তবতার সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছি, তখন এসব গল্পগুলো নিয়ে বই করার সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে ভিন্নরূপ কিছু ভাবতে হয়নি।

❑  বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

জাফরুল নাদিমঃ বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রকাশক সংক্রান্ত কিছুটা ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল, তবে সে দায় আমার। মেলার প্রাক্কালে বা মেলা উপলক্ষে বই বের করার সিদ্ধান্ত নেব, এমন ইচ্ছা আমার কখনোই ছিল না। কিন্তু বইটি বের করার জন্য যখন পীড়ন অনুভব শুরু হচ্ছিল, তখন খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি প্রায় সব প্রকাশক বইমেলায় প্রকাশিতব্য বই নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিছুটা দমে যখন গেলাম, তখন এক প্রকাশক বইটা করতে সম্মত হলেন। কিছুদিন পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, কাজের অতিরিক্ত চাপের কারনে তিনি বইটা করতে পারবেন না, আরো জানালেন মিনিমাম ছয় মাস আগে থেকে কাজ শুরু করতে হয় লগ্নি উঠিয়ে নিতে হলে। এর পরে আর কোন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। বন্ধুতুল্য বড় ভাই, তরুণ কথাসাহিত্যিক জাহিদ জগত এক প্রকার নিজ ঘাড়ে নিয়েই বইটি প্রকাশের সব দায়িত্ব পালন করেছেন।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

জাফরুল নাদিমঃ এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের কোন বালাই আছে বলে মনে করিনা। নিতান্ত অপরাগতার স্বীকার না হলে- লিখালিখির প্রতি আমার কোন অনুরাগ ছিল না বা খুব আনন্দিত হই লিখে এমন নয়।একান্ত নিজস্ব প্রয়োজনে লিখেছি এসব, ছাইপাঁশ হলেও সই- কয়লার প্রয়োজনে হয় দাঁত মেজে নেব।

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

জাফরুল নাদিমঃ প্রস্তুতির প্রয়োজন তো হয়ই। এখন সে প্রস্তুতির মধ্যে কি কি অন্তর্ভুক্ত করবেন সেটা হল বিষয়। আমার লিখার জন্য কাগজ, কলম দরকার হয়। আবার যখন একটা প্লট মাথার ভেতর তৈরি হয় আমি তাকে কিছুটা সময় দেই সে ভাবনার অংকুরগুলো একটু পুষ্ট হতে- একান্ত নিভৃত কিছুকাল আমার দরকার পরে, তারপর একটা সময় দুম করে লিখে ফেলি।

❑  পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

জাফরুল নাদিমঃ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কোন বাছবিচার ছিল না। যে গল্পটা সামনে পড়েছে সেটাই নিয়ে নিয়েছি। আর এই বইটির গল্পগুলোর ক্ষেত্রে একটা বিষয় রয়েছে। সেটা হলো, এসব গল্প নির্ধারণযোগ্য কোন বিষয়শ্রেণীর আওতায় পড়ে না। তবে, নামগল্পটি অর্থাৎ সোমত্ত হাওয়া গল্পটি আমি এ গ্রন্থটির ক্ষেত্রে বাছাই হিসেবেই রেখেছি।
একান্ত নিভৃত কিছুকাল আমার দরকার পরে, তারপর একটা সময় দুম করে লিখে ফেলি।
❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

জাফরুল নাদিমঃ এমনকি শিল্পকেন্দ্রিক দায়বদ্ধতাও আমার কাছে উপলব্ধ নয়। কোন ধরনের দায়বন্ধন যদি থেকে থাকে, সেটা নিজের সাথে আমার। মাঝে মাঝে আমার তো এই প্রশ্ন জাগে- 'এই যে নাদিম, তুই সময় কালি কাগজ খরচ করে এসব কি লিখে চলেছিস- এসবের ভার তুই বইতে পারবি নাহয় নিশ্চুপ নিজেকে ক্ষয়ানো বেটার নয় কি?

❑  একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

জাফরুল নাদিমঃ পাঠক হিসেবেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নিজের লেখার একনিষ্ঠ পাঠক আমি। পাঠক হিশেবে এসব লেখার প্রতি আগ্রহ- যা একধরনের তৃপ্তি হিশেবে ধরা দেয় বিধায় অন্যান্য পাঠকদের কাছে এগুলো পৌঁছানোর ইচ্ছা পোষণ করেছি।

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

জাফরুল নাদিমঃ এটা খুবই বাজে একটা ব্যাপার। হয়ত সবাই মনে করে, মেলায় ভালো একটা গ্যাদারিং হয়। ফলে যে বইই হোক না কেন, বিক্রি ভালো হবে। এর ফলে- যেমন সারা বছর তেমন কোন বই প্রকাশিত হয় না, পাঠককুল বছরের বাকিটা সময় বই কেনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে- তেমনি এই প্রবনতার ফলে লেখকজন নিজের গণ্ডি ও ক্ষমতাকেও সীবাবদ্ধ করে ফেলে।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ