বইমেলাতে নতুন উপন্যাস প্রসঙ্গে জাহেদ মোতালেবের সাক্ষাৎকার

বইমেলাতে নতুন উপন্যাস প্রসঙ্গে জাহেদ মোতালেবের সাক্ষাৎকার

অমর একুশে গ্রন্থমেলা(২০২০)তে প্রকাশিত জাহেদ মোতালেব এর উপন্যাস ‘ধানশি’, প্রকাশ করেছে বাতিঘর প্রকাশন। প্রচ্ছদ : সব্যসাচী মিস্ত্রী। মূল্য : ২৪০ টাকা

জাহেদ মোতালেব বইমলাতে নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং বর্তমান সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।
====================

❑ সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।


উত্তর : হ্যাঁ, এবার বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস ‘ধানশি’।
সেই কখন প্রথম শুরু হয় একটা বইয়ের ভাবনা। একটি শব্দ, অস্পষ্ট কোনো চিন্তা থেকে ভাবনা ডানা মেলতে থাকে। তারপর ক্রমাগত চিন্তা, চর্চা, লেখা, ঘষামাজা, লেখা আর লেখা, কত কত শব্দ হারিয়ে যায়, কত যুক্ত হয়। বহুদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর সম্পন্ন হয় একটি লেখা। তারপর বই। আহ! নিজের কত আপন সে।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

উত্তর : ‘ধানশি’ লেখা শেষ করেছিলাম ২০১৮ সালে। চাইলে গত বছরই এটা প্রকাশ করতে পারতাম। কিন্তু এক বছর ফেলে রেখেছিলাম। এক বছর সময় নিয়ে অনেক কাজ করে প্রকাশ করলাম।

❑  বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিল কি?

উত্তর : না। এক্ষেত্রে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলতে হবে। বইটি প্রকাশ করার জন্য বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

উত্তর : প্রত্যেক লেখকেরই আত্মপ্রেম থাকে। নিজের লেখাটাকে মনে হয় শ্রেষ্ঠ লেখা। তবে বই আকারে বের হওয়ার পর নিজের প্রতি সন্দেহটা বাড়তে থাকে। প্রশ্ন জাগে, কী লিখলাম? কিছুই হলো না মনে হয়। আরো বেশি চ্যালেঞ্জ অনুভব করি। বাংলা সাহিত্য ও বিশ্ব সাহিত্যের সেরা বইগুলোর কথা ভাবনায় আসে। তখন নিজেকে শূন্য মনে হয়।

❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

এক্ষেত্রে কঠোর শ্রম, একগুঁয়ে নিষ্ঠা নিয়ে লেগে না থাকলে হয় না।
উত্তর : প্রস্তুতি ছাড়া কিছু হয় না। যেকোনো কিছু করতে গেলে শিখতে হয়। লেখালেখির ক্ষেত্রে শেখার, প্রস্তুতির কোনো বিকল্প পথ আছে বলে জানা নেই। পাঠ আর পাঠ, বই পাঠ, মানুষ পাঠ, পরিবেশ-প্রতিবেশ পাঠ-পাঠের কি শেষ আছে? পাঠের পাশাপাশি অবিরত লিখে যাওয়া, লিখতে লিখতে শেখা।

আমার উপন্যাস ‘অন্যজন’ আমি প্রায় সতেরো বছর ধরে লিখেছি। লিখতে লিখতে শেখার চেষ্টা করেছি। কত সংযোজন, বিয়োজন হয়েছে তা বলে বোঝাতে পারব না। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, অর্ধেক অংশ বাদ গেছে। লেখা আসলে খুবই কঠিন একটি কাজ। এক্ষেত্রে কঠোর শ্রম, একগুঁয়ে নিষ্ঠা নিয়ে লেগে না থাকলে হয় না।

❑ পান্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

উত্তর : একটা লেখা শেষ করার পর ফেলে রাখি। কিছুদিন পর পাঠক হিসেবে বেশ কয়েকবার পাঠ করি। সফট কপি আর হার্ড কপিতে সম্পাদনার কাজ চলে বারবার। এরপর কাছের বেশ কয়েকজনকে পড়তে দিই। একেকজনের কাছ থেকে একেক বিষয়ে একেক দৃষ্টিকোণ থেকে পরামর্শ পাই। পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এসব পরামর্শ মাথায় রাখি। তারপর অবিরাম চলে সম্পাদনার কাজ। মাথায় থাকে একটি কথা, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, এডিটিংই আসল কথা। এটা আমি সত্য বলে মানি।

❑  শিল্প নাকি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

উত্তর : কত লেখা শেষ হয়েছে, কত লেখা অসমাপ্ত পড়ে আছে। এর মাঝে একটা লেখা বই আকারে বেরুয়। নিজের একটা মাপকাঠি নিজের কাছে মনে মনে থাকে। তা উৎরেই একটা লেখা বই আকারে আসে। তাই দায়
প্রধানত নিজের কাছে। অর্থাৎ শিল্পের কাছে। শিল্পময়, সৌন্দর্যময় না হলে তো হবে না।

❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

উত্তর : প্রথম দেখায় ভালোই লাগে। তবে পুরো বইটা আবার পড়লে হয়ত কোনো কোনো স্থান ভালো লাগবে না। মনে হবে, ইশ! এই অংশ একটু অন্যভাবে লিখলে ভালো হতো। এই অংশটা বাদ দিলে ভালো হতো।

❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

উত্তর : বইমেলাকে কেন্দ্র করে নয়, সারা বছরই বই প্রকাশিত হওয়া উচিত। একটা নির্দিষ্ট সময়ে অনেক বই বের হওয়ার কারণে একটা চাপ থাকে। ফলে বইয়ের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মানও খারাপ হয়। সময় আর যত্ন নিয়ে করলে ভালো হবে। খরচও কমে যাবে। এছাড়া দিবস কেন্দ্রিক বই বের করা যায়। যেমন পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে বই প্রকাশ করা যায়।

================
ধানশি
জাহেদ মোতালেব
প্রচ্ছদ : সব্যসাচী মিস্ত্রী
প্রকাশক : বাতিঘর
মূল্য : ২৪০ টাকা

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ