ম্যাগডিলিনা মৃ এর বই ‘গারো লোক গল্প' ও অন্যান্য প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকার

ম্যাগডিলিনা মৃ এর বই ‘গারো লোক গল্প' ও অন্যান্য প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকার
অমর একুশে গ্রন্থমেলা (২০২০)তে প্রকাশিত হয়েছে ম্যাগডিলিনা মৃ এর বই ‘গারো লোক গল্প’। গুরুত্বপূর্ণ এই বইটি প্রকাশ করেছে পেন্ডুলাম প্রকাশনী; বইয়ের আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ ও ইলাস্ট্রেশনগুলো করেছেন আল নোমান। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ২৭১ নং স্টলে।

বইমলাতে নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং নিজের সাহিত্যভাবনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ম্যাগডিলিনা মৃ কথা বলেছেন গ্রন্থগত ডট কম এর সঙ্গে।

====================

❑  সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷

প্রথম বই বের হওয়ার অনুভূতি সত্যি দারুন। বিশেষ করে যখন আপনি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার সামনে কোনো পাঠক আপনার বইটি কিনছে অথবা ধরুন মেলায় হাঁটছেন হুট করে কোনো এক পাঠক পরিচিত হয়ে অটোগ্রাফ নিতে চাইলো... বই প্রকাশিত না হলে এই আনন্দ থেকে নিঃসন্দেহে বঞ্চিত হতাম।


লোকগল্পগুলোর মাধ্যমে আমাদের জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরম্পরা, ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া পাঠকদের জন্য সহজ হবে

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

আসলে আমার এই গল্পগুলো “উঠান” নামক একটি অনলাইন সাহিত্য পত্রিকায় গত এক বছর ধরে পর্বাকারে প্রকাশিত হচ্ছিলো। ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রকাশক গল্পগুলোর সংকলন নিয়ে বই প্রকাশ করার আগ্রহ জানিয়েছিলো। আসলে এই লোকগল্পগুলোর মাধ্যমে আমাদের জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরম্পরা, ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া পাঠকদের জন্য সহজ হবে। যেহেতু আমি নিজেই গারো-নৃগোষ্ঠীভূক্ত একজন তাই আমার কাছে মনে হলো আমাদের আইডেন্টিটিকে, লোকসাহিত্যকে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিকট তুলে ধরা প্রয়োজন।

❑  বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

তেমন কোন জটিলতায় পড়তে হয়নি। আমার কাছে কয়েকজন প্রকাশকই পান্ডুলিপি নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছিলো। সেক্ষেত্রে পেন্ডুলামকে বেছে নিয়েছি কারণ আমাদের প্রকাশনা ব্যবসায় নারীদের অবস্থান নেই বললেই চলে। রুম্মান তার্শফিক, পেন্ডুলামের কর্ণধার, এত কম বয়সে যেভাবে পেশনেটলি উদ্যোগ নিয়েছে এটা সত্যি আমার কাছে প্রশংসনীয়। তার পথের সঙ্গী হতে পেরে আমি নিজেও আনন্দিত। এই বই প্রকাশের জন্য যাকে বরাবরই কৃতজ্ঞতা না জানালে নয় তিনি হলেন প্রিয় অগ্রজ, নাট্যকর্মী, লেখক হুমায়ুন আজম রেওয়াজ ভাই।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

আত্মবিশ্বাস আছে বলেই বই করার সাহসটুকু পেয়েছি। আমি মনে করি লেখককে আত্মবিশ্বাস অর্জন করে নিতে হয়। অভিজ্ঞতা, পাঠা-আলোচনা ইত্যাদির ভেতর দিয়ে।

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

পাঠ প্রস্তুতির পাশাপাশি লেখক সত্তা থাকা চাই
হ্যাঁ, লিখতে আসলে একজন লেখকের পাঠপ্রস্তুতি প্রয়োজন আছে। তবে একথাও সত্য যে কেবল পাঠপ্রস্তুতি থাকলে কিংবা অগাধ পড়াশোনা করলে যে আপনি উৎকৃষ্ট কিছু রচনা করে ফেলবেন তাও কিন্তু নয়। পাঠ প্রস্তুতির পাশাপাশি লেখক সত্তা থাকা চাই। সাধনা ও নিষ্ঠা থাকা চাই। লেখক হিসেবে আমার প্রস্তুতি কেমন সেটা আসলে আমার বইয়ের পাঠক নির্ধারণ করবেন।

❑  পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

পান্ডুলিপিতে আরো অনেক বড় গল্প ছিলো। তবে পাঠকের পড়ার সুবিধার্থে  ছোট ছোট মজাদার শিক্ষনীয় গল্পগুলো রাখার চেষ্টা করেছি যেনো পাঠক এক বসাতেই গল্পগুলো পড়ে ফেলতে পারে এবং প্রথম কয়েকটি গল্পে ইলাস্টেশনও রয়েছে যেনো পাঠকের আগ্রহ বাড়ে।

❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

এই প্রশ্নটার উত্তর আরেক জায়গায়ও দিয়েছি।  আসলে দুজনই একে অপরের পরিপূরক। তাই আমার কাছে দুটোর গুরুত্ব অপরিসীম।

❑  একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

বইটি হাতে নিয়ে সত্যি বেশ ভাল লাগছে। আমার পাঠক হিসেবে যতটুকু অভিজ্ঞতা তাতে মনে হয়েছে বইটি বেশ পরিচ্ছন্ন, পেপারব্যাক সংস্করণে বের হয়েছে। যা কিনা পাঠককে সবদিক থেকেই আকর্ষণ করবে।

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

বই মেলা হলো পুরো বছরে আমাদের একটি উৎসবের মাস। আমাদের এখানে উৎসবকে কেন্দ্র করে বই করার কারন হলো এতে করে প্রচার বেশি হয়ে থাকে। নানারকম পাঠক দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মেলায় উপস্থিত হন ফলে ঢাকার বাইরেও একটা পাঠকশ্রেনী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আমি মনে করি বই প্রকাশ, প্রচার এবং পাঠের চর্চাটা কেবল মেলা কেন্দ্রিক না হয়ে সারা বছর হলে ভাল হয়। বছরে আরো দু-একটি ছোট ছোট  মেলা করা যেতে পারে। তবে এটাও ঠিক যে সিরিয়াস পাঠকরা সারা বছর ভাল বইয়ের খোঁজ রাখেন, ক্রয় করেন এবং পড়েন। 

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ