ঝকঝকে লাল কভারের প্রচ্ছদ। তার উপরে সোনালী রঙে লেখা মা। বলছি কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের মা উপন্যাসের কথা। একটি মর্মান্তিক দুঃসংবাদ দিয়েই লেখক উপন্যাসটির শুরু করেন।
আজাদের মা মারা গেছেন গতকাল বিকেলে। একদম লোম শিউরে উঠার মতো দুঃসংবাদ। উপন্যাস একজন মা কে নিয়ে লেখা। লড়াই করে শত কষ্টে মাথা উচুঁ করে বেচেঁ থাকা, হার না মানা মায়ের গল্প নিয়ে লেখা বই মা।
তিনি শহীদ আজাদের মা সাফিয়া বেগম। আজাদ ছিলো তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আজাদরা থাকতো ইস্কাটনে দেখার মতো একটা রাজপ্রাসাদ বাড়িতে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর মা এসবকিছু ছেড়ে এক কাপড়ে ছেলের হাত ধরে বের হয়ে এসেছিলেন।
মা আর কোনদিন ভাত খাননি।মা অনেক কষ্টে ছেলেকে লেখাপড়া করান। আশা ছেলে একদিন বড় হয়ে মায়ের দুঃখ ঘোচাবে। ছেলে এমএ পাশ করেন। দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ছেলে মাকে বলেন, মা আমি যুদ্ধে যেতে চাই। মা তাকে অনুমতি দেন। আজাদ যুদ্ধে যায়।
১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাতে ২১ টা মুক্তিযোদ্ধার বাসায় হানা দেয় পাকিস্তানি মিলিটারি। অনেকের সঙ্গে ধরা পরে আলতাফ মাহমুদ, বদি, রুমি এবং আজাদ। আজাদের মায়ের কাছে প্রস্তাব করা হয় ছেলেকে সত্য কথা বলতে। সবার নাম ও অস্ত্রের ঠিকানা বলে দিতে। এতে করে আজাদকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আজাদের মা পরদিন রমনা থানায় যান আজদের সাথে দেখা করতে। আজাদ বলে,
মা কী করব? এরা খুব মারে। সবার নাম বলে দিতে বলে।
আজাদের মা ছেলেকে সাহস দেন,
'শক্ত হয়ে থেকো, কারো নাম বলে দিও না।'
আজাদ মায়ের কাছে আবার বলে, মা ভাত খেতে ইচ্ছে করে, দুইদিন ভাত খাই না। এভাবেই বন্দিশালায় মা ছেলের শেষ কথা হয়। পরের দিন মা ভাত নিয়ে হাজির হন বন্দিশিবিরে, ছেলের দেখা পান না। আর কোনদিন ছেলে আজাদ মায়ের কোলে ফিরে আসেনি। এরপর মা বেচেছিলেন ১৪ বছর। মা আর কোনদিন ভাত খাননি। বন্দিশালায় দেখেছেন ছেলে তাঁর মেঝেতে ঘুমায়। মায়ের বাকী জীবনে আর কোনদিন খাটে ঘুমাননি।
কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব একটি ইতিহাস তুলে ধরেছেন মা উপন্যাসে। যেমন ভাবে ম্যাক্সিম গোর্কি তাঁর মা উপন্যাসে তুলে ধরেছেন রুশ বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের পটভূমি।
সময় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ। চমৎকার কভার ও প্রচ্ছদের বাস্তব ইতিহাস নির্ভর। ২৬৬ পৃষ্টার বইটির বাজার মূল্য মাত্র ৩০০ টাকা। বইটি প্রকাশ করেছেন সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ। প্রকাশকাল জানুয়ারি ২০০৩
====================
মা
আনিসুল হক
2 মন্তব্যসমূহ
সংক্ষেপ সহজবোধ্য পরিশীলিত৷ ভাল লাগল খোকন, তোমার হাত সাবলীল, তুমি লেখা থামিও না৷
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনমার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম