ছোট কাগজ “নৈর্ব্যক্তিক” সম্পর্কে আবু জাফর সৈকত

ছোট কাগজ “নৈর্ব্যক্তিক”


নৈর্ব্যক্তিক ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে। সম্পাদক সুদীপ্ত সাইদ; প্রচ্ছদটিও তার করা। নৈর্ব্যক্তিক এর নামলিপি করেছেন দ্রাবিড় সৈকত।

দশক বিভাজনে কিংবা নির্দিষ্ট গোষ্ঠিবদ্ধতায় বিশ্বাসী নয় নৈর্ব্যক্তিক। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নতুন অচেনা মুখের দিকেই তাদের দৃষ্টি। ঐশ্বরিক কোন আধিপত্য কিংবা গুরুবাদকে তারা এড়িয়ে চলতে চান। পৃথিবীর সকল জীবিত কবি-সাহিত্যিকদের সমসাময়িক মনে করে নৈর্ব্যক্তিক।

কাগজটিতে কোন সূচী রাখা হয়নি। আট জন কবির কবিতা ও রুদ্র সায়কের গদ্য দিয়ে সাজানো সংখ্যাটি। হিজল জোবায়ের কবিতায় আমরা এক অসাধারণ গল্প খুঁজে পাই। পাঠকের সুবিধার্থে তুলে দিচ্ছি-

সূর্য ডোবার কালে এক বৃদ্ধ গাধা নদীর ধারে এসে পানি আরও ঘোলা করে/ নদীর ঘোলা জলে ভেসে ওঠে তার ঘোলামুখ/ নিজের মুখ ঘোলা ভেবে চিৎকারে ফেটে পড়ে/ অবশেষে মরে যায় সেই মূকবৃদ্ধ গাধা... [গোলাপী তুমি যামিনী রায়]

রজত সিকাস্তি’র ‘অপরিশীলিত আত্মস্তুতির বনজ ঔষধ’ সিরিজ কবিতা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। তবে উল্লেখ করতে চাইছি এর পরের কবিতা ‘নগর ভ্রমন কাহিনী’। শুরুতেই লিখেছেন- ‘কবিতার দেশ থেকে এসেছে’

এ কবিতায় কবি দুইটি জগৎ নির্মাণ করেছেন। একটি কবির নিজের জগৎ অন্যটি তার অপরিচিত জগৎ। সেই জগৎ সম্বন্ধে ধারনা দিতে গিয়ে কবি লিখেছেন-

... তুমি যাচ্ছ সেই/ নগরে সেখানে মানুষ অনেকটা আওয়াজ প্রবণ;/ লক্ষ করো সেখানে নারীরা উজ্জ্বল অতি/ জিহ্বার ভাজে ভাজে মৌচাক নিধনকারী ইশারা পোষে অনেক হিসেব করে দেখায় নিজ নিজ রোদ-বৃষ্টি।

মহিম সন্যাসী’র দ্বিতীয় কবিতাটি অপেক্ষাকৃত স্বতন্ত্র মনে হয়েছে-

আলোচিত জ্যোতিষ্কে উন্নত ন্যাকামির বিচি পাওয়া যায়। আলোচনা করলেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । আদিখ্যেতার অংকুর। দ্বিবীজপত্রী এই গ্রহের গুহায় মুখ বুজে থাকলেও ঈর্ষা পোয়াতি হয় প্রাকৃতিকভাবে। কাজেই কোদাল দিয়ে পায়ের নিচের মাটি সযত্নে খুঁড়ে নিজ নিজ চীনদেশ খুঁজে বের করা যাক। [অরণ্যভোগ, প্রথম সর্গ]

সাইয়েদ জামিল এ সময়ের এক পরিচিত নাম। গদ্য কবিতার ঢঙ্গে লেখা প্রত্যেকটি কবিতা ভাল লেগেছে। কবিতার শিরোনামগুলো উল্লেখ করলেই পাঠক বুঝবেন কবিতার অর্থ- উন্মাদ, বুলডোজার, মসজিদ ভেঙে যাবার দৃশ্য, ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ, হজরত গারিবের জন্য যৌন অনুসঙ্গহীন প্রেমের কবিতা।

কিশোর মাহমুদ চারখণ্ডে গদ্য ঢঙ্গে লিখেছেন শ্মশান স্মৃতি। উৎসর্গ করেছেন: ফাল্গুনী রায় ও শৈলেশ্বর ঘোষকে। বিপ্রতীপ লড়াই-এ ব্যস্ত কবি সাম্য রাইয়ান শুদ্ধস্বরে পৌঁছে যাওয়া সমুদ্রের কথা। শূন্যতার খেলায় কবি ক্রমাগত ছুটছেন। তিন লাইনের একটা উদ্বৃতি দিচ্ছি-

সহজ-সরল কথাগুলো অনেক পেঁচিয়ে বলার/ অভ্যেস যাদের, তারা বুদ্ধিজীবী;/ আমরা কি আর বুঝি অতসব মিথ্যের ধোঁয়াজাল! [কলা বাগানে আনারস অথবা সিন্দাবাদের ভূত]

নিরন্তর খেরোখাতা আদিম থেকে লিখে চলেছেন কবি আহমাদ শামীম। শৈশবের ছবি এঁকেছেন কবিতায়-

দুপুরের পিঠ চুলকে স্কুল ছুটি দিয়েছে/ আইসক্রিম বালক শার্টের বোতাম তার/ঘাস ফড়িংয়ের ডানা, জুতোর ফিতায় বাধা/মাদার ফুরের ঘ্রাণ...
বইয়ের মাঝে ডুবে থাকা সমুদ্রে সাঁতার কেটে মৎসকুমারীদের শিখিয়েছে/ লাটিম ঘুরানোর কৌশল। [নিরন্তর খেরোপাতা]

সালেহনি শিপ্রা মিষ্টি হাসির কবি। আহমেদ শামীম যেখানে মৃত্যুর অভিমানে একা বাঁচেন সেখানে সালেহীন শিপ্রা লিখেন-

কখন যে মৃত্যু এলা আর চলেও গেল। মৃত একা অপেক্ষা করছে জীবিতের...  [নৈ:শব্দে]

রুদ্র শায়ক এক উৎকৃষ্ট গদ্যকার। দেশীয় কবিতার শরীর নির্মাণের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন-
‘উত্তর উপনিবেশিক সিম্ফনি ও কাব্যাখ্যান প্রকৃর্ষা। তার মূল বক্তব্য হচ্ছে- অতীতের সাথে অন্বয় রক্ষা করে অগ্রসর হতে হবে আর এক্ষেত্রে ছোট কাগজেই আস্তা রেখেছেন গদ্যকার।


দুই ফর্মার কাগজটির মূল্য রাখা হয়েছে ৩০ টাকা।
যোগাযোগের ঠিকানা ২৭৬, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেট, কাটাবন, ঢাকা।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ