জরীফ উদ্দীনের চোখে 'ফারুক আলম' লিখিত "ভালোবাসার রঙ"

জরীফ উদ্দীনের চোখে 'ফারুক আলম' লিখিত "ভালোবাসার রঙ"

ফারুক আলম মূলতঃ কবি। তার ব্যক্তিগত যে অনুভূতিগুলো সর্বদা সচল থাকে, তার অনেকখানি জুড়েই থাকে কবিতা নামের মায়ামৃগ। যে মায়াহরিণির পিছনে অনন্তকালব্যাপী সন্ধান করেও খুব কম সংখ্যক মানুষই আছে, যারা সফল হতে পেরেছে। যারা পেয়েছেন তাদের দলের একজন পথিক কবি ফারুক আলম। 'ভালোবাসার রঙ' এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এতে মোট কবিতা ৫২ টি। কবিতাগুলোয় ফুটে উঠেছে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা, ভালোবাসা, ব্যর্থতা, রাগ-অনুরাগ, আশা-নৈরাশা, চাওয়া-পাওয়া বিষয়গুলো। অধিকাংশ কবিতায় দেখা যায় কবির নিজস্ব চিন্তা-চেতনা এবং প্রিয়তমাকে না পাওয়ার বেদনা। বইটিতে প্রথম কবিতা 'ভালোবাসা কথাটি বলতে পারিনি' শুরু হয় কবির ব্যর্থতা দিয়েই। তিনি ভালোবাসি কথাটি বলতে না পারলেও তার প্রেমিকার প্রতি লিখে গেছেন দ্বিধাহীন,

তোমার এক বান্ধবীকে বলেছিলে: 'উনি খুব সুন্দর লিখতে জানেন।'
এ কথা না বলে বলতে 'উনি খুব সুন্দর তাকাতে জানেন,
ওনার চাহনিতে আমি সব বুঝেছি; আমি ওনাকে ভালোবাসি।'
তাহলে আমার মনে হতো আমি এই স্বপ্নের পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী।

ফারুক আলমের কবিতার শিরোনামগুলো দুর্দান্ত। যেমন : সূর্য উঠেছে, তবুও অন্ধকার কাটেনি, আমার সূর্যাস্তে তুমি, বিশ্বাসে অবিশ্বাসের জন্ম, প্রেমের স্যালাইন, তোমার শূন্যতায় ইত্যাদি শিরোনাম মন কেড়ে নেয়।

'প্রেমের কবি' নামক কবিতায় কবি ছন্দের জাদুকরের মতো লিখেছেন। ছন্দঃ যেন সোনালু ফুলের মতো দুলে ওঠে।

গাছে গাছে সবুজ পাতা
আমার হাতে প্রেমের ছাতা
তোমার হাতে গোলাপ ফুল
পরে আছো কানের দুল......
কিছুকিছু কবিতায় কবির উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। সুর থাকতে গান ছেড়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে 'সূর্য উঠেছে, তবুও অন্ধকার কাটেনি' কবিতার শেষে মনে হয় এরপর আরো লাইন আছে। তেমনি 'বলেছিলে' কবিতায় শেষের লাইনটা মনে হয় হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, এর আগে আরও কয়েকটা লাইন থাকলে মন্দ হত না।

বসন্ত ঋতুর পরিচয় কবি 'বসন্ত' নামক কবিতায় খুব চমৎকার ভাবে ফুটে তুলেছেন। কবির ভাষায়,

বাহারি রঙের বাসন্তী শাড়ী
সাজে বাংলার যুবতি নারী
ছেলে আর বুড়োরা সব
পথে পথে কলরব।

বইটির নাম ভালোবাসার রঙ রাখলেও কবি নাম কবিতায় নিসঙ্কচে ঘোষণা করেন,

রহস্য আবদ্ধ পৃথিবীর
সীমাহীন পরিসরে
ভালোবাসার কোন রঙ নেই।
নেই কোন কমা, দাঁড়ি
ভালোবাসা অধর অহংকার।

বেশ কয়েকটি কবিতায় কবি অপরাজিতা নামটি উল্লেখ করেছেন যা পড়ে বোধ্যা পাঠকমাত্র অনুমান করে কবিতাগুলো অপরাজিতা প্রতি। হয়তো অপরাজিতা কবির প্রেমিকা। 'ভালোবাসা কথাটি বলতে পারিনি' কবিতায় উল্লেখ করেন, "তাই ফুলের নাম লিখে দিলাম, -অপরাজিতা। " 'বিশ্বাসে অবিশ্বাসের জন্ম' কবিতায় "সেই নামেই তোমার নাম রেখেছি- 'অপরাজিতা'। "

কবিতাগুলো পড়তে পড়তে কবির জন্য মনটা কেঁদে ওঠে তারই বেদনায়। কবির অন্তর জুড়ে লুকিয়ে আছে বিরহ। সেই বিরহেরই প্রকাশ "কে জিতলো, একাকী, ছেড়া তার, সব ভুল করেছো, হৃদয়হীনা, তোমার শূন্যতা" কবিতাগুচ্ছতে।

'তিনি শ্রেষ্ঠ প্রেমের ইতিহাস' এ গেয়ে ওঠেন ভালোবাসার জয়গান। বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে যখন প্রিয়তমাকে কবি আহ্বান করেন কাছে আসার হয়তো সে আহ্বান উপেক্ষা করার সাধ্য নেই তার প্রিয়তমার।

ফারুক আলমের লেখার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য  চেতনাবোধ। যার ফলে তিনি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। কবির ভাষায় 'ওরা' কবিতায়-

আর যেনো না হয় কোনো জননীর বুক খালি
আর যেনো না হয় কোনো পিতা ছেলে হারা
আর যেনো না হয় ভাই হারা বোন
আর যেনো না হয় নববধূ প্রিয়পাত্র হারা.....

সবমিলে একটি চমৎকার বই ফারুক আলমের "ভালোবাসার রঙ। সবাইকে বইটি পাঠ করার করার আমন্ত্রণ।

==========o==========
ভালোবাসার রঙ
ফারুক আলম

ছোট নদী প্রকাশনা
উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ