নৈঃশব্দের রূপ যার কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে তিনি জীবনানন্দ দাস। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা ভাষায় ও সাহিত্যে তার কবিতা এক অন্য বাস্তবাতীত জগতের স্পর্শ দেয়। বিদগ্ধ বাঙালি পাঠক এক নিরন্তর যাত্রাপথে জীবনানন্দের কবিতার হাত ধরে পায়চারি করতে থাকে। আর তাই বোধহয় জীবনানন্দকে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন রূপে নতুন আঙ্গিকের আবিষ্কার করে চলি।
'জীবনানন্দ' নামে বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়ে চলেছে দুইটি সাহিত্যপত্র বা ম্যাগাজিন। একটি বরিশাল থেকে হেনরী স্বপনের সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করে ৯০ এর দশকে। বৎসরে কয়েকটি সংখ্যার কলকাকলী নিয়ে বহমান ছিল ধারাবাহিকভাবে। পত্রিকাটি সেসমসয় বেশ কয়েকবার হাতে নেয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বৎসরে সেই আকর্ষণীয় দু'তিন ফর্মার ছোট কাগজটির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। সম্পাদক বন্ধ হবার কোন ঘোষণাও দেন নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রকাশ হবার কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। নিজে একরৈখিক কার্যক্রমে আবদ্ধ থাকায় সে খোঁজ পাবার অবকাশও হয় নি।
তবে সব বাঁধা পেরিয়ে হাতে এসেছে ‘জীবনানন্দ’ নামীয় আর একটি পত্রিকা। এর সম্পাদক মাসউদ আহমাদ। দুটো পত্রিকার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। হেনরী স্বপন সম্পাদিত পত্রিকা একটি নিটোল সাহিত্য পত্রিকা। সেখানে লেখকগণের বিচিত্র বিষয় নিয়ে রচিত সাহিত্যকর্ম স্থান পেত। আর মাসউদ আহমাদ সম্পাদিত পত্রিকার প্রসঙ্গ বা আলোচ্য বিষয় শুধুমাত্র কবি জীবনানন্দ দাশ। এছাড়াও এই পত্রিকাটি ১৫/১৬ ফর্মার এক মোটাসোটা আয়তনের। যেন জীবনানন্দ সম্পর্কিত নানাজনের আলোচনার আকরগ্রন্থ।
জীবনানন্দ দাশ বাংলা ভাষার এক রহস্যময় রূপকল্পের চিত্রময় শব্দব্যঞ্জনার কবি। তাকে ঘিরে যত রকমের আলোচনা হতে পারে, তার সবগুলোকে মেধাবী সম্পাদক ছুঁয়ে দিতে চেয়েছেন। সম্পাদকীয়তে তার ভাষ্য এরকমঃ-
আমরা চেয়েছি জীবনানন্দচর্চার একটি স্বতন্ত্র পত্রিকা প্রকাশের। এমন একটি পত্রিকা, যেখানে জীবনানন্দ-সম্পর্কিত সমস্তরকম লেখাপত্র-কবিতা-গল্প-ভাবনা-স্কেচ-তথা-সংবাদ-গবেষণা-সমালোচনা ইত্যাদি প্রকাশিত হবে। (পৃষ্ঠা-৬)
"জীবনানন্দ" নামীয় নতুন পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশের সাথে সাথে বাঙালি পাঠক সমাজে সাড়া পরে যায়। দ্রুততম সময়ে জীবনানন্দ পত্রিকার প্রায় সবগুলো কপি বিক্রি হয়। বিষয়টি সম্পাদককে তৃপ্ত করে। পত্রিকাটি প্রকাশের পেছনে সম্পাদকের যে অভিপ্রায় ও স্বপ্ন ছিল, তা সফল হয়। আজকের আলোচ্য পত্রিকাটি দ্বিতীয় সংখ্যা। প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। বিষয় হিসেবে জীবনানন্দ দাশ বেশ রহস্যময়, আকর্ষণীয়। তাই লেখকগণ সকলেই স্বতঃস্ফুর্তভাবে হাত ভরে মন খুলে লিখেছেন। জীবনানন্দ সম্পর্কে স্মৃতিকথা, তাঁর সম্পর্কে চিন্তাভাবনা, তাঁকে উদ্দেশ্য করে খোলাচিঠি থেকে শুরু করে তাঁর গল্প-কবিতা-উপন্যাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কোনকিছু বাদ যায় নি। এমন কি জীবনানন্দের কবিতা নিয়ে ইংরেজি ভাষার আলোচনা সংগ্রহ করেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের জার্নাল থেকে; কষ্ট করে অনুবাদ করিয়ে নিয়েছেন আরেকজন জীবনানন্দপ্রেমীর কাছ থেকে। উনিশজন কবি রচনা করেছেন জীবনানন্দকে নিবেদিত উনিশটি কবিতা। সম্পাদক পরম মমতায় সকলকে তার ম্যাগাজিনের পাতায় প্রকাশ করেছেন। বিশালায়তন সূচিপত্রের সারাংশ প্রকাশ না করলে সম্পাদকের চিন্তাব্যাপকতা অনুধাবন সহজ হবে না।
- সম্পাদকীয়
- বিশেষ রচনা
- জীবনানন্দ-বিষয়ে সাক্ষাৎকার
- খোলা চিঠি
- গল্প-উপন্যাস-বিশ্লেষণ
- আমার জীবনানন্দ
- কবিতা নিয়ে
- সৃজনশীলতার নেপথ্যে
- গল্প
- গুচ্ছগল্প
- কবিতা
সূচিপত্রে সম্পাদকীয় ছাড়া শিরোনাম রয়েছে ৪৬টি। এই বিপুলায়তন কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা কতটা দুরূহ, তা সম্পাদক ছাড়া অন্যদের অনুধাবন মোটেও সম্ভব নয়। তারপরও জীবনানন্দ নিয়ে নতুন আগ্রহ তৃপ্ত হচ্ছে, অন্তসারশূন্য প্রতিবেশে আত্মনিমগ্ন হবার আবাহন প্রকাশিত হচ্ছে সেটাই বা কম কীসে। জীবনানন্দ অনুরাগী পাঠক আলোচক নিজেকে মেলে ধরবার একটি জায়গা অন্তত পেয়েছেন সেজন্য সম্পাদক অশেষ প্রশংসা পাবার দাবীদার।
পত্রিকাটির ছাপানোর মান ভাল। চকচকে ল্যামিনেট করা আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ অংকন করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। তার মননশীলতা প্রশ্নাতীত। ইতঃপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা, আমাদের হাতে আছে দ্বিতীয় সংখ্যা, আর কাতর তাকিয়ে আছি তৃতীয় সংখ্যার দিকে। জীবনানন্দ সম্পর্কিত পত্রিকা নিয়মিত পড়বার আকঙ্ক্ষা পোষণ করি। সম্পাদক আমাদের নিরাশ করবেন না এই প্রত্যাশা সফল হোক। সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
জীবনানন্দ
দ্বিতীয় সংখ্যা।। জুলাই ২০১৯
সম্পাদকঃ মাসউদ আহমাদ
নামলিপিঃ কাইয়ুম চৌধুরী
প্রচ্ছদঃ মোস্তাফিজ কারিগর
পৃষ্ঠাঃ ২৫৬
মূল্যঃ ১০০ টাকা
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম