সাহিত্যশিল্পের আর এক শাখা কমিকস। বাংলা ভাষায় এর অভাব প্রকট। ইউরোপ আমেরিকায় নানারকম গোয়েন্দা কাহিনী, রহস্যময় অভিযানের কাহিনী কমিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে থাকে। শিশু কিশোরদের পছন্দের শীর্ষে থাকে কমিক বইগুলো। সেখানে কমিক বইয়ের আলাদা একটা বাজার আছে। বাংলা ভাষায় কমিকস এর সংখ্যা কম। গোয়েন্দা বা রহস্যগল্পের কমতি না থাকলেও অঙ্কনশিল্পীর অভাব হয়তো এর অন্যতম কারণ।
বিজ্ঞান বিষয়টাকেও যে কমিকস এর মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়, সে বিষয়টি আমাদের নিকট একেবারে অভিনব। আব্দুল কাইয়ুম বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দেবার জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন। তার একটি উদাহরণ হল এই বই “বিজ্ঞান কমিকসঃ কী ও কেন?”।
চীনা প্রবাদ হল কোন একটি ছবি একশতটি বাক্যের সমান। তাই একটি ছবি দিয়ে কোন মতকে যতটা দৃশ্যমানভাবে ফুটিয়ে তোলা যাবে; শুধু বাক্য দিয়ে হয়ত ততোটা সম্ভব হবে না। একথা লেখক তার ভূমিকাতে স্পষ্ট করে লিখে দিয়েছেনঃ-
কার্টুন মাধ্যমে যে কোনো কঠিন বিষয়কে খুব সহজে বুঝিয়ে বলা যায়। কারণ এখানে শুধু কঠিন কিছু শব্দ নয়, সেই সঙ্গে থাকে হাতে আঁকা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছবি। কার্টুনচিত্র আঁকা একটি বিশেষ আর্ট। কার্টুনচিত্র খুব সহজেই পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। আর পাঠক যদি কিশোর বা তরুণ হয়, তাহলে তো কথাই নেই।
মোট ২৫টি বৈজ্ঞানিক সমস্যা নিয়ে এই বই। শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীদের আলোচনার ভঙ্গিতে প্রতিটি সমস্যা ও তার সমাধান দেয়া হয়েছে। দলবদ্ধভাবে কথা বলার সময় যেমন দু'একটা ইয়ার্কি -ঠাট্টার কথা চলে, তেমন শব্দ ও বাক্য কমিকগুলোতে রেখে দেয়া হয়েছে। ফলে পড়তে গিয়ে একঘেয়ে লাগে না। সাবলীলভাবে কাহিনি এগিয়ে যেতে থাকে।
যে প্রশ্নগুলো নিয়ে এত আয়োজন সেগুলো বেশ মজার। প্রতিদিনের জীবনে, চলার পথে এই প্রশ্নগুলোর দেখা মেলে। আড্ডার মাঝখানে হয়ত কেউ ফট করে এই প্রশ্নগুলো করে ফেলে। তখন একেবারে হকচকিয়ে যেতে হয়। দুইহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে মনে হয়; তাইতো, এমনভাবে তো ভাবিনি। প্রশ্নগুলোর চেহারা বোঝার জন্য সূচিপত্র থেকে পাঁচটি প্রশ্ন উপস্থাপন করা যেতে পারে।
- ১। ডিম আগে না মুরগি আগে?
- ২। মশা কেন কামড়ায়?
- ৩। বৃষ্টির ফোঁটা গোল কেন?
- ৪। আমরা হাই তুলি কেন?
- ৫। চাঁদে কি দিন-রাত হয়?
এরকম অদ্ভূত ও মজার সব প্রশ্ন নিয়ে এই বই। হাতে নিয়ে অবাক হতে হয়।
বিজ্ঞান কমিকস এর পৃষ্ঠা |
বইটা হাতে নিলে স্পর্শসুখ অনুভব হয়। কাগজগুলো পিচ্ছিল, চকচকে, ধবধবে সাদা। ছাপানোর মান ভাল। চাররঙা ছবিগুলোর ছাপানো যথাযথ হয়েছে। কোন আঁকাবাঁকা বা রং লেপটে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বোঝা যায় বইটি প্রকাশ করার সময় প্রকাশক আলাদাভাবে যত্ন নিয়েছেন। প্রকাশকের আন্তরিকতা বোঝার জন্য দুই এক পাতার কমিক প্রকাশ করা যেতেই পারে।
এক একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য দুইটি করে পৃষ্ঠা ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অবশ্য তিন থেকে পাঁচটি পৃষ্ঠাও লেগেছে।
বাংলা বিজ্ঞান কমিকস |
ভাল লাগার মত বই এটা। এর প্রচ্ছদ যে কাগজ দিয়ে তৈরি, সেটা বেশ উন্নতমানের কাগজ। হাত দিয়ে ধরলে কেমন মোলায়েম খসখসে আরামদায়ক স্পর্শানুভূতি হয়। প্রচ্ছদে গাঢ় রঙের ব্যবহার করে বইটির আবেদন বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন অভিজ্ঞ শিল্পী অশোক কর্মকার। বইয়ের কমিকগুলো এঁকেছেন সাদমান মুন্তাসির, আসিফুর রহমান ও শামীম আহমেদ। তাদের পরিশ্রম সফল হয়েছে। বাংলা বিজ্ঞান বইয়ের ইতিহাসে তাদের পরিশ্রম ও চিন্তা যে অবদান রেখেছে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
<><><><><>
বিজ্ঞান কমিকস : কী ও কেন?
আব্দুল কাইয়ুম
প্রচ্ছদঃ অশোক কর্মকার
আঁকিয়েঃ সাদমান মুন্তাসির, আসিফুর রহমান ও শামীম আহমেদ
প্রকাশকালঃ ২০১৯
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৬৪
মূল্যঃ ২৫০ টাকা
ISBN: 978-984-8015-76-6
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম