প্রকৃতির সবচাইতে বর্ণিল প্রাণী হল পাখি। চারপাশের সীমানা রঙের ছটায়, সুরের মায়ায় ভরিয়ে রাখে যে পাখি, তাকে নিয়ে বাংলাভাষায় বইয়ের সংখ্যা খুব বেশি নয়। বাঙালি জনজীবনে পাখির উপস্থিতি অল্প কয়েকজন কবি লেখক ছাড়া অন্য কারও রচনায় তেমন লক্ষ্য করা যায় না। তবে গত কয়েক দশকে পাখির প্রতি আগ্রহ জাগাতে একাধিক পাখিপ্রেমী পর্যবেক্ষক পরিশ্রম করে চলেছেন। দেশের নির্দিষ্ট কয়েক জায়গায় পাখি দেখার আয়োজন করার পাশাপাশি বইপত্র লিখছেন। পাখির প্রতি ভালবাসা জাগাতে, পাখিকে চিনতে এই বইগুলো বেশ কার্যকর।
আমরা পাখির প্রতি আরও আগ্রহ জাগাতে বাংলাভাষী উৎসাহী প্রজন্মের সামনে নির্বাচিত পাঁচটি বই উপস্থাপন করতে চাই। এই বইগুলোর লেখকগণ পাখি বিষয়ে তাঁদের সমস্ত জ্ঞান উজাড় করে দিয়েছেন। তাঁদের উদ্দীষ্ট পাঠকও সেই নবীন প্রজন্ম; যারা দেশের প্রকৃতি ও সংস্কৃতিকে বোঝে ও ভালবাসে।
# বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি - সীমান্ত দীপু
বাংলাদেশের জলবায়ূ ও পরিবেশ পাখিবান্ধব। সেকারণে এদেশে দেখা যায় সাতশত প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে তিনশত বিশ প্রজাতির পাখি পরিযায়ী। প্রচলিত ভাষায় এদেরকে অতিথি পাখি বলা হয়। বাংলাদেশে যে সব অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি দেখা যায়, তাদের নিয়ে বাংলা ভাষায় বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ বইয়ের পরিমাণ খুব বেশি নেই। ‘সীমান্ত দীপু’ লিখিত “বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি” বইটি সেই অভাব অনেকাংশে পূরণ করেছে।
নিজের বই নিয়ে লেখক তার ‘লেখকের কথা’ শীর্ষক ভূমিকায় আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন-
বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি’ গ্রন্থটি পাঠ করে পরিযায়ী পাখি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সামান্য আগ্রহ জন্মালেই আমার আগামী দিনে কাজ করার আগ্রহটা অনেকগুণ বেড়ে যাবে এবং আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
বইটির সূচিপত্র ও বিবরণ জানতে পড়ুন:
৩২০ প্রকারের পরিযায়ী পাখি নিয়ে একমাত্র বই 'সীমান্ত দীপু' রচিত "বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি"
# রঙিন ডানার পাখি - রহীম শাহ লিখিত
রহীম শাহ লিখিত "রঙিন ডানার পাখি" নামের বইটি বেশ সুলিখিত। প্রকৃতির অন্যতম সদস্য পাখি সম্পর্কে আমাদের প্রবল আগ্রহ। পাখি সম্পর্কে সম্ভাব্য সব তথ্য আমাদের জানা চাই। তবেই না দিনে-রাতে বাইরে বের হলে যে আকর্ষণীয় প্রাণীটির মুখোমুখি হই, তাকে ভালভাবে চিনতে পারব, আরও বেশ ভালবাসতে পারব। রহীম শাহ তার বইতে যত বেশি সম্ভব তথ্য দেয়ার চেষ্টা যে করেছেন, তা বেশ বোঝা যায়। তিনি নিজে পাখিপ্রেমিক; আরেক বিখ্যাত প্রকৃতিপ্রেমিক দ্বিজেন শর্মা তাকে 'খ্যাতিমান বিহঙ্গবিদ' বলেছেন; তিনি বোঝেন নবীন পাখিপ্রেমিকদের মন। সেভাবেই বইটিকে উপস্থাপন করেছেন। বইয়ের সাধারণ রূপ যে খাড়াখাড়ি, সেটা তিনি গ্রহণ করেন নি। বইকে করেছেন পাশাপাশি অবয়বের। পাঠককে লম্বা আকারের পৃষ্ঠা ওল্টাতে হবে। তবে সে পরিশ্রম বৃথা যাবে না। কারণ প্রত্যেক পাতায় রয়েছে পাখিদের একাধিক আকর্ষণীয় ছবি। পাখির বিভিন্ন দিকের, বা ভঙ্গির বা বয়সের একাধিক ছবি প্রত্যেক পাতায় রয়েছে। প্রত্যেকটি পাতায় রয়েছে একটি করে পাখির বর্ণনা। একাধিক পাখির বিবরণ রয়েছে শুধু একটি পাতায়।
এই বইতে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ছবি আছে। সেগুলো দেখতে ক্লিক করুন:
পাখি চেনার উপায় রয়েছে 'রহীম শাহ' এর "রঙিন ডানার পাখি" বইতে
# বাংলাদেশের পাখির ফিল্ড গাইড - ইনাম আল হক ও তারেক অণু
বাংলাদেশের আবহাওয়া পাখিদের জন্য আরামদায়ক। খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা কোনটাই নেই। এই নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ সবধরনের পাখিকে আকর্ষণ করে। সারাদেশে জালের মত বিছানো নদীগুলো অফুরান খাদ্য ও পানীয় জলের উৎস। বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্য ৭০০রও বেশি প্রজাতি নিয়ে পাখিসম্পদে ধনী বললে অত্যুক্তি হয় না।
এত ব্যাপক সংখ্যক বৈচিত্র্যময় পাখিদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার মত বই বাংলা ভাষায় খুব একটা নেই। বিখ্যাত পাখিপ্রেমিক ‘ইনাম আল হক’ ও সৌখিন পরিব্রাজক ‘তারেক অণু’ বাংলাদেশ সীমান্তে দৃশ্যমান পাখিদের সাথে উৎসাহী পাঠককে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। আর এ জন্য রচনা করেছেন “বাংলাদেশের পাখির ফিল্ড গাইড”।
এই বইয়ের প্রত্যেক পাতার একপাশে রয়েছে একাধিক পাখির বর্ণনা ও অন্যপাশে রয়েছে সেগুলোর বর্ণিল ছবি। চার রঙে ছাপানো আকর্ষণীয় ছবিসহ বইটি সম্পকে জানতে পড়ুন:
৫০৬ প্রজাতির পাখি চিনতে পড়ুন ‘ইনাম আল হক’ এবং ‘তারেক অণু’ রচিত “বাংলাদেশের পাখির ফিল্ড গাইড”
# পাখির ভূবন - বিপ্রদাশ বড়ুয়া
প্রকৃতিপ্রেমী ‘বিপ্রদাশ বড়ুয়া’ পাখিদের প্রতি প্রবল ভালবাসা নিয়ে রচনা করেছেন “পাখির ভূবন” বই। এখানে তিনি বিভিন্ন পাখির আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলো যতটা সম্ভব বর্ণনা করেছেন। যেমন কিছু পাখি জলাশয়ের আশেপাশে দেখা যায়। কিছু পাখি ইলেকট্রিক খুঁটি ও তারে বসে থাকে। কোন কোন পাখি আবার মাটিতে চড়ে বেড়ায়। কেউ কেউ গাছের ডাল ছাড়া কোথাও বসে না। কোনো পাখি আবার আকাশের অনেক উঁচুতে সবসময় উড়ে বেড়ায়। কোনো পাখির ঠোঁট সুন্দর, কোন পাখির লেজ আকর্ষণীয়, কারও পা লম্বা, কারও গ্রীবা দীর্ঘ, কারও বা ঝুঁটি ঝলমলে। ঋতুভেদে কিছু কিছু পাখির রঙ ও ডাক পাল্টে যায়। কোনো পাখি লোকালয়ের কাছে থাকতে ভালবাসে, কোনো কোনো পাখি আবার অরণ্যচারী। কোনো পাখি দলবদ্ধ হয়ে থাকে, আবার কোনো পাখি থাকে জোড়ায় জোড়ায়। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পাখিদের উল্লেখ আছে। কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে বাঙালি লেখকেরা পাখিদের নানা কাহিনী তুলে এনেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, সূধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমীয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী প্রমুখের লেখাতে পাখিদেরকে বিভিন্ন প্রসঙ্গে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তবে পাখিদের কথা সবচেয়ে বেশি আছে জীবনানন্দ দাশের কবিতায়। তিনি পাখিদের প্রসঙ্গ তাঁর কবিতায় এত বেশি এনেছেন যে অবাক হয়ে যেতে হয়।
এরকম আরও তথ্য জানতে পড়ুন:
পাখিদের প্রতি আগ্রহ জাগাবে ‘বিপ্রদাশ বড়ুয়া’র বই “পাখির ভূবন”
# ENCYCLOPEDIA OF FLORA AND FAUNA OF BANGLADESH - এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ'
'এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ' প্রকাশিত বই “ENCYCLOPEDIA OF FLORA AND FAUNA OF BANGLADESH”। ব্লার্বে ইংরেজি ও বাংলা এই দুই ভাষাতে সংকলনটি প্রকাশের কথা উল্লেখ করা আছে; তবে আমাদের আলোচ্য বইটি ইংরেজি ভাষার। মোট ২৮ খণ্ডে প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রাণী ও উদ্ভিদকুল সম্পর্কে এত বিস্তারিত তথ্য আর কোন সংকলনে পাওয়া দুরূহ। ২৮ খণ্ডের সংকলনের একটি হল ২৬তম খণ্ড। গ্রন্থমালার এই ২৬তম গ্রন্থের আলোচ্য বিষয় “পাখি”। কোষগ্রন্থ হওয়ার কারণে পাতায় পাতায় নানারকম খুঁটিনাটি তথ্যসহ প্রয়োজনীয় মন্তব্য রয়েছে। ফলে তথ্যানুসন্ধানী পাঠক থেকে শুরু করে গবেষনাপ্রত্যাশী পাঠক সকলের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য এই বই থেকে পাওয়া যাবে। প্রতিটি তথ্য সুচারুভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বইয়ে সংযোজনের জন্য বিবেচিত হয়েছে। পাখি বিষয়ক তথ্যগুলো লিখেছেন ১৪ জন শিক্ষক, প্রকৃতিবিজ্ঞানী, প্রাণিসংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ প্রমুখ। এদের উপস্থাপিত লেখা পরিমার্জন তথা সম্পাদনা করেছেন প্রাণী বিষয়ে ৫ জন ও উদ্ভিদ বিষয়ে ৫ জন বিদগ্ধ পণ্ডিত। প্রধান সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক প্রাপ্ত লেখাগুলো আবারও নিপুণভাবে যাচাই বাছাই করে এই গ্রন্থভুক্ত করেছেন। এখানে প্রদত্ত তত্ত্ব ও তথ্যগুলো শতভাগ সঠিক বা নিখুঁত হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। কোনরকম বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। পণ্ডিতগণের সংশ্লেষ থাকার কারণে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিতে দৃশ্যমান পাখি বিষয়ে এই বইয়ের কথাই শেষ কথা। বইটি বাংলাদেশের সীমানায় দেখা যাওয়া সকল প্রকারের পাখির জাতীয় তালিকা হিসেবে রচনা করা হয়েছে। এখানে ৬৪টি পরিবারের ২৯৫টি গণ বা বর্গের ৬৫০ প্রজাতির পাখির বর্ণনা রয়েছে।
এই তথ্যবহুল বইটি সম্পর্কে জানতে পড়ুন:
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম