গণিত বিষয়ে নির্বাচিত পাঁচটি বই রিভিউ

গণিত বিষয়ে নির্বাচিত পাঁচটি বই

গণিত নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে ভীতি আছে। এই ভীতিটা এসেছে ভয়ের সংস্কৃতি থেকে। ভয়নির্ভর সামাজিক কাঠামোর বিপরীতে গণিতপ্রেমী আছেন অনেকে। তাদের মধ্যে কয়েকজন সমাজ থেকে গণিতের প্রতি ভয় দূর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের লেখা বই পড়লে মনে হবে, আরে, গণিত তো প্রকৃতির সবখানে, একে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। মহাবিশ্বের আয়তন, প্রকৃতির অবয়ব, সুন্দরের ধারণা প্রভৃতি গণিত ছাড়া যে অচল – একথা আমরা অনেকেই জানতাম না। অথচ গণিত বিষয়ের বইগুলোতে বিষয়গুলো কত সহজ ও আন্তরিকভাবেই না উপস্থাপন করা হয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীদের মনের গভীর থেকে ভয় দূর করতে গত দুই দশকে বাংলা ভাষায় গণিত সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রত্যেকটি বই লিখেছেন গণিতকে ভালবাসেন এমন গণিতপ্রেমীগণ। তাদের লক্ষ্য কিশোর কিশোরী তরুণ শিক্ষার্থী। আমরা 'গ্রন্থগত' ওয়েবসাইটে গণিতের উপর এমন বেশ কয়েকটি বইয়ের আলোচনা করেছি। আজ সেসব থেকে পাঁচটি বই নতুনভাবে উপস্থাপন করা হল।

* মুহম্মদ জাফর ইকবাল - গণিতের মজা মজার গণিত


গণিত মানুষের যুক্তিবোধের অনুভূতিকে তীক্ষ্ণ করে, যারা গণিত ভালবাসেনা, গণিত চর্চা করে না, তাদের যুক্তি সম্পর্কিত ধারণাগুলো দুর্বল হবে এটাই স্বাভাবিক। যুক্তিবিহীন সামাজিক সংস্কৃতিতে যারা আলোর বার্তা নিয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে শিক্ষক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল অন্যতম। শিশুকিশোরদের চিন্তাজগত তার প্রিয় জায়গা। কল্পনা দিয়ে গড়া এই জগত তিনি মণিমুক্তার মত ঐশ্বর্য দিয়ে সাজাতে চান। তাদের চিন্তাসান্নিধ্য থাকতে তিনি আনন্দবোধ করেন। শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীদের বুদ্ধিচর্চায় গণিতকে অবশ্য প্রয়োজনীয় মনে করেন। এই উদ্দেশ্যে রচনা করেছেন গণিত বিষয় বই “গণিতের মজা মজার গণিত”।

তিনি মনে করেন-

এই বইটির উদ্দেশ্য গণিত শেখানো নয়, বইটির উদ্দেশ্য গণিতে উৎসাহী করে তোলা।


* চমক হাসান - গণিতের রঙ্গে হাসিখুশি গণিত

সংখ্যা নিয়ে অনেক ধরণের রঙ্গব্যঙ্গ চমক হাসানের ঝুলিতে রয়েছে। আমরা যারা সংখ্যাকে ভয় পেয়ে এড়িয়ে চলি তারা এসবের দেখা পাই না। ফলাফলের হাসির দিকটি জেনে আনন্দের ছোঁয়াও পাই না। আমাদের কাছে গণিত যেন নিরানন্দের অনিচ্ছাজনিত একটি কঠিন কাজ। চমক হাসান তার বইয়ের পাতায় পাতায় দেখিয়ে দিয়েছেন গণিত শুধু ভয় নয়, হাসাতেও পারে; মনের কালো মেঘ নিমেষে দূর করে দিতে পারে; মুখের কোণে জাগিয়ে তুলতে পারে এক চিলতে হাসি।

ভূমিকায় বলেন-

সুন্দর চিন্তা অনেক আনন্দের একটা ব্যাপার। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, খাবারের সংস্থান থাকলে, শুধু চিন্তার আনন্দেই একটা অর্থবহ জীবন পার করে দেয়া যায়। গণিত হলো গুছিয়ে চিন্তা করার ভাষা, বিজ্ঞানের ভাষা। গণিতের আনন্দ পেতে হলে গণিত অনুভব করতে হয়।


* সফিক ইসলাম - গণিত আমাদের কী কাজে লাগে?

এই বইটি একটি অন্য রকমের বই। গণিত নিয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা যে সঠিক নয়, তা বোঝা যাবে সফিক ইসলাম এর লেখা বই "গণিত আমাদের কী কাজে লাগে?” পড়লে। লেখক নিজেই বইয়ের বৈশিষ্ট্য ভূমিকাতে ব্যাখ্যা করেছেন।

এ বইয়ে আমরা সাধারণ মানুষের প্রাত্যাহিক প্রয়োজনে গণিত কী কাজে লাগে তারই একটি ফিরিস্তি দেওয়ার চেষ্টা করব। এই বিবরণ কোনো বিশেষজ্ঞ পাঠকের জন্য নয়, নয় গণিতে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তির জন্যও। এটি গণিতের কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ টেক্সট বইও নয়। উচ্চতর গণিতের ছিটেফোঁটাও এখানে নেই। এ বইয়ে কেবল মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর পর্যন্ত গণিতের অল্প কিছু বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। কাজেই এই বইটি পড়ে বোঝার জন্য গণিতে খুব অভিজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। কেবল প্রাথমিক গণিত সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তারাই বইটি পড়ার উপযুক্ত। বইটি গণিতের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাজানো হয়েছে। গণিতের উন্নতির সাথে সাথে মানব সভ্যতার উন্নতির স্বরূপ এবং প্রকৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সকল আলোচনাই গণিতের ইতিহাসের আলোকে করা হয়েছে। সর্বোপরি গণিত কীভাবে মানুষের মনোজগতকে বিকশিত করতে পেরেছে সেই সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা দেওয়া হয়েছে।


> পড়ুন: সফিক ইসলাম’ রচিত “গণিত আমাদের কী কাজে লাগে?” 

 

* দিলীপ এম সালভি - শূন্যের ইতিকথা

সাধারণভাবে আমাদের কাছে শূন্য অর্থ কিছুই না। কিন্তু গণিতের চোখে শূন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সংখ্যা। প্রাচীনকালের মানুষ কীভাবে গণনা করতো, শূন্য কীভাবে আবিষ্কার হলো, কীভাবে এর ব্যবহার সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল এর সংক্ষিপ্ত ও তথ্যবহুল কাহিনী নিয়েই দিলীপ এম সালভি রচনা করেছেন ‘শূন্যের ইতিকথা’ বইটি। কিশোরদের উপযোগী করে লেখা বইটি নবীন পাঠককে শূন্য সম্পর্কে আরও বেশি জানতে আগ্রহী করে তুল

প্রাচীন গ্রীসের দুই পণ্ডিত আর্কিমিডিস ও অ্যাপোলেনিয়াস শূন্যের দেখা পাননি। এ বিষয়ে দুঃখ করে ফ্রান্সের গণিতবিদ ল্যাপলাস (১৭৪৯-১৮২৭) একবার বলেছিলেন-

    গ্রীক গণিতজ্ঞদ্বয় যদি এই সংখ্যা আবিষ্কার করতে পারতেন, তবে তাঁর সময়কার বিজ্ঞান অনেক বেশী অগ্রসর অবস্থানে থাকতো।

বাংলায় অনূদিত বইটি শিশুদের জন্য রচিত। তাদের উদ্দেশ্য করে, তাদের মতো করে গণিতের ইতিহাস এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। মূল বই লিখেছেন 'দিলীপ এম সালভি' আর বাংলাভাষী শিশু কিশোরদের জন্য বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন শফিকুল ইসলাম।


* সৌমেন সাহা - গণিত চর্চা

সৌমেন সাহা’ তার নিজের রচিত “গণিত চর্চা” বই প্রকাশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ‘ভূমিকা’য় বলেন-

অন্যান্য বিষয়ের থেকে অঙ্ক বিষয়টি একটু আলাদা। অঙ্ক শিখন এমন একটি শিখন প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে চিন্তনের উপর নির্ভরশীল। অঙ্কশাস্ত্র শিক্ষার্থীকে চিন্তা করতে বাধ্য করায়। বর্তমান গ্রন্থটি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে সেই গণিত চিন্তা করার শক্তি যোগাবে বলে আমি বিশ্বাসী।

গণিতের কোন কোন বিষয় বা দিক শিক্ষার্থীদেরকে চিন্তা করার শক্তি দেবে বলে লেখক মনে করেন তা জানতে সূচিপত্র দেখতেই হবে।



# গণিত বিষয়ে 'গ্রন্থগত' সাইটে প্রকাশিত সবগুলো বইয়ের রিভিউ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ