নৈঃসঙ্গ্যচেতনা - বিশ্বজিৎ ঘোষ

নৈঃসঙ্গ্যচেতনা - বিশ্বজিৎ ঘোষ

মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন। তারপরও নানাবিধ অনুষঙ্গে মানুষ নারী-পুরুষ-নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে একা হয়ে যায়, একা থাকতে চায়। মানসিক এবং শারীরিক দুভাবেই। মানুষের এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্নতার অস্তিত্ব মানবসমাজে আদিমকাল থেকেই রয়েছে। এর প্রমাণ সাহিত্যে পাওয়া যায়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম থেকে উদাহরণ এনে মানুষের এই বিচ্ছিন্নতাজাত রিক্ততাকে শ্রেণীকরণ ও সংজ্ঞায়িত করেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যব্যক্তিত্ব বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ডক্টর বিশ্বজিৎ ঘোষ। তাঁর বাগ্মিতা ও পাণ্ডিত্য সুখ্যাত। বাংলা ভাষায় মানুষের নিঃসঙ্গতা, বিচ্ছিন্নতা তথা সমকাল থেকে এই মানসিক বিচ্যুতি নিয়ে তিনিই প্রথম আলোচনা করলেন। এই বইয়ের মাধ্যমে মানবচৈতন্যের জটিল এই প্রবণতা নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনার সূত্রপাত হল।

বইয়ের প্রথম ব্লার্বে যেভাবে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে তা নিম্নরূপ:

আধুনিক মানবচৈতন্যের বিশিষ্ট এক লক্ষণ নৈঃসঙ্গ্যচেতনা। সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানবচিত্তে নৈঃসঙ্গ্যচেতনা ক্রিয়াশীল থাকলেও পুঁজিবাদী সমাজে এসে তা ধারণ করে প্রবল ও ভয়াবহ রূপ। একালে সামাজিক সঙ্গতিশূন্যতা ও বৈশ্বিক বিপন্নতায় মানুষের সনাতন অন্বয় ও সংযুক্তিবন্ধনে ধস নেমেছে - প্রবল হয়ে উঠেছে অনন্বয় ও বিযুক্তি।


নিজের বই সম্পর্কে ‘প্রসঙ্গকথা’ অংশে লেখক বলেন-

১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় আমার বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসে নৈঃসঙ্গ্যচেতনার রূপায়ণ শীর্ষক একটি গবেষণা-গ্রন্থ।… বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে আমার পুরোনো ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু নতুন চিন্তা; তবে গোটাটাই পূর্ববর্তী গ্রন্থের একটা অংশের প্রতিধ্বনি-- একথা বলতে আমি কুণ্ঠিত নই। পৃষ্ঠা ৯


[বইয়ের শেষে সংযুক্ত গ্রন্থপঞ্জীতে উপরে উল্লেখিত “বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসে নৈঃসঙ্গ্যচেতনার রূপায়ণ” শীর্ষক গবেষণা-গ্রন্থটির প্রকাশকাল ১৯৭৭ সাল লেখা হয়েছে। অতএব বইটির যথার্থ প্রকাশকাল কত তা নিশ্চিত হওয়া গেল না- আলোচক]

মূল বইয়ের গাঠনিক পরিকল্পনায় কোন অধ্যায় বা পরিচ্ছেদ বিভাজন করা হয়নি। একটি প্রসঙ্গ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী পৃষ্ঠায় না গিয়ে সেই পৃষ্ঠাতেই শিরোনাম লিখে পরবর্তী আলোচনা শুরু করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে লেখক 'অবতরণিকা' অংশে জানান-

বর্তমান বইয়ের সংগঠন-পরিকল্পনায়, পাঠক লক্ষ করেছেন, কোনো অধ্যায় বা পরিচ্ছেদ বিভাজন করা হয়নি। খুব যে গুরুতর কারণ আছে এর পিছনে, তা নয়; আমরা ভেবেছি বিষয়টি একটানেই উপস্থাপিত হোক – বিচ্ছিন্নতারও যে একটা সংহতি আছে, সেটাই ধরা যাক গ্রন্থের এমন সংগঠন-পরিকল্পনায়। পৃষ্ঠা ১৩

তবে বইয়ে একেবারে কোন বিভাজন নেই তা নয়। সে চিত্র সূচিপত্রেই স্পষ্ট –

  • সূচি
  • প্রসঙ্গকথা
  • অবতরণিকা
  • জন্মসূত্রেই মানুষ একা, তার এ একাকিত্ব সমগ্র জীবনের নিত্য-সঙ্গী।
  • নৈঃসঙ্গ্যচেনার উদ্ভব : বিচ্ছিন্নতাবোধ
  • নৈঃসঙ্গ্যচেতনার স্বরূপ
  • নিঃসঙ্গ্যতা থেকে মুক্তি
  • নৈঃসঙ্গ্যচেতনার স্বরূপ
  • নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি
  • নৈঃসঙ্গচেতনার সমাজ-পটভূমি : পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য
  • শিল্প-সাহিত্যে নিঃসঙ্গ্যচেতনার প্রতিফলন
  • উপসংহার
  • পরিশিষ্ট
  • উল্লেখপঞ্জি


এটা ঠিক যে সূচিপত্রে দৃষ্ট শিরোনামগুলো আদতে বিভাজন নয়, এগুলো নৈঃসঙ্গ্যচেতনার ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞায়ন; প্রসঙ্গ অনুযায়ী আলোচ্যকে আরও বেশি বিস্তৃতকরণ ও অনুধাবন প্রক্রিয়ার বিবরণ।

“নৈঃসঙ্গ্যচেনার উদ্ভব : বিচ্ছিন্নতাবোধ” বেশ তথ্যবহুল একটি অংশ। বিচ্ছিন্নতার উৎস লুকিয়ে আছে মানব অস্তিত্বের মর্মকোষে। আছে সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই। Frank Johnson সম্পাদিত ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত Alienation : Concept, Term, and Meanings আলোচনাপত্রের অন্তর্গত Ephraim H. Mizruchi এর লেখা 'An Introduction to the Notion of Alienation’ বইয়ের সূত্র টেনে লেখক বলেন-

বস্তুত, সভ্যতার ইতিহাস এবং বিচ্ছিন্নতার ধারণা সমান্তরাল ও সমানবয়সী – "The fundamental notions of alienation is at least as old as recorded time.”  জন্মসূত্রেই মানুষ একা, তার এ একাকিত্ব সমগ্র জীবনের নিত্য-সঙ্গী। মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার মুহূর্ত থেকে মা ও সন্তানের মধ্যে সম্পর্কের জৈব-একাত্মতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় – ক্রমে এই বিচ্ছিন্নতা বহির্জাগতিক অসঙ্গতি এবং চিত্তজাগতিক জটিলতার সঙ্গে বিমণ্ডিত হয়ে মানব-অস্তিত্বকে করে তোলে নিঃসঙ্গতাদীর্ণ ও সঙ্কটসঙ্কুল। পৃষ্ঠা ১৩


‘বিচ্ছিন্নতা' বা ‘Alienation’ শব্দের উদ্ভব ও বিবর্তনের ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। লেখকের ভাষ্যে জানা যায়-

বিচ্ছিন্নতা বা Alienation শব্দের মূল হলো জার্মান শব্দ 'Entfremdung’। বিচ্ছিন্নতা বোঝাতে দার্শনিক আলোচনায় Entfremdung’ শব্দটিকে গুরুত্ব সহকারে প্রথম ব্যবহার করেন কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)। জার্মানির ভাববাদী দার্শনিক হেগেল (১৭৭০-১৮৩১) বিচ্ছিন্নতা বোঝাতে ‘Entaeusscerung’ শব্দটি ব্যবহার করেন-- যার রয়েছে একাধিক অর্থ – বিচ্ছিন্ন হওয়া, ত্যাগ করা, বিক্রি করা, অধিকার বিনষ্ট হওয়া বা সম্পত্তি হস্তান্তরিত কিংবা স্থানান্তরিত হওয়া ইত্যাদি। হেগেলের ভাববাদী দর্শন থেকে কার্ল মার্কসের বস্তুবাদী দর্শনে এসে Entaeusscerung (Alienation) শব্দটি হয়েছে Entfremdung (Estrangement)। হেগেল এবং মার্কস স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণে শব্দ নির্বাচন করলেও পরবর্তীকালে সমাজবিজ্ঞানীদের আলোচনায় মার্কসের ধারণাই প্রযুক্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে। পৃষ্ঠা ১৫

J. Schaar এর লেখা Escape From Authority (1961) বইকে প্রামাণ্য মেনে আমরা জানতে পারি-

রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড, ওডেসী প্রভৃতি গ্রন্থেও আমরা সমাজবিচ্ছিন্ন নৈঃসঙ্গ্যপীড়িত একাকী মানুষের সাক্ষাৎ পাই। পৃষ্ঠা ১৪


“নৈঃসঙ্গ্যচেতনার স্বরূপ” অংশটি (অধ্যায়) বেশ দীর্ঘ। কারণ এই অংশে বিচ্ছিন্নতার স্বরূপ বোঝার জন্য বহুরকম দৃষ্টিকোণের সাহায্য নেয়া হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী Melvin Seeman তার On the Meaning of Alienation বইয়ে একাকীত্বের পাঁচটি স্বরূপ বা লক্ষণ চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো হল-

  • ১. কর্তৃত্বহীনতা (Powerlessness);
  • ২. অর্থহীনতা (Meaninglessness);
  • ৩. আদর্শহীনতা (Normallessness);
  • ৪. সম্পর্কহীনতা (Isolation) এবং
  • ৫. আত্ম-সংযোগহীনতা (Estrangement)

১৯৫৯ সালে প্রকাশিত On the Meaning of Alienation বইয়ে Melvin Seeman মনে করেন নৈঃসঙ্গ্যতা বা বিচ্ছিন্নতা বা Alienation এর মূল অর্থ বলতে যা বোঝায় তা হল-

to become a stranger to oneself - পৃষ্ঠা ৩০


এর প্রভাব খুব মারাত্মক হতে পারে। ব্যক্তিজীবনের পাশাপাশি সামাজিক জীবনে তথা সমাজের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে এক বিধ্বংসী অস্থিরতা। এর স্বরূপ আলোচ্য অধ্যায়ে লেখক যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তার বিবরণ নিম্নরূপ-

বিচ্ছিন্নতা, কখনও কখনও ব্যক্তিচৈতন্যে সৃষ্টি করে এমিল ডুর্খেইম (১৮৫৮-১৯১৭)-কথিত Anomie বা আচরণগত আদর্শহীনতা ও নৈরাজ্যপ্রবণতা। নৈরাজ্যবাদী মানুষের কাছে বিলুপ্ত হয়ে যায় মানবিক দায়িত্ববোধ, এবং যতই মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত হয়, ততই সে হতে থাকে মানবসমাজ হতে বিযুক্ত ও বিচ্ছিন্ন। বিচ্ছিন্নতা সমাজে সৃষ্টি করে "individuals without an anchor, without a horizon, colourless, stateless, rootless” মানুষের দল। বিচ্ছিন্ন মানুষ নিজেকে কোথাও সংযুক্ত করতে না পেরে ক্রমে হতাশার পঙ্কে ডুবে যায়, এবং মানবিক মূল্যবোধ বিস্মৃত হয়ে আশ্রয় নেয় নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ডে। বিচ্ছিন্নতা ব্যক্তিচিত্তে সৃষ্টি করে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। বিরুদ্ধ সমাজ-প্রতিবেশের কারণে মানুষের অস্তিত্ব যখন বিপন্ন হয়, তখন স্বভাবতই মানবচিত্তে জন্ম নেয় উদ্বেগ। উদ্বেগ যত বাড়ে, ততই বৃদ্ধি পায় ব্যক্তি-অস্তিত্বের ভীতি; এবং এভাবে ক্রমেই বেড়ে চলে ব্যক্তির  বিচ্ছিন্নতাবোধ। তীব্র উদ্বেগের পরিণামে সৃষ্টি হতে পারে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির মানসবিকৃতি, খণ্ড-বিখণ্ড হতে পারে তার সত্তা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য সে খুঁজে নিতে পারে আত্মহননের পথ। পৃষ্ঠা ৩১


ব্যক্তিমানুষের এই বিচ্ছিন্নতার বহুমাত্রিক রূপ সমাজে লক্ষ্য করা যায়। সেই রূপগুলোর নাম লেখক সূচিপত্রে উপশিরোনামে উল্লেখ না করলেও গ্রন্থমধ্যে আলোচনা শুরুর আগেই গাঢ় ও জোরালো বর্ণে লিখিত হয়েছে। সেগুলো হল-

  • প্রকৃতি ও মহাজাগতিক বিচ্ছিন্নতাজাত নিঃসঙ্গতা
  • to become a stranger to oneselfMelvin Seeman
  • পরিবার ও পারিবারিক-বন্ধন বিচ্ছিন্নতাজাত নিঃসঙ্গতা
  • প্রেম বিচ্ছিন্নতাজাত নিঃসঙ্গতা
  • সমাজ বিচ্ছিন্নতাজাত নিঃসঙ্গতা
  • ঈশ্বর বিচ্ছিন্নতাজাত নিঃসঙ্গতা
  • মূল্যবোধ বিচ্ছিন্নতাজাত নিঃসঙ্গতা এবং
  • সত্তা বিচ্ছিন্নতাজাত নিঃসঙ্গতা


বোঝাই যাচ্ছে মানুষ যে সব কারণে নিঃসঙ্গতার শিকার হতে পারে, তার প্রায় সবগুলোকে লেখক আলোচনায় তুলে এনেছেন। বিস্তারিত তথ্য উদাহরণসহ প্রামাণ্য করে তুলেছেন।

মানুষের বিচ্ছিন্নতাবোধ বা নৈঃসঙ্গ্যচেতনা নিয়ে বাংলাভাষায় এটাই প্রথম বই। লেখক তাঁর গবেষণাগ্রন্থ “বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসে নৈঃসঙ্গ্যচেতনার রূপায়ণ” এর প্রথম অধ্যায়টি আরও পরিবর্ধন করে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থের রূপ দিয়েছেন। এজন্য বাংলা ভাষা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ থাকবে। বিশ্বজিত ঘোষের গবেষণা না হলে এই প্রসঙ্গটি বাংলা ভাষায় অনুচ্চারিত থেকে যেত। বাংলা-ভাষী নিঃসঙ্গ মানুষেরা ইতিহাসে সমাজে অনুল্লিখিত বা উপেক্ষিত থেকে যেতেন। সাহিত্যিকদের রচনায় যেভাবে আছে, সেভাবে সমস্যাটির স্বরূপ বোঝা সহজ নয়। লেখক গবেষণাকর্মের মাধ্যমে বিষয়টির যথার্থতা, সমাজে এর উপস্থিতি, আলোচনায় প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি বিদগ্ধ পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। প্রত্যাশা করি পরবর্তীকালের আলোচক, বিশ্লেষক, দার্শনিক, সাহিত্যিক, সমালোচক বাঙালি সমাজে বিদ্যমান একাকী মানুষদের মানসিক অবস্থাকে অনুধাবন করতে পারবেন।

মানুষের বিচ্ছিন্নতাবোধ বা নৈঃসঙ্গ্যচেতনা নিয়ে বাংলাভাষায় এটাই প্রথম বই।
এই ধরণের অনালোচিত নতুন প্রসঙ্গের চিন্তাশীল বই প্রকাশ করে অ্যাডর্ণ পাবলিকেশন্স বেশ প্রশংসনীয় কাজ করেছে। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন করেছেন জোহরা বেগম। নিঃসঙ্গতাকে বোঝাতে তিনি গাঢ় রঙের সাথে হালকা রঙের কোমল মিশ্রণ ব্যবহার করেছেন। প্রচ্ছদটির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। বইতে আলোচ্য বিষয়টিকে তিনি প্রচ্ছদে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, সে কথা বলা যেতেই পারে। এজন্য তাঁকে একটি বিরাট ধন্যবাদ দেয়া উচিত। বইয়ের ছাপার মান ভাল। গাঢ় কালিতে মোটামুটি বড় আকারের ফন্টে ছাপানো হওয়ায় পড়তে সুবিধা হয়। বইয়ের শারীরিক অবয়ব অবশ্য ছোট। ১৮ সেন্টিমিটার×১১.৫ সে.মি. আকারের ছোট বই হওয়ায় বহন করতে সুবিধা হবে। মলাট শক্ত বোর্ডে দিয়ে বাঁধাই। ফলে বইটি দীর্ঘায়ু হবে। বইয়ের শেষে 'তথ্যনির্দেশ ও টীকা' অংশে দেশি-বিদেশী বই, ম্যাগাজিন ও প্রবন্ধসহ ১৪৪টি তথ্যসূত্রের উল্লেখ আছে। আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ লোভনীয় গ্রন্থপঞ্জী। পাঠককে মানুষের একাকীত্ব বিষয়টির ব্যাপকতা বোঝাতে এই গ্রন্থপঞ্জী আলাদাভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। বইয়ের শেষে আরও আছে একটি উল্লেখপঞ্জী। এটা আসলে শব্দপঞ্জী বা শব্দতালিকা। যে সব শব্দ আলাদাভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন পৃষ্ঠানম্বরসহ সেগুলোর একটি তালিকা। এই তালিকার মাধ্যমে বইতে ব্যবহৃত শব্দবৈচিত্র্য সহজে বোঝা ও খোঁজা যাবে।

দর্শনচর্চায় সামর্থহীন সমাজে দর্শন বিষয়ে একটি মৌলিক বই প্রকাশ করে লেখক ডক্টর বিশ্বজিৎ ঘোষ বেশ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। এই বই কেমন বিক্রি হবে তা চোখ বুজে বলে দেয়া যায়। তবে লেখকের মানসিক প্রশান্তি অন্য অনেক নতুন প্রসঙ্গে বা দর্শন বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের হৃদয় যে ছুঁয়ে যাবে সে কথা নিশ্চিত। নতুন নতুন বিষয় পাঠ করতে, অনুধাবন করতে, নতুন জ্ঞান-সন্ধানী, নতুন দর্শন-চিন্তার জগতে প্রবেশে উৎসাহী পাঠক এই বই পড়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠবে। মানুষের বিচ্ছিন্নতাবোধকে নতুন চোখে, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে, যুক্তি, তথ্য, উপাত্ত ও উদাহরণের প্রেক্ষিতে,  ইতিহাস ও সাহিত্যের আলোকে দেখতে ও বুঝতে আগ্রহী হবে। লেখক এক্ষেত্রে সার্থক সে কথা জোর দিয়েই বলা যায়।

**********

নৈঃসঙ্গ্যচেতনা
বিশ্বজিৎ ঘোষ


প্রথম প্রকাশ: ২০১৬

প্রকাশনী: অ্যাডর্ণ পাবলিকেশন, ঢাকা।

প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: জোহরা বেগম

পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৬০
মূল্য: ২২৫ টাকা
ISBN: 978-984-20-0459-9

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ