লেখক সোহাইল রহমান স্কুলজীবন থেকেই চাইতেন তার একটি মাস্টারপিস বই বের হবে। দেশের সব বড় বড় লেখক পত্রিকায় তার রিভিউ আসবে। ২৪ বছর বয়সের এই লেখক অনেক ছোট ছোট গল্প লেখেন, সেগুলোকে বড়ও করেন। এমনকি ৫০/৬০ হাজার শব্দ লিখে নিজেই হতাশ হন। তার মাস্টারপিস বই বের হয়না।
একদিন তিনি বুঝতে পারলেন, লিখতে লিখতে ই একদিন তার লেখা মাস্টারপিস হবে। এরপর তিনি বাজারে নিয়ে আসেন তার প্রথম বই "স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর"।
"স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর" নামটি কেমন অদ্ভুত শোনায়। তবে গল্পের কিছু কিছু চরিত্র বইয়ের নামটিকে সার্থক করেছে। এখানে মতিলালের পরিবারের কথা না বল্লেই নয়।
কালার কম্বিনেশন এবং অংকন অসাধারণ। কভার পেজে তিনটি মানবমূর্তি, দেয়াল, রক্ত, শহর যেন ভিতরের গল্পের দারুণ একটি সারমর্ম।
চলিত ভাষায় লিখিত ভূমি প্রকাশনীর ২০৬ পেজের বইটির কভার মূল্য ৩০০ টাকা।
গল্প থেকেঃ
প্রেমে বিচ্ছেদ, বসের বৌকে পরকীয়ার প্রস্তাবে চাকুরীচ্যুত অয়ন।
ফেসবুক কবি ও সুদর্শন অয়ন, খুলনার বিসমিল্লাহ ছাত্রাবাসের মালিক কন্যা রাত্রীর সাথে তার প্রেম হয়। এটি অবশ্য অয়নের দ্বিতীয় প্রেম। প্রথম প্রেম সময়ের সাথে সাথে মরিচায় ঢাকা পরে গেছে। সাড়ে তিন বছরের দ্বিতীয় প্রেম বিচ্ছেদের পর পরবুদ্ধিতে বসের বৌকে পরকীয়ার সরাসরি প্রস্তাবে চাকুরী হারায় গল্পের প্রধান চরিত্র অয়ন।
এরপর জীবনের প্রতি হতাশা, বিরক্তবোধ, অর্থাভাবে সে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জীবনের অন্তিম মূহুর্তে এক দোয়েল পাখিকে দেখার পর তার নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে হয়। এবং নিজেকে সে দোয়েল পাখি মনে করে।
পরেরদিন সে নতুন ভাবে জন্ম নেয়। দোয়েল পাখির মত অজানা উদ্দেশ্যে রওনা হয়। শেষে সে বগুড়া শহরে পৌঁছে। দুইদিন পরে সে বুঝতে পারে মানুষ কখনো পাখি হয়ে বাঁচতে পারে না। কারণ মানুষের চাহিদা পাখিদের চাহিদা থেকে অনেক বেশি। চা ব্যবসায়ী কাসেদ আলীর সাহায্যে সে থাকা ও কাজের সুযোগ করে নেয় বগুড়ায়।
ঠাকুরগাঁও রাণীশৈংকলের মতিলালের পরিবার অদ্ভুদ রকমের। এই পরিবারে অপরাধের কদর খুব বেশি।যে যতবড় অপরাধী পরিবারে সে তত ভালো। একজন ব্যতিক্রম, সে মহুয়া। বড় ভাই বিজয় কন্টাক্ট কিলার। কিন্তু বিজয় চায় না মহুয়ার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে অপরাধের জগতে ঠেলে দিতে।
দেশের অন্যতম ক্রিমিনাল জয়নালের চোখে পরে মহুয়ার সৌন্দর্য। সে মহুয়াকে পেতে চাইলে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় বড় ভাই বিজয়। মহুয়ার জন্য জীবনও দিতে হয় তাকে। জীবনের শেষ মূহুর্তে বোনের নিরাপত্তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করে বিজয়। মহুয়াকে পাঠায় বগুড়ায় কাসেদ আলীর কাছে।
সেখানে মহুয়া আর অয়নের ভালোবাসার বোঝাপড়া শুরু হয়। ভালোই যায় তাদের দিন। ক্রিমিনাল জয়নালের লোকজন সেখানেও হামলা করলে মহুয়াকে নিয়ে পালিয়ে যায় অয়ন।
মহুয়াকে বাঁচাতে অয়ন প্যারালাল ইউনিভার্সের এক জগতে পৌঁছায়। সেখানকার জীবন-যাপন অন্যরকম। দূর্নীতির শীর্ষে সেই রাইয়ান। সেখানে আদিত্য রাইয়ান নামে পরিচিতি পায় অয়ন। সেখানে ঐশ্বর্য নামের এক সুন্দরীকে বিয়ে করে সে। ঘটনাচক্রে আবার ফিরে আসে বাংলাদেশে। মহুয়াকে বিয়ে করে ভালোই কাটে তাদের সংসার জীবন।ক্রিমিনাল জয়নালও তখন অনেকটা শান্ত। কিন্তু অর্থের প্রয়োজনে অয়নকে আবার আদিত্য রাইয়ান নামের পরিচয়ে রাইয়ান দেশে যেতে হয়। সেখানকার প্রেন্সিডেন্ট পুত্র আদিত্য রাইয়ান চারবার মৃত্যুর পর ফিরে আসলে কেউ খুশি হয় আবার কেউ অসুখী হয়। হীরা-জহরত নিয়ে আবার দেশে আসে অয়ন শক্তি সঞ্চয় করে। জয়নাল মহুয়াকে পেতে ব্যর্থ হয় অয়নের গড়ে তোলার শক্তির কাছে।
ডাক্তার মহুয়াকে জানায়,অয়নের প্যারালাল ইউনির্ভাস স্বপ্ন এবং হ্যালুসিনেশনের মাঝামাঝি একটা অবস্থা।
লেখক সোহাইল রহমানের প্রথম উপন্যাস "স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর" গল্পটিতে আর দশটা জীবন কাহিনীর মত আপাতত জীবন অয়নের শুরু হলেও ব্যতিক্রম দেখা যায় তার দোয়েল পাখি হাওয়ার ইচ্ছাতে। লেখক এটা বুঝাতে চেয়েছিলেন, মানুষ চাইলেই পাখি হতে পারে না। তার বড় এবং প্রধান বাধা চাহিদা।
মদ-গাজা, বেশ্যাপানা বাড়িতে বড় হওয়া মহুয়া আলাদা ধাঁচের। আবার ক্রিমিনাল জয়নাল মন্ত্রীদের ভয়ের কারণ হলেও বাড়িতে সে ভিজাবেড়াল।
কখনো শিলা কখনো রাত্রী অয়নের ভালবাসা ছিল। কিন্তু জানার শেষ হলে অযুহাত দিয়ে সমাপ্তি ঘটে তাদের প্রেমের। মহুয়াকে দেখর পর অয়নের আগ্রহ কেবল বেড়েই গেছে। সংসার জীবনে সে আগ্রহ যদিও বা কিছুটা ভাটা পরে। এগুলো ঠিকঠাক থাকলেও অবাক লাগে অয়নের প্যারালাল ইউনিভার্সের জগতে। সে জগতে চতুর্থ বার মারা যায়। আবার ফিরেও আসে। সেখানকার কান্ডকারখানা বড়ই আজব। দূর্নীতির শীর্ষে অয়ন। সেখানে অয়নের অন্য পরিচয় অন্য জীবন অন্য সংসার। ১৪৩ পেজে এসে গল্পের মোড় ঘুড়িয়ে দেয় লেখক। যা সহজে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না।
সেখানে আছে প্রেম, ভালবাসা, সংসার আর অন্যকে ঠকিয়ে নিজে বড় হওয়ার চেষ্টা। ডাক্তার একে স্বপ্ন এবং হ্যালুসিনেশনের এক মাঝামাঝি বললেও রহস্য কিছু থেকেই যায়। এটা কোমাও হতে পারে না। কারণ সেখানে বস্তু লাভ সম্ভব না।
শুরুর দিকে আর সব সাধারণ গল্পের মত মনে হলেও মাঝামাঝি অন্য সুর আসে গল্পে। বইটিতে জীবনানন্দের কবিতা ব্যবহৃত করেছেন। কবিতাগুলো বইটিকে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম