স্যাপিয়েন্স – ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি | অনুবাদ: সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ ও প্রত্যাশা প্রাচুর্য

স্যাপিয়েন্স – ইউভাল নোয়াহ হারারি | অনুবাদ: সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ ও প্রত্যাশা প্রাচুর্য

মানুষ নিজেকে চিনতে চায়। কোথায় থেকে, কেমন করে মানুষ তৈরি হল, মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস কি- এমন বহু প্রশ্নের উত্তর সবাই জানতে চায়। পৃৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই প্রশ্নগুলোর বৈচিত্রপূর্ণ উত্তর রয়েছে। এই উত্তরগুলো পরষ্পরবিরোধী। এদের মধ্যে সবচেয়ে যুক্তিনিষ্ঠ ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রামাণ্য ইতিহাস জানায় জীববিজ্ঞান। ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি (Yuval Noah Harari) জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক। সামাজিক দর্শন ও বিশ্ব ইতিহাস (Big History) তাঁর আগ্রহের বিষয়। বিশ্ব ইতিহাসের বিষয় বিগ ব্যাং থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত। অতীতকে বিশ্লেষণ করে বর্তমানকে ব্যাখ্যা এবং তার আলোকে ভবিষ্যতকে অনুমান করা অর্থাৎ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া চিহ্নিত করে যোগসূত্র স্থাপন করা বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম কাজ। নিজেকে তিনি পরিচয় দেন ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক বলে। ২০০৮ সালে তিনি শ্রেণীকক্ষে বিশ্ব ইতিহাস ও মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে ২০টি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই বক্তৃতাগুলোর আরও পরিমার্জিত ও বিস্তৃত রূপ হল 'স্যাপিয়েন্স : মানবজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস'।

নিজের বিষয়ের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহাকাশবিদ্যা, নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, ফসিলবিদ্যা, ভূতত্ত্ব, রাজনীতি, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সংস্কৃতিতত্ত্ব, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁর প্রচুর আগ্রহ। আর এর সবকিছুর মিশেলে রচনা করেছেন বিখ্যাত বই 'স্যাপিয়েন্স' (Sapiens)। প্রথমে লিখেছিলেন হিব্রু ভাষায় ২০১১ সালে। পরে John Purcell এবং Haim Watzman এর সহযোগিতায় ইংরেজি অনুবাদ করে প্রকাশ করেন ২০১৪ সালে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের তাবত বইপ্রেমীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন পত্রিকা বইটির রিভিউ প্রকাশ করে। বিজ্ঞানী, নৃতত্ত্ববিদ, ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি গবেষক সহ অনেকে মতামত প্রদান করেন। এ পর্যন্ত (আগস্ট, ২০২১) এই বই ১ কোটি ৬০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে এবং অনূদিত হয়েছে ৬০টি ভাষায়।

ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি আরেক বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী, নৃতত্ত্ববিদ ও সমাজবিজ্ঞানী Jared Diamond রচিত  Guns, Germs, and Steel বই দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত। সেখান থেকেই আসলে তাঁর মানুষের জীববৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।

লেখক তাঁর বইয়ে মানুষের বিকাশের ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে বলে যান। গল্পের মত তাঁর উপস্থাপনভঙ্গি। শুরু করেছেন মানুষের শিকারী জীবনের কাহিনী দিয়ে। তখন মানুষ ছিল প্রবৃত্তিচালিত প্রকৃতির সন্তান। নিজের চারপাশে যা কিছু পাওয়া যায়, তাই নিয়েই তারা সন্তুষ্ট ছিল। তখনও তারা প্রাণীজগতে বিশেষ কিছু হয়ে ওঠেনি। প্রকৃতির অংশ হিসেবে, প্রকৃতির সন্তান হিসেবে অন্যান্য প্রাণীদের সাথে মানুষের আলাদা কোন পার্থক্য ছিল না। ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ্ বৎসর আগের মানবসদৃশ প্রাণীটি যখন থেকে পরস্পরের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে শুরু করল, তখন থেকে শুরু হল মানুষ হয়ে ওঠার এক বর্ণিল ও জটিল অভিযাত্রা। কোন কিছু পর্যবেক্ষণ করা, সেই ঘটনা স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে অন্যদের কাছে উপস্থাপন করতে পারা মানুষকে অন্য প্রাণীদের থেকে পৃথক করে তুলল। অতিপ্রাকৃত বা বিমূর্ত কল্পনার সামর্থ্য মানুষকে এনে দেয় সংঘবদ্ধ হবার শক্তি। বিশ্বাস নামক ভাবগত একটি আচরণ মানুষকে করে তোলে অজেয়।

লেখক কর্মজীবনে শিক্ষক। ক্লাশে পড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীর কৌতুহল ও জিজ্ঞাসা কীভাবে তৃপ্ত হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখেন। বই লিখতে গিয়ে শিক্ষক হিসেবে প্রাপ্ত উপলব্ধিকে কাঠামোবদ্ধ রূপ দিয়েছেন। বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত করে নয়, সহজভাবে, মানসিক তৃপ্তির প্রতি লক্ষ্য রেখে বইয়ের বিষয়গুলোকে বিন্যস্ত করেছেন। আলোচনা করেছেন জীববিজ্ঞানের সাথে সাথে পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক শাখাগুলোর সম্পর্ককে। বইয়ের শেষে যুক্ত গ্রন্থপঞ্জী থেকে বোঝা যায় শতাধিক বইয়ে আলোচিত বিষয়কে তিনি একটি মাত্র বইয়ের সীমানায় নিয়ে এসেছেন। একটি ব্যাপক বিস্তৃত বিষয়কে সহজভাবে বলতে গিয়ে তিনি অনেক খুঁটিনাটি বর্ণনা বাদ দিয়েছেন। সেজন্যই বইয়ের নামের সাথে যুক্ত করেছেন আর একটি বাক্য - 'মানবজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস'।

বইয়ের গভীরে প্রবেশের আগে সূচিপত্র দেখলে আলোচ্য বিষয়ের ব্যাপকতা স্পষ্ট হবে। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে সম্পূর্ণ সূচিপত্র প্রকাশ করা হল:-


সূচিপত্র

অনুবাদকের কথা
ইতিহাসের সময়রেখা

প্রথম ভাগ
বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব
অধ্যায় এক: কিঞ্চিৎকর এক প্রাণী
অধ্যায় দুই: জ্ঞানবৃক্ষ
অধ্যায় তিন: আদম ও হাওয়ার জীবনের একদিন
অধ্যায় চার: বন্যা

দ্বিতীয় ভাগ
কৃষিবিপ্লব
অধ্যায় পাঁচ: ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতারণা
অধ্যায় ছয়: পিরামিড নির্মাণ
অধ্যায় সাত: উপচে পড়া স্মৃতি
অধ্যায় আট: ইতিহাসে ন্যায়বিচার নেই

তৃতীয় ভাগ
মানবজাতির একত্রীকরণ
অধ্যায় নয়: ইতিহাসের তীর
অধ্যায় দশ: টাকার গন্ধ
অধ্যায় এগারো: সাম্রাজ্যবাদী দূরদৃষ্টি
অধ্যায় বারো: ধর্মের আইন
অধ্যায় তেরো: সাফল্যের গোপন মন্ত্র

চতুর্থ ভাগ

বৈজ্ঞানিক বিপ্লব
অধ্যায় চৌদ্দ: অজ্ঞতা আবিষ্কার
অধ্যায় পনেরো: বিজ্ঞান ও সাম্রাজ্যের মেলবন্ধন
অধ্যায় ষোলো: পুঁজিবাদী বিশ্বাস
অধ্যায় সতেরো: শিল্পের চাকা
অধ্যায় আঠারো: একটি চিরস্থায়ী বিপ্লব
অধ্যায় উনিশ: অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল
অধ্যায় বিশ: হোমো স্যাপিয়েন্সের সমাপ্তি

ইতিকথা: যে প্রাণীটি ঈশ্বরে পরিণত হলো
তথ্যসূত্র
ছবির তালিকা ও প্রাপ্তি স্বীকার
নির্ঘন্ট


সূচিপত্রে দৃশ্যমান যে, হারারি তাঁর স্যাপিয়েন্স বইকে চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করেছেন। প্রত্যেক ভাগে রয়েছে একাধিক অধ্যায়। অধ্যায়গুলো ধারাবাহিক হলেও সেগুলোকে বিষয় অনুযায়ী চারটি ভাগে বিন্যস্ত করার দরকার ছিল। এতে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হবে যে, কোন অংশের আলোচ্য বিষয় কি। উল্লেখ্য যে অধ্যায়গুলোর নাম প্রধানতঃ সরাসরি বিষয়ভিত্তিক নয়। সাহিত্যিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লেখক নামকরণে চমৎকারিত্ব সৃষ্টি করেছেন।

'বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব' নামক প্রথম ভাগে লেখক আলোচনা করেছেন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতি নিয়ে। মানুষের বুদ্ধির বিকাশ সমাজ তৈরিতে কীভাবে সাহায্য করেছে তার বিশ্লেষণ করেছেন চারটি অধ্যায়ে। ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ বৎসর পূর্বে যে প্রাণীটি সোজা হয়ে দাঁড়াতে শুরু করে, সেই আদিম জীবসত্ত্বাটি বুদ্ধি ব্যবহার করে পরিপার্শ্বের হিংস্র জীবজন্তু ও বিরূপ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। চিন্তার সামর্থ তাকে এনে দেয় ভবিষ্যত দেখার অভাবনীয় শক্তি। দূরদর্শিতা তাকে দেয় টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধির অফুরান সম্ভাবনা। ভাষার ব্যবহার পারস্পরিক পরিচিতি ও সহযোগিতা তৈরি করে। বুদ্ধির ব্যবহার তাকে চারপাশের বিরূপ পরিবেশ সম্পর্কে আরও সতর্ক হতে, পরিবর্তিত আবহাওয়াগত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে, প্রকৃতির অন্যান্য সদস্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়া তৈরি করতে সাহায্য করে।


কৃত্রিম প্রবৃত্তির এই নেটওয়ার্ক হচ্ছে 'সংস্কৃতি'
'কৃষিবিপ্লব' শীর্ষক দ্বিতীয় ভাগে লেখক মানবজীবনে কৃষিকাজের উদ্ভব, বিকাশ ও প্রভাব ব্যাখ্যা করেছেন। কৃষিজীবী জীবন শুরু করার কারণে মানুষ বড় সমাজের গুরুত্ব বুঝতে পারে। মানুষ যখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে শুরু করল, তখন নারী বাধ্য হল অপুষ্ট সন্তান জন্ম দিতে। এই অপুষ্ট সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য প্রয়োজন ছিল পরিবার ও ছোটখাট দলের। কৃষিভিত্তিক জীবন ব্যবস্থায় এই দল পরিণত হল বিশাল সমাজ ও সাম্রাজ্যে। শিকারীজীবনের প্রয়োজন খুব বেশি ছিল না। ফলে মানুষের মগজ আনুপাতিকহারে বড় হলেও তাকে তেমনভাবে কাজে লাগাতে পারে নি। এই কৃষিজীবিতা মানুষকে সম্পদের ধারণা তৈরিতে সাহায্য করল। শিকারীজীবন পরিত্যাগ করার কারণে খাবারের নিরাপত্তার প্রতি তারা অধিক মনোযোগী হল। খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য স্থায়ী পাথুরে কাঠামো তৈরি শুরু করল। শুধু শারীরিক শক্তি নয়, সংঘবদ্ধতার শক্তি দিয়ে তারা পূর্বপুরুষদের চাইতে বেশি কাজ করতে পারল। একতাবদ্ধ হবার প্রয়োজন বিবেচনায় মানুষ তৈরি করে গ্রাম, নগর, রাষ্ট্র, আইন, সাম্রাজ্য, ধর্ম। মানুষ চিন্তাচর্চায় আরো বেশি উৎসাহী হল। মানব সমাজ হয়ে উঠল আরও বড় ও জটিল। কৃষক জীবন শুধু খাদ্য নয়, রোগ, মহামারী এবং স্বার্থগত সংঘাতকে মানব সমাজে অনিবার্য করে তুলল।

তৃতীয় ভাগ 'মানবজাতির একত্রীকরণ' অংশে লেখক কৃষিজীবী জীবনের ফলে মানুষের মধ্যে যে যুথবদ্ধতা তৈরি হয়েছে তার অভিঘাতের বিশ্লেষণ করেন। মানব সমাজ পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে জন্ম দেয় কতিপয় অপ্রাকৃতিক আচরণের, যার নাম দেয়া হয়েছে সংস্কৃতি। লেখকের ভাষ্যে বিষয়টির বিবরণ এরকম-

কৃষি বিপ্লবের পর থেকে মানব সমাজ আকারে আরও বড় এবং গঠনে আরো জটিল হতে শুরু করে। একইসাথে সামাজিক শৃঙ্খলাকে জিইয়ে রাখা কল্পিত নির্মাণগুলো আরও বিস্তৃত হতে থাকে। নানা ধরনের মিথ আর কল্পকাহিনি, প্রায় জন্মের সময় থেকেই মানুষকে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চিন্তা করতে, আচরণের কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলতে, কতগুলো নির্দিষ্ট বস্তু কামনা করতে এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন পালন করতে অভ্যস্ত করে তোলে। এর ফলে তৈরি হতে শুরু করে এক ধরনের কৃত্রিম প্রবৃত্তি, যা কোটি কোটি অপরিচিত মানুষকে একে অপরের সাথে বেশ সফলভাবে সহায়তা করতে পারদর্শী করে তোলে। কৃত্রিম প্রবৃত্তির এই নেটওয়ার্ক হচ্ছে 'সংস্কৃতি'। পৃষ্ঠা_ ১৭৭



১০/১২ হাজার বৎসর আগে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে মানবগোষ্ঠী ছোট ছোট গোত্রে বিভক্ত হয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির আশ্রয়ে জীবন যাপন করত। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি মানবজাতির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র বিনাশে তৎপর হয়ে ওঠে। বড় ও শক্তিশালী সংস্কৃতি ছোট ছোট সাংস্কৃতিক এককগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। বিচ্ছিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিলুপ্ত হয়ে বৃহত্তর সংস্কৃতিতে একীভূত হওয়ার কারণে কিছু কিছু বিষয়ে সাধারণ ঐক্যমত তৈরি হয়। এই বৈশ্বিক একাত্বতার ফলে পৃথিবীবাসী মানুষেরা টাকা, মানবতা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে একই রকম ধারণাকে স্বীকার্য বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে। এর প্রভাবে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক চিন্তার আদানপ্রদান হয়েছে আরও সহজ। গত ৫০০ বৎসরে রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, মানব অধিকার প্রভৃতি বিষয়ে সারা পৃথিবীর পরস্পরবিরোধী সংস্কৃতিগুলোর ধ্যানধারণায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে। অনেক বিষয়েই বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ একই রকম সাংস্কৃতিক চিন্তায় সমর্থন প্রকাশ করেছে। আধুনিককালে যার সুভাষিত নাম রাখা হয়েছে 'বিশ্বায়ন'।

স্যাপিয়েন্স বইয়ের চতুর্থ ভাগের নাম 'বৈজ্ঞানিক বিপ্লব'। এই অংশে লেখক মানবজাতির অগ্রগতির পেছনের প্রধান নিয়ামককে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী বাস করত, কিন্তু বিজ্ঞান প্রযুক্তি অর্থনীতিতে ইউরোপের মানুষরা কেন এগিয়ে গেছে- এই প্রশ্নটাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে লেখকের অন্বেষণ। তিনি গণিত, অর্থনীতি, ইতিহাস আলোচনা করে সমকালীন বিজ্ঞান নির্ভর সমাজ বিকাশের শুরুর সূত্রের কথা বলেছেন। তিনি উপযুক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সাপেক্ষে দেখাতে পেরেছেন যে 'নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করা'ই হল মানুষের অগ্রগতির প্রথম সোপান। 'আমি জানি না' - বাক্যটিকে যে জনগোষ্ঠী বিনয়ের সাথে গ্রহণ করেছে, তারাই এগিয়ে গেছে অসীম সম্ভাবনার পথে। আমার পূর্বপুরুষ সব জানে, কিংবা আমার পূর্বপুরুষের অর্জিত জ্ঞানের বাইরে আর কোন জ্ঞান নেই- এই ধরণের কূপমণ্ডুকতা তাদের মধ্যে ছিল না। যখন থেকে নিজেদের অধীত জ্ঞানের অসম্পূর্ণতা তারা স্বীকার করে নিল, তখন থেকেই শুরু হয়েছে তাদের উন্নতি। শুরু করেছে অজানা দেশের উদ্দেশ্যে অভিযাত্রা; নতুন জ্ঞান আবিষ্কারের তৃষ্ণা তাড়িত করেছে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। সেজন্য তারাই উদ্ভাবন করেছেন নতুন বৈজ্ঞানিক সূত্র, নতুন প্রযুক্তির। প্রাপ্ত জ্ঞানের বাইরে আরও অজানা কিছু লুকিয়ে আছে কীনা তা জানতে তারা এতটাই উৎসুক যে এখনও তারা অজানা নতুন জ্ঞানের পিছনে অর্থ খরচ করতে দ্বিধা করে না। আত্মহংকারের ঘেরাটোপ যারা ভাঙতে পেরেছে, নিজের চিন্তা, নিজস্ব সংস্কৃতির উপর অন্ধবিশ্বাসের গোয়ার্তুমি যারা পরিত্যাগ করতে পেরেছে, তারা আস্থা রাখতে পেরেছে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার তথা অপরিচিত অন্যদের উপর। পরিবর্তন করতে পেরেছে আগামী দিনের প্রাপ্তিগুলোকে।

একই অংশে লেখক অন্যান্য প্রাণীদের উপর মানুষ নিজেদের টিকে থাকার জন্য কি ধরনের নির্দয় আচরণ করে, তার বিশ্লেষণ করেছেন। ক্রমবর্ধমান মানব জাতির খাদ্যের যোগানের জন্য গৃহপালিত পশু-পাখিদের জীবনে নিয়ে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। মানুষ নিজের সুখের সন্ধান করতে গিয়ে প্রাণীজগতের অন্যান্য প্রাণীদের সুখের কথা ভুলে গেছে। নিজের অধিকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অন্য প্রাণীদের অধিকার মানুষ কিভাবে নষ্ট করেছে, তা দেখাতে লেখক বিভিন্ন প্রামাণ্য উদাহরণ দিয়েছেন। মানুষের নিজের সুখ কি বায়বীয় মানসিক আবেগগত নাকি কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল, তা আলোচনা করেছেন রসায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে।


আমরা কি পৃথিবী থেকে যন্ত্রণা কমাতে পেরেছি?
সমকালে যন্ত্রনির্ভর মানুষ মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বর্তমানের সীমাবদ্ধতাগুলোকে কাটিয়ে কি কি অতিবাস্তবীয় সফলতাকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করছে লেখক তার বিবরণ দিয়েছেন। প্রাচীনকালেও মানুষ রোগে, দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিলে মানুষের আয়ু বাড়িয়ে দেবার কর্মযজ্ঞ চলছে। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) মানুষের উপকারে কীভাবে ব্যবহৃত হতে পারে অথবা মানুষের ক্ষতি করার অভিপ্রায়ে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করতে পারে কী না তার বিশ্লেষণ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি Matrix সহ কয়েকটি অতিকল্পিত হলিউডি সিনেমার উদাহরণ টেনেছেন। যা আসলে মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে লেখকের আগ্রহ ও আশংকাকে প্রকাশ করেছে। যন্ত্র নির্ভরতার প্রতি লেখকের এই অনীহা খুব একটা যে অমূলক তা বলার সময় অবশ্য এখনও আসেনি।

বইয়ের ‘ইতিকথা' অংশে মানুষ গত ৭০ হাজার বৎসরে যে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অধিকারী হয়েছে তার সমালোচনা করা হয়েছে। লেখক মনে করেন-

আমরা আমাদের প্রতিবেশের উপর প্রভুত্ব করেছি, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি, শহর গড়ে তুলেছি, সাম্রাজ্য স্থাপন করেছি এবং দূরদূরান্তে বিস্তৃত বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। কিন্তু আমরা কি পৃথিবী থেকে যন্ত্রণা কমাতে পেরেছি? মানুষের শক্তির বারংবার দুর্দান্ত বৃদ্ধি স্যাপিয়েন্সের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি, বরং প্রায়ই অন্য প্রাণীদের সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। পৃষ্ঠা-৪৪৯


তিনি পূর্ববর্তী 'বৈজ্ঞানিক বিপ্লব' ভাগের শেষাংশে মনে করেছেন মানবজাতির বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এক অমোচনীয় স্বার্থপরতার জন্ম দিয়েছে। ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন দিকে যান্ত্রিক উৎকর্ষ অর্জিত হলেও আত্মসুখের অন্বেষণ প্রকারান্তরে মানবজাতির এক ভয়াবহ পরিণতির সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে। বইয়ের সম্পূর্ণ অংশে লেখক আশাবাদী থাকলেও এই শেষ অধ্যায়ে এসে যেন কিছুটা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি মনে করছেন মানব প্রজাতি যন্ত্রপ্রকৌশলে অভাবিত শক্তিমত্তা অর্জন করলেও ক্রমান্বয়ে যেন এক অনিবার্য সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আত্মস্বার্থে পৃথিবীবাসী অন্যান্য প্রাণীদের অধিকার যেভাবে ক্ষুন্ন করা হয়েছে এবং হয়ে চলেছে, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি সুদূর পরাহত।

আধুনিক মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম 'হোমো স্যাপিয়েন্স'। পৃথিবীতে হোমো স্যাপিয়েন্স ছাড়াও 'হোমো ইরেক্টাস', ‘হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস', ‘অস্ট্রালোপিথেকাস' প্রভৃতি জাতের মানুষ ছিল। এরা সবগুলো হোমো স্যাপিয়েন্সদের কাছে জীবনের লড়াইয়ে হেরে গেছে। ২০ থেকে ৭০ হাজার বৎসর খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এরা সবাই মানুষের সংঘবদ্ধতা, বুদ্ধিবৃত্তি, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও মত আদানপ্রদানের সক্ষমতা প্রভৃতির মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে নি। সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত সাইবেরিয়ার 'ডেনিসোভা' মানুষ বিরূপ প্রকৃতিকে জয় করতে পারলেও স্যাপিয়েন্সদের বুদ্ধিমত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। কী কারণে এমন হল, হোমো স্যাপিয়েন্সদের কোন কোন পদক্ষেপ বা আচরণ মানুষ জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে অনন্য হয়ে উঠল এর ব্যাখ্যাই হারারির বইয়ের প্রধান আলোচ্য। হারারি তাঁর স্যাপিয়েন্স বইয়ে এই বিশেষ মানব প্রজাতিটির জীবন বিকাশের যাবতীয় দক্ষতা, পরিবেশের সাথে শারীরিক ও আচরণীয় খাপ খাইয়ে নেবার সক্ষমতা, রাজনৈতিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক উৎকর্ষতা ইত্যাদিকে বিশ্লেষণ করেছেন। ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি হাজার হাজার বৎসরের বিবরণকে কয়েকশো পৃষ্ঠার সীমানায় গ্রন্থবদ্ধ করেছেন। লেখকের ভাষায় এটা 'পাখির দৃষ্টিকোণ' থেকেও সুউচ্চ অবস্থান থেকে দেখা। কৃত্রিম উপগ্রহ যেমন কয়েকশ থেকে হাজার  কিলোমিটার উপর থেকে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে, তেমনভাবে তিনি ইতিহাসকে এক পলকে দেখাতে চেয়েছেন। তা করতে গিয়ে জীবন বিকাশের অনেক খুঁটিনাটি বর্ণনাকে উপেক্ষা করতে হয়েছে। তারপরও তিনি 'স্যাপিয়েন্স' বইতে মানব ইতিহাসের যতটুকু উল্লেখ করতে পেরেছেন, তা কৌতুহলী পাঠককে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। প্রচলিত ইতিহাস বা জীববিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, প্রত্নবিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞান বইয়ের মত তথ্যবহুল করে নয়, গল্পের মত করে, শ্রেণীকক্ষে পড়ানোর মত করে তিনি বর্ণনা করেন। খুব অল্প কয়েকটি পাদটীকা ব্যবহার করে তিনি কাজ সেরেছেন। পাঠককে তথ্যের নিরস উপস্থাপনে ভারাক্রান্ত করতে চান নি। এক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, এই বইতে যে বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে সেই তথ্যগুলো বাংলাভাষী পাঠক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের 'পৃথিবীর ইতিহাস’, আব্দুল হালিম ও নুরুন নাহার বেগম লিখিত 'মানুষের ইতিহাস' প্রভৃতি বইয়ের মাধ্যমে আগে থেকেই জানেন। ফলে হারারির এই বইয়ের প্রসঙ্গ সক্রিয় পাঠকের নিকট খুব একটা অচেনা মনে হবে না। 'অনুবাদকের কথা' অংশে অনুবাদকদ্বয় বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন-

অধ্যাপক ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি আশ্চর্য দক্ষতায় এই আপাত জানা বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন আর সঙ্গে যুক্ত করেছেন অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত আরও কিছু বিষয়।


'অনুবাদকের কথা' অংশে অনুবাদকদ্বয় হারারির মনোভঙ্গি সম্পর্কে এক যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। তাঁরা বলেন-

হারারি সম্বন্ধে প্রথমেই বলতে হয় যে তিনি শিশুদের মতো বিস্ময় আর অপার কৌতূহল নিয়ে নানান প্রশ্ন তোলেন এবং তথ্য-উপা্ত্তের সাহায্য নিয়ে নির্মোহভাবে সেসবের ব্যাখ্যা দেন। ভাষার উপর সাবলীল দখল থাকায় ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ের মিশেলে তিনি মানুষের বিবর্তন তুলে ধরার যে প্রয়াস নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সুপাঠ্য হয়ে উঠেছে।


আসলেই তাই, স্যাপিয়েন্স বইয়ে হারারি পরিচিত বিষয়কে অনেক বড় দৃশ্যপটে উপস্থাপন করে নিজস্ব বিশ্লেষণসহ আলোচনা করেছেন। কখনও কখনও এই ব্যাখ্যাসমূহ অতিকথন বলে মনে হয়, কখনও কখনও মনে হয় বাহুল্য দোষে দুষ্ট। তবে সার্বিকভাবে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অনভিজ্ঞ মানুষদের জন্য এই বিস্তৃত বিশ্লেষণ প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হতে পারে। মানুষের অগ্রগতির ইতিহাসকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতির প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করায় পাঠক রোমাঞ্চকর গল্প পড়ার স্বাদ অনুভব করবে।

বইয়ের সূচনা অংশে মানুষের অগ্রগতির ইতিহাস জানাতে একটি 'ইতিহাসের সময়রেখা' যোগ করা হয়েছে। উক্ত তালিকায় ১৩.৫ বিলিয়ন বৎসর হতে বর্তমান কাল হয়ে ভবিষ্যৎ কাল পর্যন্ত মানব জীবন ও সংস্কৃতির চৌম্বক অংশগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমস্ত বইয়ে ২৮টি ছবি রয়েছে। এগুলোর পরিচিতি বইয়ের শেষে 'ছবির তালিকা ও প্রাপ্তিস্বীকার' অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শব্দসমূহের একটি সমৃদ্ধ নির্ঘন্ট। আর আছে 'তথ্যসূত্র' শিরোনামে বই রচনা করতে গিয়ে পঠিত বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তালিকা। অধ্যায় অনুযায়ী ভাগ করে মোট ১২৮টি বইয়ের নাম সেখানে রয়েছে। এর মধ্যে কোন কোন সূত্রে লেখক ৭/৮টি বইয়ের ঋণ স্বীকার করেছেন। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের সম্পর্কে জানতে এই তালিকাটি সকল কৌতুহলী পাঠকের পড়া উচিত।

বাংলা ভাষায় বইটি প্রকাশ করে ইউপিএল প্রকাশনী বেশ ভাল কাজ করেছে। তবে কাজটি যে একেবারে নিখুঁত হয়েছে তা বলা যায় না। যেমন হিব্রু ভাষায় লেখা মূল বই কাদের সাহায্যে ইংরেজি রূপ পেল, তা কোথাও জানানো হয়নি এবং বইয়ের শেষের তথ্যসূত্র অংশে 'নবম অধ্যায়' এর কোন উল্লেখ নেই। 'অধ্যায় আট' এর পর 'অধ্যায় দশ' এর বই তালিকা দেয়া হয়েছে। স্বল্পসংখ্যক বানান ভুলকে উপেক্ষা করলে বড় ধরনের কোন বিচ্যুতি নেই বললেই চলে।

বোর্ড বাঁধাই হওয়ায় বইয়ের আয়ু দীর্ঘ হবে। ছাপার মান ভাল। প্রচ্ছদে সোনালী ও গাঢ় গোলাপী রঙের পরিমিত ব্যবহার ও মানুষের আঙ্গুলের ছাপকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করে প্রচ্ছদশিল্পী সব্যসাচী হাজরা অভিনব চিন্তাশৈলীর পরিচয় দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের ইতিহাসকে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার এই প্রয়াস অনুবাদকদ্বয় এবং ইউপিএল প্রকাশনী কর্তৃপক্ষের মননশীলতার পরিচয় জ্ঞাপক।

~0~0~0~0~0~


স্যাপিয়েন্স : মানবজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি

বঙ্গানুবাদ: সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ ও প্রত্যাশা প্রাচুর্য

তৃতীয় মুদ্রণ: ২০২০
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
প্রকাশনী: ইউপিএল, ঢাকা
পৃষ্ঠা: ৪৮৬
মূল্য: ৬৫০ টাকা
ISBN: 978-984-506-323 4

~~~~~~~~~~~~
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও বইয়ের আলোচনা:

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ