বয়স ষাটের আশেপাশে। উচ্চতা পাঁচ ফিট নয় ইঞ্চি, ওজন দুশো পাউন্ডের বেশি। একজন ডেমোলিশন এক্সপার্ট হিসাবে তার এক্টিভ থাকার বছর ধরা হয়ে থাকে কম-বেশি বিশ বছর বা কিছু বেশি। সে এমন একজন আন্তর্জাতিক অপরাধী, যে কি না গত দশ বছর ধরে এফবিআই, ইন্টারপোল থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় সব আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার টপ ওয়ান্ডেট লিস্টে রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই লোকের ব্যাপারে কেউই খুব বেশি কিছু জানে না, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এই লোকের ব্যাকগ্রাউন্ড কাদের সাথে সে সংযুক্ত, এমনকি মানুষটার কোনো পরিষ্কার চেহারা পর্যন্ত কারো কাছে ছিল না।
অফিসার মারিয়া তথ্যগুলো দিচ্ছে মিটিংয়ে।
রাত পোহালেই বছরের প্রথমদিন। সারারাত জুড়ে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন। অসামাজিক, রসকষহীন, সেচ্ছায় অবসর প্রাপ্ত সাইকোলজিস্ট অধ্যাপক জাকারিয়া ওরফে জ্যাক নিজের কাজে মনস্থ করার আগেই বাঁধাগ্রস্থ হন। পুলিশ ব্যুরো অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অফিস থেকে তার ডাক পরে।
বছরের প্রথম দিনেই দেশের একাধিক উপলক্ষ্য সামনে রেখে তিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন কার্যক্রমের আমেজ সারাদেশে। এমন সময় আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত এক অপরাধী আকস্মিক ভাবে এয়ারপোর্টে ধরা পরে। ধরা পড়েই যে জানান দেয়, তাকে ছেড়ে না দিলে বোমা ফুটবে আর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হবে। যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধী, ইন্টারপোল সহ বড় বড় আইনীর সংস্থার চাপ ছিল খুব।
অপরদিকে অপরাধী আব্দুল্লাহ আল ফাত্তাহ ওরফে আলবার্ট ফাত্তাহ ছিল শারীরিক অনুভূতিহীন। তাই শারীরিক আঘাতে নয়, মানসিকভাবে আঘাত করেই তার থেকে জেনে নিতে হবে কোথায় কোথায় বোমা আছে। আর এরজন্য শব্দের জাল বিছিয়ে দেন প্রফেসর জাকারিয়া।
মানুষ খুনী হয়ে জন্মায় না। পরিস্থিতি কিংবা পরিবেশ মানুষকে অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। ফাত্তাহর দেওয়া প্রথম তথ্যে তাই বলে। বাবা-মা, বোন কে হারানো। চাচার সম্পত্তি প্রতি লোভ, ফাত্তাহার বিদেশ যাওয়া, ভালোবাসা, নতুন করে পড়াশোনা শুরু করা, আবার প্রেমে পরা। ছেলে সন্তানের জনক হাওয়া, কেমিস্ট্রি থেকে বোমা বানানোর সব গল্প মিথ্যে নয়। তবে শুরুটা ভুল ছিল।
দেশের প্রতি ঘৃণা, রাগ থেকেই দেশের অমঙ্গল চাওয়া। সে বাংলাদেশ না থাকলেও তার পূর্ব পুরুষ বাঙালি ছিলেন। মা পাকিস্তানি।
প্রথম খুনটা সে তার বাবাকে করে, এরপর শুরু হয় একটার পর একটা অপরাধ।
একটা পযার্য়ে সে স্বীকার হয় আরো বড় অপরাধীদের দ্বারা অত্যাচারিত হতে। তার চেহারা বিকৃত হয়, সে হয়ে পরে অনুভূতিহীন।
মানুষ যত বড়ই অপরাধী হোক না কেন, পিতৃস্নেহের কাছে সে হেরে যাবেই। ফাত্তাহও তার ব্যতিক্রম নয়। সিরিজ বোমার প্রথম দুইটি বোমার কথা বললেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বোমার কথা সে জানাতে চায়নি।
অবশেষে সন্তানের দোহাই দিয়ে কৌশলে অধ্যাপক জাকারিয়া তৃতীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী বোমার সন্ধান নেন।
সুচতুর অধ্যাপক জাকারিয়া বাসা থেকে বের হাওয়ার আগ থেকে শুরু করে পুরো উপন্যাসে আশ্রয় নেন আধুনিকতার; ইলেক্ট্রনিকস, কোড ইত্যাদির।
তিনি প্রথম থেকে অপরাধীর উপর রিড থিউরি বা রিড টেকনিক প্রয়োগ করেন। কিন্তু শেষ মূহুর্তে তার প্রয়াত বৌয়ের তৈরি মিশির আলীর সাহায্যে ফাত্তাহর পুত্রের প্রতি দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকাকে শঙ্কা মুক্ত করেন। সেই সঙ্গে দেশের মানও রক্ষা করেন গল্পের প্রধান নায়ক চরিত্রের সাইকোলজির অধ্যাপক জাকারিয়া।
হিজড়াদের টাকা আদায় করার অস্ত্র যেমন বাজে কথা তেমনি এগল্প সমাধানের অস্ত্র শব্দজাল। সেদিক থেকে বইটির নামকরণ সার্থক। পুরো একটি রাতের গল্পটি ১৫৮ পেজের। নালন্দা প্রকাশনীর শেখ মাহমুদ ইসলাম মিজুর প্রচ্ছদই রহস্যময়। প্রচ্ছদটিতেই যেন গল্পের জাল বিছানো। বইটির বাজার মূল্য ৩০০৳ এবং প্রথম প্রকাশ সেপ্টেম্বর ২০২০।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম