আলোচক: সুজন রানা
আপনি যখন বইটি পড়বেন, তখন আপনার উইলিয়াম জোন্স এর গবেষণালব্ধ সত্যটিকে গ্রহণ করতে ইচ্ছে করবে না। আপনি তার মতামতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারার জন্য মনে মনে মনে আফসোস করবেন। যেহেতু আপনি ভারতবর্ষীয়, সেহেতু হঠাৎ আপনার মনে হবে আপনি ইংরেজি ভাষার প্রতি অনেক অবিচার করেছেন! এতদিন যে ভাষাটিকে বাংলা ভাষার শত্রু মনে করতেন হঠাৎ সেই ভাষার প্রতি করুণ ভালবাসা ঠুকরে বের হতে আরম্ভ করবে। আপনি জেনে যাবেন পরাক্রমশালী এ ভাষাটিও একসময় অন্য ভাষার আক্রমণের শিকার হয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও হতে পারে। লিখতে পড়তে না জানা অ্যাংলো স্যাক্সনদেরকে আপনার হ্যাংলা-পাতলা মনে হবে। জার্মানিক উপভাষাই কালক্রমে কিভাবে ইংরেজিতে পরিণত হল তা জানতে পেরে আপনি আশ্চর্যরকম পুলকিত হবেন। বইটি শেষ করার আগে বহুবার চিন্তায় ডুবে যাবেন। আপনি জেনে যাবেন বড় হাতের অক্ষর বলে কিছুই ইংরেজিতে একসময় ছিল না। ছোটবেলায় টেন্স পড়তে গিয়ে ইরেগুলার ভার্বগুলো মনে রাখতে কষ্ট হতো, তাই মনে মনে ভাবতেন সেগুলো হয়তো পরবর্তীকালে সংযোজিত। অথচ বাস্তবতা হল প্রাচীন ইংরেজিতে ঐসব ইরেগুলার ভার্বই বেশি ব্যবহার হতো (যেমন; Know-Knew-Known)। রাজা আলফ্রেড ও তার কর্মকাণ্ড আপনার ক্যারিয়ারমুখী শিক্ষাজীবনকে উপহাস করতে পারে। তাই আপনি ইউরোপের প্রথম 'ক্রনিকল' যা কিনা ইংরেজিতেই লেখা তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাবেন না।
....প্রবল শক্তিতে শয়তানটি নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। কিন্তু জীবন বাঁচাতে গিয়ে...
বি উল্ফের এই লাইনগুলো পড়ে আপনার নিজেকে শয়তান মনে হলেও হতে পারে তবে আপনি বুঝবেন ইংরেজির প্রাচীন সাহিত্যভান্ডারও ধর্ম ও কুসংস্কারমুক্ত নয়। Wish এবং Want শব্দদুটির মধ্যে আপনি এতদিন কেবল অর্থগত পার্থক্যই খুঁজতে চেয়েছিলেন, এর পেছনে যে ইতিহাস লুকিয়ে থাকতে পারে তাও আপনার ধীরে ধীরে জানা হয়ে যাবে। সামাজিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য বর্তমানে আমাদের যেমন ইংরেজি শেখার প্রতি হাস্যকর রকমের আগ্রহ, একসময় ইংরেজরাও পারস্পারিক তিক্ততা থাকা সত্ত্বেও ফরাসী বলার জন্য কোমর বেঁধে নামতো। ফরাসী ভাষা থেকে কালক্রমে অনুপ্রবেশকারী চারভাগের তিনভাগ শব্দই নাকি এখনও ব্যবহৃত হয় এটা জানতে পেরে আপনি হয়তো মনে মনে ভাববেন সুযোগ ও সময় পেলে একদিন ফ্রেঞ্চটাও শিখে ফেলবেন।
বইটিতে উল্লেখ্য মধ্য ও প্রাচীন ইংরেজি নিয়ে আপনার আগ্রহ যতটা না থাকবে তার চেয়ে বেশি আপনি আগ্রহী হবেন 'আধুনিক ইংরেজি' অংশে। আপনার শিক্ষাজীবনকে আরও একবার উপহাস করতে চলে আসবেন স্যামুয়েল জনসন। তিনি রীতিমত আপনার পড়ার টেবিলেও এসে হামলে পড়তে পারেন। সঠিকভাবে কথা বলতে না পারার জন্য জীবনের কোন এক সময়ের সংকোচবোধের কথা আপনার মনে পড়বে। যদি কখনও সঠিক ইংরেজি উচ্চারণ এর জন্য অনলাইন কোর্স করে থাকেন তাহলে আপনার নিজেকে একটা গাধা মনে হবে। কারণ আপনি জানবেন গুরু শেরিডান বলেছিলেন -
Pronunciation.. is a sort of proof that a person has kept good company...
এরপর আপনি জানবেন গ্রীক, ল্যাটিন ও আফ্রিকা তথা এশিয়ান বিভিন্ন ভাষা কিভাবে প্রতিনিয়ত ইংরেজিতে অনুপ্রবেশ করছে এবং মানুষ কতটা উদ্ধতভাবে ইংরেজি শব্দের নতুন নতুন ব্যবহার করেই চলেছে। বইটি কোন উপন্যাস না হওয়া সত্ত্বেও একান্ত ব্যর্থ প্রেমের কথা আপনার মনে পড়ে যেতে পারে। তাই এই অনুবাদ বইটির ৫০ নং পেজটি আপনি স্কিপ করে যেতে পারেন। কারন এই পেজে স্যামুয়েল জনসন শেক্সপিয়ারের লেখার কোট করে বলেছেন →
That man who hath a tongue is no man,
If with his tongue he cannot win a woman.
আর তেমন কিছু হবার নেই। যারা বইজলে গলাটা একটু ভিজিয়ে নিতে পছন্দ করেন, তারা তো বটেই সেই সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্ররাও এই অনুবাদমন্ত্রটি পড়ে দেখতে পারেন। আশা করা যায় মন-নকশীকাঁথায় একটা শক্ত ও পরিচ্ছন্ন বুননের গাঁথুনি হয়ে যাবে। ভাষা হিসেবে ইংলিশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিরও রূপান্তর ঘটবে বলে মনে করা যায়।
**********
বইয়ের নাম: ইংরেজি ভাষার ইতিহাস
মূল লেখক: ব্রিজিত ভাইনি
অনুবাদ: জি এইচ হাবিব
প্রকাশকাল: ২০২০
প্রকাশক: কথাপ্রকাশ
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
পৃষ্ঠা: ৮৪
মূল্য: ২০০.০০ টাকা
ISBN : 978 984 510 062 5
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম