তবুও সন্ধ্যা - মানজুলুল হক

তবুও সন্ধ্যা - মানজুলুল হক

আলোচনায়: রাব্বি হোসেন


'তবুও সন্ধ্যা' উপন্যাস পড়তে গিয়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস।  সত্যি বলতে পুরোটা সময় বুদ হয়ে ছিলাম প্রতিটি শব্দের মাঝে। কিভাবে একটা সুন্দর রিভিউ লিখতে হয় জানিনা। কেন যেন এই উপন্যাসটা সম্পর্কে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। তাই লিখছি।

উপন্যাসের শুরুটা একটা মেয়ের মৃত্যু দিয়ে। এতিমখানায় একটি মেয়ের মৃত্যু! আর এখান থেকেই উপন্যাসের শুরু। গল্প আগায়, ধীরে ধীরে এই মৃত্যু রহস্য যেন জটিল হতে থাকে। প্রথম অধ্যায়ের শেষে জানা যায় এই মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এটা একটা খুন। রুমা নামের মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে। আর এখান থেকেই ২য় অধ্যায়ের শুরু। কি সুন্দর একটা ভালোবাসার গল্প শুরু হয়। নিশি ও আবিদের গল্প। দুই ধর্মের দুজন মানুষের সম্পর্ক। কি সুন্দরভাবে তাদের সম্পর্ক আগায়। এই সমাজ কখনো এই সম্পর্ক মেনে নিবে। এ সমাজে দুই ধর্ম মানে দুটো আলাদা গ্রহ,  যেখানে দুইটি গ্রহ কখনো এক হতে পারে না। তবুও কি চমৎকার ভাবে একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প আগায়।

২য় অধ্যায়ের শেষ,  তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে আসে একটা জেলের পরিবার এবং পুরনো জমিদার বাড়ির গল্প। প্রথমদিকে একবারও মনে হয়নি গল্পগুলো একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কযুক্ত।  ধীরে ধীরে যত কাহিনীর ভিতরে ঢুকেছি ততই অবাক হয়েছি। চারটা প্লট নিয়ে এই উপন্যাস। এবং কাহিনী কি সুন্দরভাবে এগিয়ে চলেছে।

নিশি ও আবিদের সম্পর্ক আগায়। নিশি সবসময় বিশ্বাস করে এই আবিদ তাকে একদিন এই সবকিছু থেকে দূরে নিয়ে যাবে। তারা একসাথে তাকবে সবসময়। এ শহর ছেড়ে একদিন ঠিক তারা চলে যাবে দূরে। কিন্তু সত্যিই কি নিশি আর আবিদ তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে? এটা অবশ্য বই পড়েই জানতে হবে। নিশি ও আবিদের এই সম্পর্কে খুব দারুণ মিষ্টি একটা প্রেমের গল্প বলে গিয়েছেন লেখক।

উপন্যাস আগায়, পাতায় পাতায় যেন রহস্য মনে হয়। রুমার খুনের তদন্ত আগায়। কুঞ্জমালার মালিল জালাল মোল্লাহকে সবাই সন্দেহ করতে থাকে। রহস্য আরও গভীর হয় যখন জানা যায় রুমা অন্তঃসত্ত্বা ছিল। এতিম খানায় একটা মেয়ে কিভবাে অন্তঃসত্তা হয় যেখানে কোন পুরুষের আসা যাওয়া নেই কুঞ্জমালায়।

এদিকে নদীতে মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্যেও সুজন নদীতে মাছ ধরতে যায়। এরপরই সুজন ও হাফসার পরিবারে নেমে আসে এক ঘোর অন্ধকার। হাফসার অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় ক্ষমতাশালী এক মেমবার। সময় যত যায় তমিজউদদীন মেমবার যেন এল মরণ খেলায় মেতে ওঠে।

জমিদারবাড়ির মন্দিরের মুর্তি চুরি নিয়ে বিশাল এক রহস্য সামনে আসে। একসময় জমিদার বাড়ির অনেক নাম থাকলেও জমিদারদের উত্তরসূরীরা সব আমোদ ফূর্তি করে উড়িয়ে দিয়েছে সব সম্পদ। এখন যা আছে তাও যেন হারাতে বসেছেন হরিনাথ ঠাকুর। এই মূর্তির সন্ধান মেলে উপন্যাসের শেষে।  যেখানে সবচেয়ে বড় টুইস্টটা সামনে আনে লেখক। যেটা উপন্যাসের শুরুতে কল্পনাও করতে পারিনি।

মূলত সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী একটা ছোট্ট গ্রাম। ঠিক গ্রাম না মফস্বল বলা যায়। বইয়ের প্রতি পাতায় যেন নতুন কিছু ঘটে চলেছে প্রতিমুহূর্তে। আর এই পুরো উপন্যাসে সন্ধ্যা নদী যেন একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

এবারে বলি লেখকের কথা, লেখকের প্রথম বই 'এবং একটি চন্দ্র' পড়েছি। গল্পগুলো চমৎকার ছিল। এটা লেখকের ২য় বই ও প্রথম উপন্যাস।  এক কথায় অসাধারণ একটা উপন্যাস। যার প্রতি পাতায় টুইস্ট ছিল। আমি বই সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাই অনেক কাহিনী সামনে আনিনি। ৪ টা প্লট যে একটা একটার সাথে সম্পর্ক রয়েছে এটা বুঝতে আমার খানিকটা সময় লেগেছে। এক কথায় অসাধারণ লেখকের লেখনশৈলী।


-*-*-*-*-*-*-

তবুও সন্ধ্যা
মানজুলুল হক

ঘাসফুল
প্রচ্ছদঃ শামীম আরেফীন
মূল্যঃ ২৮০ টাকা

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ