'মাস্টারবাড়ি স্টেশন' কাব্যগ্রন্থ প্রসঙ্গে কবি ‘আশরাফুল কবীর’ এর সাক্ষাৎকার

'মাস্টারবাড়ি স্টেশন' কাব্যগ্রন্থ প্রসঙ্গে কবি ‘আশরাফুল কবীর’ এর সাক্ষাৎকার


এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলাতে (২০২২) প্রকাশ হয়েছে আশরাফুল কবীরের লেখা কাব্যগ্রন্থ 'মাস্টারবাড়ি স্টেশন'। বইয়ের অর্থবহ নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন অনিন্দ্য হাসান। প্রকাশ করেছে জলছবি প্রকাশন, ঢাকা। কবির অন্যান্য কবিতার বইগুলো হল ‘একঝাঁক জোনাক’, ‘ক্রৌঞ্চমিথুনের কথোপকথন’।

বইমেলাতে নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং নিজের সাহিত্যভাবনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আশরাফুল কবীর কথা বলেছেন গ্রন্থগত এর সঙ্গে।


❑ সম্প্রতি আপনার কবিতার বই প্রকাশিত হলো। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

    • দীর্ঘ চার বছর পর আমার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ “মাস্টারবাড়ি স্টেশন” প্রকাশিত হয়েছে। মোটামুটি একটি বিরতি নিয়েছি, বিরতির পরে শেষপর্যন্ত কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আমি খুব আনন্দিত এবং স্বাভাবিকভাবেই অনুভূতি খুব ভালো। একটু উৎফুল্ল ভাব মনে কাজ করছে।

❑ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

    • আমি গত চার বছরে (২০১৮ ইং– ২০২১ ইং) বাংলা ও ইংরেজী দু’ভাষাতেই সমানভাবে কবিতা লিখেছি এবং সেসব কবিতা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজী সংবাদপত্র, আন্তর্জাতিক জার্নালসহ অনলাইন পোর্টালে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে অনেক প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত কবিতা জমা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু কবিতা লিখে শেষ করার পরেও পরবর্তীতে আর খুঁজে পাইনি। ফলশ্রুতিতে জমা হওয়া সবগুলো কবিতাকে আবারো মলাটবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি এবং বই প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

    • আমার কাব্যগ্রন্থ “মাস্টারবাড়ি স্টেশন”-এর পাণ্ডুলিপি জলছবি প্রকাশনীতে জমা দেয়ার পরপরই প্রকাশক তা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাইপূর্বক বই আকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন তাই বলা যায়, বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে আমাকে কোনো জটিলতায় পড়তে হয়নি।

❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

    • আমি একটি বিষয় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ও সবসময় তা অনুভব করি – তা হলো নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস এবং সর্বোপরি নিজের কাজের প্রতি আন্তরিকতা। এ-বিষয়গুলো সবচেয়ে বড় বিষয়। আরেকটি বিষয় আমি সবসময় অনুধাবন করার চেষ্টা করি, তা হলো নিজে কোনো বিষয় ভালোভাবে না জেনে, উপলব্ধি না করে কোনো সৃজনে ব্যপ্ত হওয়া। এ-কাজটি আমি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলি, তাই বলতে পারি নিজের লেখার প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

❑ কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।

    • আমি সবসময় নিজেকে পাঠকের ভূমিকায় বিবেচনা করি, নিজেকে একজন নিমগ্ন পাঠক ভাবতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সাহিত্যের সকল শাখার প্রতি সমান টান থাকলেও কবিতার প্রতি রয়েছে আলাদা দুর্বলতা। কবিতা লিখি, কবিতা অনুবাদ করি ও বেশীরভাগ সময়ে আমি কবিতার বই রিভ্যু করি। কবিতা সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম তাই ভাব প্রকাশের জন্য আমি কবিতাকেই মনোনীত করেছি।

❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

    • কবিতা কবির মনের ভাবের একটি সহজাত স্ফূরণ, একে আটকে রাখার কোনো উপায় নেই। কবিতা কবির ভাব-প্রবণতায় অবলীলায় বের হয়ে আসে। আমি কবিতা লিখি, অনুবাদ করি ও বিভিন্ন লেখকের বই নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি ফলে সারাবছরই কবিতার সাথে একটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে মিথস্ক্রিয়া ঘটে। সেভাবে বললে আমার এরকম কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়নি।

❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

    • সেভাবে কোনো উল্লেখযোগ্য বিষয় নেই তবে অবচেতনে প্রকৃতি এসেছে, মানবিক বিষয়াবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উপেক্ষা, অপেক্ষাসহ স্যাটায়ারধর্মী কবিতা, বিরহ প্রভৃতি ভর করেছে বেশি।

❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

    • আমি মনে করি ‘শিল্প’ আর ‘পাঠক’, এ-দুটো বিষয়কে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই দুটি বিষয়ের নিকটই একজন লেখকের দায়বদ্ধতা সমান সমান।

❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/ পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

    • ভালো হওয়ার কোনো শেষ নেই; তার উপর আমি লেখালেখির ব্যাপারে প্রচণ্ড রকমের খুঁতখুঁতে স্বভাবের, বিশেষভাবে বললে যখন তা হয়ে ওঠে কবিতার ব্যাপার। এ মুহুর্তে প্রকাশনীর শেলফে অথবা অন্য কোনো পাঠকের হাতে আমি আমার নিজের বইটি দেখি তখন খুব ভালো লাগে তবে যখনি পাঠকের আয়নায় নিজের লেখা দেখি তখন মনে হতে থাকে যে ইশ! এখানে-ওখানে আরেকটু ভালো করার সুযোগ ছিল বা যদি আরেকটু ভালো লিখতে পারতাম।

❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

    • একজন বাস্তববাদী হিসেবে বাণিজ্য ব্যাপারটিকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ দেখি না। একটি দিন শেষে একজন প্রকাশক চান তার একজন নির্দিষ্ট লেখক ও তার প্রকাশিত বইয়ের পেছনে বিনিয়োগকৃত টাকা যেন ফেরত আসে আর অপরদিকে লেখকও প্রত্যাশা করেন তার বইটির সর্বোচ্চ সফলতা। এটাকে গুরুত্ব দিয়েই এই বই মরসুমে অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে তাদের বই প্রকাশ করেন এটাকে আমি সাবলীলভাবেই দেখি। তবে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো সারাবছরব্যপী একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বইয়ের বাজার যেন চলমান থাকে সেটি আমার প্রত্যাশা।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ