"বাবা ও দৃষ্টিঘোড়া" কাব্য নিয়ে শুভ্র সরকারের সাক্ষাৎকার

"বাবা ও দৃষ্টিঘোড়া" কাব্য নিয়ে শুভ্র সরকারের সাক্ষাৎকার

অমর একুশে গ্রন্থমেলা (২০২২) তে প্রকাশিত হয়েছে শুভ্র সরকারের লেখা কাব্য 'বাবা ও দৃষ্টিঘোড়া'। এর নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন কবি নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। প্রকাশ করেছে পরম্পরা প্রকাশন, ঢাকা। ১৫০ টাকা দামের তিন ফর্মার বইটি পাওয়া যাবে উজান কিংবা আনন্দম এর স্টলে। তার অন্যান্য কবিতার বইগুলো হল 'বিষণ্ণ স্নায়ুবন' (২০২০), 'দূরে, হে হাওয়াগান' (২০২১)। সম্পাদনা করছেন ছোটকাগজ 'মেরুদণ্ড'।

বইমেলাতে নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং নিজের সাহিত্যভাবনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুভ্র সরকার কথা বলেছেন গ্রন্থগত এর সঙ্গে।




❑  সম্প্রতি আপনার কবিতার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷

    ১.    হ্যাঁ। 'বাবা ও দৃষ্টিঘোড়া' আমার তৃতীয় কবিতার বই। বইটি প্রকাশ করেছে 'পরম্পরা' প্রকাশন। প্রচ্ছদ করছেন কবি নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। তিন ফর্মার এই বইটির গায়ের মূল্য নির্ধারণ করা হইছে ১৫০ টাকা। বইমেলাতে বইটির কোন পরিবেশক নাই। কিন্তু উজান কিংবা আনন্দম এর স্টলে পাবেন। সত্যি বলতে বইটি আমি নিজেই পাঠাইতেছিলাম এই আরকি। আর অনুভূতির কথা যদি বলি অনুভূতির ওপর আমার দখলদারি তো অবশ্যই থাকে। এর আদলটাও টের পাই। সেইদিক থেকে ভালো লাগা তো থাকেই।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

    ২. আসলে বইটির কিছু কবিতা ২০১৯ সালের শেষের দিকে লিখা ছিল। যেটা কিনা একটা ছোটকাগজের জন্যে দশটি সিরিজ আকারে লিখেছিলাম। যদিও কাগজটি বের হয়নি। ফলে কবিতাগুলো অপ্রকাশ্য রয়ে যায়। এরও অনেকটা পরে এসে ভাবলাম, বাবাকে নিয়ে তো আরও কবিতা লেখা যায়। সেই প্রয়াস থেকেই বাকি কবিতাগুলো লিখে ফেলেছিলাম।

❑  বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

    ৩.   না তেমন কোন জটিলতায় পড়তে হয় নাই। 'বিষণ্ন স্নায়ুবন'  আমার প্রথম কবিতার বইটি যে 'পরম্পরা' প্রকাশন থেকে বের হইছিল। প্রিয় শামীম আশরাফ খুবই কাছের একজন। তো উনি বললেন আপনার যদি আপত্তি না থাকে তবে বইটা আমি করতে চাই। 'বাবা ও দৃষ্টিঘোড়া' বইটির পাণ্ডুলিপি ২০২১ সালের মেলার পরেই রেডি  ছিল। বলতে পারেন অনেকটা পরিচর্যা নিয়ে এই কবিতাগুলো লিখা।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

    ৪. নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস সবসময় আমাকে ছায়ার মতো ঘিরে রাখে। যেমন বলি এমন কোন লাইনতো লিখছি কবিতায়। যেটা হোক অন্তত একজন পাঠক কাঁধে নিয়ে বয়ে বেড়ায়। কখনো আমাকে ফোন দিয়ে বলে দাদা আপনার কবিতা আমার ভীষণ পছন্দের। সেটা একজন কবির জন্যে আনন্দের বটে। এজন্যেই এমনটা এখনো করি যে একটা কবিতা লিখে পছন্দ না হলে ছিঁড়ে ফেলি আরেকটা নতুন কবিতার আশায়। এইটাও একটা কাজ।

❑  কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।

    ৫. আমার কাছে বরাবরই মনে হইছে কবিতায়, আমার না বলা কথাগুলো যেভাবে বলতে পারবো তা অন্য কোন মাধ্যমে পারবো না। এই ধরুন, আমার যাপনের ভেতর যা যা ঘটছে তা আমি কবিতার মধ্যে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। ব্যাপারটা আপনা-আপনি হয়তো হয়। গল্প বা গদ্য লিখেছি। গল্প কোথাও প্রকাশ করেনি। আমি মনে করেছি গল্প লেখার জন্যে আমার আরও সময়ের দরকার। সর্বোপরি কবিতার চেয়ে ওগুলো আমাকে টানে কম।

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

    ৬. কবিতায় কখনো আমি মুন্সিয়ানা দেখানোর পরিকল্পনা করি না। পরিকল্পনা সত্যিই আমার ধাতে নাই। আর যাই হোক প্রস্তুতি নিয়ে লেখা হয় না অন্তত আমার ক্ষেত্রে। অনেকেই হয়তো পারে। কেউ যদি বলে আপনাকে লেখা দিতে হবে আমাদের কাগজের জন্যে। তখন হয়তো ওই মুহূর্তে একটা তাড়না কাজ করে। চেষ্টা করি পারবো কিনা জানি না এই ভেবে। তবে জোর করে লিখতে চাই না।

❑  পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

    ৭. পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে বাবাকে মানে বাবার যাপনটাকে সামনে রেখেছি এরপর সম্পর্কটাকেও। এছাড়া কবিতা লেখার ক্ষেত্রে প্রথম যে উপাদান প্রয়োজন হয় তা হল শব্দ। শব্দচয়নটাকে গুরুত্ব দিয়েছি, যে কবিতার শরীরে ব্যঞ্জনা তৈরি করতে পারে।

❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

    ৮. আমি মূলত অনুভবের ভেতর দিয়েই দেখি। আর সেই দেখাটাকে দৃশ্যের বলয়ে লেখি। এই যে বললেন শিল্প নাকি পাঠক এই দুই জায়গাতেই একজন লেখকের দায়বদ্ধতা থাকে বলে আমার মনে হয়। তবে পাঠককে মাথায় রেখে লেখাটা বোধকরি ঠিক না। কবিতা যখন লিখি তখন এই কবিতা ছাড়া পৃথিবীর কোন কিছুর প্রতি আকর্ষিত হই না।

❑  একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

    ৯. বিক্রি দিয়ে আমি কোন বইকে পরিমাপ করি না। ধরেন একজনের প্রচুর বই বিক্রি হইলো। সেটা ব্যক্তি সম্পর্কের জের ধরেই পাঠক কিনলো বা লেখক নিজেই গছালেন। আমার কাছে সেটা কোন মাপকাঠি হতে পারে না বইটা যে ভালো তা প্রমাণ করার জন্যে। যে জন্যে আমার কবিতার বইয়ের গতি ধীরে ধীরে পাঠকের কাছে পৌঁছাক আমি সেটাই চাই। হুটহাট করে হইচই ফেলে দিলাম বই বিক্রি হয়ে গেল। এইটা খুবই অশ্লীল লাগে। বইয়ের কাটতি হইলো সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভালো কবিতা লিখতে পারলে বইটা কবির ক্ষমতারও পরিচয় দেয়।

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

    ১০. বিষয়টি ভালো। তবে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই হয় সেটা ঠিক আছে। তারলগে আমি চাইবো বইমেলার বাইরে সারাবছর জুড়ে বই বের করুক প্রকাশকরা। এতে করে একটা নিজস্ব দাবি থাকে প্রকাশের ব্যাপারে।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ