ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (জন্ম ৫ নভেম্ববর ১৯৫৭) একজন বাংলাদেশি ইতিহাসবিদ। তিনি তার কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ডেইলি সান পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গত ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে তিনি বিইউপিতে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ পুরষ্কারসহ বিভিন্ন পুরষ্কার পেয়েছেন।
‘বাংলাদেশে মনুষ্যত্বের সঙ্কট' বইটি মূলতঃ কিছু ছোট প্রবন্ধের সংকলন। এই বইয়ে ১২টি প্রবন্ধ এবং সব শেষে একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার সংযোজন করা হয়েছে। বেশিরভাগ প্রবন্ধ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকালে এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সময়ে লেখা হয়েছে। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠকের যদি মনে হয় বইয়ের মূল বক্তব্য এর লেখক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের মনগড়া, তাহলে পাঠক ভুল করবেন কারণ ৭০ পৃষ্ঠার বইয়ে লেখক ৩৯ জন প্রখ্যাত মণীষির উক্তি ব্যবহার করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো উক্তি বারবার এসেছে। এর একটি কারণ হল তিনি বোধকরি বই ছাপানোর জন্য প্রবন্ধগুলি লিখেননি। লিখেছিলেন বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানোর জন্য। পরবর্তীকালে প্রবন্ধগুলো একত্র করে প্রকাশক পুস্তকাকারে প্রকাশ করেছেন। এই কারণে যদিও বইটি পড়তে গিয়ে এতো এতো উদ্ধৃতির প্রয়োগে একটু হোঁচট খেতে হলেও স্পষ্টতঃ বোঝা যায় যে, লেখকের বক্তব্য মোটেও ব্যক্তিগত চিন্তার প্রকাশ নয়। বরং বাংলাদেশের একটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয় 'মনুষ্যত্ব', যেটি কিনা বরাবরই আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে; সেই অব্যক্ত বিষয়টিই তিনি তার প্রবন্ধগুলোর মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলাদেশ দিন বদলের চেষ্টা করছে। সে চেষ্টা করছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু দিন বদলের সেই চেষ্টা ঠিক সফল হচ্ছেনা। দেশে মানুষ বাড়ছে। কিন্তু মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ বাড়ছেনা। এই সঙ্কটকেই প্রবন্ধকার গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন এবং তার সুদৃঢ় লেখনীর দ্বারা প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তিনি যে শুধু সঙ্কটই আলোচনা করেছেন তা নয়, তা থেকে উত্তরণের উপায়ও আলোচনা করেছেন।
তাঁর আলোচনার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ছাত্র রাজনীতি, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি। সেই সাথে তিনি ধর্মীয় কুসংস্কার, বাঙালির হারিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক ঐতিহ্য এবং ক্রমাগতভাবে বিলুপ্ত মনুষ্যত্বের সঙ্কট তাঁর আলোচনায় স্থান পেয়েছে। বইটি পড়তে গিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম সমাজ সংস্কারক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের 'নিষ্ফলা মাঠের কৃষক' বইটির কথা মনে পরে। সেই বইতেও লেখকের শিক্ষাঙ্গনের হতাশাজনক অবনতিতে (লেখকের ভাষায় 'নির্বীজ মৃত্যু') গভীর আর্তনাদ অনুরণিত হয়েছে। উভয় বইতেই একটি বিষয় অভিন্ন আর সেটি হলো বাঙালি মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বের অনুপস্থিতি। এছাড়াও আছে ছাত্র রাজনীতির অধঃপতন, শিক্ষক হিসেবে কিছু ফলপ্রসু কাজ করতে না পারার দুঃখ। ঐতিহ্যকে ধারণ করতে না পারার হাহাকার এবং ধর্মীয় কুসংস্কারে ক্রমাগত নিমজ্জিত হয়ে পড়ার উদ্বেগ! ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া ফসলের দিকে কৃষক যেমন অশ্রুসজল চোখে তাকান, ঠিক তেমনি প্রায় চার দশকের অধ্যাপক জীবনের দিকে তাকিয়ে সোনার ফসলের মাঠ কিভাবে ধু-ধু প্রান্তরে পরিণত হল, তারই বয়ান দিয়েছেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। আর এই ফসলহীনতার কারণ যে বাঙালীর ক্রমহ্রাসমান মনুষ্যত্ব তা আলোচনা করেছেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বই দুটোর একটি পড়লে আরেকটিও পড়ে ফেলা উচিৎ।
আলোচ্য বইটি যেহেতু প্রবন্ধের সংকলন, এখানে সাহিত্যরস বিবেচনা করতে হয় তার বক্তব্য কতটা পাঠকের বোধগম্য হচ্ছে তার উপর। তিনি বিশেষ কোন ধরণ ফলো করেননি, বরং তার বক্তব্য যুক্তিসংগতভাবে লিখে গেছেন। শব্দচয়নে তিনি সাবলীলভাবে সুন্দর কিন্তু কিছুটা অপ্রচলিত শব্দ (যেমন হতশ্য) ব্যবহার করেছেন যা পাঠককে নতুন শব্দ শিখতে ও ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবে। কিন্তু প্রায় সকল প্রবন্ধেই তিনি 'মোটাদাগে' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা কিছুটা বিরক্তির উদ্রেক করে বা পাঠককে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। এছাড়া কিছু বানান ভুল বইটির সৌন্দর্যহানী করেছে বৈকী, কারণ ব্যক্তিগতভাবে এসব দিক থেকে লেখক একজন নিখুত মানুষ।
সংকটের সংখ্যা হিসেব করলে সংকট সংখ্যায় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন না হলেও প্রথমদিকেই থাকবে। সব সংকটের মূল হলো বাঙালির মনুষ্যত্বের সঙ্কট। এটাই প্রথম অধ্যায়ের বক্তব্য। অর্থাৎ মানুষ হিসেবে বাঙালির সঙ্কটবোধকেই প্রাবন্ধিক সমাজের মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রাবন্ধিকের ভাষায়-
“যে সমাজে অন্ধরা বেশি দেখতে পায় বলে স্বীকৃত সে সমাজে মনুষ্যত্বের ধ্বস অবধারিত" (আনোয়ার হোসেন- ১২)
এই প্রবন্ধ লিপিবদ্ধ হওয়ার ১৩ বছর পরে এসে বলতে হয়, আমরা সেই ধ্বংসের সময় অতিবাহিত করছি। বিষয়টি হতাশার, কিন্তু লেখক আশাবাদী। তিনি রবীন্দ্রনাথের সুরে সুর দিয়ে বলেন,
‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ" (হোসেন- ১৩)
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালি জাতি জ্বলে উঠেছিল, লেখকের ভাষায় যা ছিল স্বর্গছোঁয়া। কিন্তু কি আশ্চর্য কারণে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এদেশীয় মানুষের দ্রুত অবক্ষয় হতে থাকে। যে অবক্ষয় সমাজকে নরকসম করেছে লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে সেই অবক্ষয়ের কারণ খুঁজে বের করার প্রয়াস করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন ধর্মীয় মহল এই অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে ধর্ম বিমুখতাকে দায়ী করে থাকে। কিন্তু লেখকের অভিমত, যেহেতু এদেশে ধর্মের ধর্মান্ধতাই বেশি, সুতরাং এর দায় আসলে ধর্মবিমুখতার হতে পারেনা। ধর্মান্ধতার কুপ্রভাব আমরা যুগ যুগ ধরে অবলোকন করে আসছি। যথার্থ ধার্মিক মানবপ্রেমিক হয়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ধর্মের প্রতি আস্থাহীন একজন মানুষ মানব প্রেমিক হতে পারে না। এখন সময় হয়েছে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভালো মানুষের বসবাস নিশ্চিত করা এবং তা সম্ভব মানবতা সংলগ্ন উদ্যোগ ও কর্মের বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে।
এই অধ্যায়ে জাতীয় অবক্ষয়ের কারণ কী এই প্রসঙ্গের উত্থাপন করলেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেননি যা প্রবন্ধটিকে অসমাপ্ত রেখে দিয়েছে। তিনি এক জায়গায় বলার চেষ্টা করেছেন যে, ধর্মান্ধতা আমাদের মানবিক অবক্ষয়ের প্রধান কারণ কিন্তু কেন জানি তা জোড়ালোভাবে বলেননি। এখানে তাকে একটু কম সাহসী মনে হয়েছে।
পরপর দুটি হতাশা জাগানো প্রবন্ধের পরে তৃতীয় প্রবন্ধে এসে একটু আশা জাগানিয়া আলোচনা পাই; এখানে তিনি বলেন, মানুষ কোন না কোনভাবে পরিবর্তন চায়। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখা যায়না। প্রাবন্ধিকও তা করেননি। ইতিহাসের সুতা টেনে আমাদের নিয়ে গেলেন পেছনে। তিনি উদাহরণ দিয়েছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের, উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, আর্যদের ব্রাহ্মণ্য ধর্মকে কিভাবে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, যেখানে পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ তাদের অধীনতাকে মেনে নিয়েছিল। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে এ অঞ্চলের মানুষ মাৎস্যন্যায়ের পরে এক হয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গোপালকে রাজা মনোনীত করেছিল, যেখানে গোটা পম্চিম দুনিয়া তখন মধ্যযুগের অন্ধকারে ডুবেছিল। পাল আমলে সুশাসন ঘুরে দাড়িয়েছিল যার অনাকাঙ্ক্ষিত বদল হয়েছিল সেন আমলে। এর পরে হুসেনশাহী আমলেও আমরা ধর্মীয় সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ করি। এমনকি মুঘল আমলেও বাংলার অধিকাংশ অঞ্চল ছিল স্বাধীন। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি সুশাসনের সূর্য আমরা আবার দেখবো। প্রয়োজন শুধু সুনেতৃত্বের।
কোন জিনিস নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা থাকে, প্রথমতঃ ফেলে দেয়া, দ্বিতীয়তঃ মেরামত করা বা সংস্কার করা। ছাত্র রাজনীতি আমরা বিলুপ্ত করে দিতে পারিনা, সেক্ষেত্র এর সংস্কার জরুরী। আর জরুরী ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক রোডম্যাপ তৈরী করা। চতুর্থ প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশের হতাশাজনক অবস্থা, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির মাত্রা এবং কাঙ্ক্ষিত ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বেশ কিছু সুপারিশ নির্দেশ করেছেন। এই সুপারিশগুলো তার দীর্ঘ পেশা জীবনের অভিজ্ঞতা এবং গবেষণাপ্রসূত। সুতরাং এই সুপারিশগুলোকেও সকলের সামনে উপস্থিত করা বা প্রচার করা প্রয়োজন। দু-একটি সুপারিশ হলো-
- ক) ক্যাম্পাসের বিকৃত ছাত্ররাজনীতিকে যথার্থ ছাত্রদের রাজনীতিতে রূপান্তরিত করতে হলে প্রধান করণীয় শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা (হোসেন- ৩০ পৃষ্ঠা)
- খ) অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া (হোসেন- ২৯ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ লেখকের মূল বক্তব্য হলো ছাত্র রাজনীতি এমন হওয়া উচিৎ, যাতে যথার্থ ছাত্র এবং যথার্থ রাজনীতি উভয়ই উপস্থিত থাকে।
পরের অধ্যায়ের প্রবন্ধটিতে লেখক মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে বস্তুতঃ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির হাতে সরকার চলে যাওয়াকে এক বড় বিপর্যয় বলেছেন। যদিও অনেকে বিষয়টি অস্বীকার করেন, কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির অবস্থান যেমন মুক্তিযুদ্ধের আগেও এদেশে ছিল, যুদ্ধের পরেও ছিল, এমনকি এখনো আছে। এরা সুযোগ পেলেই ধর্মের দোহাই দিয়ে কুসংস্কার, ফতোয়া, সাম্প্রদায়িকতা এবং যাবতীয় কুপমন্ডূকতার বিন্যাস করে। এদের কর্মকাণ্ড মাঝেমধ্যে এতো ব্যাপকতা ধারণ করে যে, বাংলাদেশে আদৌ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো কি না তাই আমরা ভুলে যাই। লেখকের ভাষায়-
'৭১ এর বাংলাদেশ হারিয়ে গেছে বা ছিনতাই হয়ে গেছে (হোসেন-৩৭)।
একে ফিরে পাওয়াটাই এখন চ্যালেঞ্জ ।
তীব্র হতাশা থেকে প্রাবন্ধিক বোধকরি নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করেন, অবশ্য পেছনে ফিরে না তাকালে নিরাপদে সামনেও চলা সম্ভব হয়না। ষষ্ঠ অধ্যায়টি তাই ইতিহাসের আলোকে ভবিষ্যত রাজনীতির রোডম্যাপ তৈরীর অনুপ্রেরণা থেকে লেখা হয়েছে।
পরবর্তী প্রবন্ধগুলো মূলতঃ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্কট এবং সম্ভাবনা, জাতীয় পরিষদের দুর্দশা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়, বুদ্ধিজীবী নিধনের ফল এবং গণতন্ত্রের বিজয়ের আশাবাদ নিয়ে লেখা হয়েছে। লেখক দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সংবিধানে সকলের জন্য একই মানের শিক্ষার কথা বলা হলেও তা কিভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শিক্ষার অবস্থান ছিল ২০৭। একযুগ পরে এসেও তা যে খুব একটা পাল্টেছে তা নয়। তিনি অবাক হয়েছেন এই ভেবে সার্চ কমিটি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খুঁজে পায়না! শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, জাতীয় পরিষদ থেকে শুরু করে যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বাঙ্গনে বসাতে হবে। সেই সাথে রাখতে হবে দক্ষ ব্যবস্থাপনা, তাহলেই সমস্যার উত্তরণ হবে। অবশ্য এর সাথে থাকতে হবে আমজনতার সম্মিলিত উদ্যোগ। গণতন্ত্রের বিজয় চাইলে আমাদের মধ্যে মানবিক চেতনার সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ আবশ্যক। প্রাবন্ধিক স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের কালকে যাপন করেছিলেন। নবীন আমরা তা করিনি। স্বৈরশাসনের অভিজ্ঞতায় তাই আঁৎকে উঠতে হয়। কিন্তু সেই স্বল্প কিছু বছরের কুপ্রভাব যে এখনো কাটেনি তা বলা বাহুল্য। কিন্তু আমরাও আশাবাদী, কারণ ঐ যে,
মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ!
‘বাংলাদেশে মনুষ্যত্বের সংকট' বইটি পড়তে গিয়ে আমার মনে দু'ধরণের অনুভূতি হচ্ছিলো। প্রথমতঃ বইটি লেখা হয়েছে ২০০৭-২০০৮ সালে বসে। কিন্তু কিভাবে যেন আজ ২০২১ সালে বসেও প্রবন্ধকারের কথাগুলো মিলে যায়। সেদিক দিয়ে তার লেখাকে কালোত্তীর্ণ বলা না গেলেও যুগোত্তীর্ণ বলা যেতে পারে। আবার এও ভাবছিলাম, যে ধরণের ক্ষুরধার ভাষা তিনি ব্যবহার করেছেন এই প্রবন্ধে, সে ধরণের ভাষা তিনি এই সময়ে ব্যবহার করতে পারতেন কিনা সন্দেহ আছে। এই আতঙ্ক থেকে এই সন্দেহ থেকেই যায়। মনুষ্যত্বের অগ্রগতির দিক থেকে আমরা বোধকরি সামনের দিকে না এগিয়ে দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছি। বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠার মতো সঙ্কটের পাহাড় পেরোনোও আমাদের কাছে অসম্ভব হয়ে পরেছে। তার চেয়ে বলা ভালো আমাদের 'মনুষ্যত্ব' ঘুমিয়ে আছে। অনেক দিন থেকেই ঘুমিয়ে আছে। সেই ঘুম ভাঙানোর জন্য প্রয়োজন একজন দক্ষ নেতা। সেই নেতা আসবে সাধারণের মধ্য থেকে।
আমাদের ছাত্ররাজনীতি, মূলধারার রাজনীতি, জাতীয় পরিষদের পরিচালনা সিস্টেমসহ সঙ্কটে জর্জরিত সকল শাখায় পরিবর্তন আসা জরুরি। আর সে পরিবর্তন আসবে দীর্ঘ শীতনিদ্রায় থাকা মানুষের মনুষ্যত্ববোধ যখন জাগ্রত হবে। আমরা আশাবাদী তা হবে অবশ্যই।
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম