অবদমনের সাহিত্য সাহিত্যের অবদমন - রাজীব সিংহ

অবদমনের সাহিত্য সাহিত্যের অবদমন - রাজীব সিংহ

কাব্যতত্ত্বের প্রধান কয়েকটি অন্যতম সূত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি elimination বা বর্জন৷ যাকে কেউ কেউ আবার rejection-ও বলতে চেয়েছেন। সাহিত্যে তথা কবিতায় এই বর্জনকেই ‘বাক-সংযম’ বলা যেতে পারে। বলা যেতে পারে দুই পংক্তির মধ্যবর্তী সেই অনুচ্চারিত শূন্যতা। কবি বা লেখক যা শেষ পর্যন্ত লেখেননি। ফলে সাহিত্যে অর্থাৎ উপন্যাসে বা গল্পে একটা কুহক, রহস্যময়তা, চমক তৈরি হয়, যা পাঠককে আরও উৎসুক করে তোলে। আর কবিতায় এর পাশাপাশি তৈরি হয়ে উঠতে পারে এমনকী দুর্বোধ্যতাও। শক্তি চট্টোপাধ্যায় নিজের কবিতা নিয়ে সন্দিগ্ধ, ‘আমি বড়ো বেশি বলে ফেলি’, উৎপলকুমার বসু ভীতসন্ত্রস্ত নন, বরং বেপরোয়া, ‘ভালোমন্দ খাও দাও, তোমার পিছনে কোনো গোয়েন্দার চোখ নেই’, নবনীতা দেব সেন অথবা অ্যালেন গিন্সবার্গ বরং আরও বেশি অ্যালিয়েনেটেড।

নবনীতার প্রথম উপন্যাসেই এই বর্জন বা rejection-এর কথা পাওয়া যায়। অরুণেশ ঘোষের সাহিত্যবোধ সাহিত্যের এই অবদমনের রাজনীতির বিরুদ্ধে তাই লেখে:

‘ক্রন্দনের থেকে ক্রোধ ক্ষতি করে শান্ত কবিতার/কিন্তু বল, কোন কোন গূঢ় শব্দ জেগে আছে আর/এই অর্ধরোবটের কালে প্রাচীর ভাঙার!’


নবারুণ ভট্টাচার্য তাঁর ‘হারবার্ট’ উপন্যাসে এই elimination বা বর্জনকেই হাতিয়ার করেছেন। একইভাবে প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় তথাকথিত ‘অর্ধেক আকাশ’ অর্থাৎ নারীরাও যে-কোনও অবদমনের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন এই বর্জনকে হাতিয়ার করেই। রাজলক্ষ্মী দেবী-কবিতা সিংহ-দেবারতি মিত্র- নমিতা চৌধুরী-সংযুক্তা-মল্লিকা-চৈতালি-রমা ঘোষ থেকে এই সময়ের যশোধরা-শ্বেতা-মিতুল-রিমি- বুবুন -তানিয়া-বেবী-কাবেরী-তৃণা সকলেই।

রাজীব সিংহ এ বইয়ের সাতটি প্রবন্ধে সাহিত্যের সেই অবদমিত দিকগুলিই আলোচনা করেছেন, উস্কে দিতে চেয়েছেন চিরকালীন বিতর্ক৷ এই ৭ টি প্রবন্ধের শিরোনামগুলি এই রকম---

* গান থেকে সনেটে ভ্রমণ: শক্তির পদ্য
* উৎপলকুমার বসুর কবিতা প্রসঙ্গে
* নবনীতা দেব সেন: ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও একক
* অ্যালেন গিন্সবার্গ: ‘আমেরিকা কেন তোমার গ্রন্থাগারগুলি কান্নায় ঠাসা?’  
* অরুণেশ, শব ও সন্ন্যাসী
* মৃতের সহিত কথোপকথন, প্রোপ্রাইটার : হারবার্ট সরকার অথবা নবারুণ ভট্টাচার্য  
* ‘অর্ধেক আকাশ’-এর কবিতা: মানবতার অভিশাপমুক্তি

বইমেলায় 'উবুদশ'-এ পাবেন। কলকাতা বইমেলায় স্টল নং ২১৩।।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ