অদম্য এক বালকের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক কিংবদন্তি হয়ে ওঠার আলেখ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' - নুসরাত জাহান

অদম্য এক বালকের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক কিংবদন্তি হয়ে ওঠার আলেখ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' - নুসরাত জাহান


যুগে যুগে পৃথিবীতে কিছু মানুষের আগমন ঘটেছে, যারা অতি সাধারণ হয়ে জন্মগ্রহণ করেও নিজস্ব কর্মদক্ষতায় হয়েছেন অসাধারণ। হয়ে উঠেছেন জীবন্ত কিংবদন্তী। যাদের জীবনাদর্শ আমাদের জন্য হয়ে উঠেছে আলোর মশাল। এমনি একজন আলোর মশাল, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই দেশ, এই জাতির অস্তিত্বই পৃথিবীর বুকে গর্বভরে উচ্চারিত হতো না। যদি না এই নামটি থাকতো। বাংলার মাটি যে বাঙালি অমর নেতার জন্মে ধন্য হয়েছে, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি উচ্চারণ করতে গেলেই যে শব্দ দুটি প্রথম উচ্চারিত হয় তা হলো 'জাতির জনক' ও 'বঙ্গবন্ধু'। মূলত এই দুটি শব্দ দিয়েই তার পরিচয়। যার জীবনের পরতে পরতে রয়েছে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিদ্যমান।      

ফরাসি দার্শনিক দেকার্তের ভাষ্যে, "ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা"। বিগত সময়কে জানার সেই অদম্য স্পৃহা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটি পড়া। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী', বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। বইটি বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্ত্রী রেণুর অনুরোধে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বসে লেখা শুরু করেন। বইটিতে ১৯৩৪-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সময়কালের ঘটনাপ্রবাহ জায়গা পেয়েছে। সব মিলিয়ে অদম্য এক বালকের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক কিংবদন্তি হয়ে ওঠার আলেখ্য 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'। জীবনে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে যে বালকটি তার কর্মগুণে জয় করে নেন অধিকার বঞ্চিত বাঙালির হৃদয়। হয়ে ওঠেন সকলের বন্ধু, জাতির বন্ধু, দেশের বন্ধু, প্রিয় বঙ্গবন্ধু!

বইটিতে মূলত লেখকের কারাজীবন প্রাধান্য পেলেও একইসাথে উঠে এসেছে তার পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন। মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি ও সহধর্মিণীর কথা। আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশপরিচয়, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিমলীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ববাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব নিয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা।

ভুল তো মানুষের-ই হয়। ইতিহাসের মহান মানুষজনও ব্যতিক্রম নয়। তবে সাধারণ মানুষজনের ভুল ভুলই থেকে যায়। আর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষেরা ভুল স্বীকার করে, এ থেকে শিক্ষা নেয়, ক্ষমা প্রার্থনা করে। সর্বোপরি সবকিছু সংশোধন করে নেয়। ভারত বিভাগের পরের ঘটনা, দিল্লির মিল্লাত প্রেসটা ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চাঁদা তুলে সব বন্দোবস্তও করা হয়। হাশিম সাহেব হঠাৎ প্রেসটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে তার সহচররা শেখ মুজিবের কাছে বাঁধা দেওয়ার অনুরোধ জানায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁধা দিতে গেলে হাশিম সাহেবের সাথে তার বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে হাশিম সাহেব খুব বেশি আহত হলে সেই সহচরেরা আবারও মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করে বিষয়টা মিটিয়ে নিতে বলেন। তিনি বলেন,  "তোমরা খেলা পেয়েছো!" তিনি শহীদ সাহেবের সাথে বিষয়টা শেয়ার করেন এবং নিঃসংকোচে হাশিম সাহেবের কাছে ক্ষমা চান।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখতেন, ভালোবাসতেন, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতেন। সেখানে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রীস্টান কখনোই বিভেদ সৃষ্টি করতে পারতো না। কেবল পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু নেতাদের অধিকাংশ তখনো কোলকাতায়। ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলমান। শহীদ সাহেবকে মহাত্মাজীর কাছে রেখে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আসেন। সেসময় তার ভাবনা

"আমি ভাবতাম, পাকিস্তান কায়েম হয়েছে, আর চিন্তা কি? এখন ঢাকায় যেয়ে ল ক্লাসে ভর্তি হয়ে কিছুদিন মন দিয়ে লেখাপড়া করা যাবে। চেষ্টা করব, সমস্ত লীগ কর্মীদের নিয়ে যাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা না হয়।" (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ:৮২)  

বাংলার কৃষক-শ্রমিকসহ সকল পেশার মানুষের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান সরকারের অনৈতিক নিয়মনীতির বিরুদ্ধে আর বাংলার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের হয়েই লড়াই করেছেন সর্বাবস্থায়। সরকারের কর্ডন প্রথা চালুর ফলে এক জেলা থেকে অন্যজেলায়  খাদ্য যেতে দেওয়া হতো না। এতে বিপাকে পরে এক জেলা থেকে অন্যজেলায় গিয়ে ধান কাটা শ্রমিকেরা। যাদেরকে দাওয়াল বলা হয়। বঙ্গবন্ধু জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা করে বিষয়টা সরকারকে অবগত করবার ওয়াদা নেন। এই সময়ে জিন্নাহ ফান্ড নামে আরেক অত্যাচার চলছিলো। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই দান করলেও কিছু সংখ্যক অফিসার জোরজুলুম শুরু করে। আর খাজা সাহেবের গোপালগঞ্জ আগমনকে কেন্দ্র করে তা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পথে ঘটনার বিবরণ শুনতে শুনতেই গোপালগঞ্জে আসেন শেখ মুজিব। তিনি অভ্যর্থনা ব্যয় বাদে বাকি টাকা গোপালগঞ্জে মসজিদ আর কলেজ করার জন্য প্রস্তাব করার পরিকল্পনা করেন। এ খবর পৌঁছার সাথেসাথেই টাকা তোলা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি সেসময়কার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন,

"আমার পৌঁছার সাথে সাথে জনসাধারণের সাহস বেড়ে গেল।" (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ:১০৬)


জনগণের নেতা শেখ মুজিব। মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে শাষক শ্রেণীর রোষানলে বারবার যাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, কারাবরণ করতে হয়েছে। তোফায়েল আহমেদের দেওয়া তথ্যমতে, জীবনে তিনি মোট ৪৬৮২দিন কারাভোগ করেছেন। ১৯৪৯ সালের ঘটনা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রনেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আন্দোলনের অংশ হিসে স্বইচ্ছায় তিনি গ্রেফতার হন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিতে তিনি এ ঘটনার বর্ননা দিয়েছেন এভাবে

"ছাত্র প্রতিনিধিদের ধারণা, আমি গ্রেফতার হলে আন্দোলন চলবে, কারণ আন্দোলন ঝিমিয়ে আসছিল। একে চাঙ্গা করতে হলে আমার গ্রেফতার হওয়া দরকার। আমি তাদের কথা মেনে নিলাম।" (পৃ:১০৭)


এভাবেই তিনি বারবার নিজের ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যকে উৎসর্গ করেছেন বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে।

মানুষের প্রথম দুর্বলতা হলো পরিবার। পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর সুখের জন্য মানুষ কি না করে! গণমানুষের অধিকার আদায়ে নিবেদিত প্রাণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বারবার  গ্রেফতার এবং আন্দোলন সংগ্রামের সাথে যুক্ত থাকায় অধিকাংশ সময়েই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও ছিলো পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি আকুলতা, ভালোবাসা, এক নজর সন্তানদের মুখ দেখবার তৃষ্ণা। সেবার লাহোর থেকে বাড়ির পথে, তিনি জানতেন পাকিস্তানে প্রবেশের সাথে সাথেই গ্রেফতার হবেন। বেনাপোল সীমান্তে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। এ বিষয়ে তিনি অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিতে উল্লেখ করেছেন,

"ফাঁকি আমাকে দিতেই হবে। মনে চলে গেছে বাড়িতে। কয়েকমাস পূর্বে আমার বড় ছেলে কামালের জন্ম হয়েছে, ভাল করে দেখতেও পারি নাই ওকে। হাচিনা তো আমাকে পেলে ছাড়তেই চায় না। আমার আব্বা ও মাকে দেখতে মন চাইছে। রেণু তো নিশ্চয় পথ চেয়ে বসে আছে।"(পৃ: ১৪৬)


তিনি আরো ব্যক্ত করেছেন,

"ছেলেমেয়েদের জন্য যেন একটু বেশি মায়া হয়ে উঠেছিল। ওদের ছেড়ে যেতে মন চায় না, তবুও তো যেতে হবে। দেশ সেবায় নেমেছি, দয়া মায়া করে লাভ কি?" (পৃ: ১৬৪)


দেশ সেবায়, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সর্বাবস্থায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তখন জেলে, শরীর অনেকটাই খারাপ। খুলনার সেসময়কার সিভিলসার্জন মোহাম্মদ হোসেন সাহেব জেল পরিদর্শন করতে এসে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে চান। তিনি শেখ মুজিবকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেন "আপনি কেন জেল খাটছেন।" শেখ মুজিব উত্তর দেন "ক্ষমতা দখল করার জন্য।" তিনি মুখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে বলেন "ক্ষমতা দখল করে কি করবেন?" উত্তরে শেখ মুজিব  বলেন "যদি পারি দেশের জনগণের জন্য কিছু করব।" (পৃ: ১৮৫)

জেলে অনশনরত অবস্থায় ক্রমান্বয়ে অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। সিভিল সার্জন সাহেব বলেন,

"এভাবে মৃত্যু বরণ করে কি কোন লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছে অনেককিছু আশা করে।"


কথা বলতে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আস্তে আস্তে তিনি বলেছিলেন,

"দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি, তাদের জন্যই জীবন দিতে পারলাম এই শান্তি।" (পৃ: ২০৪)


বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার দিনগুলোতে তার সাথে যারা বন্দী থাকতেন তাদের সবার সাথে অনেক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। রাজনৈতিক আলাপ তো চলতই৷ এছাড়াও অন্য বন্দীদের জীবনকথা, বড়দের শ্রদ্ধা আর ছোটদের প্রতি স্নেহের রয়েছে অনেক উদাহরণ। এজন্যই হয়তো সবার প্রিয় হয়ে উঠতেন তিনি, নিমিষেই মনজয় করে নিতেন। ঢাকা জেলে থাকাকালীন বাহাউদ্দীনের প্রতি অপার স্নেহ আর ভিন্ন দলভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজের সাথে মহিউদ্দিন সাহেবের মুক্তির দাবী চাওয়ার বন্দবস্ত তার উদারতারই বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধু খুব বিশ্বাসযোগ্য মানুষ ছিলেন। পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এবং দায়িত্বরত সরকারি কর্মচারি কেউই এর বাইরে নয়। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিতে এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন,

"আমি অনেক রাতে একা হাটাচলা করতাম। পুলিশ চুপচাপ পরে থাকে, কারণ জানে আমি ভাগব না। গোয়েন্দা কর্মচারী একপাশে বসে ঝিমায়।" (পৃ: ১৯৬)


খুব অল্পসময়েই আপামর জনসাধারণের মনে জায়গা করে নেওয়ার এক অদ্ভুত গুণ ছিলো শেখ মুজিবুর রহমানের। গোপালগঞ্জে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত তিনি, এপথে যাবেন শুনে এক বৃদ্ধ মহিলা কয়েকঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। মহিলা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বলেন, "বাবা আমার এই কুঁড়েঘরে তোমায় একটু বসতে হবে"। শুধু ঘরে বসিয়েই ক্ষান্ত হননি হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক বাটি দুধ, একটা পান ও চারআনা পয়সা। ঘটনার আকস্মিকতায় বঙ্গবন্ধুর চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। এমনি ভাবে বাংলার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন তিনি।

বইটির নাম যেমন 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী', তেমনি আকস্মিক ভাবেই শেষ হয়ে যায় কিংবদন্তী এই নেতার লেখা জীবন কাহিনী। এর পরে সংযোজিত হয়েছে টীকা, সাল অনুযায়ী অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পরিচয় (১৯৫৫-১৯৭৫), জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকা এবং নির্ঘণ্ট। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র কয়েকবছর পর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট একদল দেশদ্রোহী বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। একটা সুদীর্ঘ সময় পর ২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিক তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলো জীর্ণ প্রায় এবং লেখা প্রায়শই অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এ বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে লেখা পাণ্ডুলিপির সংযোজনও বইটিকে অনন্যতা দিয়েছে। অতঃপর ২০০৭ সালে কারাবন্দী অবস্থায় বইটির ভূমিকা লেখেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। মুক্তি পেয়ে বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেন। সবশেষে ২০১২সালের জুন মাসে 'দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড' -এর মাহরুখ মহিউদ্দিন কর্তৃক ৩২৯পৃ বিশিষ্ট বইটি প্রকাশিত হয়। যার প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়। বাবা-মা ডাকতেন খোকা বলে। আমাদের এই দেশ, এই জাতির অস্তিত্বই পৃথিবীর বুকে গর্বভরে উচ্চারিত হতো না যদি এই খোকার জন্ম না হতো৷ তিনি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রপথিকই নন, তিনি একজন অনন্য সদাশয় ব্যক্তিত্ব। যিনি তার পুরো জীবনটাই মানুষের কল্যাণে, দেশের জন্য করেছেন নিবেদিত। এ মহাবিশ্বের বুকে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একজন বাংলাদেশি হিসেবে, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে -দেশের ইতিহাস জানতে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পেছনের গল্প জানতে, স্বদেশ প্রেমের মহান ব্রত নিজের মধ্যে ধারণ করতে, স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' -বইটি একটি অবশ্য পাঠ্য গ্রন্থ।


**********
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
শেখ মুজিবুর রহমান

প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার
প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা
পৃষ্ঠা: ৩২৯


------

পড়তে পারেন একই বইয়ের আরেকটি আলোচনা:  

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ