সাহিত্যভাবনার নানা প্রসঙ্গে কবি অনিমেষ প্রাচ্য'র সাক্ষাৎকার

সাহিত্যভাবনার নানা প্রসঙ্গে কবি অনিমেষ প্রাচ্য'র সাক্ষাৎকার


গ্রন্থগত : আপনার প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

অনিমেষ প্রাচ্য : খুব ক্রিটিক্যাল অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ওই সময়গুলো। যতোটা ক্রিটিক্যাল হয়, কোনো কুমারীকে তার অতিউচ্চ পরিবার থেকে ভাগিয়ে নিয়ে এসে, আবার সপরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়াতে। পরিবারের সাথে মুখোমুখি কথা হয়, মিষ্টি মুখ করানো, ডাল-ভাত খাওয়ানো (পুরো জামাই আদর), শুধু বিয়েটা দেয়া হয়না। হাহা। কুমারীঘটিত এমন অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর চেয়েও, আমার মনে হয় তার থেকেও কঠিন ছিলো, আমার প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা। এই বইটির পূর্বেও প্রথম ২০১৯ এ-একটা বই প্রকাশ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু প্রকাশনার নানান জটিলতার জন্য আর প্রকাশ করিনি। একই জটিলতা এই বইটির ক্ষেত্রেও হয়েছিলো। ‘গোলাপ ও আফিমের প্রজ্ঞা’ প্রকাশ হয় ২০২২ এর ৮-ই জুলাই। ওই দিনটা, যেইদিন খুন হয় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। মৃত্যুর ওই অন্ধ-আবহ বোধয় প্রতিবছরই ঘুরে ঘুরে আসবে। বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে ভালো অভিজ্ঞতার চেয়ে, ক্রাইসিস মোমেন্টই বেশি ছিলো।

গ্রন্থগত : সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো, আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

অনিমেষ প্রাচ্য : কঠিন পরিশ্রমের পর একজন কৃষক যখন দেখতে পান তার চাষ করা ফসল জীবন্ত হয়ে উঠছে, আর তখন তিনি যেই অনুভূতির ভেতরে বিচরণ করেন, তখনকার ঐ বই প্রকাশের অনুভবটাও তেমন ছিলো।

গ্রন্থগত :
বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

অনিমেষ প্রাচ্য : ধারাবাহিক লেখালেখির বয়স তো ৭/৮ বছর। এর মধ্যে যখন মনে হলো লেখাগুলো কাগজের পাতায় ছাপা হতে উপযুক্ত, এরা প্রকাশ না হলে অনেক কিছুই আড়ালে থেকে যায়, যা উচিৎ না মূলত, তখনই বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া।

গ্রন্থগত : বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কী?

অনিমেষ প্রাচ্য : বেশ কয়েকবার। আমার মনে হয় তা শুরুতেই কিছু অংশ বলে ফেলেছি, প্রাসঙ্গিক উপায়ে। সাক্ষাৎকার ব্যাপারটা এমন, যেখানে সব সত্য বোধয় লুকিয়ে রাখা যায় না। বলতে বলতে কিছু অপ্রকাশিত সত্যও বেরিয়ে যায়।

২০২২ এর একুশে বইমেলায় একজন প্রকাশক উদ্যোগ নিয়েছিলো, বইটা প্রকাশ করতে। আমার একটা একঘেয়ে সাইকোলজি আছে সেটা হচ্ছে, আমার ব্যক্তিগত ভালো লাগার বিষয়গুলোতে দ্বিতীয় কারো হস্তক্ষেপ ডিজার্ভ করতে না পারা। এইজন্য বইটার সম্পাদনার কাজ, প্রুফ রিডিংয়ের কাজ, প্রচ্ছদ তৈরির কাজ— সবকিছু নিজে একাই করেছি। সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে দেবার পরেও, প্রকাশকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য একজন কর্মী, ভুল একটা ফাইলকে প্রিন্ট করে। যার ফলে পুরো বইয়ের কাজটাই ছিলো একটা বাতিল প্রজেক্ট। তাও বইমেলার শেষ দিন রাত প্রায় আটটায় স্টলে আসে। আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন, বিকাল ৩ টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলো, ওই বইটা পাবার জন্য। শেষাবধি তার দুঃখটা আমি অনুভব করেছিলাম। তার চেয়েও খারাপ লেগেছিলো, এতো অপেক্ষার পরেও, কাঙ্ক্ষিত বইটার ভুল ছাপা হওয়া একটা ভিডিও দেখে। যেনো কেউ উপর থেকে একটা বিরাট পাথর খণ্ড ছুঁড়ে মারলো, সদ্য জন্ম নেয়া এক হরিণকে।

পরে ৮-জুলাই অনুপ্রাণন প্রকাশন বইটা নির্ভুলভাবে প্রকাশ করে । প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেকের সাহায্য ছিলো; যাদের ঋণ হয়তো কখনও শোধ করতে পারবো না। কবি মজনু শাহ বইটি তৈরির ব্যাপারে, প্রচার, বিক্রি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আমাকে পথ দেখিয়েছিলেন। আমি যখনই কোনো বিষয়ে বুঝতাম না, বা সমস্যায় পড়তাম, তাঁকে জানাতাম; তাঁর নির্দেশনাগুলো আমাকে নানাভাবে উন্নিত করেছে।

কবি জাকারিয়া প্রীণন আর পলিয়ার ওয়াহিদ বইটার প্রকাশনা সংক্রান্ত বিষয়ে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলো।

অনুপ্রাণন প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী আবু এম. ইউসুফ খুব বিনয়ী একজন মানুষ ছিলেন। বইটা ছাপাতে গিয়ে, অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়েও এই লোকটা কোনো কিছুতেই বিন্দুমাত্র আপত্তি জানাননি। যদিও তিনি জানেন, আমার এই বইটি তাকে বিশেষ কোনো ভাবে লাভবান করবে না। এই লজ্জা আমি প্রকাশও করতে পারিনি কখনও।

গ্রন্থগত : নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

অনিমেষ প্রাচ্য : ‘আত্মবিশ্বাস’ শব্দটি নিজেই একটা দুর্বল অস্তিত্ব। আত্মবিশ্বাস না ‘আত্মবলিদান’। কবির প্রয়োজন শিল্পের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করা। 


আমার মনে হয় কদাচ, আমার এই সংকীর্ণ জীবন শিল্পের জন্যই বেঁচে আছে। যার মাধ্যমে আমি প্রাণকে খুঁজে চলি। নয়তো, আমার ফিলোসফিতে আত্মহত্যাটা খুব অ্যাক্সেপ্ট্যাবল বিষয়। একে নৈরাশ্যবাদও বলা যায়; বা দুঃখবাদ।

গ্রন্থগত : অনেকে বলেন, লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

অনিমেষ প্রাচ্য : সেই ‘অনেকে’ কারা? সকলের ক্ষেত্রেই কী প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়? কবিতা লেখার ক্ষেত্রে আমার অধিকাংশ সময়ই ছিলো প্রস্তুতিবিহীন। সেসব ঘটনাগুলো মনে পড়ে, যখন সড়কে আধমরা একটা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি, বারংবার অ্যাক্সিডেন্টের আশঙ্কা। রাস্তায় পড়ে আছে কুকুরের মৃত চোখ আর তার ছোট ছোট শিশুরা। কারো হৃদয় কাঁদে না ওদের দেখে; ঈশ্বরেরও না। চারপাশের পরিস্থিতি দেখে একই সাথে নৈরাশ্যবাদ আর বৈরাগ্যবাদ আমাকে খুবলে খাচ্ছে। আমি তখন সাইকেল রাস্তার এক কোণে রেখে, লিখতে থাকি—

বালুতীরের রাস্তায় প্রায়শঃ হাঁটি; এই হেঁটে যাওয়া,
এই অবরুদ্ধে গুম। ভগবতী কুঞ্জে রয়েছি স্বীয় নত
হয়ে। এমনভাবে ঝরে পড়েছি ডালিমের মুণ্ড হয়ে,— এমনভাবে দেখেছি, কে যেন করেছে আমাকে কারুবাসনার নষ্ট ফুল।


(‘হলুদ পাতার পিঠে’ শিরোনামে এই কবিতাটি আছে বইটির ৫৩ নং পৃষ্ঠায়।)

এখানে ‘হাঁটা’ বলতে চলা, বেঁচে থাকা। ‘ভগবতী কুঞ্জ’ শাব্দিক অর্থ, দেবীর স্থান; মূলত এই পৃথিবীকে বিদ্রুপ অর্থে ব্যবহার করা। মানুষ করছে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই; যেখানে আমি নিজেকে তুচ্ছ ভাবি; ভাবি চূড়ান্ত অনুপযুক্ত।

এমনভাবে ঝরে পড়েছি ডালিমের মুণ্ড হয়ে,—


আমাদের জন্মটা তো খুব তুচ্ছতম, অবহেলায় হয়ে গেলো। প্রকৃতি তো চায় শুধু জন্ম; তাতে জীবন না থাকলেও চলে। ‘কারুবাসনার নষ্ট ফুল’ অর্থাৎ- আকাঙ্ক্ষার অন্ধকারে হারিয়ে গেলাম পুরোটা জীবন। এমন জীবনের কী কোনো অর্থ আছে?

এই যে কবিতায় এক নৈরাশ্যবাদের চিন্তা, অথবা সাধারণের বাইরে কোনো গভীর দৃশ্যপট আঁকা, তাতো ঘরে বসে ধূপ-ধুনো জ্বালানোর প্রস্তুতি দিয়ে হয়না; এই চিন্তা, এই টেক্সট বাইরের এই বিড়ম্বনার জগৎটাই আমাদের কাছে নাজিল করতে পারে কোনো অসীম উপায়ে। কবিতা কবির কাছে কখন অবতরণ করবে, তা কে বলতে পারে?...

গ্রন্থগত : কবিতায় আপনি কোন দিকটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন?

অনিমেষ প্রাচ্য : ভাষায় এবং চিন্তায়। এই দুটির মৌলিকত্ব আমার কাছে বেশি গুরুত্বের ছিলো। কোনো কোনো কবি বলেন, চিন্তায় আর নতুনত্ব আনা সম্ভব না।  চিন্তার নতুনত্ব যা ছিলো, পূর্বসূরী কবিরা তা লিখে গেছেন। নতুনত্ব ভাষায় হতে পারে। আসলে আমার কাছে মনে হয়, যারা বলছে এমনটা— এটা তাদের ভুল অবজারভেশন। মানব সভ্যতা কী নতুন হচ্ছে না? আর সভ্যতা কী কেবল ভাষায় তৈরি হচ্ছে, নাকি মূলত চিন্তায়? অবশ্যই চিন্তায়। প্রায় দুই-তিন হাজার বছর পূর্বের এরিস্টটলের রাজনৈতিক দর্শন, আজ কেনো খুব একটা কার্যকরী নয়? কোনো মানুষই সম্পূর্ণ হতে পারে কী? রবীন্দ্রনাথ? জীবনানন্দ? জীবনানন্দের জন্ম না হলে বোধয় কেউ বলতোই না যে, রবি ছাড়া আর কেউ চিন্তার-ভাষার পরিবর্তন আনতে পারবে না। তেমনই আজকের যুগে জীবনানন্দের থেকেও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে মজনু শাহ, মাসুদ খানের মতো কবিরা। কখনও কখনও ভালো লাগার হয়ে উঠছে আবিদ আজাদ, শঙ্খ ঘোষের ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’, সমরেন্দ্র সেনগুপ্তের ‘ধ্যানে ব্যবধানে’। মানুষের মস্তিষ্ক খুব বিচিত্র। এর ভিন্নতার শক্তিও বিপুল। মানুষ যতোদিন থাকবে, চিন্তার ভিন্নতার জন্মও অবিচল থাকবে।


এখন অবশ্য আমার কবিতায় ইমেজ কিংবা দর্শন চিন্তার চেয়েও, বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘ঘটনা’— যা ঘটেছে, ঘটছে, ঘটতে চলেছে।

গ্রন্থগত : পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

অনিমেষ প্রাচ্য : আমি প্রচুর ঘষা-মাজা করার মানুষ। কোনো একটা লেখা যখন লিখি, ছয় মাস পর, তা আর ঐরূপে থাকে না। লেখায় প্রচুর সম্পাদনার প্রয়োজন হয়। ফেইসবুকে প্রথমবার একটা কবিতা পোস্ট করলেও, দেখা যায় পাবলিক অবস্থাতেই ওটায় বিশবার সম্পাদনার কাজ হয়ে যায়। এর কারণ যে শব্দ বা যে ভাষা অথবা যে চিন্তা আজকের সময়ে আমি লিখছি, অন্য একটা সময়ে গিয়ে, সেই চিন্তা বদলে অন্যরূপ হয়ে যাচ্ছে। চিন্তার পরিবর্তন মানে, কবিতার বদল। কিন্তু দৃশ্যমান ঘটনা খুব একটা বদলায় না; যা দৃশ্যমান, বদলানো যায় কী?

প্রায় কয়েকশো কবিতার মধ্যে এই বইতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৫৭ টি কবিতা। বাকিসব কবিতা এখন কোথায় আছে, আমার নিজেরও জানা নেই। কবিতা বাছাই, শিরোনাম, বিরামচিহ্ন, বানান এসব ভেদ করে, যেন পাঠকের গ্রহণযোগ্যতার মতো করে তৈরি হতে পারে, এসবই এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। এই পাণ্ডুলিপি নানান পরিবর্তনের সাথে গোছাতে আমার সময় লেগেছে প্রায় ছয় মাস। সময় খুব গুরুত্ব রাখে এখানে। পাণ্ডুলিপি গোছানো যেন একটা সন্তানকে জীবন সম্পর্কে বোঝানোর মতো গুরুদায়িত্ব। খুব সহজ কাজ নাকি?

গ্রন্থগত : শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

অনিমেষ প্রাচ্য : কবিতার প্রতি মানুষের ইনটেনশন প্রচীন থেকেই সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্র অপেক্ষা খুব সামান্য। পাঠক না থাকার পর্যায়ে থেকে, তরুণ একজন কবি যখন বই প্রকাশ করেন, তখন ওই প্রকাশিত বই হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। প্রকাশকের বিপুল অর্থ লগ্নির কাছে, কবির লজ্জার-হার। সুতরাং, পাঠকের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রয়োজন আছে। আমার পাঠকসংখ্যা খুব নগন্য। কে যে আমাকে পড়ে, তাও জানি না। পড়লেও, ভাবতে খুব দ্বিধা হয় যে, এই ব্যক্তিটা হয়তো আমাকে পড়ে।

মজনু শাহ পাঠক নিয়ে একটা কথা বলেছিলেন

আপনার কত পাঠক আছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারা পড়ছে, সেটাই আসল ব্যাপার।


আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু সেই চিহ্নিতকরণে আমি বিকল। আমার পাঠক কারা, যেহেতু তা জানা নেই, তাই দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গও আসে না। যখন তাদের চিনতে পারবো, ঋণ স্বীকার করবো। যখন বুঝতে পারি আমাকে কোনো মেধাবী পাঠক পড়ছেন, যিনি সকলকে পড়েন, পড়েন— নক্ষত্রের সাথে সন্ধি করা সুন্দরতম লেখকদের, ঐ পাঠক একজন হলেও, আনন্দ পাই; ভাবি, হয়তো কিছু হলেও কবি হিসেবে মূল্য রয়েছে আমার— এই দুর্মূল্যের বাজারে। অর্থের মূল্য নয়।

আর শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা? কবিতাই তো শিল্প। শিল্প না থাকলে কবিতা কই? যেনো মাটির সাথে জলের সন্ধি। তাই শিল্পের প্রতি আলাদা করে কোনো দায়বদ্ধতার প্রয়োজন পড়ে না।

গ্রন্থগত : একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

অনিমেষ প্রাচ্য : কবি যখন তার কবিতাকে পাঠক হিসেবে বিচার করে, তখন সে কবিতার উপলব্ধ ঘটনা নিয়েই চিন্তা করতে পারে। যেন যা অতীত, তা আবার স্মৃতিচারণ।

যেহেতু এই বইয়ের কবিতাগুলোর ঘটনা জীবনের বহু পুরানো অতীত নিয়েও, তাই এখন অনেক কবিতাকেই অসম্পূর্ণ মনে হয়। এই কবিতাগুলো লিখবার সময়ের চিন্তা, আর এখনকার চিন্তা বিপুল পরিবর্তনে চলে গেছে। অভিজ্ঞতার ঝুলি যতোই বাড়ছে, অতীত লেখাগুলো ততোই হালকা হয়ে আসে। আর আমার কাব্যভাবনাগুলো খুব স্থায়ী নয়; দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়।

পাঠক হিসেবে যা বলা যায়, এই বই খুব সহজবোধ্য কবিতা যারা পড়েন, তাদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। আবার মনে হতে পারে, দুর্বোধ্য কবিতা একেবারেই অর্থহীন। যারা সকল ধারার কবিতা পড়বার মতো আকাঙ্ক্ষা রাখেন, কিছু পেলেও তারা পেতে পারে।

গ্রন্থগত : অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অনিমেষ প্রাচ্য : বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করার একটা মূল কারণ হলো, অনেক মানুষ যখন ওখানে সমাগম হয়, স্বাভাবিকের চেয়ে অখ্যাত কোনো ভালো বইও কারো কারো চোখে পড়ে যায়। অর্থাৎ, বিক্রয়ের প্রসার।

বাংলাদেশে অধিকাংশ কবি-লেখকরা অসহায়। বিশেষ করে কবিরা। কবিতার পাঠক এতো সামান্য যে, তা বইমেলা বিহীন বছরের অন্য কোনো সময়ে প্রকাশ হলে, বিক্রি করা কঠিন হয়ে যায়। তখন ভাবতে হয়, প্রকাশকদের মাথা কাটা নিয়ে। যে কবি বছরের অন্য একটা সময়ে বই প্রকাশ করেন, তাকেও অপেক্ষা করতে হয় বইমেলা পর্যন্ত, দু-একটা বই বিক্রির আশায়। এখন যেমন আমার ক্ষেত্রেও তাই। বইমেলা কেন্দ্রিক বইকে অচ্ছুৎ ভাবার কোনো কারণ নেই। বই কোনো দৈবিক বিষয় নয়, যে তার বিক্রির কথা না ভেবে, তাকে ফুল-বেলপাতা দিয়ে তিনবেলা পূজা করানো হবে। তাই কেউ চাইলে বইমেলা কেন্দ্রিকও বই করতে পারে, না চাইলেও না করতে পারে; কোনো বাধ্যকতার নয়— বইটা কখন, কতোটা বিক্রি হতে পারে, সেটাই মূল বিষয়।

গ্রন্থগত : লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

অনিমেষ প্রাচ্য : আমি এখনও ভবিষ্যতে যাইনি; তাই এর ব্যাপারে বলতেও পারছি না। ভবিষ্যৎ খুব অপ্রাসঙ্গিক এবং মিথ্যা একটা বিষয় মনে হয়। আমার যা বিচরণ, আজকেই; না অতীতে, না ভবিষ্যতে। শুধু এইটুকু বলতে পারি, আমি পুরোটা জীবন লিখে যেতে চাই।


**********
বই : গোলাপ ও আফিমের প্রজ্ঞা
লেখক : অনিমেষ প্রাচ্য
প্রচ্ছদ : Salvador Dali-এর The Burning Giraffe চিত্রকর্ম অবলম্বনে— অনিমেষ প্রাচ্য
প্রকাশন : অনুপ্রাণন প্রকাশন
প্রকাশকাল : ৮ জুলাই, ২০২২

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ