"যৌনতা জীবনের ভরকেন্দ্র । শ্রেষ্ঠ শিল্প । ওটা বিশৃঙ্খল হলে জীবন ভারসাম্য হারাতে বাধ্য । ওটাকে এড়িয়ে যাওয়া বা চেপে যাওয়া জীবন-বিমুখতা তথা জীবন-বিরুদ্ধতার নামান্তর । আর যৌনতায় অশ্লীল ছাপ্পা মেরে দিলে জন্মটাই তো অশ্লীল হয়ে পড়ে । তাই না ? "
রচনাকার স্বপনরঞ্জন হালদার আলোচ্য গল্পগ্রন্থে(?) প্রচলিত প্রকরণকে ভেঙেচুরে টিভি চ্যানেল, বাংলা ইংরাজি সংবাদপত্রের নানা ঘটনার কাটিং, সুবিমল, নবারুণ, ঋত্বিক, শঙ্খ ঘোষ, মানিক, কমলকুমার, সত্যজিৎ, রামকৃষ্ণ প্রমুখের রচনা বা কথাকে কোলাজ করে করে সমাজ-রাজনীতির প্রত্যহ ঘটে যাওয়া নানা অবক্ষয়কে চিহ্নিত করেছেন 'গায়ে গতরের' ভাষায় ।
" ইস্কুলের হেডমাস্টার ক্লাস ফোরে পড়া মেয়ের গায়েটায়ে হাত দিয়ে ২০ হাজার টাকার জরিমানায় সমাজে পুরো ছাড় পেয়ে এখন কীরকম কিচ্ছু হয়নি তো গোছের ভা নিয়ে বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছে আর তার পতিব্রতা বউটি কপালে সিঁদুর লেপে সারাদিন উপোস করে মা দুগগার যোনি এফোঁড় ওফোঁড় করা টানটান শিবলিঙ্গে ঘটি ঘটি জল ঢেলেই যাচ্ছে বছরের পর বছর । "
বামপন্থা না ভামপন্থা, বামদের বামাচারী হয়ে ওঠা কীর্তিকলাপ ফাঁস করেছেন, পচে যাওয়া মাংসাশী চেতনায় ওপর দাঁড়িয়ে স্বীয়ভাষার কুড়ুলের ফলায় কুপিয়ে গেছেন অনবরত । আমরা পেয়ে যাই যৌনমনোবিকলনের সুপ্রচুর দর্শন, ধর্ষণ । মধ্যবিত্তীয় চুদুরবুদুর মানসিকতার নগ্নতা, ঘোমটার তলায় খেমটা নাচ ।
"পুরুষদের যৌনকর্মে লাইসেন্স থাকতে পারে, মেয়েরা চাইলেই দোষ । মেয়েরা পয়সা নিয়ে 'শুলে' তাদের 'বেশ্যা' বলে দাগা দিয়ে সমাজের একপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এতদিন । অথচ পুরুষেরা পণ নিয়ে বিয়ে করলেও তাদের জন্য এমন কোনো বিশেষণ ভেবে ওঠা যায়নি । এবার থেকে পণ নিয়ে যে পুরুষ বিয়ের পিঁড়িতে বসবে তাকেও 'বেশ্যা' বলে চিহ্নিত করা হোক । কারণ সেও তো সমাজ নির্দিষ্ট যৌনকর্ম করছে পয়সার বিনিময়ে । হয়ত নেওয়ার ধরনটা একটু আলাদা, চাওয়ার ধরনটা একটু আলাদা । কিন্ত ব্যাপারটা একই রকম । "
_________________________
রচনাকার যদি এখন লিখতেন তবে বর্তমান সরকারের সব আলি-তালি-বনমালী-কেও ছুলে দিতেন সন্দেহ নেই ।
" হ্যালো - ইয়ং পোয়েট, আমার পেছনে কাঠি করছ করো, কিন্তু তরুণতর প্রজন্মকে এট লিস্ট প্লেসমেন্টের লোভটা দেখিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিও না । হ্যাঁ, ভালো কথা, শুনলাম, তুমি সেই তরুণতর কবি যশোপ্রার্থী নিরীহ ছেলেটিকে, যে আমার কাছাকাছি থাকেও বটে, বলেছ আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে, কারণ আমি নাকি হাংরিদের মতো লিখি । বেশ করি । শুয়োরের বাচ্চা! তোর বাপের কী ? শুনে রাখ, আমার বাপ সুবিমল মিশ্র যার পেচ্ছাপের ধারায় তোর মতো বালছাল ভেসে গিয়ে পৌরসভার ড্রেনে থুতু-গয়ের-পরিত্যক্ত প্যাডের সঙ্গে জড়িয়ে-মড়িয়ে ভেসে থাকে পচা জলের উপরিতলে!.... বাংলা ভাষা । লোকভাষা । রেগে গেলে এভাবেই বলতে হয় । তখন আর পেনিস বা লিঙ্গ নয় । খাস বাংলাটাই বেরোয় । তাতে কোন চুতিয়া কী বলল তাতে আমার বা তোমার বা আমাদের ছেঁড়া গেল । লেখার অন্তর-অন্বেষক পাঠক ছাড়া আর কাউকে কেয়ার করি না । তেমন পাঠকের আদেশে কান ধরে ওঠবোস করতেও রাজি । কিন্তু তোরা যারা হাংরি-ফাংরি কিছুই বুঝিস না, কেবল কর গুনে গুনে মাত্রা মাপিস, হা কর, তোদের মুখে মুতি । "
এভাবেই লেখক আক্রমণাত্মক ভাষায় চেতন-অবচেতনার তীব্র ঝাঁকুনিতে নৈরাজ্যবাদী এই ভিন্নদ্যোতনার text-টি গড়ে তুলেছেন ।
…………………………………
প্রকাশ্য দিবালোকে পাকা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফটাফট কাপড়চোপড় খুলে ফেলেছিল যে যুবতী পাগলিটা
স্বপনরঞ্জন হালদার
প্রকাশকাল-বইমেলা, ২০১২
ডানা প্রকাশন
৬০.০০
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম