অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এ প্রকাশ হয়েছে অভিজিৎ বসু রচিত গল্পগ্রন্থ 'ব্যাসার্ধটি নীল'। বইমেলাতে নতুন বই প্রকাশের অনুভূতি, গল্পগুলোর রচনা, প্রকাশ ও নানাবিধ সাহিত্যভাবনা নিয়ে লেখক কথা বলেছেন 'গ্রন্থগত ডট কম' (www.granthagata.com) এর সঙ্গে।❑ সম্প্রতি আপনার গল্পের বই প্রকাশিত হলো। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
> প্রথম প্রেম, প্রথম কোনো ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করা, প্রথম পাগলামি, প্রথম স্বপ্ন দেখা, নিজেকে আলগা করে নিজেকে দেখা। এ এক অন্যরকম স্বাদ। বুকের ভেতর একটা ঝড় খেলে যাচ্ছে। ভেঙে ভেঙে নিজের মাংস টেবিলে নিয়ে বসে থাকার মতো রাগিণীর সুর সেখানে ম্লান।
❑ বই প্রকাশ করতে এত লম্বা সময় নিলেন কেন?
> বই প্রকাশ করতেই হবে কোনোদিন তেমন মনে হয়নি। লেখক হওয়ার কোনো শর্তের মধ্যে বই থাকতে হবে সেটাও না। তবে অনেকের ভিন্ন মত থাকতে পারে।লেখালেখির এই জগতে আমি আমার মতো করে চলি। প্রতি বছর আসলে, মাঠে বসে একটা প্লান করতাম এবার বই হবে। কিন্তু সেটা হতে হতে এতো বছর চলে গেলো। তবে আমার লেখক বন্ধুদের সাথে দেখা হলে বই কবে বের হবে, সেটা জানতে চাইতো? মূলত সেসব মানুষের আগ্রহের এবং চাপাচাপির কারণে বইটা বের হলো। অবশেষে নতুন ঘ্রাণ। নতুন নিঃশ্বাস।
❑ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?
> সূর্যঘড়ি থেকে বের হলো। মিনু মৃত্তিক দূরন্ত মানুষ। সত্যি কথা বলতে কি এ বইয়ের জন্য আমার কোনো কষ্ট করতে হয়নি। সব সময় প্রেস, কভার, ছাপা এগুলো দেখভাল করেছেন কবি, গল্প লেখক মিনু মৃত্তিক।
❑ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?
> অনেকে অনেক ধরনের কথা বলেন। সবার কথা শুনে লিখতে গেলে লেখা আর আসবে না। তবে চিন্তার মননে কোনো কথা যদি আঘাত আনে তাহলে মিলিয়ে দেখি। আত্মবিশ্বাস আছে বলেই লিখতে পারি। তবে কে কি বলে সেটা কোনোদিন চিন্তা ভাবনা করে লিখিনা। এটা একান্ত নিজের জগতের ব্যাপার।
❑ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।
> প্রস্তুতি থাকতে হবে এমন কথা নেই। আমার সব লেখা লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত। তাদের চাপাচাপির কারণে অনেক লেখা আমার এসেছে। কেনো যেনো আমায় ভালোবাসেন তারা তাদের কথা সব সময় মাথায় রাখি।অধিকাংশ লেখা গল্প প্রস্তুতি ছাড়া।তবে কিছু গল্প আমি প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছি। আবার কখনও প্রস্তুতি নিয়েছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত লেখাটা আর হয়ে ওঠেনি।
❑ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
> কবি নাভিল মানদার, কবি ও গল্পলেখক বিপুল বিশ্বাস, কবি ও লেখক মিনু মৃত্তিক আর আমি সব গল্পগুলো নিয়ে বসি। তারপর সেখান থেকে আঠারো গল্প বাছাই করি। সেখান থেকে পনের গল্প নিয়ে এই বই। গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার তেমন কিছু করতে হয়নি। বিশেষ কোনো প্লান ছিলো না আমাদের। আমাদের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ ছিলো কম্পোজ করা। জীবনদা দুরন্ত প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন। গল্পের বইয়ের নাম অন্য একটা দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে সবার ব্যাসার্ধটি নীল খুব পছন্দের হয়েছে। মিনুর খুব পছন্দের গল্প ব্যাসার্ধটি নীল। এই ছোটো ছোটো ব্যাপার থেকে বইটির পান্ডুলিপির জন্ম হলো। আবারো বলছি আমার কোনো ভূমিকা নেই।
❑ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?
> চিন্তা করিনি কখনো। লেখায় সবসময় আমার মতো করে ভেবেছি। পাঠক বা শিল্প কোনোপক্ষের আমি? কোনোদিন মাথায় আসেনি।
❑ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?
> শেষ প্রুফ আমার বন্ধুরা জোর করে দেখায়। যশোরে যাই, দিনটা মনে আছে ছাব্বিশ জানুয়ারি। মনিহারের সামনে আমার আত্মীয়ের বাসায় বসে লেখাগুলো দেখতে থাকি। কতো রাত জেগে এই গল্পগুলো লেখা। নিজের আত্মা খুব কাছ থেকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । লেখা পড়ে বারেবারে মনে হয়েছে এই লেখা আমার? কেমন করে লিখলাম লেখাগুলো? অবাক হয়েছি। নিজের লেখা নিয়ে আবারো চিন্তা করেছি।
আর বইটি কেমন হয়েছে? সেটা যারা পড়বেন তারা বলবেন? আমার নিজের রক্ত ভালো বা খারাপ যেটা হোক না কেন সেটা একান্ত আমার নিজের। ভালো হলে আমার বন্ধুদের সব কৃতিত্ব। আর যদি মন্দ কিছু হয় তার দায় দায়িত্ব সব আমার।
❑ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
> অনেক আগে থেকে কাজ শুরু করেছিলাম আমরা। কিন্তু কম্পোজ জটিলতার কারণে বইমেলায় এসে বের হলো। বইমেলায় বই বের করতে হবে তার কোনো প্লান ছিলোনা। কেউ যদি বই মেলায় বই বের করেন তার ভেতর খারাপ কিছু দেখিনা। তবে তাড়াহুড়ো যেনো করা না হয়। আর বই বের হবার আগে আমি যেরকম ছিলাম এখনও সেরকম থাকতে চাই। দুঃখ হলে, কষ্ট হলে, প্রেমে ডুবলে, মন খারাপ থাকলে আমি লিখি। সেভাবে লিখতে চাই। প্রতিবার আত্মহত্যার রঙ লেখায় টেনে নিয়ে যায়।
ধন্যবাদ
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম