প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে - খন্দকার মাহমুদুল হাসান

প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে - খন্দকার মাহমুদুল হাসান

 

খন্দকার মাহমুদুল হাসান লিখিত 'প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে' বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। ভ্রমণকাহিনীর ধাঁচে লেখা হলেও প্রচুর তথ্য আছে। ভ্রমণপথ, ভ্রমণদৃশ্যের বিবরণ দিতে গিয়ে লেখক প্রায়ই বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। খুঁটিনাটি বিষয়কেও তিনি তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রামাণ্য করে তুলেছেন। অনেকগুলো পৃষ্ঠায় প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ছবির সংযোজন করেছেন। লেখকের ভাষাজ্ঞানও প্রশংসনীয়। উপযুক্ত শব্দের ব্যবহার রচনাকে জীবন্ত করে তুলেছে। ভ্রমণকারীর ঔৎসুক্য, গবেষকের সন্ধিৎসা, কথাশিল্পীর প্রাঞ্জলতা মিলেমিশে লেখা হওয়ায় রচনাগুলো সুখপাঠ্য এবং মর্মগ্রাহী। স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রতি তার আগ্রহ ও আন্তরিকতা অসীম। তিনি আবেগোচ্ছল ভাষায় বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদের পরিচয় দেন। ঐতিহাসিক প্রত্নস্থানের ঐতিহ্য তুলে ধরেন। সাল-তারিখ, মাঠ-ভ্রমণ, নির্মোহ ইতিহাসবিদদের বই থেকে রেফারেন্স থাকায় তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য।

মূল বইকে চেনার জন্য সূচিপত্রের দিকে তাকানো প্রয়োজন। ৪২টি শিরোনাম দিয়ে রচনা তালিকাটি লেখা। কোন কোন নিবন্ধের শিরোনাম ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ দিয়ে রেখেছেন। ফলে নাম দেখে স্থানকে অনেক সময় চেনা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। লেখকের আন্তরিকতা বুঝতে সম্পূর্ণ সূচিপত্রটি দেয়া হল।

সূচিপত্র


  • হারানো দিনের কথা
  • পুণ্ড্রনগরের স্মৃতি
  • আশ্চর্য স্তম্ভ
  • ভাতভিটায় একদিন
  • বিলুপ্ত শহরের কাহিনী
  • প্রাচীন নগরীর অলিতে গলিতে
  • প্রাচীন বাংলার বিদ্যাপীঠ
  • দেড় হাজার বছরের পুরনো শহর
  • হারানো শহরের আশ্চর্য সেতু
  • হারানো নগরীর খোঁজে
  • টিলায় ঢাকা অট্টালিকা
  • ইতিহাসের জনপদে একদিন
  • পাহাড়পুরের পিরামিড
  • কালের স্তম্ভ
  • লালমাটির দেশে
  • স্তূপ থেকে মন্দির
  • পাথর নগরী
  • স্মৃতির জনপদ ভাসুবিহার
  • প্রাচীন প্রাচীরের কথা
  • পাহাড় কোলের পাথর সারি
  • ইতিহাস নগরীর পথে প্রান্তরে
  • বিস্মৃত নগরীর পথে প্রান্তরে
  • কুসুম্বার মসজিদে
  • সাতৈর থেকে মথুরাপুর
  • সাঁঝের আলোয় প্রাচীন মসজিদে
  • এক বিকেলে খেরুয়া মসজিদে
  • অচেনা কান্তনগর
  • ঝাউদিয়ার প্রাচীন মসজিদে
  • ঘুমন্ত নগরীতে
  • শহর ঢাকা কথা
  • ইতিহাসের ধুলো
  • মন্দিরগ্রাম
  • সীতারামের দেশে
  • অযোধ্যার মঠে
  • মন্দিরের জনপদে
  • আমঝুপির নীলকুঠিতে
  • সুলতানের দেশে
  • বাংলাদেশের জাদুঘরে সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন
  • মধুকবির ডাকে
  • কবিতীর্থে একদিন
  • জলে ভাসা অট্টালিকা
  • কবির বাড়ি


 প্রত্নস্থানগুলোতে স্বশরীরে ভ্রমণ করে যা দেখেছেন, সেটাই তার প্রধান বিবেচ্য। স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জেনেছেন এলাকায় প্রচলিত ধারণা ও বিশ্বাসের কথা। পুরনো লোককথাকে কখনও কখনও যুক্তি ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেছেন।

বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই মানববসতি ছিল। পাথরযুগে মানুষেরা রীতিমত দলবদ্ধ জীবন যাপন করত, কেউ মারা গেলে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণ করত। দীর্ঘকাল স্মরণে রাখতে পাথরের স্তম্ভ তৈরি করত। আদিম যুগের এসব নিদর্শন বাংলাদেশের একাধিক দীর্ঘস্থায়ী ভূখণ্ডে পাওয়া গেছে।

মাইলকে মাইল লম্বা পাকা রাস্তার দুই ধার দিয়ে অসংখ্য পাকা বাড়ির ঢিবি আমি ধ্বংস করেছি

বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রাচীন জীবন সংস্কৃতি এতটাই উন্নত ছিল যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কালে কালে পরিব্রাজকরা এই ভূখণ্ডে ভ্রমণ করেছেন। এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি এতটাই মনোরম যে বিদেশীরা স্বল্পকাল, দীর্ঘকাল, জীবনৎকাল এখানে বাস করেছেন। সাংস্কৃতিক সৌকর্যের খ্যাতি শুনে চীন থেকে এসেছিলেন হিউয়েন সাং, ফা হিয়েন প্রমুখ। মানুষের সাবলীল গার্হস্থ জীবন, সবুজ গাছপালায় ঢাকা সমতল প্রান্তর, বনানীর প্রান্তরে জালের মত ছড়িয়ে থাকা নদীসমূহ, বৈচিত্র্যময় স্থানীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান চর্চায় তারা এতটাই আকৃষ্ট এবং মগ্ন হয়েছিলেন যে প্রত্যেকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে একাধিক বৎসরাধিককাল বসবাস ও ভ্রমণ করেছিলেন। স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সময় সাথে নিয়ে গেছেন শতাধিক বই, স্থানীয় সংস্কৃতির বস্তুগত নিদর্শন। সহস্র বৎসর আগের এসব নিদর্শন এখনও তিব্বত, নেপাল, ভূটান, চীন প্রভৃতি দেশে পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ ও বিহারবাসী প্রাজ্ঞ মানুষজনের সান্নিধ্যের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেলেও উপর্যুক্ত পরিব্রাজকগণের সাথে শাসক শ্রেণীর কোনরকম সংশ্লিষ্টতার ইতিহাস পাওয়া যায় না।

তের শতকে মরক্কো থেকে আসা ইবনে বতুতা বাংলাদেশ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। তার ভ্রমণকাহিনী জগতবিখ্যাত। ছয়-সাতশত বৎসর পরেও বিভিন্ন ভাষায় তার রচনা অনুদিত হয়ে চলেছে। তার রচনায় নগরজীবন, রাজা-বাদশা, শাসক, ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বগণের জীবনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের তথ্য পাওয়া যায়।


কয়েকটি প্রাচীন প্রত্নস্থলের রঙিন ছবি
প্রাচীন প্রত্নস্থলের রঙিন ছবি

মধ্যযুগ থেকে এই অঞ্চলে আগমন ঘটে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণকারীদের। ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের গভীরে। বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রতিটি জনপদে এরা প্রভাব বিস্তার করে। এদেশের মানুষের জীবনযাত্রা, মুখের ভাষা, খাদ্যাভ্যাষ, উৎসব, পোষাক, নান্দনিক বোধ, আত্মগত দর্শন প্রভৃতিতে বিদেশী প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের মাটিতে রক্তপাত করেছেন, তারা কেউ নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব লুকাতে পারে নি। এদের সবার নিদর্শন বাংলাদেশের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এইসব প্রত্নসম্পদ নিয়ে লেখক খন্দকার মাহমুদুল হক খুব আগ্রহী। বাংলাদেশের প্রায় পঞ্চাশটির বেশি প্রত্নস্থল ভ্রমণ করেছেন। বইয়ের পাতায় পাতায় তুলে ধরেছেন এসব স্থানে ভ্রমণ কাহিনী। পাশাপাশি ইতিহাস, প্রত্ননিদর্শন, নৃতাত্ত্বিক সামগ্রী ইত্যাদির পরিচয় দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন বর্তমান অবস্থা। সেগুলো সংরক্ষণের অবস্থা কেমন, জনগণ সেইসব অমূল্য সম্পদ সম্পর্কে কতটা  সচেতন, সেসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন। বেশ দুঃখের সঙ্গে আমাদের অজ্ঞতা, বিদ্বেষপরায়নতা ও বিধ্বংসী মনোভাবের নিন্দা করেছেন। বইটি লিখতে গিয়ে যেসব এলাকার মানুষের সাথে কথা বলেছেন, তাদের কথা তিনি ভোলেন নি। বইয়ের 'ভূমিকা'য় স্থানীয় জনগণের প্রতি ঋণস্বীকার করেছেন। এই প্রসঙ্গ টেনে বলেন-

একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, বইটি স্রেফ ভ্রমণ কাহিনী নয়। অনেক কঠিন কথাও প্রাসঙ্গিকভাবে এসেছে, তবে সহজ ভাষায়। এজন্যে গ্রন্থ-সাময়িকীর সাহায্যও নিতে হয়েছে। সেসব গ্রন্থ-নিবন্ধের লেখকদের কাছেও ঋণ স্বীকার করছি। রাজশাহীর পুঠিয়া, বাঘা, সদর, চারঘাট, চাঁপাই নবাবঞ্জের শিবগঞ্জ, বগুড়ার সদর, শেরপুর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, রংপুরের বদরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি, পার্বতীপুর, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট, নওয়াবগঞ্জ, সদর, কাহারোল, কুষ্টিয়ার সদর, মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, ঝিনাইদহের সদর, কালীগঞ্জ, শৈলকূপা, হরিণাকুণ্ডু, যশোরের সদর, কেশবপুর, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, খুলনার ডুমুরিয়া, বাগেরহাটের সদর, নড়াইলের সদর, মাগুরার সদর, শ্রীপুর, মোহাম্মদপুর, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি সদর, নওগাঁর ধামুরহাট, পত্নীতলা, মান্দা, বাদলগাছি, কুমিল্লার সদর, সিলেটের জৈন্তা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলাসমূহের এবং ঢাকা শহরের পুরাকীর্তিসংলগ্ন স্থানসমূহে বসবাসরত জনগণ অকুণ্ঠ সহায়তা না দিলে লেখাগুলো তৈরি করা সম্ভব হতো না।


দেশের বেশিরভাগ প্রত্নস্থলের দূরাবস্থা দেখে তিনি ব্যথিত হয়েছেন। অনেক জায়গায় ক্ষতির মাত্রা এত বেশি যে হাহাকার করে ওঠেন। প্রত্নসামগ্রী ধ্বংসের কাহিনী জেনে কাতর হয়ে পরেন। পাঠকের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়। দেশপ্রেমিক, ইতিহাসপ্রেমী সচেতন মানুষ মাত্রই যে কোন প্রত্নস্থলের ক্ষতিতে দুঃখিত হবেন।

সাংস্কৃতিক সৌকর্যের খ্যাতি শুনে চীন থেকে এসেছিলেন হিউয়েন সাং, ফা হিয়েন প্রমুখ।
বাংলাদেশের ইতিহাসের পুরনো চিহ্নগুলো অনেক সময় কর্তৃপক্ষের অবহেলার শিকার হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীদের অজ্ঞতা তো ছিলই, কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও অনাগ্রহের কারণেও অমূল্য প্রত্নসম্পদ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের ছয় মাইল দক্ষিণাঞ্চলে বাগদা-সাহেবগঞ্জ এলাকা। গোবিন্দগঞ্জের পাশের এই স্থানে পাকিস্তানী আমলে (১৯৫৭-৫৯) আখের ক্ষেত তৈরি করা হয়। মহিমাগঞ্জ চিনিকলের প্রয়োজনে আখ চাষের জন্য বিপুল পরিমাণ জমি সরকার অধিগ্রহণ করে। চাষযোগ্য জমি তৈরির জন্য বন জঙ্গল কেটে, ঢিবি ভেঙ্গে সমান করা শুরু হয়। এই সময়ে সেখানে কর্মরত ছিলেন প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম। তিনি নিজে একটি প্রাচীন শহর ধ্বংস করার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর পূর্বে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সেইস্থানে বিশাল শহর থাকার কথা জানান। তিনি খুব দুঃখের সাথে দেখেন যে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ তার কথার মূল্যায়ন করেনি। চিঠির পর চিঠি দিয়ে তাগাদা দিয়েছে। টেলিগ্রামের পর টেলিগ্রাম করেছে। সেই স্থানে থাকা অসংখ্য ঢিবি বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছে। প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম যোগাযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এবিএম হাবিবুল্লাহ মহোদয়ের সাথে। তিনি চেষ্টা করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের ধ্বংস হওয়া ঠেকাতে। কিন্তু খুব একটা সফল হননি। তার ভাষ্যে-

তখন আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছিল সবকিছু মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। বুলডোজার চালিয়ে সমস্ত ঢিবি মিশিয়ে দিতে হুকুম দেয়া হয়েছিল আমাকে। নিজের ইচ্ছার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে আমাকে বুলডোজার চালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হলো ওই প্রাচীন নগরীর সব নিদর্শনকে। কষ্টে বুকে পাথর বেঁধে ঐ কাজ আমি করেছি। পৃষ্ঠা- ৫৩


ঢিবির আড়ালে লুকিয়ে থাকা সেই শহর ছিল কারুকার্যখচিত। পিলার, দেয়াল, দরজা, জানালা সবকিছুতে নান্দনিক শিল্পকার্যের ছোঁয়া ছিল। আরও যা ছিল তা 'প্রত্নতত্ত্ব: উদ্ভব ও বিকাশ' (১৯৯৮, পৃষ্ঠা-১৯৪, ১৯৫) গ্রন্থে মো. মোশাররফ হোসেন লিখেছেন-

এসব ফলকে লোক শিল্পের ঐতিহ্যবাহক জীবজন্তু ও মানুষের মূর্তি বিধৃত ছিল। অলঙ্কৃত ইটগুলোতে পদকে ঝুলন্ত মালা, বিবিধ ফুল ও পাতা ইত্যাদি নকশার অস্তিত্ব রয়েছে। অন্যান্য প্রত্নবস্তুর মধ্যে ছিল গোল বা পিপাকৃতির উপরত্ন পাথরের গুটিকা, খেলনা, চুড়ি, বর্শাফলক, অস্পষ্ট লিপিযুক্ত একটি মূর্তির খণ্ডাংশ ও একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত ক্ষুদ্রাকার উপবিষ্ট নরমূর্তি। স্তরবিন্যাস ও প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলোর শিল্পশৈলীর বিচারে খননকারী কর্মকর্তা এই ইমারতকে খ্রিষ্টীয় আট-বার শতকে নির্মিত একটি বৌদ্ধ বিহার বলে অভিমত পোষণ করেছেন। পৃষ্ঠা- ৪৯


১৯৫৭ সালে প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম যখন প্রথম সেই এলাকায় যান, তখনকার দৃশ্য বর্ণনা করেন এভাবে-

ওখানে আমি যখন যাই তখনও সেটা ছিল পরিত্যক্ত এলাকা। জায়গাটা পরিষ্কার করতে গিয়ে সেখানে যেসব নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায় তা অত্যাশ্চর্য বলা যায়। পাকা সড়ক, দালান-কোঠা, ড্রেন এ সবের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেল সেখানে। বিরাট এলাকাজুড়ে বহু ঢিবি ছিল। পৃষ্ঠা- ৫০


সেই এলাকায় অসংখ্য ঢিবির পাশাপাশি বাইশটি বিশাল আকারের দিঘি ছিল। দিঘিগুলোর চারপাশে শান বাঁধানো ঘাট ছিল। প্রায় বিশ বর্গমাইল আকারের করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকায় সার্ভে করতে গিয়ে প্রকৌশলীরা ইটের দেয়াল, মেঝে ইত্যাদি পেয়েছেন। কয়েক মাইল ব্যাপী এলাকায় এই শহর বিস্তৃত ছিল। কোথায়, কোথায় ঢিবি বা প্রাচীন দালানের ভগ্নাবশেষ ছিল তার ম্যাপ প্রথম সার্ভেতে করা হয়েছিল; ১৯৫৭ সালে। প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের মতে-

সেই সিএস ম্যাপ আর মাটি মাপের বই থাকলে এখনও প্রতিটি ঢিবির অবস্থান, উচ্চতা, পরিমাপ ইত্যাদি নির্ণয় সম্ভব। শতশত দালান বিভিন্ন মাপের মর্টার দিয়ে গাঁথা। মাইলকে মাইল লম্বা পাকা রাস্তার দুই ধার দিয়ে অসংখ্য পাকা বাড়ির ঢিবি আমি ধ্বংস করেছি। পৃষ্ঠা- ৫১


ড. এবিএম হাবিবুল্লাহ তাঁর ছাত্র ড. নাজিমুদ্দিনকে পাঠিয়েছিলেন। তার উদ্যোগে কয়েকটি ঢিবি রক্ষা পেয়েছিল। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ছিল ৭২ ফুট উচু। এর আশেপাশে অনেকগুলো ভারী পাথরের স্তম্ভ পাওয়া গেছে। এছাড়াও পাওয়া গিয়েছে অসংখ্য ছোটখাট নিদর্শন। এই বিশ বর্গকিলোমিটার এলাকায় কালো পাথরের অনেক কিছু পাওয়া গেছে।

প্রকৌশলী ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেয়া শুরু করেন।-

আমি শহরটাকে ধ্বংস করা আরম্ভ করলাম, অসংখ্য টেরাকোটা প্লাক, Bell and chain ওয়ালা বেলে ও কালো পাথরের অসংখ্য Pillar, channel ইত্যাদি পেলাম। টেরাকোটা প্লাকে ঢাল ও তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি আঁকা, মাছ, হাঁস, মানুষ, দেব-দেবী, ফুল, লতা-পাতার নকশা, আরও কত কী? মাটির নিচে বিরাট বিরাট মৃৎপাত্রে কড়ি ও বালি ভর্তি পেয়েছি। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এসে কড়ি ভর্তি মাটির পাত্র পাওয়া গিয়েছিল। কড়িগুলি জমে চুনের দলা হয়ে ছিল। কয়েক একর জমিতে বড় ইটের ঢিবি করে রাখা হয়েছিল। প্রায় ২ বছর ধরে ২ হাজার মানুষ দিয়ে এই ধ্বংসলীলা চালিয়ে এই ২০ বর্গমাইলের ধ্বংসযজ্ঞ শেষ করেছিলাম। পৃষ্ঠা - ৫২


পরবর্তীতে রক্ষা পাওয়া ঢিবিগুলোর মধ্যে 'বোমদহ ইক্ষু খামার (বাগদা ফার্ম)' নামক স্থানের একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ঢিবিতে বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। লেখক বর্ণনা করেন-

বাংলোটায় ঢোকার পথের পাশে দুটো কালো পাথরের তৈরি স্তম্ভ মূল রাখা। পালযুগীয় এমন স্তম্ভমূল দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ও জয়পুরহাটের পাথরঘাটা এলাকায় অনেক দেখেছি। যেখান থেকেই ওগুলো আসুক না কেন তা যে, আদলে পাল বা সেনযুগে নির্মিত ইমারতে ব্যবহার হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া এমন পাথরের তৈরি সামগ্রী পাওয়া এখানে অসম্ভবও নয়। এখানকার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ঢিবি থেকে অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল কালো পাথরের স্তম্ভ, পাথরের গৌরীপট্ট ও বেদি। অন্য একটি ঢিবি থেকে পাওয়া গেছে ইমারতের ধ্বংসাবশেষ, অলঙ্কার তৈরির ছাঁচ, ব্রোঞ্জের দাড়িপাল্লা প্রভৃতি। এসব প্রত্নবস্তু এবং ২০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইটের টুকরো এবং বহু প্রাচীন পুকুর প্রমাণ করে যে, বাণিজ্য শিক্ষা ও ধর্ম কেন্দ্রসহ এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল এখানে এবং মুসলিম আগমনের  বহু আগে থেকেই তার অস্তিত্ব ছিল। পৃষ্ঠা - ৫৪


পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের সময়েও অনেক প্রাচীন প্রত্নবস্তু হারিয়ে গেছে। লেখক দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে লেখেন-

এভাবেই যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে সাহেবগঞ্জ-বাগদার প্রাচীন মহানগর। হারিয়ে যেতে বসেছে বিরাট নগরের ইতিহাসের অবশিষ্ট চিহ্ন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে একথা ভাবতে ভাবতে ফিরে এলাম সেই প্রাচীন জনপদ থেকে যা তলিয়ে গেছে মহাকালের স্রোতের নিচে। পৃষ্ঠা- ৬০


মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ মৌজায় একটি প্রাচীন শহর ছিল বলে লেখক অনুমান করেছেন। সেস্থানে গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভ পাওয়া গেছে। ঢিবিশীর্ষের ছয় ফুট নিচেই রয়েছে দেয়ালের গাঁথনি। পাশের ইট ভাটার ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম অকপটে অনেক কথা বলেছেন। লেখক বর্ণনা করেন-

আরও বললেন কলসি ভরা কড়ি, মাটির প্রদীপ, মৃৎপাত্র, অসংখ্য পাতকুয়ো পাবার কথা। তবে অকপটেই জানালেন যে, এসব জিনিসের ব্যাপারে তারা কোন ভ্রুক্ষেপ করাই দরকার মনে করেন না। কিন্তু গভীর মর্মবেদনার বিষয়, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বা শিক্ষা কিংবা গবেষণা প্রতিষ্ঠানও এখানকার প্রাচীন নগরীর অমূল্য নিদর্শনগুলো সংরক্ষণে বা এর স্বরূপ অনুসন্ধানের কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সংবাদও জানা যায় না। অথচ এখানকার চাষি-মজুর থেকে শুরু করে সবাই একবাক্যেই বলছে যে, এখানে হাজার হাজার বছর আগে নাকি মস্ত শহর ছিল। কিন্তু সে শহরের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষাকে কোনো দরকারি বিষয় বলেই মনে করছে না। পৃষ্ঠা- ৯৩


পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল, তার দেয়ালগাত্রের পোড়ামাটির ফলকচিত্রগুলো। প্রাচীন বাংলার বেশিরভাগ অবকাঠামো অলঙ্করণে ব্যবহৃত হত টেরাকোটা ফলক। মহাস্থান, ভাসুবিহার, ময়নামতি, শালবনবিহার প্রভৃতি মুসলিমপূর্ব যুগের দালানকোঠা ছাড়াও মুসলিম যুগের আদি ও মধ্য পর্বের নির্মাণকাজেও দেয়ালগাত্রের অলংকরণের জন্য টেরাকোটার ব্যবহার অবাধে  হয়েছে। পাহাড়পুরের কেন্দ্রীয় মন্দিরের চারপাশের দেয়ালে প্রায় দু'হাজার পোড়ামাটির ফলকচিত্র ছিল। ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের চিত্রও সেখানে দেখতে পাওয়া যায়।-

এর মধ্যে লতাপাতা, কলাগাছ, বানর, মোষ, হাতি, বাঘ, সিংহ, হরিণ, শেয়াল, মাছ বিরুপাক্ষের বাহন উট প্রভৃতি প্রাণী ও উদ্ভিতের চিত্র যেমন ছিল, তেমনি ছিল সাধারণ জনজীবনের চিত্রও। এসবের মধ্যে ছিল কলসী কাঁখে গাঁয়ের বধূ, সন্তান কোলে জননী, লাঙল কাঁধে চাষি, লাঠি হাতে পথিক প্রভৃতি। পৃষ্ঠা - ১০৯


প্রায় বারশো বৎসর ধরে ফলকগুলো দেয়ালের বাইরে সাঁটা ছিল। জলবায়ুগত পরিবর্তন, প্রাবল্য সহ্য করেও সেগুলো টিকে ছিল। বিহারের বাইরে দিয়ে প্রবাহিত হত একটি ছোট জলধারা। নৌকা ভিড়তে পারত। সেই ঘাটের ৪০ ফুট দক্ষিণে আছে গন্ধেশ্বরীর মন্দির। এর প্রতিষ্ঠাকাল অবশ্য পরবর্তী যুগের। সুলতানী আমলের।

আমি শহরটাকে ধ্বংস করা আরম্ভ করলাম, অসংখ্য টেরাকোটা প্লাক, Bell and chain ওয়ালা বেলে ও কালো পাথরের অসংখ্য Pillar, channel ইত্যাদি পেলাম। টেরাকোটা প্লাকে ঢাল ও তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি আঁকা, মাছ, হাঁস, মানুষ, দেব-দেবী, ফুল, লতা-পাতার নকশা, আরও কত কী?

লেখক বদরগঞ্জ উপজেলার চাপড়াকোটে গিয়ে প্রত্নসম্পদ ধ্বংসের যে চিত্র দেখেছেন, তা হৃদয়বিদারক। গ্রামের মানুষ প্রাচীন দালানকোঠার ইট খুলে ফেলে। বাড়িতে নিয়ে যায়। সবাই মিলে ইট খুলে নিতে নিতে আশেপাশের সকল প্রাচীন বিল্ডিং বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেই গ্রামের মানুষ আসলে অশিক্ষিত ছিল বলেই আত্মসম্পদ চিনতে পারেনি। লেখক মনের দুঃখ চেপে রাখতে না পেরে লিখেন-

...দুঃখে একেবারে মুষড়ে পড়ার মতো অবস্থা হলো যখন জানলাম, আশপাশের মহিদীপুর, সাদিয়াটারী, বর্মতল, মনিরাপাড়া, সরকারপাড়া, মণ্ডলপাড়া, পালিপাড়া প্রভৃতি গ্রামগুলোর সব পাকাবাড়িই এখানকার ইট দিয়ে নির্মিত হয়েছে। এই দেশের সভ্যতা ও ইতিহাসের এক অমূল্য নিদর্শনকে সবার চোখের সামনে লোপাট করা হয়েছে, অথচ কেউ দেখেনি, একটু নিষেধ পর্যন্ত করেনি।.. এটি যে পাল আমলের (খ্রিষ্টীয় অষ্টম-দশম শতক) পরে নির্মিত হয়নি সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েই বলা যায়। পৃষ্ঠা- ১৪৪


বাংলাদেশের সকল মন্দিরের মধ্যে সবচেয়ে কারুকাজখচিত মন্দির হল দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির। এই মন্দিরের চারপাশে অসংখ্য টেরাকোটা বা পোড়া মাটির ফলক দিয়ে সাজানো। এরকম টেরাকোটা দিয়ে অলংকৃত মন্দির বাংলাদেশে খুব একটা নেই। এই পোড়া মাটির ফলকগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র ফলকগুলোতে রয়েছে। লেখক জানান-

সমকালীন জনজীবনের সাথে সম্পর্কিত চিত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে গোয়ালা ও দুধের ভাঁড়, চাষির ডাব পাড়া, মাঝি, বাজপাখি নিয়ে চিড়িয়াওয়ালা, শিকারি, বাদক, গায়ক, কাপড় বোনার কাজে নিয়োজিত কর্মক্লান্ত নারীর বিশ্রাম দৃশ্য, পালকীবাহকের চিত্র ইত্যাদি। এছাড়াও লতাগুল্ম, পুষ্প, ফুল, হীরামাণিক্য প্রভৃতি চিত্রও আছে। নারী-পুরুষের হৃদয়াবেগের প্রমাণবাহী ফলকচিত্রও রয়েছে। পৃষ্ঠা- ২২১


ফলকের সংখ্যা এত বেশি যে, তার বিষয় বৈচিত্র্য নিয়ে একটা কৌতুহল থেকে যায়। লেখকের মতে-

ধর্মের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয় এমন ফলকচিত্রসমূহকে প্রধান যে শ্রেণীসমূহে ফেলা যায়, সেগুলো হলো-

  • ক. প্রকৃতি বিষয়ক টেরাকোটা। যেমন- বৃক্ষলতা
  • খ. জনজীবনের সাথে সম্পর্কিত টেরাকোটা। যেমন- কাপড় বোনায় ব্যস্ত নারীর চিত্র।
  • গ. রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক চিত্র সমৃদ্ধ টেরাকোটা। যেমন- সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযানের চিত্র। দক্ষিণ দেয়ালের পূর্বভাগে কার্নিশের নিচ থেকে সৈনিক কর্তৃক নানা ধরনের দৃশ্য প্রভৃতি।
  • ঘ. অন্যান্য টেরাকোটা। যেমন- মণি মানিক্যের চিত্র। পৃষ্ঠা- ২২৩

‘প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে' বইয়ে অনেকগুলো চিত্র সংযোজন করা হয়েছে। ত্রিশটির বেশি রঙিন ছবি, অনেকগুলো সাদাকালো ছবি ছাপা হওয়ায় বইয়ের নির্ভরযোগ্যতা আরও বেড়েছে। প্রত্যেকটি রঙিন ছবি প্রত্যেক পাতায় দুটি করে ছাপা হয়েছে। অনেকগুলো সাদাকালো ছবিও প্রত্যেক পাতায় দুইটি করে ছাপা হয়েছে। মোট কতটি ছবি বইতে যে রয়েছে, তা কৌতুহলী পাঠক জানতে চাইতে পারে। কিন্তু ভূমিকা বা অন্য কোথাও এই তথ্যটি খুঁজে পাওয়া গেল না।

বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে লেখকের ভালবাসা অনুভব করা যায়। তিনি এই বই ছাড়াও বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে একাধিক বই রচনা করেছেন।
সেই সিএস ম্যাপ আর মাটি মাপের বই থাকলে এখনও প্রতিটি ঢিবির অবস্থান, উচ্চতা, পরিমাপ ইত্যাদি নির্ণয় সম্ভব। - প্রকৌশলী নুরুল ইসলামে
'প্রাচীন বাংলার পথ থেকে পথে’, 'প্রাচীন বাংলার ধুলোমাখা পথে’, 'প্রাচীন বাংলার আনাচে-কানাচে’, 'মুদ্রা ইতিহাস ও সংগ্রহ' ইত্যাদি। এছাড়াও রচনা করেছেন 'প্রথম বাংলাদেশ কোষ' (১ম ও ২য় খণ্ড), 'বাংলাদেশের পুরাকীর্তি কোষ’, (প্রাচীন যুগ), 'বাংলাদেশের পুরাকীর্তি কোষ' (মধ্যযুগ)। তার রচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রত্নতত্ত্বের ১৯টি বই, ইতিহাসের বই ১১টি, কোষগ্রন্থ ৫টি, নৃতত্ত্ব গবেষণা ৩টি, চলচ্চিত্র ও সাময়িকী গবেষণা ৬টি, অভিধান ১টিসহ ভাষা আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একাধিক গ্রন্থ তো আছেই। সেই সাথে আছে শিশু কিশোরদের জন্য রচিত প্রায় একশতটি সৃজনশীল বই। মননশীল ও জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যের জন্য তিনি ‘অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার’‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন দু’বার করে।

‘প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে' বাংলাভাষার ইতিহাসপ্রেমী পাঠকের ভাল লাগবে। ঐতিহ্যের দ্বার খুলে বর্ণিল সংস্কৃতির চিহ্ন পাওয়া যায় এই বইয়ের পাতায় পাতায়। তরুণ পাঠকের পাশাপাশি অভিজ্ঞ পাঠকেরও ইতিহাস আগ্রহ তৃপ্ত হবে। শক্ত মলাটের প্রচ্ছদে বইয়ের বাঁধাইয়ের মান ভাল। ছাপানোর মান উন্নত। বইয়ের পাতায় পাতায় ছবি সংযোজনের কষ্টকর কাজ প্রকাশক স্বীকার করেছেন। সার্বিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের হাজার বছর আগের ইতিহাস জানতে, প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে 'প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে' বইটির প্রশংসা করা যায়। সকল সচেতন পাঠকের নিকট এই বই অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা করি।

**********

প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে
খন্দকার মাহমুদুল হাসান

পার্ল পাবলিকেশন্স, ঢাকা

প্রকাশকাল ২০০৯
প্রচ্ছদশিল্পী: ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠা: ৩২০
মূল্য ৪০০ টাকা
ISBN: 984-495-180-1

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ