'তারারা' পত্রিকার সাম্য রাইয়ান বিশেষ সংখ্যার পাঠপ্রতিক্রিয়া - অনিরুদ্ধ সুব্রত

'তারারা' পত্রিকার সাম্য রাইয়ান বিশেষ সংখ্যার পাঠপ্রতিক্রিয়া - অনিরুদ্ধ সুব্রত


উত্তরপক্ষ শারদ সংখ্যা প্রকাশের দিন সম্পাদক আশুতোষ বিশ্বাস দাদা ‘সাম্য রাইয়ান বিশেষ সংখ্যা’টি দিয়েছিলেন। যদিও প্রকাশিত হয়েছে অনেক আগেই। ‘তারারা’ পত্রিকার এটি নবম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা। প্রচ্ছদ- দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

সমকালীন বাংলা ভাষার পত্রিকাগুলির নানান বিষয় ভিত্তিক সংখ্যা প্রকাশের ধারা লক্ষ্য করা যায়। যার অধিকাংশই তথাকথিত ‘বিষয়-ভিত্তিক’ই হয়। সাহিত্য থেকে রাজনৈতিক অথবা পূর্বতন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের নিয়ে। কিন্তু একেবারেই সমকালীন তরুণ প্রতিভাকে নিয়ে একটি পত্রিকার আস্ত একটি সংখ্যা আমার চোখে এর আগে সম্ভবত পড়েনি। শ্রী আশুতোষ বিশ্বাস মহাশয় এমন একটি কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেই মনে করছি।

সমকালে আলোচিত হ‌ওয়ার সমস্যা কোথায় জানি না। তবে প্রয়োজনীয়তা অনেক। ‘তারারা’র সম্পাদক (নিজে কবি বলেই অনুভব করেন নিশ্চয়ই) সেটা যথার্থ বুঝেছেন। যোগ্য প্রতিভার যোগ্যতম প্রাসঙ্গিকতা সমকালে উঠে এলে, সেটি তার প্রকৃত সৃষ্টি কর্মের প্রতি সম্মান। এই বঙ্গের প্রথাগত এবং অলিখিত নিয়ম হয়ে উঠেছে প্রৌঢ়ত্বের সীমান্তে অথবা অসুস্থ বার্ধক্যে নতুন গত হলে— তবেই হৈ হৈ করে উঠতে হবে। স্রষ্টা নিজে যখন আর সেই হৈ চৈ থেকে নেবার মতো কিচ্ছু পাবেন না।

আসলে এর মধ্যে লুকোনো থাকে বেশ কয়েকটি নিঃশব্দ উদ্দেশ্য— পূর্ব প্রভাব, দল, গোষ্ঠী, স্থান হারানোর শঙ্কা এবং তরুণতরকে অস্বীকারের আদিম প্রবৃত্তি। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে একসময় মনে করতাম, বড় পবিত্র এই ক্ষেত-খামার। ধীরে যেটুকু নজরে এসেছে, তাতে অভিসন্ধি কেবল আনাচে কানাচে। যোগ্য আর অযোগ্যের ফারাক বোঝা এখানে ভীষণ‌ই মুশকিল। সুযোগ এখানে যোগ্যতার বা প্রতিভার ভিত্তিতে আসে না। পেছন থেকে কে কাকে কীভাবে ঠেলছে তার দিক থেকে সব আসে। আর একটি কথা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, ‘সাংগঠনিক প্রভাব’। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ‘সাংগঠনিক প্রভাব’ খায় না মাথায় দেয় বুঝি না। অথচ তার আড়ম্বরে এ জমিন পুরো দখল। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশ এর নাগরিক এবং বৃহত্তর বাংলা ভাষার, ভ্রাতৃপ্রতিম কবি সাম্য রাইয়ানকে নিয়ে আশুতোষ দা এই যে কাজটি করছেন, তার তুলনা খুঁজতে যাওয়াই বৃথা। কবি ও সম্পাদক আশুতোষ বিশ্বাসের এই সৎ কাজটির জন্য তাকে আমার অকুণ্ঠ প্রীতি ও শ্রদ্ধা।

সাম্য রাইয়ানের কবিতা সম্পর্কে আমার অল্প-বিস্তর জানা। তাঁর লেখার নিজস্বতা তাকে চিনিয়ে দিয়েছে। ‘বিন্দু’ পত্রিকা সম্পাদনা তাকে সফল সম্পাদক করে তুলেছে। এবং আরও যা কিছু তাঁর সম্পর্কে জানার, এই সংখ্যাটি হাতে নিয়ে পড়ে ফেললে অবাক হবার মতো অনেক কিছুই আছে।

‘তারারা’ পত্রিকার এই সংখ্যাটির প্রথম সংস্করণ ইতিমধ্যে শেষ, দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে। সংখ্যাটি পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে সাদরে গ্রহণ করেছেন পাঠক সমাজ। এর চেয়ে বড় কথা আর কী হতে পারে!

সংখ্যাটিতে রয়েছে, কবি সাম্য রাইয়ানকে উৎসর্গীকৃত কিছু নির্বাচিত কবিতা, সাম্য রাইয়ানের অপ্রকাশিত কবিতাগুচ্ছ, রয়েছে তাঁর ছয়টি সাক্ষাৎকার। এছাড়া এগারোটি প্রবন্ধ ও চোদ্দটি গ্রন্থ আলোচনা এবং চারটি পাঠ অনুভব। যা একজন প্রতিভাবান কবির উপর তথ্য ও তত্ত্ব ভিত্তিক পরিপূর্ণ একটি সংকলন। ১৬৮ পৃষ্ঠার তারারার এই সংখ্যাটি বাংলা পত্রিকার জগতে অন্যতম সংগ্রহযোগ্য এবং দৃষ্টান্তমূলক বিষয় বা ব্যক্তি-বিষয়ক উপহার। তার পূর্ণ মর্যাদা পাঠকদের কাছে আশা করি। সামগ্রিক উপস্থাপনের গুরুত্বে সম্পাদককে পুনরায় শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং কবি সাম্য রাইয়ানকে আমার আন্তরিক প্রীতি জানিয়ে এই সংক্ষিপ্ত কথা এখানে শেষ করলাম।


**********


তারারা
 

বর্ষ ৯, সংখ্যা ২
সাম্য রাইয়ান বিশেষ সংখ্যা
প্রথম সংস্করণ: জুন ২০২৩
সম্পাদক: আশুতোষ বিশ্বাস
সহ-সম্পাদক: স্বাগতা বিশ্বাস
ভারত থেকে প্রকাশিত৷
দাম: ২০০ টাকা

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ